
একটা ছোট গল্প বলি, বাস্তব অভিজ্ঞতা। ঘটনাটা এ রকমকয়েক মাস আগে শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম গোয়ালন্দ, রাজবাড়ীতে। রাতে শ্যুটিং চলাকালীন একটা দৃশ্য শেষ করে পরবর্তী দৃশ্যের সেট এবং লাইটিংয়ের কাজ চলছিল। আমি এই বিরতিতে সাধারণত একটু নির্জন জায়গায় একাকী গিয়ে পরবর্তী দৃশ্যের শট, ব্লকিং, অভিনয়-কৌশল নিয়ে চিন্তা করতে থাকি। তা-ই করছিলাম, অন্ধকার রাতে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই পাশের একটা রেললাইনে। হাঁটছি আর চিন্তা করছি, এমন সময় পাশের টিনের ঘর থেকে ভেসে আসা টেলিভিশনের শব্দ আমার মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন করল। একটু এগিয়ে ঘরের ভেতরের পরিবেশটা দেখতে থাকি। একটা কমদামি কালার টেলিভিশনে কোনো চ্যানেলের নাটক চলছে। দর্শক দুজন বুড়ো-বুড়ি। তাদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখার জন্য আরও কাছে গেলাম। দেখলাম আনন্দিত মুখ। ভালো লাগল দেখে। নাটকের মাঝখানে বিজ্ঞাপন বিরতি এলো, তবুও তারা চ্যানেল পরিবর্তন করলেন না। অনেকটা সময় ধরে আমি বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুজন প্রতিনিধিকে দেখলাম। তারা আনন্দ নিয়ে টেলিভিশন দেখছেন। টেলিভিশনে কাজ করা একজন মানুষ হিসেবে এই দৃশ্য আমাকে নিঃসন্দেহে ভীষণ আনন্দিত করবেএটাই স্বাভাবিক। মাঝেমধ্যেই আমরা আমাদের কলিগ এবং শহুরে মানুষের মুখে শুনি‘এখন আর কেউ টেলিভিশনে নাটক দেখে না।’ কথাটার সবটুকু সত্যি না। অনেকেই দেখে অথবা অনেকের না দেখে কোনো উপায় থাকে না। কারণ দরিদ্র মানুষজন একশ-দেড়শ টাকা দিয়ে মাসব্যাপী ডিশের কানেকশন পায়, সুতরাং সেই কানেকশনের বদৌলতে যা দেখা যায় তাই দেখে। এখন কথা আসে, তারা ভোক্তা হিসেবে দেখে, কিন্তু আমরা তাদের কাছে কী সার্ভ করছি?
আমার মনে হয় না আমরা খুব গবেষণা করে দেশের সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারছি। আমাদের বর্তমান টিভি নাটকের ধরন-ধারণ দেখে মনে হয় যেন আমরা ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার লঞ্চযাত্রী। কোনো মতে রাতটা পার করে দিতে পারলেই হয়। কোনো মতে সময়টা পার করাই যেন বর্তমান টিভি নাটকের মূল উদ্দেশ্য। না আছে কোনো নতুনত্ব, না আছে কোনো উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া।
বিশ বছর আগের রঙের মানুষ আর হুমায়ূন আহমেদের কমেডি নাটকের ফর্মূলায় দুর্বল ভার্সন অথবা প্রেমের নামে আজগুবি প্রহসন। এই চক্র ভেদ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে আমাদের জন্য। কারণটা খুবই স্পষ্ট। এই সেক্টরে কাজ করা মেধাবী মানুষদের খুবই সুকৌশলে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় নেওয়া হয়েছে চাকর-শ্রেণির একদল নির্মাতা আর লেখকদের। যাদের না আছে কোনো মেধার জোর, না আছে শক্ত মেরুদন্ড।
ইয়েস স্যার, আই অ্যাম, অলওয়েজ অ্যাট ইউর সার্ভিসযাদের মূলমন্ত্র। হরে-দরে সবাই যে এমন তা অবশ্য আমি বলছি না, কেউ কেউ হয়তো নিভৃতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম।
একটু মেধাবীরা হয় ওটিটি মাধ্যমে কাজ করছেন, নয়তো টেলিভিশনের ভূত কাঁধ থেকে নামিয়ে অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। ওমুক স্টারের শ্যুটিং দেখতে এসে তমুকের মনে সাধ জাগে আমিও একজন লেখক অথবা পরিচালক হতে চাই। তখন সে অমুক স্টার ভাইকে হাতে-পায়ে ধরে যদি দুইটা দিন সময় বের করতে পারেন তাহলে কেল্লাফতে। বছর না ঘুরতেই তিনি হয়ে ওঠেন সময়ের সেরা হিট পরিচালক। মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ তাকে মানব থেকে দানব বানিয়ে তোলে। তখন তিনি ভুলে যান তার নিকট অতীত। হয়তো এক বছর আগে তিনি কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা ছিলেন, সময়ের হাওয়া বদলে এখন তিনি কারওয়ান বাজারে নাটক বিক্রি করেন। ব্যাপারটা হলো বিক্রি করা। মাছের তুলনায় নাটকে ভালোই লাভ হয়। লাভ-ক্ষতির চক্করে আমরা অনেক সম্ভাবনার অপমৃত্যু দেখতে পাই। কিন্তু ঘটনাটা আরও অন্য রকম হতে পারত।
একজন ডাক্তার হতে গেলে যেমন আপনাকে দীর্ঘ বছর ধরে একটা লেখাপড়া, বাস্তব অভিজ্ঞতা শেষ করে নিজের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে হবে, ঠিক তেমনি অডিও ভিজ্যুয়াল সেক্টরে কাজ করতে গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট বৈতরণি পাড়ি দিয়ে তবেই একজন চিত্রনাট্যকার কিংবা পরিচালক পদে আসীন হতে হবে। বিষয়টা আমরা যেমন বানিয়ে ফেলেছি, ততটা সহজ কিন্তু না এই পথচলা। ফলাফল হিসেবে আমরা শুধু ভয়াবহ ভবিষ্যৎকেই কল্পনা করতে পারি। অন্তত এই সেক্টরে কিন্তু সিনেমা এবং ওটিটি মাধ্যমে অসংখ্য নতুন চিন্তার প্রকাশ দেখতে পাই, যা আমাদের আশায় বুক বাঁধতে সাহায্য করে। টেলিভিশন নাটকের শেষ পরিণতি কী? আমি নাদান তা বলতে অপারগ। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট যে, এত বিশাল একটা গণমাধ্যম। সেটা নিয়ে সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কী হবে টেলিভিশনের চেহারা, কেন হবে, এর পরিণতি কীএসব বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং গাইডলাইন ঠিক করে না দিলে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে। যত দিন পর্যন্ত আমরা নাটক-ফাটক প্রবণতা ত্যাগ করতে না পারব, তত দিন বারো ভূতে লুটেপুটে খাবে আমার সাধের টেলিভিশনকে। অতি অনিচ্ছায় লেখাটা লিখেছি। তার পরও জানি অনেকের মনে আঘাত লাগবে। আঘাত লেগে ধ্বংসের পরও যদি নতুন কিছু ঘটে সেটাই হবে আনন্দের প্রহর।
একটি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সূচনা। ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে যখন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা জেগে ওঠে, তখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্রের রয়েছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার।
স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পার করে আমাদের সাংস্কৃতিক রূপরেখাটিও সময়ের সাথে সাথে নানা রূপ পরিগ্রহ করেছে। দেশ রূপান্তরের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির এই পরিক্রমাটিকে আমরা ধরতে চেয়েছি। চার পর্বের এই বিশেষ আয়োজনটি সাজানো হয়েছে– ‘পর্দান্তর’, ‘সুরান্তর’, ‘চিত্রান্তর’ ও ‘প্রান্তর’ শিরোনামে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জন ও রূপান্তর নিয়ে আলোচনা শুরুর একটি সূত্র হতে পারে এই আয়োজনটি।
পর্দান্তর শিরোনামে প্রথম পর্বের আয়োজনে খোঁজ করেছি মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা, ওটিটি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ৫২ বছরের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জন ও হালহকিকত।
আমাদের আন্দোলনকাল, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়টা স্মরণ করি। সে সময় রাজনীতি করা মানুষ ছাড়াও সাধারণের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ, সমীহ ছিল। এটাকে মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ধরে নেওয়া যায়। সচেতনতা ছিল বলেই নেতা প্রবল আত্মবিশ্বাসে উন্মুখ জনসমুদ্রের সামনে করেছিলেন সেই প্রাণপণ উচ্চারণএবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। আমরা দেখি, গর্জে ওঠে বাংলাদেশ। দেখতে পাই, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল জাতি। আমরা অর্জন করলাম স্বাধীনতা।
মানুষের স্বপ্ন, সাধের মধ্যে কোনো বীজ রোপিত হলে ফলবান বৃক্ষের আশা অপূর্ণ থাকে না। আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের এটাও জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিশ্বাসী হওয়া, নিবেদিত নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপালনে দৃঢ়চিত্ত হওয়া মানুষের জন্য খুবই জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মানুষ একসময় নিজেকে ছাপিয়ে নিজ নিজ আশা, স্বপ্নকে বড় ভেবেছে। সে সামর্থ্য ছিল, তার প্রচুর উদাহরণ হাজির করা যায়। স্বপ্ন সাধ পূরণের জন্য তখন অঙ্ক কষাকষি হয়নিস্রেফ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই যে সাত পাঁচ না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঝোঁক, তা আমাদের গৌরব করার মতো বহু কিছু দিয়েছে।
আমরা যদি পেছন ফিরে তাকাই, দেখতে পাব অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে মানুষ পাশাপাশি ছবি এঁকে, গান লিখে সুর করে গেয়ে, খেলে যুদ্ধ চালিয়েছে সগৌরবে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নানা প্রত্যয় জাগানিয়া অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো, তার মধ্যে চরমপত্র ছিল কথা বলার অনুষ্ঠান। কথাও আগ্রহ নিয়ে শোনার বিষয় ছিল। কথাও ছিল যুদ্ধাস্ত্র।
সময় মানুষকে শেখায়, নির্মাণ করে। কোনো কোনো মানুষের কাছে উপযুক্ত হওয়া বড় কথা আবার বহু মানুষ সময়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠাকেই জরুরি বলে বিবেচনা করে। একটা সময় মানুষের মধ্যে এই ভেদ থাকলেও তেমন দৃশ্যমান হতো না। দৃশ্যমান ছিল, নানা ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণের তুমুল চেষ্টা, তাগিদ।
স্বাধীনতার পরের বাংলাদেশে বিবিধ ক্ষেত্রে যা যা ঘটেছে সবই বিস্ময় জাগানোর মতোএমনটা বলাবলি হয়। সাহিত্য, সিনেমা, সংগীত, ক্রীড়া, টেলিভিশন বা মঞ্চনাটকসবকিছু মাতামাতি করার বিষয় হয়ে ওঠে।
যখন মানুষ দলে-বলে স্বপ্নের হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাইবেযেমনটা হওয়ার কথা, তেমনই প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। সিনেমা ঘর, থিয়েটারের মিলনায়তন, খেলার মাঠ, সাহিত্য সভা, সংগীত নৃত্যকলার উৎসব, সার্কাস যাত্রার প্যান্ডেলসর্বত্রই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এই ভিড় প্রেমের কারণে, আগ্রহ কৌতূহল ও আনন্দসন্ধানের অশেষ উৎসাহে।
চিত্র বদলে গেছে, অস্বীকার করা যাবে না। নানা কারণের কথা হয়তো বলা যাবে কিন্তু সত্য এইযা যা কিছু মানুষের ভেতর বদলে দিতে পারত, সবকিছুতেই এসেছে বদল। প্রায়ই শুনতে হয়, সিনেমা আগের মতো নেই। টেলিভিশন বা মঞ্চনাটকও আগের মতো নেই। এমন অভিযোগের তীর লক্ষ্য বেছে বেছে ছুড়ে কী লাভ! আমরা তো সবাই জানি, নিজেসহ কেউ, কোনো কিছুই আগের মতো নেই। থাকবার কথাও নয়। বরং ভেবে সন্তুষ্ট হওয়া যাক, নানা প্রতিকূলতা, অস্বস্তির মধ্যেও সুন্দরের জন্য, ভালোর জন্য চেষ্টা করে চলেছেন মানুষ।
মানুষের এখন সবচেয়ে বড় সংকট, কীভাবে ভালো ও মন্দ বুঝবে! একসময়ে যোগাযোগ মাধ্যমের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জানা-বোঝা দুষ্কর ছিল না। সব ক্ষেত্রে আলাদা, নতুন কিছু ঘটা মাত্র বিশেষ হয়ে উঠতে পেরেছে, পারত। প্রশংসা পাওয়ার বিষয় দ্বিধাহীন প্রশংসিত হয়েছে, হওয়ার নিয়ম ছিল। বদল এসেছে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে। কর্মের আগে হিসাব-নিকাশ, স্বার্থপরতা গোটা মানুষের নিত্যদিনের জীবন কীভাবে পর্যুদস্ত করে চলেছেভেবে দেখার সময় হাতে নেই।
সময় এখন স্বার্থরক্ষার। কোন স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হচ্ছে তার বিচার-বিশ্লেষণেও হওয়া জরুরি। একটু গভীরে নেমে তলিয়ে দেখলে মনে খানিকটা সংকোচ জন্মাততাতে ক্ষতির গতি সামান্য হলেও হয়তো কমতে পারত।
ধদিকহারা হলে যে অবস্থা হওয়ার কথা তেমনই দশাচারদিকে দৃশ্যমান অস্থিরতা। দেখতে বসে দেখছি না, শুনতে বসে শোনা হচ্ছে কি খেয়াল করছি না কেউই। আমাদের মন আছে, সে মনের কথা শোনা বাদ দিয়ে অন্যের বলা কথায় কান পাতছি। হুজুগে বললে মানতে নারাজ আমরা কিন্তু অজান্তে সে ফাঁদেই পা দিয়ে ফেলছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একালের অসাধারণ একটা প্রাপ্তি। পারস্পরিক যোগাযোগ মানুষের সমৃদ্ধি ঘটায়, মানুষকে সম্পন্ন করে। এর অন্যদিকও রয়েছে। পৃথিবীর নিয়ম যেমনআলোর অপর পিঠেই থাকে অন্ধকার। সবার জন্য যখন একটা মাঠ উন্মুক্তসেখানে নিয়মশৃঙ্খলা কিছুই টিকে থাকার কথা নয়। রাজা আর রাজত্বের মানে না বুঝে, সুরের ধারণা থাকা ও না থাকা মানুষরা একত্রে আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে গাইলে যেমনটা হওয়ার, তেমনই প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে। তবুও হাল ছাড়েননি সব ক্ষেত্রের সৃজনশীল মানুষ। বিপন্নবোধ করার মতো বহু কিছু ঘটলেও অটুট রেখেছে মনোবল। একটা কথা জরুরি মনে করে বলা দরকার, সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে মেতে থাকা মানুষরা অন্য সবার মতো নয়হয় একটু ভিন্ন রকমের। কর্মের চেয়ে আর কোনো কিছুই এসব মানুষের কাছে বড়, বিশেষ হয়ে ওঠে না। প্রতিকূলতা এসব মানুষকে তেমন বিপর্যস্ত করতে পারে না কিন্তু উপেক্ষা, মানুষের হীনমন্যতা ও স্বার্থপর কাণ্ডকীর্তি পীড়িত করে।
যা ভালো তা প্রেরণা জোগায়। চিত্রকলা সম্পর্কে বিশেষ ধারণা না থাকা সত্ত্বেও চিত্র প্রদর্শনীতে গেলে ভালো ছবির সামনেই সাধারণ দর্শককে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সংগীত বিষয়ে খুব জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও যেসব গান, শিল্পী আমাদের মুগ্ধ করেছে, যুগের পর যুগ ভালো লাগার তালিকায় স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেকী তার পেছনের কারণ, কারও অজানা নয়। সিনেমা ঘর উঠে যাচ্ছে, গড়ে উঠছে শপিং মলএটা বিনিয়োগকারীর ভালো থাকা, টিকে থাকার কৌশল। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভালো টিকিয়ে রাখা কৌশল কী?
ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ উদ্যম প্রচেষ্টা থেমে নেই। নতুন মাধ্যমের আগমন ঘটেছে। দায়িত্বশীলতা নিয়ে নতুন মাধ্যমের দর্শকের চমকে দেওয়ার মতো প্রযোজনা ছোটপর্দায় বড় আশা জাগিয়ে হাজির হয়ে চলেছে একের পর এক। এই ভালো, এই আলো ও আশা টিকিয়ে রাখা সমষ্টির জন্য খুবই জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি বলি, এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
আমাদের দেশকে আমরা চিনি। পৃথিবীকে যদি চিনিয়ে দেওয়ার আকাক্সক্ষা থাকেযেসব মাধ্যম, মানুষ ও কর্মের সাধ্য রয়েছে বিশেষ করে চিনিয়ে দেওয়ার সবার পাশে আপন হয়ে দাঁড়াতে হবে। আমরা দাঁড়াইও, দাঁড়াতে হবে সব আন্তরিক চেষ্টার পেছনে, পাশেশুধু সাফল্য পাওয়া মানুষ ও কর্মের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দিয়ে যে আনন্দলাভতা সংগ্রামের অংশ হওয়া নয়, উপভোগের জোয়ারের অংশ হওয়া।
আলমগীর কবির (১৯৩৮-৮৯) এই এক নামে তিনি পরিচিত হলেও প্রতিভার বিচ্ছুরণে তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক। তিনি ছিলেন সাংবাদিক, সমালোচক, রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রপরিচালক, প্রযোজক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার, সংগীতকার, পরিবেশক, চলচ্চিত্র প্রশিক্ষক, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী, চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ, সংগঠক, বিশ্লেষক, প্রকাশক, সম্পাদক, গ্রন্থকার, টিভি ও বেতার সমালোচক, মুক্তিযোদ্ধা। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে তিনি ‘চলচ্চিত্রচার্য’।
