মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

পুঁথিতে অজানা ইতিহাস

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:০৬ এএম

কাঠের তাকে রাখা সারি সারি পুঁথি। তালপাতা, ভূর্জপত্র ও তুলোট কাগজে লেখা। হাতে লেখা সাড়ে আট হাজার পুঁথির এই দুর্লভ সংগ্রহ রয়েছে কুমিল্লার রামমালা গ্রন্থাগারে। কর্র্তৃপক্ষ জানায়, এগুলোর অধিকাংশই বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের। এখন পর্যন্ত খুব কম পুঁথিরই পাঠোদ্ধার করা গেছে। গবেষণা করা হলে এখান থেকে জানা যেতে পারে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্য ইতিহাস।

পুঁথির পাশাপাশি শতাব্দীপ্রাচীন এই গ্রন্থাগারে আছে ১২ হাজার বই ও দুর্লভ পত্রপত্রিকা। সংরক্ষিত রয়েছে প্রবাসী, শনিবারের চিঠি, মৌচাক, পূর্বাশা ইত্যাদি বাংলা সাময়িকী।১৯১২ সালে রামমালা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন মহেশ ভট্টাচার্য। কুমিল্লার (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা) বিটঘর গ্রামের এই বাসিন্দা মায়ের নামে নিবেদিতা স্কুল ও ঈশ্বর পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রদের থাকার জন্য নির্মাণ করেন রামমালা ছাত্রাবাস। একই সময়ে গড়ে তোলেন রামমালা পাঠাগার। এর তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর থেকে রাসমোহন চক্রবর্তীকে নিয়ে আসেন মহেশ। রাসমোহন আজীবন পাঠাগারটিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। অকৃতদার এ বিদ্যানুরাগীর প্রচেষ্টায় ও মহেশ ভট্টাচার্যের অর্থায়নে রামমালা পাঠাগার একটি আদর্শ গবেষণা গ্রন্থাগারে রূপ নেয়। এরপর থেকে ৫৫ বছর গ্রন্থাগারটির দায়িত্বে আছেন ইন্দ্র কুমার সিংহ। কর্র্তৃপক্ষের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ও বাংলা একাডেমি ছাড়া এত প্রাচীন পুঁথির সংগ্রহশালা আর কোথাও নেই। দেশীয়দের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানের গবেষকরা বিভিন্ন সময় এটি ব্যবহার করেছেন। ঘুরে দেখা যায়, গ্রন্থাগার ভবন এখন জরাজীর্ণ। অযতœ, অবহেলায় নষ্ট হয়েছে অনেক পুঁথি ও মূল্যবান বই। পাঠক-দর্শনার্থীও কমে গেছে। এ বিষয়ে মহেশ ভট্টাচার্য চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ট্রাস্টি শিবপ্রসাদ রায় বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণ করে গ্রন্থাগারের সকল বই ও পুঁথি সংরক্ষণ করতে হবে।’ তিনি জানান, দুই বছর আগে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর পরিদর্শনে এসে নতুন ভবন নির্মানে গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। রামমালা ছাত্রাবাসের পাশে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ চলছে। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে তত্ত্বাবধানে থাকা ইন্দ্র কুমার সিংহের বয়স এখন ৯০ বছর। তার মেয়ে বাবলী সিংহ বাবার সঙ্গে পাঠাগার দেখভাল করছেন। বাবলী বলেন, ‘পুঁথি ও গ্রন্থগুলো সংরক্ষণ করা খুব জরুরি। ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হলে পাঠক বাড়বে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত