কাতারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাংবিধানিক ভোটের আয়োজন হতে চলেছে। ২ অক্টোবর কাতারের ৫টি আসনে শুরা কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ কাউন্সিলর নির্বাচন করা হবে। ২০০৪ সালের সংবিধান অনুসারে বাকি ১৫ জন সদস্য নিয়োগ দেবেন কাতারের আমির।
এর মাধ্যমে কাতার তার ইতিহাসে প্রথম সাংবিধানিক নির্বাচনের আয়োজন করতে চলেছে। যা উপসাগরীয় এই রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে অংশগ্রহণ বাড়াবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আগে কাতারের এই শুরা কাউন্সিল নির্বাচন ‘সংস্কারমুখী’ চিন্তাভাবনা হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করবে।
কাতারে এই সূরা নির্বাচনের জন্য ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৯৪ টি আসনে প্রার্থীরা মনোনয়ন নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৯ নারী। একজন প্রার্থী আয়েশা আল-কুওয়ারির জানান, কাতার নারীদের শুরা কাউন্সিলে নির্বাচিত করার বিষয়ে খুবই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে।
তবে, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে পরামর্শ দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান গালফ স্টেট অ্যানালিটিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা জর্জিও ক্যাফিয়েরো বলেন, ভোট দেশকে গণতান্ত্রিক কাঠামো দিতে পারবে না। তবে, এই নির্বাচন কাতারকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। এটি একটি ভালো পদক্ষেপ।
রাইস ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্যের ফেলো ক্রিস্টিয়ান কোটস উলরিচসেন বলেন, কাতারের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এই প্রথম নয়। সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিশর কাতারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জুন মাসে অবরোধ আরোপ করার পরে, শেখ তামিম চারজন নারীকে শুরা কাউন্সিলে নিযুক্ত করেছিলেন।
তবে, এই নির্বাচনে প্রধান উদ্বেগ হিসেবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটাররা উপজাতীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করবে। নীতিগত ধারণার ওপর প্রার্থী নির্বাচন করা হবে না।
কাতারে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ। তবে, নাগরিকদের পৌর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অনুমতি আছে।
গত জুলাই মাসে আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি একটি আইন অনুমোদন করেন। সে আইনে বলা হয়েছে যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি ও জন্মসূত্রে কাতারের নাগরিক তারা ভোট দিতে পারবেন। এ ছাড়া কাতারে বসবাসকারী অন্য নাগরিকেরা ভোট দিতে পারবেন না।
এইচআরডব্লিউ সূত্রে জানা গেছে, আইনটি অনুমোদন করা হলে ছোট বড় অনেকগুলো বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে কমপক্ষে ১৫ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
এই আইনের বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্যের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যাডাম কুগল গত মাসে বলেছিলেন, কাতারের এই নতুন আইন কেবল নাগরিকদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে তারা সবাই সমান নয়।
কাতারের সরকারি যোগাযোগ কার্যালয়ের (জিসিও) সেপ্টেম্বরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভোটারদের নিবন্ধনের কিছু নাগরিক আইনটির বিষয়ে অসম্মান প্রদর্শন করেন। তারা আইনের প্রতি সহিংসতা উস্কে দিচ্ছিলেন এ জন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
জিসিও বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিযোগিতামূলক প্রচারণার স্বার্থে সরকার সব ধরনের আলাপ আলোচনাকে উৎসাহিত করবে।