আলমগীরের প্রতিভা ও কর্মের সৌরভে প্রাণায়িত হয়েছে আমাদের দেশ-সমাজ ও সংস্কৃতি। ১৯৫৮ সালে তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন অঙ্ক ও পদার্থবিজ্ঞানে পড়তে। কিন্তু ওখানে জড়িয়ে পড়েন বিশ্বরাজনীতি ও হতাশাবাদের সঙ্গে। বার্গম্যানের ‘সেভেনথ সিল’ চলচ্চিত্র দেখে তিনি চরম অস্থিরতায় ভোগেন। তিনি অতীত জীবনের সব শিক্ষাগত সার্টিফিকেট লন্ডনের টেমস নদীতে ছিঁড়ে ফেলে দেন। তিনি আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে জড়িত হন। ভর্তি হন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা ফ্রন্টে যোগ দেন। ফিলিস্তিন ও আলজেরীয় আন্দোলনেও জড়িত হন। নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রও। ব্রিটেনের ‘সাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার সমালোচনা।
এদিকে দেশে তিনি সামরিক সরকারের চোখে তখন অবাঞ্ছিত ঘোষিত। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে ‘চিত্রালী’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’ ও সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তুমুল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকেন শব্দে, বাক্যে, চিন্তায়, মননে, উপস্থাপনায়। সরকারের নিষেধাজ্ঞায় তার গতিবিধি হয় নিয়ন্ত্রিত। তবে বেনামে গোপনে চলতে থাকে তার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সাংবাদিক কর্ম। তিনি জড়িত হন পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদে। ১৯৬৯ সালে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কাজ করেন। তিনি রচনা করেন পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্রের ইতিহাস ‘সিনেমা ইন পাকিস্তান’, গঠন করেন ‘ঢাকা সিনে ক্লাব’ এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউট’।
১৯৭০ সালে আলমগীর কবির, জহির রায়হান ও অন্যান্য মিলে বের করেন ‘এক্সপ্রেস’ নামে ইংরেজি সাপ্তাহিক এবং নিজে প্রকাশ করেন সিনে ম্যাগাজিন ‘সিকোয়েন্স’। আর ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি গেরিলা হয়ে কাজ করেন সরকারের প্রধান প্রতিবেদক, স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক-পাঠক হিসেবে এবং জহির রায়হানের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র : ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’, ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নর্স’-এর ধারাভাষ্যকার এবং ‘লিবারেশন ফাইটার্স’-এর পরিচালক হিসেবে। এসবই ছিল আজীবন মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কবিরের আত্মিক ও সাত্মিক আদর্শের নান্দনিক বিচ্ছুরণ।
১৯৭২ সালের পর মুক্ত স্বাধীন দেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির নব উদ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন নতুন কলম্বাস। চলচ্চিত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু, নতুন নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ (ধীরে বহে মেঘনা, রুপালি সৈকতে, পরিণীতা) এবং গ্রন্থ রচনা, ফিল্ম আর্কাইভ ও ইনস্টিটিউট গঠনে সহায়তা এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে তার বহুমাত্রিক কর্মের বিচ্ছুরণ ঘটতেই থাকে।
অতঃপর মহাশোকের বিস্ফোরণ ঘটে ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি। লন্ডনের টেমস নদীতে যে প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল বাংলাদেশের যমুনা নদীর গর্ভে সেই প্রতিভা তলিয়ে গেল চিরতরে। আলমগীর কবির এক অম্লান নক্ষত্র। বিচ্ছুরণের নান্দনিকতায় আছেন তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অনুভবে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে নাট্যসাহিত্য ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী নিরীক্ষা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালে যারা নাট্যসাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মমতাজউদ্দীন আহমদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আল দীন, মান্নান হীরা, আবদুল্লাহ হেল মাহমুদ, মাসুম রেজা প্রমুখ। একই সঙ্গে নির্দেশনার ক্ষেত্রে আমাদের আলোচনায় থাকেন আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সৈয়দ জামিল আহমেদ, তারিক আনাম খান প্রমুখ। তারা আমাদের পথপ্রদর্শক, সেই পথ অনুসন্ধানের নিমিত্ত লেখা।
রাজনীতির ভাষ্য : সৈয়দ শামসুল হকের নাটক
সৈয়দ শামসুল হক একাধারে কাব্যের জমিন, উপন্যাসের আকাশ, গল্পের নদী আর নাটকের ভূমিতে কর্ষণ করেছেন। সমকালীন রাজনীতি ও গণসংগ্রামকে কেন্দ্র করে রচিত তার কাব্যনাটক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের শিল্পভাষ্য। তার রচিত প্রথম নাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (১৯৭৫)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে রচিত এ নাটকে তিনি একটি গ্রামের মানুষের যুদ্ধকালীন ভূমিকাকে উপস্থাপন করেছেন।
সৈয়দ শামসুল হক রচিত গণনায়ক যেন তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের ক্ষমতার লড়াইয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর অংশগ্রহণকে চিত্রিত করে। ইতিহাসের চরিত্রকে শিল্পের ঘরে স্থাপন করে রচিত হয়েছে কাব্যনাটক নূরলদীনের সারাজীবন। ইংরেজ শাসনামলে কৃষক বিদ্রোহকে অবলম্বন করে রচিত হয় এ নাটক।
ঈর্ষা (১৯৯০) নাটকেও ব্যক্তির মানসজগৎ ও রাজনীতিকে একীভূত করে উপস্থাপন করেছেন। নাটকটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে স্বাধীনতা-উত্তর দেশের সামাজিক ও নৈতিক পতনের চিত্র পাওয়া যায়।
পলাশী যুদ্ধের ক্ষত নিয়ে রচিত হয় নারীগণ (২০০৭)। সিরাজের মর্মান্তিক পরাজয়ের পর তার প্রাসাদের নারীদের জীবন ও ভাবনার রূপায়ণ এই নাটকে লভ্য। তার রাজনৈতিক ধারার আরেকটি নাটক উত্তরবংশ। দেশ স্বাধীনের পর পরাজিত শক্তির পক্ষাবলম্বনকারীর উত্থানকে তিনি নাটকের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
তার নাটকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতি একীভূত হয়। তার নাটক রচনার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে সৈয়দ শামসুল হক রচনা করেন নাটক লেখা হয় সত্যের শুদ্ধতম তাগিদে।
নাটকে জীবন্ত মানুষের সঙ্গে জীবন্ত মানুষের সংযোগ।
সেলিম আল দীন বহমান বাংলায়
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাঙালির নাট্যভাবনায় সেলিম আল দীন প্রবল শক্তিতে প্রবহমান। তার নাট্যচর্চায় অনেকগুলো পর্ব চিহ্নায়ন করা যায়। প্রাথমিকপর্বে সদ্যস্বাধীন দেশের মানুষের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, রাজনীতির ক্ষয় ইত্যাকার বিক্রিয়া তার নাট্যসাহিত্যে দৃষ্ট। পাশ্চাত্য বাস্তববাদ, প্রকৃতিবাদ, অভিব্যক্তিবাদ, কিমিতিবাদ ভাবনায় জারিত হয়ে রচনা করেছেন সর্প বিষয়ক গল্প, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, সংবাদ কার্টুন, মুনতাসির প্রভৃতি নাটক। একজন অনুসন্ধানী নাট্যকার হিসেবে পথ সন্ধানের ফলস্বরূপ রচিত হয়েছে আতর আলীদের নীলাভ পাট, চর কাঁকড়ার ডকুমেন্টারি ইত্যাদি। তারপরশকুন্তলা নাটকে পুরাণের বিষয় ভেঙে তাকে প্রতিস্থাপিত করেন পাশ্চাত্য আঙ্গিকে। শকুন্তলার পথ বেয়ে কেরামতমঙ্গল ও কিত্তনখোলায় আসেন। শুরু হয় আঙ্গিকের নিরীক্ষা। হাত হদাই নাটকে সমুদ্রভ্রমণের পুরাণ তৈরি করে পাঠক-দর্শকসহ সেই পুরাণে ডুব দেন। চাকা নাটকে বিষয় ও আঙ্গিক সব ক্ষেত্রেই দেশজ ধারার দিকেই পক্ষপাত। চাকা রচনাকালীন বাংলাদেশে সামরিক বুটের দাপট। নাট্যকার পাঠক-দর্শককে স্মরণ করিয়ে দেন, রাষ্ট্র যখন বিশেষ বাহিনীর হাতে পরিচালিত সেই সময়ে সাধারণ মৃত্যুর উৎসবেই জীবনের মানে খোঁজে।
