বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান শনিবার

পুলিশের সোর্স হবেন ইয়াবা কারবারিরা

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৫ এএম

আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় থাকা ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে আর কোন মামলা করবে না পুলিশ। তবে আগের মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে হবে তাদের। জেল থেকে আইনীপন্থায় ছাড়া পাওয়ার পর তারা পুলিশের সোর্স হিসেবে অন্য মাদক ব্যবসা বন্ধে অন্য মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে তথ্য দেবে। তবে তার আগে প্রত্যেককে অন্তত ছয় মাস করে কারাগারে থাকতে হবে বলে পুলিশের তরফ থেকে আত্মসমর্পণের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে। 

আগামী শনিবার সকাল ১০টায় টেকনাফ পাইলট স্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর উপস্থিতিতে প্রায় একশত ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনুষ্ঠানে যাতে টেকনাফের সাবেক এমপি ও বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় থাকা শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মদদদাতা আবদুর রহমান বদি উপস্থিত না থাকেন, সে জন্য তাকে প্রশাসনের তরফ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে তার স্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে পুলিশ ৮০ জন ইয়াবা কারবারির তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে ৩০ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত গডফাদার। বদির পরিবারের পাঁচজনের নামও রয়েছে এই তালিকায়। আগামী দু’দিনে আরও কিছু শীর্ষ কারবারির নাম এ তালিকায় যুক্ত হতে পারে। আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় থাকা তালিকাভুক্ত গডফাদারদের কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইনে নিরাপদ হোমে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে আর কোন মামলা দেওয়া হবে না, এই শর্তে তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছি যে, তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোন মামলা দায়ের করা হবে না। তবে তাদের বিরুদ্ধে আগে দায়ের হওয়া মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে হবে তাদের। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তারা অন্য মাদক কারবারি ও তাদের লিংক সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে সোর্স হিসেবে কাজ করবেন তারা।

এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা জানান, আগে থেকে দায়ের করা মামলাগুলো থেকে যাতে আত্মসমর্পণকারীরা সহজেই ছাড়া পান, সে জন্য তাদের সহায়তার অংশ হিসেবে মামলার চার্জশিটে তাদের অপরাধ লঘু হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। এতে তাদের সাজা হলেও খুব বেশি দিন কারাবাস করতে হবে না।  

আত্মসমর্পণের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ লাইনের নিরাপদ হোমে থাকা ইয়াবা কারবারিরা এখন ধর্মে-কর্মে মনোযোগী হয়েছেন। তাদের সবাই এখন সময়মতো নামাজ পড়ছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনাকালে তারা নিজেদের অপরাধী বলে স্বীকার করছেন, কেউ কেউ কাঁদছেনও। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশ লাইনে এসে তাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করে যাচ্ছেন।     

এদিকে, ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৮০ জন পুলিশের হেফাজতে ও বাকিরা দেশ-বিদেশে পলাতক রয়েছেন। এই ফাঁকে টেকনাফে নতুন করে অনেকে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নতুন করে অনেকে জড়িয়ে পড়েছে বলে কক্সবাজার পুলিশ জানিয়েছে।   

জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন বলেন, আমরা নতুন করে কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নাম জানতে পেরেছি, যাদের নাম আগের কোন তালিকায় কখনো ছিল না। এসব নাম ধরে তথ্য সংগ্রহের পর আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারব।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত