বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

দূতাবাসে নিয়োগ পাচ্ছে পুলিশ

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:৫০ এএম

-মাদকবিরোধী অভিযানে বিশেষ ইউনিট গঠনের দাবি

-মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন

বিদেশি দূতাবাসগুলোতে প্রেষণে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য বিশেষ শাখা ও মামলা নিষ্পত্তিতে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র বৃদ্ধিসহ একাধিক প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তোলা দাবিগুলোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা জানান। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা খোলামেলা কথা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জঙ্গি ও মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে পুলিশের বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জনসংখ্যার চেয়ে পুলিশের জনবল অনেক কম থাকার ও থানাসহ বিভিন্ন ইউনিটিতে পরিবহন সংকটের কথা তুলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাস পুলিশ ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শিল্প পুলিশ নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দূতাবাসগুলোতে পুলিশের কোনো সদস্য নেই। অন্যান্য বাহিনীর মতো পুলিশও দূতাবাসগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হলে বাংলাদেশের লোকজন বেশি উপকৃত হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমরা অনেক দাবি উত্থাপন করেছি। প্রধানমন্ত্রী সব দাবিই ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। বাইরের দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে পুলিশের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এসপি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়োগ পাবেন বলে আশা করছি।’

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি দূতাবাসগুলোতে আমি একজন করে অফিসার দেওয়ার কথা বলেছিলাম। আমার ধারণা ছিল যে অফিসারটা আমাদের এসবি থেকে যাবে, অর্থাৎ পুলিশ থেকেই যাবে। কিন্তু পাঠানো হলো সব প্রশাসন থেকে। এটা কেন করা হলো আমি জানি না। এখানে আমাদের সচিবসহ সবাই আছেন। আমি যেটা মনে করে বলেছিলাম, একটা লোক বিদেশে থাকে তার পাসপোর্টটা দিতে হবে সেখানে। তাহলে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না বা এই তথ্যগুলো কে দিতে পারবে? এটা পুলিশ বা এসবির লোক দিতে পারবে। একজন প্রশাসনের কর্মকর্তা তো তা পারবে নাÑএটা হলো বাস্তবতা। আমরা আগামী দিনে এটা ঠিক করব।’

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে দূতাবাস বা মিশনে অ্যাম্বাসাডর বা হাইকমিশনারের অধীনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রশাসন বা অর্থনৈতিক ক্যাডারসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদেরও প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাসপোর্ট যাচাই ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্ত করার মতো দক্ষ জনবল না থাকায় সমস্যার মুখোমুখি হয় দূতাবাসগুলো। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দূতাবাসে পুলিশ না থাকায় পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘপ্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন প্রবাসীরা। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই দীর্ঘদিন ধরে বাইরের দেশের দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ঝুলে ছিল। এর প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে এবার সম্মতি দিয়েছেন।

মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তা ও মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য পুলিশের বিশেষ ইউনিট গঠন, মাদকাসক্ত সংশোধনাগারের সংখ্যা বাড়ানো, পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট ও পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও পুলিশ কর্মকর্তারা তুলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তফা কামাল উদ্দীন, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (হাইওয়ে) আতিকুল ইসলাম, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বক্তব্য রাখেন। তাছাড়া সিআইডির প্রধান শেখ হেমায়েত হোসেন, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, এসবির প্রধান মীর শহীদুল ইসলামসহ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত