ইফতেখার শুভ আমাদের দেশে মনোড্রামা বা একক অভিনীত নাটকের সংখ্যা হাতে গোনা। ফেরদৌসী মজুমদারের ‘কোকিলারা’ দিয়ে সফল সূচনা একক নাটকের। এরপর শিমুল ইউসুফের ‘বিনোদিনী’, লাকী ইনামের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, রোকেয়া রফিক বেবীর ‘গোলাপজান’, মামুনুর রশীদের ‘ডিসটেন্ট নিয়ার’, মুনিরা ইউসুফ মেমির ‘ফুলরানী আমি টিয়া’, মোমেনা চৌধুরীর ‘লাল জমিন’, নাজনীন হাসান চুমকীর ‘সীতার অগ্নিপরীক্ষা’, ফেরদৌসী আবেদীনের ‘স্ত্রীর পত্র’, রোজী সিদ্দিকী ‘পঞ্চনারী আখ্যান’, সামিউন জাহান দোলার ‘নভেরা’, তমালিকা কর্মকারের ‘পুতুলটাকে দেখে রেখো’ ও জ্যোতি সিনহার দুটি নাটক ‘কহে বীরাঙ্গনা’ এবং ‘হ্যাপি ডেইজ’ একক নাটকগুলো মঞ্চে এসেছে। এ ছাড়া আরও একটি নাটক আশাজাগানিয়া। তা হলো পদাতিক নাট্য সংসদের নাটক, শামছি আরা সায়েকা অভিনীত ‘গহনযাত্রা’। রুবাইয়াৎ আহমেদের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। এর গল্পে দেখা যায়Ñ এই ভূখ-ের কোনো এক স্থানে জন্ম হয় উগ্রপন্থার। সেই উগ্রপন্থার অনুসারীরা বিপরীত সব মতবাদ প্রত্যাখ্যান করে শুধুমাত্র একটি মতবাদকেই প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ জন্য তারা চালায় ধ্বংসলীলা, বইয়ে দেয় রক্তগঙ্গা, হত্যা করে অগণিত মানুষ, ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী। ভিন্ন মতাদর্শের এক ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের তারা ধরে নিয়ে বন্দি করে রাখে। বন্দিদশা থেকে পালাতে চায় অনেকে। কিন্তু মারা পড়ে তারা। শুধু একজন বেঁচে যায়। সালমা। কিন্তু বেঁচে গিয়ে ফিরে আসে সালমা। খোলা প্রান্তরে পড়ে থাকা লাশগুলো সমাহিত করবে বলে। এই সময়ে সালমা নিজের অভ্যন্তরে টের পায় অপর কারও অস্থিত্ব। সেই অস্থিত্ব হয়তো তারই বর্ধিত কোনো রূপ কিংবা অপরূপে সে নিজেই অথবা অন্যকিছু। আমরা জানি না। সেই অস্থিত্ব তার সঙ্গী হয়। মৃতদের কবর দেওয়ার পর সালমা খোঁজ করে তার প্রার্থিত পুরুষের। খুঁজে পায় ল্যাম্পপোস্টে ছিন্নমস্তক ঝুলে আছে সেই পুরুষ। সালমা উগ্রপন্থিদের হাতে ধরা পড়ে। তাকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঠিক তখন সালমা উপলব্ধি করে এ তার পরীক্ষা, যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সে পাবে পরমের সান্নিধ্য। সালমার নিজের অন্তর্ধানের মধ্যদিয়ে মঙ্গল কামনা করে, যেন সব অনাচার আর বিভেদ লুপ্ত হয় পৃথিবী থেকে।
নাটকটিতে একক শিল্পীর অভিনয় পরিণত, কোরিওগ্রাফি ও পোশাকে নতুনত্ব আছে। মঞ্চসজ্জা একেবারে সাদামাটা। আলো ও সংগীত প্রক্ষেপণ সাবলীল। আজ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হবে ‘গহনযাত্রা’।