মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বইয়ের ফেরিওয়ালা গীতিকবি আবদুল হালিম

আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:৩৪ এএম

বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও থামেননি গীতিকবি আবদুল হালিম। পথে-প্রান্তরে, হাটে-বাজারে ৬২ বছর ধরে হেঁটে হেঁটেই বই বিক্রি করে চলেছেন তিনি। চোখের জ্যোতি কিছুটা কমে এলেও ৮২ বছর বয়সেও লাঠি ছাড়াই তিনি বই নিয়ে হেঁটে চলেন মাইলের পর মাইল।

গীতিকবি আবদুল হালিম কবিতার পাশাপাশি গান ও আঞ্চলিক ভাষায় ছড়াও লিখে থাকেন। জীবনের শেষ ইচ্ছের কথা জানাতে গিয়ে আবদুল হালিম আবেগাক্রান্ত হয়ে দেশ রুপান্তরকে বলেন, "বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির পিতাকে নিয়ে একটি গীতিকবিতা লিখেছিলাম। ওই গানটি যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শোনাতে পারতাম তাহলে মনে হয় মরে গিয়েও শান্তি পেতাম।"

পটুয়াখালীর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহমান গাজীর ছেলে কবি আবদুল হালিম।

পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর মক্তবের শিক্ষক গীতিকবি আবদুল মান্নানের অনুপ্রেরণায় বই বিক্রি ও গুরুকে অনুসরণ করে নিজেও লেখা শুরু করেন। গান, কবিতা ও ছড়া মিলিয়ে আবদুল মান্নানের সঙ্গে যৌথভাবে আবদুল হালিমের প্রথম বই  প্রকাশিত হয়। গ্রামে-গঞ্জে সেসব বই ফেরি করতে করতে পাঠকের আগ্রহে শুরু করেন একক বই প্রকাশের কাজ।

সমসাময়িক আলোচিত ঘটনা ছাড়াও পাঠকের চাহিদায়ও নানা বিষয়ে লিখতে শুরু করেন একের পর এক গীতিকবিতা। স্বাধীনতার ইতিহাস, সাত খুনির ফাঁসি, এরশাদ শিকদারের ফাঁসিসহ প্রায় শতাধিক বই তিনি রচনা করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী, ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকান্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও লিখেছেন বেশ কয়েকটি গীতিকবিতার বই।

তিনি জানান, পত্রিকা পড়ে পাঠকের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সে সব ঘটনা নিয়ে কবিতা লিখতাম। অনেক সময় টাকা থাকত না। ধারদেনা করতাম। না পেলে ছাপাখানার মালিককে ধরে সেসব ছাপাতাম।

এই বই বিক্রি করেই ৬২ বছর ধরে তিনি চালিয়েছেন পরিবারের ভরণ-পোষণ। সন্তানদের লেখাপড়া। বর্তমানে তার একছেলে মাওলানা পাশ করে মাদ্রাসায় এবং এক মেয়ে পরিবার পরিকল্পনায় চাকরি করছেন। ছোট ছেলে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে (বিএ) পড়ছেন।

এলাকার বাসিন্দা আজিজ আহমেদ বলেন, সেই ছোটবেলা থেকেই আবদুল হালিমকে কলাপাড়াসহ বিভিন্ন হাটে বই বিক্রি করতে দেখছি। সমসাময়িক ঘটনার উপর তার লেখা অনেক কবিতার বই কিনে পড়েছি।

কবি আবদুল হালিম একজন গুণী ব্যক্তি উল্লেখ করে আউলিয়াপুর ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন ভুট্টু বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি তিনি বই লিখে হাটে বাজারে ঘুরে ঘুরে তা বিক্রি করছেন। ছন্দে সুরে কবিতা শুনতে ছোটবেলায় অবসর সময়ে তার কাছে ছুটে যেতাম। ।  

গীতিকবি আবদুল হালিম আক্ষেপ করে বলেন, এখন আর আগের মত গীতিকবিতার বই বিক্রি হয় না। টেলিভিশন আর মোবাইলে গ্রামের মানুষও সব খবর জেনে যায়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত