বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে দলটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। এরমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যে এসেছে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে বিএনপি ও পরিবারের সদস্যরা বিষয়টিকে নাকচ করে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া মারা গেলেও দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া জলে পড়ে যাননি যে তাকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়া মারা যাবে, তবুও রাষ্ট্রপতির কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার অতিরিক্ত অপব্যবহার করছে। তিলে তিলে মারতে চাইছে খালেদা জিয়াকে। আমরা এর বিচারের ভার দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ছেড়ে দিলাম।’
বিএনপি চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে গতকালও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা কে কী বলছেন আমরা তা ভাবছি না। আমরা আমাদের চলমান কর্মসূচি পালন করে যাব।’
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সেই হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করে দিলেই তো তিনি বিদেশে যেতে পারেন।’
এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘কথায় আছে না হাতি গর্তে পড়লে চামচিকাও লাথি মারে, এখন অবস্থা এমন হয়েছে। ওরা ভুলে যায় খালেদা জিয়া ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মানুষকে সম্মান করতে জানে না আওয়ামী লীগের নেতারা।’
একই প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা কে কী বলল আমরা তা নিয়ে ভাবছি না। আমরা চেয়ারপারসনের মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে যে কর্মসূচি পালন করে আসছি তা অব্যাহত রাখব। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা করার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমরা মনে করি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যে মামলা এবং মামলার রায় পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।’
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে গতকাল সারা দেশে দোয়া কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘চেয়ারপারসনের চিকিৎসার জন্য মানবিক আবেদনের চ্যাপ্টার ক্লোজ করা দরকার বলে আমি মনে করি। দেশের একজন সাধারণ মানুষেরও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখে। কারণ, রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে চিকিৎসা একটি। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ কি আছে যেখানে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাতে হয়।’
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভারের আরবিসি স্ক্যানিং পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। এর রিপোর্ট পেতে সময় লাগবে।’
খালেদা জিয়া দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন : সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মেয়ে মাহমুদা খানম ভাসানীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভাসানীর নাতি হাবিব হাসান মনা, নাতি মাহমুদুল হক শানু, ভাসানীর বড় মেয়ে রিজিয়া ভাসানী, নাতনি সুরাইয়া সুলতানা। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
বায়তুল মোকাররম মসজিদে দোয়া : এদিকে গতকাল দুপুরে বাদ জুমা খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে দোয়া করা হয়। দোয়া করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব। পরে সুন্নত নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ওলামা দলের আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা শাহ মোহাম্মাদ নেছারুল হকের পরিচালনায় খালেদা জিয়ার জন্য আবার দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমানসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর শনিবার বিকেলে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ক্রিটিক্যালি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই আছেন।