বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

কোত্থেকে এতো অস্ত্র পায় সৌদি আরব?

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২৪ পিএম

ইয়েমেন যুদ্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সৌদি আরবে অস্ত্র রফতানি সীমিত করলেও রিয়াদের আমদানি কমেনি। দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেন সৌদি আরবে অস্ত্র রফতানি নাটকীয় পর্যায়ে সীমিত করে এনেছে। তা সত্ত্বেও ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ৩৮ শতাংশ বেশি অস্ত্র কিনতে সমর্থ হয়েছে তারা। কোত্থেকে এলো এতো অস্ত্র?

এসআইপিআরআই-এর পরিসংখ্যান বলছে, রিয়াদের আমদানিকৃত অস্ত্রের অর্ধেকেরও বেশি আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এছাড়া যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এবং বাকি বিশ্ব থেকে আসে ২৫ শতাংশের বেশি। চীন-রাশিয়াও সেখানকার অস্ত্র বাজার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ইয়েমেনে ২০১৫ সালে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি আরব। জাতিসংঘ এই অভিযানকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মনুষ্যসৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করেছে। ইয়েমেনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের জেরে বেশ কয়েকটি দেশ সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি সীমিত করে।

এদিকে গত অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে নৃশংস কায়দায় হত্যার জেরে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল রেছে ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড। দুই দিন আগে জার্মানি সৌদি আরবে সকল প্রকার অস্ত্র রফতানি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পরই দেশ দুটি এমন পদক্ষেপ নেয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাটকীয়ভাবে সৌদি আরবে অনেক অস্ত্র রফতানিকারকের বিক্রি কমেছে। এসআইপিআরআই পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালে সৌদিতে ৮৪৩ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করলেও ২০১৭ সালে তা নেমে আসে ৪৩৬ মিলিয়ন ডলারে। ফ্রান্সের রফতানিকারকরা ২০১৫ সালে সৌদিতে ১৭৪ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি করলেও ২০১৬ সালে তা ৯১ মিলিয়ন এবং ২০১৭ সালে তা নেমে দাড়ায় ২৭ মিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে স্পেনের রফতানিকারকদের রফতানিও কমেছে নাটকীয় পর্যায়ে।

বিভিন্ন দেশের রফতানি সীমিতকরণ সত্ত্বেও ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সৌদি আরবে আমদানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। এসআইপিআরআই’র পরিসংখ্যান বলছে, এর নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন বিগত ওবামা প্রশাসনের তুলনায় রিয়াদে দ্বিগুণ অস্ত্র রফতানি করেছে। ২০১৬ সালে সৌদিতে যুক্তরাষ্ট্র ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি করলেও ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে। জার্মানিও ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ তে অস্ত্র রফতানি ১৪ মিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০৫ মিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছে।

সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে জার্মানি। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর দেশটি সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন অস্ত্রচুক্তি বাতিল করে। ধারণা করা হচ্ছে, সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার কারণে চলতি বছরে সৌদি আরবে অস্ত্র রফতানি কমবে জার্মানির।

এসআইপিআরআই’র তথ্য মতে, চীন রিয়াদে খুব সামান্য পরিমাণে অস্ত্র রফতানি করলেও সেই বাজার বাড়ছে। সেখানকার ড্রোনের বাজার ধরতে চাইছে তারা। রাশিয়াও সেখানে অল্প পরিমাণে অস্ত্র রফতানি করে কিন্তু সে সংক্রান্ত তথ্য এসআইপিআরআই’র কাছে নেই। তবে সংস্থাটির সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়েজেম্যান বলেন, “গত ১০-১৫ বছর ধরে সৌদি আরবের অস্ত্র বাজারে প্রবেশ করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে।”

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত