বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

জুতা দেখে লাশের খোঁজ

আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৯, ০৩:৩৭ এএম

সকালে খেলতে যাওয়ার পর থেকে খোঁজ মিলছিল না শিশু রিফাতের (৮)। তার খেলার সাথীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অজিত কুমার বসাকের বাড়িতে গিয়েও খোঁজ মেলেনি। তবে পাওয়া যায় রিফাতের ব্যবহৃত জুতা। এর সূত্র ধরেই ওই বাড়ির পানির ট্যাংক থেকে রিফাতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরও এ বিষয়ে মামলা নিতে চায়নি রাজধানীর দক্ষিণখান থানা পুলিশ। পরে উত্তরায় রাজপথে বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও র‌্যাবের হস্তক্ষেপে মামলা নিতে বাধ্য হয়।

নিহতের পরিবারের দাবি, মামলার প্রধান আসামি অজিত কুমারকে দক্ষিণখান থানা ওসির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমাদের ওই বাড়ির মালিকই ফোন করে জানায় তাদের পানির ট্যাংকে একটি লাশ রয়েছে। শিশুর বাবার করা মামলায় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান আসামি অজিত কুমারকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অন্য আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’ মামলা নেওয়ার বিষয়ে র‌্যাবের কোনো ফোন পাননি বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই গোলাম রাব্বানিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আসামি কোথা থেকে আটক হয়েছে তাও জানাতে পারেননি। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনের ডিউটিতে ছিলাম। মামলাটি সম্পর্কে এখনো তেমন খোঁজখবর নিতে পারিনি।’

নিহত রিফাত উদয়ন স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। রিফাতের বাবা আবদুর রসিদ বলেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল রিফাত। তাকে খুঁজে না পেয়ে মসজিদে মাইকিংও করেছিলাম। পরে ওর দুই খেলার সাথী জানায় তিনজন একসঙ্গে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল। একপর্যায়ে আজমপুরের ৫৬/২ আমিরুদ্দি রোডের অজিত কুমারের নির্মাণাধীন বাড়িতে ঘুড়ি আটকে যায়। ঘুড়ি আনতে প্রাচীর বেয়ে তিনজন ভেতরে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ধাওয়া দেয় অজিত। দুই বন্ধু দেয়াল টপকে বের হতে পারলেও রিফাত পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলের জুতা পড়ে ছিল অজিতের ওই বাড়ির প্রাচীরের ভেতর। ২৬ ফেব্রুয়ারি জুতা পেলেও খোঁজাখুঁজি করেও রিফাতের সন্ধান পাইনি। আমরা তখন একটি খাট  ও সিমেন্টের বস্তা দিয়ে পানির ট্যাংক ঢাকা দেখেছিলাম। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ফোন দিয়ে জানায় ওই বাড়ির পানির রিজার্ভ ট্যাংক থেকে রিফাতের লাশ পাওয়ার কথা।’

তার অভিযোগ, ‘বাড়িওয়ালার মারধরে রিফাতের মৃত্যু হয়। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাড়ির পানির ট্যাংকে ফেলে দেয় মরদেহ।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। পরে আমরা র‌্যাবের কাছে গেলে তাদের পক্ষ থেকে থানায় ফোন দেওয়ার পর রাত ২টার দিকে মামলা নেয়।’

প্রসঙ্গত, রিফাতের লাশ নিয়ে বিচারের দাবিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি দিনভর বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। সাড়ে চার ঘণ্টা বিমানবন্দর সড়ক আটকে বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয়রা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত