অবশেষে মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের আলোচিত খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবি। ব্লাসফেমি তথা ধর্ম অবমাননার আইনে মৃত্যুদণ্ডের খড়্গ নিয়ে আট বছর ধরে কারাবন্দি ছিলেন তিনি।
আসিয়ার আইনজীবী সাইফুল মুলক বৃহস্পতিবার সকালে বিবিসিকে জানিয়েছেন, পাঁচ সন্তানের জননী আসিয়া বিবিকে তার শহর মুলতানের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
আসিয়ার মুক্তির খবরে একাধিক সংবাদমাধ্যম বলছে, তাকে অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও পররাষ্ট্র দফতর দাবি করছে, আসিয়া এখনও পাকিস্তানেই আছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে জানায়, বুধবার রাতে আসিয়াকে বিশেষ হেলিকপ্টারে মুলতান থেকে ইসলামাবাদে নিয়ে আসা হয়। তাকে বহন করা হেলিকপ্টারটি ওল্ড বেনজির ভুট্টো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করার পর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাকে গোপন জায়গায় নিয়ে যায়। নিরাপত্তার খাতিরে আসিয়াকে কোথায় রাখা হয়েছে সেটি জানা যায়নি।
ধর্ম অবমাননার মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসিয়াকে গত ৩১ অক্টোবের সুপ্রিম কোর্টে খালাস দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশটির ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদসহ দেশজুড়ে চলে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। সেইসঙ্গে বিচারকদের হত্যার হুমকি দেয়। এতে নেতৃত্ব দেয় উগ্র-ডানপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)।
গত সপ্তাহে হাইকোর্টের এক নির্দেশে ইসলামপন্থীরা সরকারের সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর কঠোর নির্দেশে তাদের বিক্ষোভও স্থগিত করে। আসিয়া বিবিকে পাকিস্তান থেকে বের হতে না দেয়ার দাবিও সরকার মেনে নেয়।
পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, সহিংসতা রুখতে ইসলামপন্থীদের সাথে সমঝোতার কারণে আসিয়া বিবির দেশত্যাগে বাধা দিতে তারা আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
আসিয়ার স্বামী বলছেন, তারা মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তারা অন্যদেশে আশ্রয় চান। ইতোমধ্যে ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের আশ্রয় দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
আসিয়া বিবি নামে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে পরিচিত হয়ে ওঠলেও তার মূল নাম আসিয়া নওরিন। ২০০৯ সালের জুন মাসে প্রতিবেশী মুসলিম নারীদের সঙ্গে ঝগড়ার সময় মুহাম্মদ (সা.) কে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। শুরু থেকেই আসিয়া তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও পরবর্তীতে মারধর ও নির্যাতনের মাধ্যমে তার থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়া হয় বলে জানান তার আইনজীবীরা।
গত ২০১০ সালের ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়া হয়। ২০১৫ সালে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। পরে দীর্ঘ আট বছর পর এ রায় বাতিল করে অক্টোবরের শেষদিন তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে পাক সুপ্রিম কোর্ট।
ব্লাসফেমি আইনে পাকিস্তানে বিভিন্ন আইনে সাজা হলেও আসিয়া বিবিকেই প্রথম মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত। তবে ধর্ম অবমাননার দায়ে ১৯৯০ সাল থেকে অন্তত ৬৫ জনকে হত্যা করে উগ্রবাদীরা। ধর্ম অবমাননার দায়ে মূলত আহমদিয়া সম্প্রদায় ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুরাই এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে দেশটিতে।
এই আইনকে ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে নিহত হয়েছেন মুসলিমরাও। আসিয়া বিবির মামলায় উগ্রপন্থীদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে পাঞ্জাব রাজ্যের গভর্নর সালমান তাসিরকে। তার দেহরক্ষী মুমতাজ কাদির গুলি করে তাকে হত্যা করে। একইভাবে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টিকেও গুলি করে হত্যা করা হয় আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরোধিতা করায়।
ডন তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ইতোমধ্যে আসিয়ার আইনজীবী সাইফুল মুলক প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে নেদারল্যান্ডে চলে গেছেন। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে তবেই দেশে ফিরবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।