আঙ্গিক নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করেছেন সেলিম আল দীন। একই সঙ্গে আঙ্গিক বিলোপের মধ্য দিয়ে বাঙালির শিল্পরীতি নির্মাণের পথে অবিরত চলেছেন। এমনি করেই রচিত হয়েছে হরগজ, প্রাচ্য, বনপাংশুল, ধাবমান হয়ে নিমজ্জন। হাজার বছরের বাংলা নাট্যরীতি সন্ধানে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন সমকালীন শিল্পরীতি, ইতিহাস থেকে তুলে এনেছেন বাঙালির নাট্যরীতির নন্দনভাবনা। বাঙলা পরিবেশনা শিল্পকলার গবেষণা-অন্তে একটি নতুন বিশ্বাসে এই বলে উপনীত হয়েছেন যে বাঙালির নাট্যরীতি নৃত্য-গীত-সংলাপের আশ্রয়ে নির্মিত।
সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল আর প্রাসঙ্গিক নাট্যকার সৈয়দ জামিল আহমেদের নতুন নির্দেশনা ‘মন্ত্রাস ৪.৪৮’ দ্বিতীয়বারের মতো প্রদর্শিত হলো। ২০০০ সালে ব্রিটিশ নাট্যকার সারাহ কেইন রচিত এই নাটক বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বেশি মঞ্চায়িত। নাটকটি অনুবাদ করেছেন শাহমান মৈশান ও শরীফ সিরাজ। নাটকের বিষয়বস্তু মূলত মনোরোগ, ব্যক্তির গভীরতর মনস্তাত্ত্বিক সংকট যা কখনো কখনো অস্তিত্বের সংকটের শামিল। সারাহ কেইনের ‘সাইকোসিস’কে পরিকল্পক ও নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ সমকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক হত্যাকান্ডগুলোর সঙ্গে কনটেক্সচুয়ালাইজড করেছেন। আত্মজৈবনিক এই লেখা সারাহ কেইনের লেখা শেষ নাটক। এই নাটক লিখিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তিনি আত্মহত্যা করেন। ফলে এটি একটি সুইসাইডাল নোটও। চিকিৎসাশাস্ত্র যে নিক্তি দিয়ে ব্যক্তিকে পাগল, উন্মাদ, অপ্রকৃতিস্থ প্রমাণ করে থাকে তার সঙ্গে রাষ্ট্র, শাসকের সরাসরি যোগ থাকে।
জামিল আহমেদই মনে হয় প্রথম তার কাজে সরাসরি ব্লগার হত্যাকান্ডের ইস্যুটি হাজির করলেন। মানে এখানকার কোনো শিল্প সাহিত্যে এই নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনাবলির কোনো উল্লেখ দেখি না। তার মানে সবাই গা বাঁচিয়ে চলতে চায়। ফলে কায়দা করে বাঁচতে চাওয়া সেই ব্যক্তির কাছেই তিনি সরাসরি জানতে চান ‘জবাব দে’। নাকি রাষ্ট্রের কাছে? ব্যক্তি আর রাষ্ট্র তাহলে একাকার হয়ে গেছে? তাহলে কে করবে বিচার? বা কাকেই বা বলা যাবে ‘জবাব দে?’ জামিল আহমেদ এসব দোলাচলকে তার উপস্থাপন, সংলাপ ও সাইলেন্সের ভেতর হাজির করেন হলের অল্প কিছু দর্শকের কাছে। সারাহ কেইনের স্বগতোক্তিময় সংলাপে শাহমান মৈশান আর শরীফ সিরাজ যেন কিছুটা আরোপিতভাবে কাব্যিকতা জুড়ে দিয়েছেন যা না হলে আরও ভালো লাগত বলেই মনে করি। আবার এটাও মনে হয়েছে, যে যন্ত্রণার ব্যালাড নাটকটি তুলে ধরছে সেখানে এই ‘কাব্যিকতাটুকুই’ যেন মানুষের স্বস্তির জানালা। কেউ তো সেধে সেধে যন্ত্রণা খুঁড়তে চায় না। তার দরকার নির্মল বিনোদন। একটা সুস্থতার সার্টিফিকেটের পাশাপাশি একটা নিরুপদ্রব জীবন। ফলে নির্দেশক সেই আরামপ্রিয় দর্শকের চোখে গাঢ় অন্ধকারের মধ্যেই হুট করেই বিদ্যুতের মতো আলো ফেলেন। যাতে অল্প সময়ের জন্য হলেও তার চোখের আরামে ব্যাঘাত ঘটে। ব্রেখটীয় এই কায়দা জামিল আহমেদ ভীষণ প্রাসঙ্গিকভাবেই ব্যবহার করেন মন্ত্রাসে। তার সমস্ত কাজেই যে ফিজিকালিটি দেখা যায় এ নাটকেও তার ব্যতিক্রম দেখি না। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা মহসিনা আক্তারকে আমরা জামিল আহমেদের সর্বশেষ দুটো প্রযোজনায় দেখেছি। রিজওয়ান, জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায়। গত তিনটি কাজের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বিচার করলে এটি তার সেরা পারফরমেন্স।
