চীনের নামকরা পুঁজিপতি জ্যাক মা আদর্শে একজন কমিউনিস্ট। ই-কমার্সের জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বর্তমানে বিশ্বের পুঁজিবাদী বাজার কাঁপিয়ে দেয়া এই ধনকুবের ব্যক্তিত্বর রাজনৈতিক মতাদর্শ কমিউনিজম। শুনতে অবাক লাগলেও দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি এমন তথ্য জানিয়েছে।
ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা জ্যাক মা দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। সোমবার পিপলস ডেইলি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এমন তথ্য বিস্মিত করেছে সবাইকে।
বাণিজ্য পরামর্শক সেইসঙ্গে আলিবাবা প্রতিষ্ঠায় জ্যাক মা-কে নিয়ে আলোচিত বই ‘আলিবাবা: দ্য হাউজ দ্যাট জ্যাক মা বিল্ট’-এর লেখক ডানকান ক্লার্ক বলেন, এটা নিয়ে আগে জল্পনা-কল্পনা থাকলেও এভাবে কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
তিনি বলেন, জ্যাক আগে কখনো এ বিষয়ে আলোচনা করেননি। তবে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এবং তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিক দিয়ে এই বৈপরিত্য আসলে দারুণ কিছু।
প্রকৃতপক্ষে, বেইজিং সরকার থেকে নিজেকে কিছুটা দূরত্বে রাখতে দেখা যায় জ্যাককে। ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার কর্মকর্তাদের উপদেশ দিই এভাবে- তোমরা সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখবে সেটা ঠিক আছে। বিষয়টা হবে এমন- তাকে ভালোবাসবে, কিন্তু বিয়ে করবে না।”
ডানকান বলছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি দলের সুনাম ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন। দলের মুখপত্র পিপলস ডেইলি’র মাধ্যমে পার্টির সদস্য পরিচয়ে জ্যাকের খবরটি প্রকাশ করে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। শি’র কাছে আগে পার্টিরই প্রাধান্য। তবে জ্যাক জানেন কখন কী প্রয়োজনে কীভাবে কথা বলতে হবে।
হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মানববিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন কেলি সাই বলেন, সম্প্রতি এক জরিপে ওঠে এসেছে- চীনের বেসরকারি খাতে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।
পিপলস ডেইলি জানাচ্ছে, শুধু জ্যাকই নয়, চীনের আরেক ব্যবসায়িক ধনকুবের টেনসেন্ট হোল্ডিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী পনি মা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, সেইসঙ্গে দেশটির জাতীয় প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যও। একইভাবে তার মতো দেশটির আরেক নামকরা ধনী প্রযুক্তি জায়ান্ট বাইদু’র প্রধান নির্বাহীও পার্টির সদস্য। দেশটির জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শক পর্ষদেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি।
একজন সদস্য হিসেবে পার্টিকে নিয়মিত চাঁদা দেওয়া জ্যাকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। পার্টি কর্তৃক নির্ধারিত হারেই এ চাঁদা দিতে হয়। মূলত মাসে ১০ হাজার ডলার (১৪৪১ ডলার) আয় করলেই মাসে দুই শতাংশ করে চাঁদা দিতে হয় যে কোনো সদস্যকে। জ্যাক যদিও কখনো নিজের আয় প্রকাশ করেননি। তবে ফোর্বসের মতে, তিনি ৩৫.১ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক।
একজন সদস্যকে পার্টির স্বার্থ্যকেও বেশ গুরুত্ব দিতে হয়। কিন্তু আলিবাবা ও পার্টির মধ্যকার কোনো ইস্যুতে কাকে গুরুত্ব দিবেন জ্যাক মা- এমন প্রশ্নের উত্তরে আলিবাবার একজন মুখপাত্র ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, “আমাদের কোনো কর্মকর্তার রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ও নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলবে না। এই ডিজিটাল সময়ে যেকোনো জায়গায় সহজে ব্যবসা করতে আমরা ওই দেশের আইন অনুসরণ করে থাকি।” তবে জ্যাক কতদিন ধরে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি তিনি।