ভালো ফলন, আকারে বড় এবং লাভ বেশি বলে পেঁয়াজের নাম হয়েছিল ‘সুখসাগর’। ওই পেঁয়াজ আবাদ করে মেহেরপুরের শত শত বর্গাচাষি ও কৃষক গাড়ি, বাড়ি, জমি করেছেন। সেই সুখসাগর পেঁয়াজ এবার কৃষকের হাসি কেড়ে নিয়েছে। সুখের পেঁয়াজে এবার সুখ নেই কৃষকের। কেননা, গত বছর এ সময়ে যে পেঁয়াজ ১৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেই পেঁয়াজ এবার বিক্রি করতে হচ্ছে চার-পাঁচ টাকা কেজি দরে। কৃষকদের অভিযোগ, দেশি নানা জাতের পেঁয়াজ পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও ভারত থেকে নিম্নমানের পেঁয়াজ অবাধে আসছে। তাই কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সরেজমিনে দেখা গেল, পরবর্তী ফসল উৎপাদনের তাড়া নিয়ে মেহেরপুরের মাঠে মাঠে এখন পেঁয়াজ উত্তোলনে ব্যস্ত কৃষক। কিন্তু মলিন মুখ শত শত কৃষকের।
মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি আবুল কালাম আজাদ বললেন, সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ করে এবারই প্রথম ক্ষতির মুখে চাষিরা। তিনি ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ। সেখানে এক বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে ঘরে উঠছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পেঁয়াজে যে পরিমাণ লোকসান হচ্ছে, তাতে পরবর্তী ফসল উৎপাদন করতে হলে চাষিকে ঋণ নিতে হবে।
একই গ্রামের চাষি আতিয়ার রহমান জানালেন, ওজনে ১৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম হয় একেকটি পেঁয়াজ। প্রতিদিন গ্রাম থেকে ৩০-৪০ ট্রাক পেঁয়াজ বোঝাই হয়। অন্যবার এ মুহূর্তে কৃষক লাভের টাকা দিয়ে নতুন কী কিনবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করতেন। এবার কার কত লোকসান হলো, সেই নিয়ে কষ্টবিনিময় করছেন কৃষক। পেঁয়াজ নিয়ে যাকেই প্রশ্ন করা হয়েছে, সব চাষিই জানালের অভিন্ন কষ্টের কথা। মেহেরপুর বড় বাজার সবজি আড়তের ‘খেয়া সবজি ভাণ্ডার মালিক আবুল খায়ের মণ্ডল জানালেন, তারা চাষির জমি থেকে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কিনছেন। আড়তে নিয়ে সেই পেঁয়াজ ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা মণ দরে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এবারে পেঁয়াজে কৃষক ও ব্যবসায়ী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা স্বপন কুমার খাঁ জানান, ভারতের পেঁয়াজ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পেঁয়াজে চাষির লোকসান অনেকটাই কম হতো।