জাহাজ আটক করা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় মার্শাল ল’ জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পোরোশেঙ্কো। সোমবার রাতে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট এই আদেশ অনুমোদন করে।
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, বুধবার থেকে টানা ৩০ দিন এ আইন কার্যকর থাকবে।
রোববার সকালে অধিকৃত ক্রিমিয়ার সমুদ্রসীমায় ঢুকে পড়লে ইউক্রেনের তিনটি জাহাজ আটক করে রাশিয়া। এ ঘটনায় ইউক্রেনের কয়েকজন কর্মকর্তা আহত হন। এনিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
রাশিয়ার দাবি, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশনের ১৯ ও ২২ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে ইউক্রেন। তবে ইউক্রেনের নৌবাহিনী দাবি করেছে, রাশিয়াই মূলত ক্রিমিয়া সীমান্তে তাদের জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
আলজাজিরা বলছে, প্রেসিডেন্টের মার্শাল ল’ জারি দেশটির পরবর্তী নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। নির্বাচনে নিজের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে পেদ্রো বিশেষ কিছু করতে চাচ্ছিলেন। তার সমালোচক ও জোটের অন্য সদস্যরা সন্দেহ করছেন, সামরিক আইন জারি এমন কিছুরই প্রতিফলন।
কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যকার উত্তেজনায় বড় ধরনের কোনো সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে ৫৩ বছর বয়সী পেদ্রো জানান, মার্শাল ল’ জারির এ সিদ্ধান্ত কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা নয়।
ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলকে তিনি বলেন, “কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরিকল্পনা নেই ইউক্রেনের।”
পেদ্রো আরো বলেন, ‘মিনস্ক চুক্তি’ মেনে চলবে ইউক্রেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে ইউক্রেন এই শান্তি চুক্তি করে।
এর আগের বছর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলে পূর্ব দানেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন।
এদিকে জাহাজ আটকের ঘটনায় এক জরুরী অধিবেশন ডাকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। ইউক্রেন মার্শাল ল’ জারির সিদ্ধান্ত নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি রাশিয়াকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “আজোভ সমুদ্রে জাহাজ আটক ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ‘ভয়ানক লঙ্ঘন’।” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার এমন ‘উদ্ধত’ আচরণের প্রতি নিন্দা জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
নিকি বলেন, রাশিয়ার এমন ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার স্বাভাবিক সম্পর্ককে ব্যাহত করছে।
তবে জাতিসংঘের রাশিয়ান উপ-প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিন্সস্কি বলেন, “আমাদের দেশ (রাশিয়া) শুরুতে আঘাত হানেনি। পশ্চিমা গোষ্ঠীর সমর্থন পেতেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়েছে ইউক্রেন।”