ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম বড় বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বিপিএলের ফাইনাল পরের দিন। অথচ ঠিক আগের দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিমণ্ডলে হইহই রব নেই! ক্রিকেটারদের দৌড়ঝাঁপ, দল সংশ্লিষ্টদের হাঁকডাক, প্রচুর সাংবাদিকের মেলা, খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনার বারুদের কিছু নেই। এমনকি বাইরে বুথে টিকিট ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনও অনুপস্থিত। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই বুঝি চরিত্র!
আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় ষষ্ঠ বিপিএলের শেষ লড়াই। শিরোপার শেষ যুদ্ধ। সাতটি দলের কোটি কোটি টাকা খরচের টুর্নামেন্টের যবনিকার দিন। একটি দলের ট্রফি নিয়ে উৎসবের দিন। অন্য দলের হৃদয়ভঙ্গের রাত। ৩৪ দিন-রাত, তিন ভেন্যুর ৪৬ ম্যাচের শেষ আঁচড়ের রাত। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের দাঁতে দাঁত চেপে শেষ পর্যন্ত লড়ার মঞ্চ প্রস্তুত। প্রবল হুঙ্কারে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার উপলক্ষ।
গতকাল মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামের এক পাশের প্র্যাকটিস নেট ফাঁকাই রইল। অন্য পাশে সাবেক চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা বেশ ঢিলেঢালা অনুশীলন করে নিল দুপুরে। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস আর কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্টারদের প্রাক ফাইনাল রিপোর্টে তৈরির আধেকটার প্রয়োজন মিটল। কিন্তু বাকিটা? ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের একুশের বইমেলায় যাওয়ার কথা দুপুরে। তাকে নিয়ে লেখা কোনো বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন। একদল তাই বইমেলার দিকে দেয় ছুট। আগের রাতে গেলবারের চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসা সাবেক চ্যাম্পিয়ন ঢাকার অন্য খেলোয়াড়রা দিনটা নিজেদের মতো করে কাটিয়ে দিলেন।
এখন কোটি টাকার প্রশ্নÑ চ্যাম্পিয়নের মুকুট এবার উঠবে কার মাথায়? প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। তৃতীয় আসরে বিপিএল নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। ততদিনে গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিলুপ্তি ঘটেছে। ঢাকা হয়েছে ডায়নামাইটস। ওই একবারই ফাইনালে ঢাকা নামটি ছিল না। চতুর্থ আসরে সাকিবের দল শিরোপা জিতল। কুমিল্লা ফাইনালে উঠতে পারল না। আর গতবার ঢাকাকে ফাইনালে হারিয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর। ওই হারের বদলা নিয়ে ফাইনালে উঠে যাওয়া ঢাকার শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন। কুমিল্লার দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে শতভাগ সাফল্য ধরে রাখার লক্ষ্য শিরোপাটা আবার ঘরে তুলে।
গ্রুপ পর্বের দুই দেখায় কুমিল্লা জিতেছে। ঢাকা প্রচণ্ড গতিতে শুরু করেও পরে হোঁচট খেয়ে চতুর্থ দল হিসেবে শেষ চার নিশ্চিত করেছিল। তারপর দুর্দান্ত তারা দুই নকআউট ম্যাচ জিতে। কুমিল্লা কোচ সালাউদ্দিন মনে করেন, এটা একেবারে নতুন ম্যাচ। গ্রুপ পর্বের হিসাব খাটবে না। ঢাকার পেসার রুবেল হোসেন কুমিল্লাকে প্রবল প্রতিপক্ষ জেনে দারুণ ফাইনালের সম্ভাবনা দেখছিলেন।
ঢাকা ডায়নামাইটস যেবার শিরোপা জিতল সেবার অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। গেলবার রানার্সআপ। ইমরুলের শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতা থাকলেও এবার জিতলে অধিনায়ক হিসেবে হবে প্রথমবার। কিন্তু এর মধ্যে অন্য একটা লড়াই আছে। এবারের বিপিএলের ফাইনালের দুই দলের কোচ দেশি। ঢাকার খালেদ মাহমুদ সুজন। কুমিল্লার সালাউদ্দিন। কার রণকৌশলের শেষে জয় হয় তা কৌতূহল জাগানোর বিষয় বটে।
তবে খেলাটা খেলতে হবে খেলোয়াড়দের। যেখানে ঢাকার বড় শক্তি চার অলরাউন্ডার সাকিব, আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারিন ও কাইরন পোলার্ড। এলিমিনেটর ও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের বাধা পেরুতে এদের বড় ভূমিকা। ব্যাটিংয়ে উপুল থারাঙ্গা, রনি তালুকদার, উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান থাকছেন। শুভাগত হোম নিজেকে অলরাউন্ডার মানলেও ঢাকায় তার বোলিংটা কাজে আসছে। মাহমুদুল হাসান ব্যাকআপ অলরাউন্ডারের মতো। এখনো খুব প্রয়োজন পড়েনি। খাঁটি পেসার রুবেল হোসেন ও কাজী অনিক। টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ২২ উইকেট আর নবম সর্বোচ্চ রান ২৯৮ সাকিবের। তার দিকে একটা চোখ থাকবে সবার।
ব্যাটিংয়ে কুমিল্লার বড় শক্তি ওপেনিংয়ে। তামিম ইকবাল আর ইভিন লুইস। তামিম আগে কখনো শিরোপা জেতেননি। টুর্নামেন্ট রান ৩২৬। ক্যারিবিয়ান লুইসের ২৬৭। এনামুল হক বিজয় ও ইমরুল কায়েসের ওপর খুব ভরসা করা যায়নি। শামসুর রহমান শেষে সুযোগ পেয়ে হঠাৎ ঝলক দেখিয়েছেন। ১৬ উইকেট আর ১৪১ রান নিয়ে অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদি হন্তারক হতে পারেন। থিসারা পেরেরা তো ব্যাটে-বলে ঝড়ের নাম। লিয়াম ডসন কার্যকর একজন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দুই ভূমিকা পালন করতে জানেন। দীর্ঘ ব্যাটিং লাইনআপে দরকারে আছেন মেহেদী হাসান। জিয়াউর রহমান আর ওয়াহাব রিয়াজের কথা ভুলে গেলে সর্বনাশ। টোটাল অলরাউন্ডার দল কুমিল্লা। ঢাকার অলরাউন্ডারদের সঙ্গে কুমিল্লার অলরাউন্ডারের লড়াইও এই ফাইনাল।
লড়াইটা নিঃসন্দেহে জম্পেশ হওয়ার কথা। মধুরেণ সমাপয়েতের জন্য থাকছে চোখকাড়া সমাপনী অনুষ্ঠান। এখন অপেক্ষা চ্যাম্পিয়নের।