বইমেলায় প্রবন্ধের বই তুলনামূলক কম বিক্রি হয়। তবে রুচিশীল, সাহিত্যমনা পাঠকরা বইগুলো কিনতে আসেন বলে জানিয়েছেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘প্রবন্ধের বই লেখাও যেমন সৃজনশীল, পরিশ্রমলব্ধ কাজ, প্রবন্ধের বই পড়ার জন্যও পাঠককে তৈরি হতে হয়। ভালো প্রবন্ধের বই পাঠককে সমৃদ্ধ করে।’
এবারের মেলায় প্রকাশনা সংস্থা কথাপ্রকাশ এনেছে শামসুজ্জামান খানের ‘শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা’ ও ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ’ নামে দুটি প্রবন্ধগ্রন্থ। একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে এসেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘দীক্ষাগুরুর তৎপরতা’, ‘হস্তান্তর নয় রূপান্তর চাই’ ও ‘সময় বহিয়া যায়’।
সংস্থাটির স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনা থেকে নিয়মিত প্রবন্ধের বই প্রকাশ করছি। পাঠকের চাহিদাও বেশি। আমাদের এখানে কোনো কোনো প্রবন্ধের বই উপন্যাস, গল্প, কবিতার বইয়ের চাইতেও বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর পাঠকের রুচির গঠনে প্রবন্ধের বই খুবই জরুরি। তাই আমরা চেষ্টা করি ভালো প্রবন্ধের বই প্রকাশ করতে। চিন্তাশীল পাঠকই আসেন প্রবন্ধের বইগুলো কিনতে।’
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মেলার প্রথম সপ্তাহে প্রবন্ধের বই প্রকাশ হয়েছে ৪৭টি। এর মধ্যে ভাষা প্রকাশ এনেছে যতীন সরকারের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সংস্কৃতি ভাবনা’, চিত্রা প্রকাশনী এনেছে বেলাল চৌধুরীর ‘যাওয়ার আগে আরেক চুমুক’, সময় প্রকাশন এনেছে আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘নির্বাচন ও প্রশাসন’, সূচিপত্র এনেছে মাহমুদ শফিকের ‘ভাষার মূল্য’। এ ছাড়া গ্রন্থকুটির মোজাফফর হোসেনের ‘বাংলা সাহিত্যের নানাদিক’, অনন্যা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ‘সমাজ ও নানা চিন্তা’, শ্রাবণ প্রকাশনী সজীব সরকারের ‘সাংবাদিকতার সহজ পাঠ’, নবযুগ প্রকাশনী সন্জীদা খাতুনের ‘অগ্রজজনের সৃষ্টিবীসা’ ও ‘নজরুল মানস’ নামে দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে।
মেলায় কবি প্রকাশনী এনেছে চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মহারাজা তোমারে সেলাম’, তৃণলতা এনেছে অনুপম হায়াতের ‘গণমাধ্যমে নজরুল’, আগামী প্রকাশনী এনেছে এম আবদুল আলীমের ‘রবীন্দ্রনাথ উত্তর আধুনিকতা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন’, বাঙালি এনেছে আরিফ নজরুলের ‘ঢাকার বাইজি উপাখ্যান’।
মূল মঞ্চের আয়োজন
গতকাল রবিবার বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কথাশিল্পী অমিয়ভূষণ মজুমদার : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হোসেনউদ্দীন হোসেন, মাহবুব সাদিক ও হরিশংকর জলদাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেলিনা হোসেন। এরপর সন্ধ্যায় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা ও সঞ্জীব পুরোহিত। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মীর মাসরুর জামান রনি ও লাবণ্য শিল্পী। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলম দেওয়ান, রণজিত দাস বাউল, মমতা দাসী বাউল, লতিফ শাহ ও আনোয়ার হোসেন। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), মো. খোকন (বাঁশি), মো. হাসান মিয়া (বাংলা ঢোল) ও নওফেল বাদশা (দোতারা)।
‘লেখক বলছি’
প্রতিদিনের মতোই গতকালও মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের প্রকাশিত নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখকরা। ওই সময় পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তারা। আলোচনায় অংশ নেন কবি অসীম সাহা, রেজাউদ্দীন স্টালিন, মীম নোশিন নাওয়াল খান, মাজহার সরকার ও পারভেজ হোসেন।
দশম দিনে নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দশম দিন পর্যন্ত মেলায় মোট নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৪০৩টি। এর মধ্যে দশম দিনে এসেছে ৯০টি নতুন বই। এদিন মেলায় আসা বইয়ের মধ্যে গল্পগ্রন্থ ১৪টি, উপন্যাস ১৪টি, প্রবন্ধ দুটি, কবিতা ৩৫টি, গবেষণা তিনটি, শিশুসাহিত্য দুটি, জীবনী একটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি, বিজ্ঞানবিষয়ক একটি, ইতিহাসবিষয়ক একটি, রাজনীতিবিষয়ক দুটি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী দুটি ও অন্যান্য ১২টি রয়েছে। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে কথাপ্রকাশ এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘আমার প্রেমের উপন্যাস’, পার্ল পাবলিকেশন্স এনেছে আনিসুল হকের ‘নিষিদ্ধ কৌতুক’, হাওলাদার প্রকাশনী নেহাল করিমের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ এবং কালি কলম প্রকাশন এনেছে বুলবুল চৌধুরীর ‘ছোটগল্প’।
আজ সোমবার যা থাকবে
আজ অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১১তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অনুপম হায়াৎ। আলোচনায় অংশ নেবেন আমানুল হক, লুভা নাহিদ চৌধুরী ও শিবলী মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কামাল লোহানী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।