প্রত্যেক নর-নারীর ওপর কোরআনে কারিম এতটুকু সহিহ-শুদ্ধ করে পড়া ফরজে আইন, যার দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয় না। অর্থ পরিবর্তন হয়, এমন ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব কমপক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যে সুরাগুলোর প্রয়োজন, সেগুলো শুদ্ধ করে নেওয়া আবশ্যক, অন্যথায় সে গোনাহগার হবে। মুকাদ্দামায়ে জাজারিয়া : ১১
হজরত আলী (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা প্রত্যেকেই এমনভাবে কোরআন পড় যেভাবে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। ফাজায়েলুল কোরআন : ৩৬১
অর্থাৎ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে যেভাবে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং পরবর্তী উম্মতকে সাহাবারা যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন আর ওই পরম্পরা যেভাবে শুদ্ধভাবে চলে আসছে, সেভাবেই কোরআন পড়তে হবে। তাই প্রতিটি হরফ স্বীয় মাখরাজ থেকে সিফাতে লাজেমাসহ উচ্চারণসহ মদ-গুন্নাহ আদায় করেই কোরআন পড়তে হবে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও কোরআন শিক্ষা দেয়।’ সুনানে আবু দাউদ : ১৪৫২
নবী কারিম (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহিহ শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। সুনানে আবু দাউদ : ১৪৫৮
বিশুদ্ধতার পাশাপাশি হাদিস শরিফে সুন্দর কণ্ঠে কোরআন পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে কোরআন শরিফ পড়, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়।’ শোয়াবুল ইমান : ২১৪১
নামাজের কেরাতে অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, এমন ভুল পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। চাই তা তিন আয়াত পরিমাণের ভেতর হোক বা পরে হোকসর্বাবস্থায় একই হুকুম। পক্ষান্তরে সাধারণ ভুলযার দ্বারা অর্থ একেবারে বিগড়ে যায় না, তাতে নামাজ নষ্ট হবে না। খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/১১৮
কিন্তু সুরা-কেরাত ও নামাজের তাসবিহ ইত্যাদি শুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি নেই। সুরা-কেরাত শুদ্ধ করতে থাকবে এবং নামাজ আদায় করতে থাকবে, তবে এ ধরনের লোকেরা শুদ্ধ পাঠকারী ব্যক্তির ইমামতি করবে না। হিদায়া : ১/৫৮
বর্তমানে অনেককে দেখা যায়, তারা বাংলা উচ্চারণ দেখে কোরআন পাঠ করে থাকেন। অথচ আরবি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কোরআন পাকের সঠিক উচ্চারণ অসম্ভব। তাই কোরআন পাককে অন্য ভাষায় লেখা বা পড়া উলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে নাজায়েজ। এতে কোরআনের শব্দ ও অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, যা সম্পূর্ণ হারাম। ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১/৪৩
আবার অনেক লোককে দেখা যায় তারা কোরআন শুদ্ধ করার চেয়েও কোরআনের অর্থ বুঝতে বেশি আগ্রহী। অর্থ বোঝা যদিও একটি জরুরি কাজ, কিন্তু সবার আগে জরুরি হলো- তেলাওয়াত শুদ্ধ করা। এটি ফরজে আইন, এর ওপর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার ভিত্তি।
কোরআন তেলাওয়াত আমাদের দ্বীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নফল হোক আর ফরজ হোক, প্রতিটি নামাজের প্রতি রাকাতেই আমাদের কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়। নামাজে তেলাওয়াতের ন্যূনতম একটা পরিমাণ তো ফরজ। এছাড়া নামাজে অধিক পরিমাণ তেলাওয়াতের জন্যে রয়েছে আরও অনেক পুরস্কার। যারা রাতে দিনে নফল নামাজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকে, তাদের কথা ভিন্নভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আর শুধুই কোরআন তেলাওয়াত- তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।