সৈয়দ জামিল আহমেদের সাম্প্রতিক তিনটি নাটকে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, তিনি নাটকে স্টক মিউজিক ব্যবহার করছেন। মঞ্চে এত অসাধারণ পরিবেশনার পাশে যখন স্টক মিউজিক বা বিভিন্ন জায়গার মিউজিক দিয়ে একটা আবহ তৈরি করা হয় তখন তা দর্শকের মগ্নতা ভাঙায়। রিজওয়ান নাটকের ক্ষেত্রে তিনি বলেছিলেন যে সংগীতকে তিনি সাংগীতিক জায়গার বাইরে গিয়েও ব্যবহার করেছেন। কোনো কোনো জায়গায় লাউড মিউজিক এবং নয়েজ এফেক্ট ব্যবহার করেছেন ইচ্ছে করেই। কাউন্টার টেক্সট ফর্মে তিনি মিউজিককে দেখতে চেয়েছেন। ভাবনাটা সুন্দর কিন্তু সেটা মৌলিক সংগীতায়োজনের মাধ্যমে করা গেলে সবচেয়ে ভালো হতো বলে আমার ব্যক্তিগত মত। জামিল আহমেদ বরাবরের মতো এই নাটকে অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ডিজাইন করেছেন। তার ফিজিকাল থিয়েটারের যে ফর্ম তিনি প্রায় সিগনেচার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তারই আর এক পরিশীলিত রূপ মন্ত্রাসে দেখতে পাই যা ঢাকার মঞ্চ দর্শকদের অনেকদিন চোখে লেগে থাকবে। বিশেষ করে আয়নার ব্যবহার। মঞ্চ থেকে যখন আয়নাটি দর্শকদের দিকে ধরা হয় তখন সেখানে দর্শকের মুখ বিম্বিত হয় ফলে অন্ধকার হল রুমের নিউট্রাল থাকা দর্শকরাও যেন তখন মঞ্চের পারফরমার হয়ে ওঠেন।
‘রিজওয়ান’ নাটকেও তিনি একটি ফর্ম ব্যবহার করেছিলেন সেটি হচ্ছে শূন্যে আরোহণ ও অবরোহণ। যেন তার চরিত্ররা ইচ্ছে হলেই ওফাত নিতে পারেন, পারেন অনন্তের মতো ঝুলে থাকতে কোনো অমীমাংসিত প্রশ্নের মতো। রিজওয়ান নাটকে তিনি মৃত্যুকে রূপায়িত করেছেন এই ফর্মটি দিয়ে। এবং চমৎকারভাবে তার সমস্ত ডিজাইনের ভেতর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। ওপর থেকে দড়িতে ঝুলে থাকা চরিত্রদের তখন অপার্থিব কোনো চরিত্র বলেই মনে হয়।
ডিজিটাল প্রজেকশন এখন প্রায় সব নাটকেই কম আর বেশি ব্যবহার হতে দেখি। কিন্তু সৈয়দ জামিল আহমেদ ডিজিটাল মাধ্যমকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক আর নতুন ভঙ্গিতে মঞ্চে হাজির করেন। আমাদের প্রাত্যহিক ডিজিটাল জীবনকে মঞ্চের সুসজ্জিত পরিসরে পর্দায় দেখে খানিকটা চমকে ওঠেন দর্শক। কখনো বিশ্বজিতের রক্তাক্ত শার্ট আমাদের আসাদের কথা মনে করিয়ে দেয়, কখনো ২১ আগস্টের ন্যক্কারজনক হামলা, অভিজিতের মর্মান্তিক ফটোগ্রাফ দর্শককে নতুনভাবে ভাবিয়ে তোলে। কখনো অভিনেতারা যখন মঞ্চের প্রসেনিয়াম টপকে দর্শক সারি থেকে একজন লুকিয়ে থাকা অভিনেতাকে টেনেহিঁচড়ে আবার মঞ্চে নিয়ে যায় তখন সেই দর্শকের ‘নির্লিপ্তির রাজনীতি’কে সৈয়দ জামিল আহমেদ পুনর্বার প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
২০১৭ সালে আগা শহীদ আলীর ‘দ্য কান্ট্রি উইদাউট পোস্ট অফিস’ কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ মঞ্চে আনেন ‘রিজওয়ান’। যেটি সে সময় একটা ব্রেক থ্রু। ফিজিকাল থিয়েটারের এই অনন্য প্রেজেন্টেশন ঢাকার দর্শকরা দেখতে পেয়েছিলেন। এরপর তারই ধারাবাহিকতায় শহীদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’কে মঞ্চায়িত করেন ঢাকার মঞ্চে। শহীদুল জহিরের ম্যাজিক রিয়ালিস্ট সাহিত্যের ফর্মকে সৈয়দ জামিল অসামান্যভাবে হাজির করেন তার নিজস্বতায়। আর পরিশেষে সারাহ কেইনের ‘সাইকোসিস’ ওরফে ‘মন্ত্রাস ৪.৪৮’ যেন হয়ে উঠেছে আমাদের সময়ের একটা সামষ্টিক চিৎকার। একটা রাগী সময়ের দলিল।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।