সব শঙ্কা দূর করে সেরা চারে থেকে বিপিএলের লিগ পর্ব শেষ করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। নিজেদের তথা লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইটান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের ঢাকা। ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বর জায়গাটা নিশ্চিত হলো দলটির। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট থাকলেও নেট রানরেটে পিছিয়ে থেকে সেরা চারে থাকা হলো না মেহেদী হাসান মিরাজের দল রাজশাহী কিংসের।
শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১২৩ রান করে খুলনা। টি-টোয়েন্টির জন্য যা মোটেও কঠিন কোনো লক্ষ্য নয়। আবার মিরপুরের উইকেটের কথা ভাবলে এই রান তাড়াতেও নির্ভার থাকার উপায় কোথায়! ঢাকা অবশ্য বাঁচা-মরার ম্যাচটি জিতেছে দাপুটে পারফরম্যান্সে। ৫.১ ওভার বাকি থাকতেই মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দলটি। খুলনা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছিল অনেক আগেই।
১২৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঝড় তুললেন সুনিল নারিন। মাত্র ২.৪ ওভারেই উপুল থারাঙ্গাকে নিয়ে যোগ করেন ৪৩ রান। ক্যারিবিয়ান তারকা তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ফেরার আগে ১৩ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন।
শুভাশিস রায়ের প্রথম ওভারেই ১৫ রান তোলে ঢাকা। পরের ওভারে আসে ১১ রান। মোহাম্মদ সাদ্দাম দলের তৃতীয় ওভার করতে এসে নারিনকে ফেরান। কিন্তু তার আগে তাকে দুটি ছক্কা হাঁকান নারিন।
এরপর থারাঙ্গার ব্যাটে এগিয়েছে ঢাকা। তিনে নেমে সাকিব ১ রানের বেশি করতে পারেননি। তাকে তাইজুল ইসলামের হাতে ক্যাচ বানান মাহমুদউল্লাহ। এক ওভার পরই মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই তাইজুলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মিজানুর রহমান। ৭২ রানে ৩ উইকেট হারায় ঢাকা।
কিন্তু লক্ষ্যটা ছোট হওয়ায় ঢাকার জন্য জয়টা কঠিন মনে হচ্ছিল না কখনোই। এর মাঝে দলীয় ৮৮ রানে বিদায় নেন থারাঙ্গা। আফগান তারকা হজরতউল্লাহ জাজাই ফেরার পর ডায়নামাইটস নিজেদের তাঁবুতে ভিড়িয়েছে এই লঙ্কানকে। কুমিল্লার বিপক্ষে শূন্য রানের ইনিংস খেললেও এদিন ৪২ রান করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেন। তার ৩০ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছক্কা।
ঢাকার হয়ে বাকি কাজটা সেরেছেন নুরুল হাসান সোহান ও কিয়েরন পোলার্ড। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনের অবিচ্ছিন্ন থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। এই জুটির সংগ্রহ ছিল ৩৬ রান। সোহান ২৬ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন ১ ছক্কা ও ২ চারে। পোলার্ড ১৫ বলে অপরাজিত ৯ রান করেন।
এর আগে দারুণ বোলিং করলেন ঢাকার বোলাররা। মাত্র ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে খুলনা। জুনায়েদ সিদ্দিকিকে ব্যক্তিগত ২ রানে ফিরিয়ে ঢাকার উইকেট উৎসব শুরু করেন রুবেল হোসেন। এরপর ভালো খেলতে থাকা ব্রেন্ডন টেইলরকে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। ডেভিড মালানও ৭ রানে ফিরে যান। তাকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান রুবেল।
এরপর খুলনার কেউ বড় স্কোর করতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্তর ২৪ ও ডেভিড ভিসার ৩০ রানে কোনো রকমের পুঁজি গড়ে খুলনা।
২৭ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ৩০ রান করে রান আউট হন ভিসা। সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২০ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৪ রান করেন শান্ত। এ ছাড়া ওপেনার ব্রেন্ডন টেলর ১৮ রান করেন। ১২ রান এসেছে তাইজুল ইসলামের ব্যাট থেকে।
ঢাকার পক্ষে সর্বাধিক ২টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও রুবেল হোসেন। ১টি করে উইকেটে নিয়েছেন সুনিল নারিন ও কাজি অনিক।
৪ ফেব্রুয়ারি এলিমিনেটর ম্যাচে তিনে থাকা চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে খেলবে ঢাকা। জয়ী দল সুযোগ পায়ে ৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলা। রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মধ্যকার প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে জয়ী দল চলে যাবে ফাইনালে। হেরে যাওয়া দল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলবে এলিমিনেটর ম্যাচে জয়ীদের সঙ্গে। সেই ম্যাচে জয়ীরা পাবে ফাইনালের টিকিট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা টাইটান্স: ১২৩/৯ (২০ ওভার) (টেইলর ১৮, মাহমুদউল্লাহ ১৪, শান্ত ২৪, ভিসা ৩০, তাইজুল ১২; রুবেল ২/২৭, সাকিব ২/৩২)
ঢাকা ডায়নামাইটস: ১২৪/৪ (১৪.৫ ওভার) (থারাঙ্গা ৪২, নারিন ৩৫, সোহান ২৭*, পোলার্ড ৯*; মাহমুদউল্লাহ ২/১৪)
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: উপুল থারাঙ্গা।