দু’বছর আগের কলকাতার সল্টলেকে যুব ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের সন্ধ্যাটা ভুলতেই পারছেন না বাংলাদেশের ফুটবলাররা। আসলে ভুলতে চাইছেন না তারা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সেই মাঠেই স্বাগতিক ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সাদউদ্দিনের অসাধারণ গোলে ৪১ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচটা এরপর এগুচ্ছিল লাল-সবুজের জয়ের পথে। তবে ভারত ডিফেন্ডার আদিল খানের ৮৮ মিনিটের গোলে ভেঙে দেয় জয়ের স্বপ্ন। জয় না পেলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে হতবাক ভারতীয় মিডিয়া প্রশংসায় ভাসিয়েছিল জামালদের। সেই ম্যাচটা বাংলাদেশি ফুটবলারদের হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছিল সাহসিকতার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্তরূপে। এরপর একবারই দু’দল মুখোমুখি হয়। সেটা এ বছর দোহায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। জুনে সেই ম্যাচটাও এগুচ্ছিল ড্রয়ের দিকে। কিন্তু ভারত অধিনায়ক সুনিল ছেত্রীর শেষ দিকের জোড়া গোল বাংলাদেশকে দেয় হারের তিক্ত স্বাদ। আগামীকাল ফের বাংলাদেশের সামনে ভারত। মালেতে সাফের দ্বিতীয় ম্যাচে সাতবারের চ্যাম্পিয়নদের মোকাবিলার আগে দোহা ভুলে কলকাতাকে ভাবনায় নিয়ে আসতে চাইছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে অভিযান শুরুর পর কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশের। সেই জয় থেকে সাহস সঞ্চয় করে তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় ৮২ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতকে। ইগর স্টিমাচের দলটি শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন শুরু করবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচ যে কারও জন্যই কঠিন। আর প্রতিপক্ষ যদি হয় বাংলাদেশ, তাহলে স্নায়ুর একটা চাপ থাকেই ভারতীয়দের মধ্যে। দূর অতীতে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশই ছিল ভারতের একমাত্র বাধার নাম। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎগুলোতেও নিম্নগামী বাংলাদেশ অস্বস্তি ছড়িয়েছে ভারত শিবিরে। শেষ ৪ ম্যাচের তিনটিতে ড্র হওয়ায় ভারতকে এবারও বাংলাদেশ নিয়ে থাকতে হচ্ছে সতর্ক। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও কথা দিচ্ছেন দেখে নেওয়ার। জ্বরের কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দর্শক হয়েছিলেন সোহেল রানা। কিছুটা সুস্থ হয়ে কাল প্রথমবারের মতো অনুশীলনে নেমেছেন এই গুরুত্বপূর্ণ মিডফিল্ডার। ভারত ম্যাচ নিয়ে বললেন, ‘আমাদের জন্য প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জয় পাওয়ায় আমরা এখন একটা ভালো অবস্থানে আছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জয়ের পর খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। যেটা ভারতের বিপক্ষে আমাদের সহায়তা দেবে। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে একটা আলাদা উত্তেজনা সবসময়ই থাকে। আর আমরাও ওদের বিপক্ষে ম্যাচটা খুব ইতিবাচকভাবে নিই। কারণ ওদের বিপক্ষে আমরা সবসময় ভালো খেলতে চাই। আসরে যদি ভালো অবস্থানে থাকতে হয়, তবে যে করেই হোক ভারতের বিপক্ষে আমাদের ভালো রেজাল্ট করতে হবে।’ ভারতের বিপক্ষে ভালো ফলের আশা করা মানে গোল না করার রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে হবে বাংলাদেশকে। সোহেল বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ভুলগুলো করেছি, বিশেষ করে ফিনিশিংয়ে কিছু সমস্যা ছিল সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভারতের বিপক্ষে আমরা এত সুযোগ পাব না। তবে যে সুযোগগুলো পাব, সেগুলো ফিনিশ করতে হবে।’
ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিমও মনে করেন ভারতের সামনে দাঁড়ালেই তাদের সাহস বেড়ে যায় অনেক, ‘বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ সবসময়ই হাইভোল্টেজ ম্যাচ। এই ম্যাচটা খেলার জন্য দলের সবাই মুখিয়ে আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই এক্সাইটেড কারণ আমরা সল্টলেকের ম্যাচটায় ভালো খেলেও জিততে পারিনি। সেই জয়টা এখানে পেতে চাই। দোহায় কী হয়েছে সেটা এখন আর মনে করতে চাই না। চাই ভারতকে রুখে দিতে।’ কাল অনুশীলন মাঠে সেভাবে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাননি অস্কার ব্রুজন। এই প্রতিবেদককে শুধু বলেছেন, ‘নেপাল, মালদ্বীপের খেলা দেখলাম। আমরাও খেললাম। সব দেখে মনে হলো ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল খুব বেশি এগিয়ে নেই আমাদের চেয়ে। ফিনিশিংয়ের সমস্যাটা কেটে গেলে দেখবেন আমরা অনেক ভালো দল।’
কোচের জন্য ফিনিশিং বড় ভাবনা। এই সমস্যার সমাধান সহজে পাওয়া মুশকিল। আর ভারত ম্যাচে এই রোগটা রয়ে গেলে জয়ে শুরুর সুবিধেটা মুঠো ফসকে বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশের। দীর্ঘায়িত হবে ফাইনালের স্বপ্ন। ২০০৫ সালের পর যে এই মঞ্চে আর পা রাখাই হয়নি বাংলাদেশের।