বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিন লাখ বর্গফুট আয়তনজুড়ে গতকাল শনিবারও ছিল লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের মিলনমেলা। মাসব্যাপী বিচিত্র বইয়ের যজ্ঞে যারা মেতেছিলেন, কাল ছিল তাদের গোটানোর পালা। বইপ্রেমীরা ব্যস্ত ছিলেন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়। তবে মাসব্যাপী বইমেলায় প্রকাশনা স্টলগুলোতে যারা বিক্রয়কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন, তাদের মধ্যে ছিল কিছুটা ক্লান্তিভাব। কবি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সাবিকুন্নাহার সামি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসজুড়ে বইমেলায় থাকতে থাকতে এক ধরনের মায়া জন্মেছে। আবার একটানা কাজ করতে করতে ক্লান্তও লাগছে।’ সন্ধ্যায় একটু তাড়াহুড়োর মধ্যেই বই কিনছেন নাট্যকর্মী হুমায়ুন আজম রেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘আগেই বই কিনে শেষ করেছি। তারপরও তো শেষ হয় না। নতুন কিছু বই কিনতে আবারও এসেছি। কিছু বই নিজের জন্য, আর কিছু বই উপহার হিসেবে দেব।’
এদিকে একটানা মেলায় কাজ করতে করতে কিছুটা ক্লান্তি যেন মেলার আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও। বাংলা একাডেমির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা গেছে দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বইমেলার প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কড়াকড়িও তেমন ছিল না। সবাই যেন মেলা ভাঙার অপেক্ষায়।
মেলা সমাপনীর আনুষ্ঠানিকতা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হয়ে যাওয়ায় গতকাল ছিল না কোনো আড়ম্বর। শুধু বই বিক্রি আর লেখক-প্রকাশক-পাঠকের আড্ডার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বর্ধিত দুই দিনের বইমেলা। ফেব্রুয়ারি জুড়ে বইমেলার মূল মঞ্চে নানা রকম সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকলেও বর্ধিত দুই দিনের আয়োজনে ছিল না কোনো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
গতকাল সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবারের আয়োজনে চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব নান্দনিক করতে। আমিও নতুন মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই এই আয়োজনটি করতে হয়েছে। ফলে অনেক কিছুই করতে পারিনি। তবে আগামী মেলায় ইচ্ছা আছে এবারের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন কিছু করার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী বইমেলায় নতুন কিছু যুক্ত হবে এবং আরও সুন্দর হবে আমাদের প্রাণের বইমেলা। এজন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, সারা বছর যেন নানা রকম সৃজনশীল মেলা অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য একটি স্থায়ী জায়গার বরাদ্দ দেওয়া হোক। সেখানে সারা বছরই পিঠামেলা, বৈশাখীমেলা, পৌষমেলা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলার আয়োজন করা হোক। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ অনেক কষ্টসাধ্য এবং অর্থ খরচ হয়। একটা স্থায়ী জায়গা থাকলে এবং সেখানে মেলার উপযোগী অবকাঠামো থাকলে পুরো আয়োজনটি আরও সুন্দর হবে।’
নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মেলার সমাপনী দিনে নতুন বই এসেছে ৬৩টি। সব মিলিয়ে এবারের মেলায় মোট নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪টি। গতকাল গল্পগ্রন্থ ৭৫৭টি, উপন্যাস ৬৯৮টি, প্রবন্ধ ২৭২টি, কবিতা ১ হাজার ৬০৮টি, গবেষণাবিষয়ক ৮০টি, ছড়া ১৪৮টি, শিশুতোষ ১৫০টি, জীবনী ১৬৭টি, রচনাবলি ১৫টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১১০টি, নাটক ৪৩টি, বিজ্ঞানবিষয়ক ৭৭টি, ভ্রমণবিষয়ক ৮৫টি, ইতিহাসবিষয়ক ৭৭টি, রাজনীতিবিষয়ক ৩৩, রম্য/ধাঁধাবিষয়ক ৩৭টি, কম্পিউটারবিষয়ক ৫টি, ধর্মীয় ২৫টি, অনুবাদ ৩৮টি, সায়েন্স ফিকশন ৪৫টি ও অন্যান্য ৩৩০টি নতুন বই এসেছে।