করোনা আক্রান্ত পিতাকে কাচের দেয়ালের ওপার থেকে দেখছেন তার সন্তান, কিন্তু ছুঁতে পারছেন না। করোনাকালের এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য ক্যানভাসে তুলে ধরেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী জামাল আহমেদ। অন্যদিকে করোনার ভয়াবহতার মাঝে মানুষকে ভালোবাসার কথা শিল্পকর্মে তুলে ধরেছেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী।
নানা আঙ্গিকের তিন শতাধিক শিল্পকর্ম নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘করোনার বিরুদ্ধে শিল্প’ শিরোনামে মাসব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার জন্য উন্মুক্ত।
শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের গাইড লেকচারার সুজন মাহবুব জানান, প্রদর্শনী উপলক্ষে গত জুলাই মাসে ১৩ দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। সেখানে শিল্পকর্ম তৈরি করেন শিল্পীরা। গ্যালারির পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমির ফেইসবুক পেইজে এ প্রদর্শনীর ভার্চুয়াল ডিসপ্লে করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ১ ও ২ নম্বর গ্যালারিতে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে ৩২৫টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে।
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, করোনার মহামারীতে প্রাণ হারানো শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মুখাবয়ব, রংতুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাসে মূর্ত করে তুলেছেন শিল্পীরা। ইন্সটলেশন আর্টে শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরী তুলে ধরেছেন করোনাকালের হারিয়ে যাওয়া মানুষের মুখ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনসহ আরও অনেকের মুখ ভেসে উঠেছে ইন্সটলেশন আর্টে। পাশাপাশি করোনা থেকে মুক্ত হয়ে এক নতুন পৃথিবীর আগমনী বার্তাও আছে প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পকর্মে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রদর্শনী দেখতে আসছেন, তবে তরুণরা সংখ্যায় বেশি।
চারুকলার শিক্ষার্থী শাহনাজ বলেন, ‘করোনার সময়কে শিল্পের ক্যানভাসে তুলে এনেছেন শিল্পীরা। এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে করোনাকালীন হারিয়ে যাওয়া মানুষের মুখগুলো নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। জানি না আর কত মৃত্যুর পর থামবে এই করোনা মহামারী।’