বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

মালয়েশিয়ার ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি

জড়িত হলিউড থেকে সৌদি

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:১৬ এএম

চলতি মাসের ১২ তারিখ মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির মামলা আদালতে উঠতে যাচ্ছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থপাচার এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রকল্পের অর্থ ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এই কেলেঙ্কারিতে অন্য এক খেলোয়াড় হলেন আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী ঝো লো। তিনি মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্র্তৃপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে নাজিব রাজাক একটি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ফান্ড গঠনের নির্দেশ দেন, যার অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এই ফান্ডকেই পরে ওয়ানমালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ প্রকল্প (ওয়ানএমডিবি) নাম দেওয়া হয়। মালয়েশিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির মধ্যে এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ওই ফান্ড গঠন করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের মতে, ওয়ানএমডিবি-কে নাজিব, লো এবং অন্য কর্মকর্তারা অর্থ আত্মসাতের প্রকল্প হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। প্রায় ছয় বছর ধরে তারা ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেন, যদিও সুইস কর্মকর্তাদেরমধ্যে এই অর্থের পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু লো এবং নাজিব তাদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। উল্টো তারা মালয়েশিয়ার কর্র্তৃপক্ষের প্রতি দায় চাপিয়ে বলেন, এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

মালয়েশিয়ায় জন্মগ্রহণ করা এবং চীনা পরিবারের সন্তান লো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষিত। ২০০০ সালের দিকে নাজিব রাজাকের পালকপুত্র রিজা আজিজের সঙ্গে ব্রিটেনের হ্যারো স্কুলে পরিচয় হয় তার। ওই স্কুলে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সন্তানেরা পড়েন। জর্ডানের রাজপুত্রও ওই স্কুলের শিক্ষার্থী।

পেনসিলভানিয়ার স্কুলে পড়ার সময় লো একটি বিনিয়োগ কোম্পানি খোলেন, যার প্রাথমিক মূলধন ছিল ২৫ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ আসে তার মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্ধুদের কাছ থেকে। ২০১০ সাল নাগাদ লো দাবি করেন, তার কোম্পানির বিনিয়োগ বেড়ে এক বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও আইনপ্রণেতাদের দাবি, বিনিয়োগের ওই অর্থ এসেছিল ওয়ানএমডিবি ফান্ড থেকে।

হলিউডের তারকা প্যারিস হিলটন এবং লোহানের সঙ্গেও সুসম্পর্ক লো-এর। তারকাদের নিয়ে সেন্ট ট্রপেজের ট্যুরে লো ২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। তারকাদের সঙ্গে তার বন্ধুদের সূত্রপাত মূলত নাজিবের ছেলে আজিজের ‘রেড গ্রানাইট’ চলচ্চিত্র প্রোডাকশন কোম্পানির মাধ্যমে। আইনপ্রণেতাদের মতে, লো ওই চলচ্চিত্র কোম্পানির মাধ্যমে ওয়ানএমডিবির টাকা আত্মসাৎ করেন। ‘দ্য উলফ অব দ্য ওয়াল স্ট্রিট’, ‘ডাম্ব অ্যান্ড ডাম্বার টু’, ‘ড্যাডিস হোস’ এমন চলচ্চিত্রগুলোর অর্থায়নের মাধ্যমে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থকে বৈধ করেন তিনি। অভিনেতা ডিক্যাপ্রিও ওয়ানিএমডিবি থেকে প্রাপ্ত সব অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া কেন তার কাছে থাকা ৮ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অলংকার ইতিমধ্যেই ফেরত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কাছে।২০১৭ সালের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্র নাজিব রাজাকের কেলেঙ্কারি নিয়ে আরও বিস্তৃত তদন্ত শুরু করে। ওই তদন্তে এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত আরও অনেকের নাম সামনে চলে আসে। এদের মধ্যে সৌদি রাজপরিবারের কয়েকজন সদস্যের নামও আসে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে সবার নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে চলতি মাসে আদালতে মামলার স্বার্থে অনেক নামই প্রকাশ্যে চলে আসবে। সূত্র : সিএনএন

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত