হিমালয় পর্বতমালা শিগগিরই প্রলয়ঙ্ককারী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৫ বা এর চেয়ে বড় মাত্রার ভূকম্পনে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।
ভারতের বেঙ্গালুরুর ‘জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চ’-এর একদল গবেষক হিমালয়ের ভূকম্পন নিয়ে গবেষণা চালান। ভূকম্পবিদ সি পি রাজেন্দ্রনের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাকর্মটি ‘জিওলজিকাল জার্নাল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দিন ধরে হিমালয়ের নিচের প্লেটে চাপ বাড়ছে। প্লেটের একটি অংশ আরেকটি অংশের উপর কয়েকশো বছর ধরে চাপ বাড়িয়ে চলছে। ভূগর্ভস্থ প্লেটের পক্ষে এখন আর চাপ সহ্য করা সম্ভব নয়। অন্তত ৮ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প এখন সময়ের অপেক্ষা।
এনডিটিভি ও আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম নেপালের মোহন খোলা ও ভারতের চোরগলিয়া অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। স্থানীয় ভূ-স্তরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ও গুগল আর্থের বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে এলাকার ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা।
রাজেন্দ্রনের দাবি, মাটির তলার চাপ যে জায়গায় পৌঁছেছে, সেখানে একটি অংশ প্রায় ১৫ মিটার দূরে সরে যেতে পারে। এই প্রভাব বহু গুণে বেড়ে উপরিভাগে পৌঁছাবে। এই মুহূর্তে এর ভয়াবহতা কল্পনাও করতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।
২০১৫ সালে হিমালয়ের নেপালের অংশে হওয়া ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল ৮ দশমিক ১। এতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৯ হাজার মানুষ। দেশটির অর্থনীতি পড়ে যায় ধ্বংসের মুখে যা থেকে এখনো পুরোপুরি বেরোতে পারেনি পর্বতরাষ্ট্রটি। ২০০১ সালে গুজরাটে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭। এতে কমপক্ষে ১৩ হাজার প্রাণহানি ঘটে।
গবেষকরা বলছেন, হিমালয়ে সর্বশেষ এই মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৩১৫ থেকে ১৪৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এরপর থেকে মাটির তলায় চাপ বেড়েই চলেছে। এখন সেই চাপ বেরিয়ে হিমালয়ে ভূমিকম্পন ঘটাবে।
হিমালয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে উত্তর ভারত। রাজেন্দ্রন বলেন, “এই মাত্রার কম্পনের পরিণতি হবে মারাত্মক। অপরিকল্পিতভাবে হিমালয়ে বসবাস করছে নানা জনপদ। এই প্রলয় সামাল দেওয়ার কোনো প্রস্তুতিও এই মুহূর্তে ভারতের নেই। গত কয়েক বছর ধরেই হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে আমরা ছোট ছোট কম্পন লক্ষ্য করছি; যা বড় মাত্রায় কেঁপে ওঠার লক্ষণ।”
ভারতীয় গবেষকদের এই দাবিকে পুরোপুরি সমর্থন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রজার বিলহ্যাম দীর্ঘ দিন ধরে হিমালয়ে ভূকম্পনের মাত্রা নিয়ে গবেষণা করছেন।
তিনি বলেন, “ভারতীয় বিজ্ঞানীরা যে সতর্কবার্তা দিয়েছেন, তা একদম সঠিক। শক্তিশালী একটি ভূমিকম্পের সময় আসন্ন। যদিও সেই ভূমিকম্পের তীব্রতা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বোধহয় একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। আমাদের হিসাবে এই ভূকম্পনের তীব্রতা রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৭ ছুঁতে পারে। এই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়বে ভারতের পূর্ব আলমোড়া থেকে নেপালের পশ্চিম পোখরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।”