দরিদ্র পরিবারের ঝরেপড়া শিশুদের পড়াতে বিনে পয়সার এক ব্যতিক্রমী পাঠশালা গড়েছেন পাবনার তাহেরুল ইসলাম মাস্টার। হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাড়ি থেকে এনে পড়ান পাঠশালায়, অক্ষর জ্ঞান হলে ভর্তি করে দেন স্কুলে। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে নয়, নিজ পেনশনের টাকা থেকেই চলছে তার পাঠশালার কার্যক্রম। আট বছর আগে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করা এ পাঠশালায় এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। কোচিংনির্ভর শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের যুগে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত তাহেরুল মাস্টারের বিনে পয়সার পাঠশালা।
ঈশ্বরদী পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ড রেলগেট ছাড়িয়ে ঈশ্বরদী-রূপপুর মহাসড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে বেশ কিছু বস্তিঘর। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ছিন্নমূল মানুষ ও দিনমজুর পরিবারগুলোর বসতি এখানে। সেসব দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই তাহেরুল মাস্টার গড়ে তোলেন এ পাঠশালা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরুল ইসলাম দীর্ঘদিন বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেছেন ঈশ্বরদীর বিভিন্ন স্কুলে। ১৯৭৩ থেকে টানা ৩৭ বছরের চাকরি জীবনের মুক্তি মেলে ২০১০ সালের এপ্রিলে। কিন্তু শিক্ষকতার নেশা রক্তে ঢুকে যাওয়া তাহেরুলের সে মুক্তি ভালো লাগেনি। রূপপুর সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসরের পরও ছাত্রছাত্রীদের টানে প্রতিদিনই ছুটে যেতেন স্কুলে। তবু পড়াতে না পাড়ার যন্ত্রণা যেন তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে রেলওয়ের জায়গায় কড়ইতলায় পাঠশালা খুলে সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি খোঁজেন তাহেরুল মাস্টার।
সরেজমিনে তাহেরুল মাস্টারের পাঠশালায় গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাকরি জীবনে ইচ্ছা ছিল এদের জন্য কিছু করার। উপজেলা শিক্ষা অফিস বিনামূল্যের বই দিয়ে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া বাকি সব খরচ নিজেই বহন করি।পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষক তাহেরুল ইসলামের পাঠশালা নতুন কোনো স্থানে স্থাপনে জেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।