সাধ্যের মধ্যে লক্ষ্য পেয়েও পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জর্জরিত বাংলাদেশের স্পিন বিষে। চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনেই রোমাঞ্চকর এক জয় পেল সাকিব আল হাসানের দল।
নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার ক্যারিবীয়দের ৬৪ রানে হারায় বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তারা এগিয়ে থাকল ১-০ ব্যবধানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রানে গুঁড়িয়ে যায় স্বাগতিক দল। তৃতীয় দিন তাদের ইনিংস টিকে মাত্র দেড় ঘণ্টা। শেষ ৫ উইকেটে আসে ৭০ রান। উইকেটে থিতু হয়েও লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি মুশফিকুর রহিম (১৯), মেহেদী হাসান মিরাজ (১৮) ও মাহমুদউল্লাহ (৩১)। শেষ তিন উইকেটের পতন হয় মাত্র ৩ রানে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু ২৬ রানে নেন ৪ উইকেট। ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট চেইস। দুই উইকেট নেন জোমেল ওয়ারিক্যান।
জয়ের জন্য ২০৪ রানের লক্ষ্য পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই রান তাড়ায় তিন স্পিনার তাইজুল ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ পারফরম্যান্সে ১৩৯ রানে গুঁড়িয়ে যায় তারা।
মাত্র ১১ রানে চার উইকেট হারিয়ে শুরুতেই পথ হারিয়ে ফেলে অতিথিরা। প্রথম আঘাতটি আসে দলীয় পাঁচ রানে। সাকিব আল হাসানের বল খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন ওপেনার কাইরন পাওয়েল।
বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে দুইশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন স্পিনার সাকিব। আর অলরাউন্ড নৈপুণ্যে গড়েন একটি বিশ্ব রেকর্ড। সবচেয়ে কম টেস্ট খেলে তিন হাজার রান করার পাশাপাশি দুইশো উইকেট নিলেন তিনি।
প্রথম ইনিংসে সাকিবের শিকার হয়েছিলেন শাই হোপ। এবারও তার বলে উইকেট ছাড়া হলেন টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মারতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন মাত্র তিন রান করা হোপ। উইন্ডিজের রান তখন দুই উইকেটে ১১।
নাঈম হাসানের জায়গায় বোলিংয়ে এসে শুরুতেই আঘাত হানেন তাইজুল। তার করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (৮)। ওভারের পঞ্চম বলে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পান রোস্টন চেইস। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি পাঁচ নম্বরে নামা এই ব্যাটার। দলীয় ১১ রানে চার উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয়দের মারাত্মক ব্যাটিং বিপর্যয়ে শেষ হয় দিনের প্রথম সেশন।
লাঞ্চের পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে ছোট একটি প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সুনিল আমব্রিস ও শিমরন হেটমায়ার। ৩৩ রানের এই জুটিতে ফাটল ধরান মিরাজ। এই অফ স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে নাঈমের হাতে ধরা পড়েন ১৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ২৭ রান করা হেটমায়ার। প্রথম ইনিংসেও মিরাজের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
দলীয় ৫১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেন ডাওরিচকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন তাইজুল। রিভিউ নিয়েছিলেন ডাওরিচ। কাজে আসেনি। জয়ের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রাখেন আমব্রিস। সপ্তম উইকেটে বিশুর সঙ্গে জুটিতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৮ রানেই এই জুটি ভেঙে দেন তাইজুল। তার বলে বোল্ড হন বিশু। ৬৯ রানে সাত উইকেট নেই ক্যারিবীয়দের। ছয় রান যোগ হতেই কেমার রোচকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সপ্তমবারের মতো ক্যারিয়ারে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন তাইজুল।
নবম উইকেট জুটিতে ঝিলিক দেখান আমব্রিস ও জোমেল ওয়ারিক্যান। দলীয় রান ৭৫ থেকে ১৩৮ এ নিয়ে যান তারা। ৬৩ রানের এই জুটিতে ফাটল ধরান মিরাজ। তার বলে মিড উইকেটে দারুণ এক ক্যাচে ওয়ারিক্যানকে উইকেট ছাড়া করেন সাকিব। এর আগে ৫৫ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৪১ রান করেন দশ নম্বরে ব্যাট ওয়ারিক্যান।
বাংলাদেশের জন্য জয়টা হয়ে যায় কেবল সময়ের ব্যাপার। খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। ওয়েস্ট উন্ডিজ আর এক রান করতেই হারিয়ে ফেলে শেষ উইকেটটি। তাইজুলের বলে কট বিহাইন্ড হন চারে ব্যাট করতে নামা আমব্রিস। দলের পক্ষে তিনিই করেন সর্বোচ্চ রান, ৪৩। ৬২ বলে খেলা তার ইনিংসটিতে রয়েছে চারটি বাউন্ডারির মার।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাইজুল সবচেয়ে সফল। ১১.২ ওভারে মাত্র ৩৩ রানে নেন ছয় উইকেট। দুটি করে উইকেট সাকিব ও মিরাজের।
৩০ নভেম্বর ঢাকায় শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩২৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১২৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২০৪) ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ (ব্র্যাথওয়েট ৮, পাওয়েল ০, হোপ ৩, আমব্রিস ৪৩, হেটমায়ার ২৭, ডাওরিচ ৫, বিশু ২, রোচ ১, ওয়ারিক্যান ৪১, গ্যাব্রিয়েল ০*; সাকিব ৭-০-৩০-২, নাঈম ৭-১-২৯-০, তাইজুল ১১.২-২-৩৩-৬, মিরাজ ৮-১-২৭-২, মোস্তাফিজ ২-০-১১-০)
ফল: বাংলাদেশ ৬৪ রানে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ
ম্যাচ সেরা: মুমিনুল হক