কোন লাইট কোন ঘরে ভালো মানাবে, কোন আলো চোখের জন্য ভালো এসব কিছুই মাথায় রাখতে হয় আধুনিক গৃহসজ্জায়। বাড়িতে কোথায় কেমন আলো ব্যবহার করবেন জানা দরকার। বাজার ঘুরে বিভিন্ন ধরনের লাইটের খোঁজখবর জানাচ্ছেন কাইয়ুম রানা
বসার ঘরের আলোকসজ্জার বেলায় লাইটগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে ঘর গরম না হয়ে ওঠে। তাই খুব শক্তিশালী হ্যালোজেন বাতিঘরে না রাখাই ভালো। ঘরে দুই ধরনের আলোর ব্যবস্থা রাখা ভালো। একটি হচ্ছে নান্দনিক। সেখানে আলোর পরিমাণ কম থাকবে এবং আলো বেশ রঙিন ও ছড়ানো ছিটানো হবে। আর এক ধরনের আলোক ব্যবস্থা থাকবে। তা হলো সাধারণ। যেখানে দু-তিনটি বেশি পাওয়ারের বাতি থেকে আলো ছড়িয়ে পড়বে ঘরের কোনায়। ঘরে নান্দনিক আলো আনতে স্পট লাইটের বিকল্প নেই। কারণ এই লাইটকে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আর যে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আলো ফেলতে পারলেই ঘরে আলো আঁধার ছোটাছুটি করবে। যদি স্পষ্ট লাইটের সুযোগ না থাকে, তাহলে আলো কোনো মাটির মটকা, বেতের ঝুড়ি অথবা বাঁশের খোলের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে পারেন। এতে ঘরের লাইটিংয়ে বিভিন্ন ডাইমেনশন আসবে। ঘরে কোনো কস্টিউম কর্নার থাকে (অ্যাকুয়ারিয়াম, ফোয়ারা কিংবা
কৃত্রিম গাছের বাগান) সেখানে রঙিন বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বাতির ওপরে অবশ্যই শেড দিয়ে দিন। অন্য সব ঘর আলো ঝকঝকে থাকলেও শোবার ঘরটা হওয়া চাই একটু ব্যতিক্রম। তাই শোবার ঘরের আলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু ভেবে নির্বাচন করুন। শোবার ঘরের আলো একটু হালকা ধরনের হওয়াই ভালো। সাধারণভাবেই হালকা বা ঠা-া রং স্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করতে পারে। আর শোবার ঘরকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়। এর জন্য ঘরের এক কোণে রাখা একটি টেবিল ল্যাম্পই যথেষ্ট। অথবা একটু রোমান্টিকতার ছোঁয়া বুলিয়ে দিতে ব্যবহার করতে পারেন বেশ কয়েকটি সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি। পড়ার ঘর কিংবা শিশুদের ঘরে খুব কম আলো একেবারেই বেমানান। তাই এ ঘরগুলো আলোকিত করতে একাধিক বাতি ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বাজারে বহুল বিক্রীত সিএফএল বাল্ব ব্যবহার করা আরামদায়ক। কেননা এতে ঘর গরম হয়ে যায় না আর আলোকিতও করে বহুগুণ। পড়ার ঘরে বিভিন্ন রকমের আলো ব্যবহার করা হয়। লাইটিং সিটির কর্মচারী তোফায়েল আহমেদ জানান, দুই ধরনের আলো পড়ার ঘরে ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক আলোয় পড়াশোনা করাই সবচেয়ে উপযোগী। এতে চোখে আর মনে খুবই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমন আলো বেছে নিতে হবে যা কিনা দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল। এতে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে। বিশেষত, বাচ্চাদের পড়াশোনা করার পক্ষে খুব ভালোভাবে কাজ দেবে।
ঝুলনো আলোর নানা রকম ব্যবহার আছে। আলোগুলো দারুণ রুচিসম্মত। অনেকটা জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আলোর কণা। পড়ার ঘরে কম্পিউটার থাকলে এই আলো খুব কাজে আসবে।
কোথায় পাবেন
ডেকোরেটিভ লাইটের বেশির ভাগই চীনের তৈরি। বাংলাদেশে সোয়াশ, ক্রিসেন্ট, অন্বেষা ইত্যাদি কোম্পানি ডেকোরেটিভ লাইট ও শেড তৈরি করছে। এর মধ্যে সোয়াশ ও ক্রিসেন্টের পণ্য কেবল তাদের শোরুমে পাওয়া যায়। এ ছাড়া পুরানা পল্টনের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, নবাবপুর, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি ও উত্তরার লাইটিং সিটিতে রয়েছে ডেকোরেটিভ লাইটের দোকান।
দরদাম
পল্টনের লাইট হাউসের কর্মচারী তোফায়েল আহমেদ জানালেন, বিভিন্ন ডিজাইনের লাইটের ওপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারণ করা হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের ওয়াল লাইট, ওয়াল বেকেট, টিউব শেড, স্টাডি লাইট, টেবিল ল্যাম্প ইত্যাদির দাম ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। আবার প্রেনেন্ড লাইট, স্যান্ডেলিয়ার লাইটগুলো ১২ হাজার থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকায় পাওয়া যায়।
মনে রাখবেন
বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে ঘরে আলো লাগানোর পরিকল্পনা করবেন। একটা আলোতেই ঘরের সব কাজ হয় না। ফলে ওয়াল স্কন্স, পেনডেন্ট, টাস্ক লাইট দিয়ে নানাভাবে ঘরের আলো সাজান।
ঘরের দেয়ালের রঙের ওপর নির্ভর করে কত ওয়াটের আলো রাখবেন সেই ঘরে। হালকারঙা দেয়ালে যে আলোয় কাজ হবে, গাঢ় দেয়ালে তাতে কাজ হয় না।
ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যোগ করে যত ফুট হয়, খেয়াল রাখবেন শ্যান্ডেলিয়রের ব্যাস তত ইঞ্চি হবে। কেনার সময়ে এই মাপটা মাথায় রাখবেন। আলো কমানো বাড়ানোর জন্য ডিমার ব্যবহার করতে পারেন।