এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি তুলনামূলক কম হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কম নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই টিনএজার ও বাইকার।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুযায়ী, ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে ৯৭ জনই রাইডার বা মোটরসাইকেল আরোহী ও চালক, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
সংস্থাটির প্রকাশিত এক তথ্যে বলা হয়েছে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৬ মে (শুক্রবার) পর্যন্ত সারা দেশে ১৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ২৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৯৭ জন ছিল মোটরসাইকেল আরোহী। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ৫১ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক, যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
সড়কে অতিরিক্ত মোটরসাইকেল চলাচল ও দুর্ঘটনার বিষয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থার নাজুক অবস্থাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, চলাচলে অযোগ্য যানবাহন ও বাস চালকদের রেষারেষিতে সড়কে জ্যামরে কারণে অনেকে যাত্রী মোটরসাইকেলকে বিকল্প হিসেবে দেখছেন। দুই চাকার বাহনে চলাচলে অনেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূর দূরান্তে রওনা দিচ্ছেন। মোটরসাইকেল চালকদের অতিরিক্ত গতির কারণেও অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আবার অনেকে কোনোরকমে মোটরসাইকেল চালানো শিখেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় যাত্রী বহন করতে নেমে পড়ছে। এতে করে চালক ও তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাত্রীও বিপদে পড়ছেন।
তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ১ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত ১১২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন। একই সময় ৫৬ জন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। যা মোট মৃত্যুর ৪০ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এ বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। দু’চাকার এ বাহনের ব্যবহার কমানো না গেলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, আমাদের তথ্য অনুযায়ী গত কয়েক দিনে বাইক যাত্রী যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে অনেকের মাথায় হেলমেট ছিল না। যাদের মাথায় হেলমেট থাকে তার অন্তত প্রাণে নিরাপদ থাকতে পরে। আর যারা বাইক যাত্রায় শুধু ক্যাপের ব্যবহার করেন তাদের অ্যাক্সিডেন্টের পরের অবস্থা ভয়াবহ হয়। এ বিষয়ে বাইকার ও যাত্রীদের হেলমেট ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোম্পানিরা তাদের লাভের জন্য মোটরসাইকেলের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। যার ফলে দেশের তরুণদের মধ্যে বাইক রাইডের বেশ উদ্দীপনা জেগে উঠেছে। এসব আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের বদলে আমাদের সচেতনতামূলক প্রচারণা চলাতে হবে। এর জন্য পরিবার ও রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে।