
১৯৮২-এর মার্চে স্বৈরাচার বাংলাদেশের মসনদে আসীন হয়। ঐ সময় সব স্থবিরতার বিরুদ্ধে ছাত্র-আন্দোলন ছাড়া যারা প্রথম প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তারা বাংলাদেশের থিয়েটারকর্মীরা।
১৯৯০-এ স্বৈরাচারের পতন হলো গণআন্দোলনের মুখে। তথাকথিত গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলো। নাটকের বিষয়বস্তু হঠাৎ যেন দিক নির্ধারণে হোঁচট খেলো। নাটকেও দুই পক্ষের দেখা মিলল স্পষ্ট অবস্থানে। গণতন্ত্র উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপে বাংলাদেশের থিয়েটারের শক্তিকে কাজে লাগানো বা এর পেশাদারি উত্তরণে রাষ্ট্রের এগিয়ে আসার আশা ছিলহলো না। বরং কীভাবে যে রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হয়ে গেল থিয়েটারের মূলধারা, তা মালুম করা দুরূহ নয়। চলল, চলছে, চলবে ‘গণতন্ত্রের এই ধারা’।
আমাদের থিয়েটারে নানা চড়াই-উৎরাই হলো, ভাঙাগড়া ইত্যাদি। নাটক এবার বিষয় ও প্রয়োগে নানা মাত্রিকতা পেতে থাকল। লড়াই-সংগ্রামের বিষয়বস্তুর সঙ্গে নান্দনিকতার যোগ আরও বিস্তার পেল। মহিলা সমিতি আর গাইড হাউজের দমবন্ধ গুদাম ঘরের অস্বস্তি কাটিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় নাট্যশালা হলো। দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নাট্যশিক্ষা যুক্ত হলো। পুরনো মঞ্চগুলো জরাজীর্ণ, নতুন মঞ্চগুলো বেশিরভাগই অভিনয় অনুপযোগী। তার থেকে বড় কথা নাট্যকর্মীর সংখ্যা এবং পৃষ্ঠপোষকতা ঢাকার বাইরে নিম্নপর্যায়ে নেমে এলো। জন-গিজগিজ ঢাকা শহরে থিয়েটার শুধু সেগুনবাগিচা আর অদূরে বেইলি রোডে নবনির্মিত মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে উপস্থিত থাকল। দর্শক সংখ্যা কমতে থাকল।
গত শতকের ৯০ দশকের শেষভাগে বেসরকারি টিভি, বিনোদনের সার্বক্ষণিক পসরা সাজিয়ে বসল। নাট্যকর্মীদের জীবন-জীবিকার যেন একটা নতুন পথ খুলল। যারা সেই স্রোতে মিশে গেলেন, তাদের বেশিরভাগই আর থিয়েটারে ফিরতে পারলেন না। একে একে আরও এলো ইউটিউব, ওটিটি, নানান পেশাদারি এবং দ্রুত বিক্রির নানান মাধ্যম। বাংলাদেশের প্রথম থিয়েটারের দিকপালদের পর আর নতুন কোনো প্রজন্ম দাঁড়াল কি? দাঁড়াবে কেন? বৈশ্বিক-অর্থনীতি, ভোগবাদী চিন্তার বিস্ফোরণ, থিয়েটারের বাইরে জীবন-জীবিকার তাগিদ রীতিমতো জীবনযুদ্ধের নামান্তর হলো। আমাদের প্রথম প্রজন্ম জ্ঞানে-চিন্তায় অগ্রসরমান ছিল এবং ঘটনাচক্রে তাদের সবারই জীবনধারণের অন্য জীবিকা ছিল। পরের প্রজন্মের ছাত্রত্ব শেষে বা যৌবন-প্রারম্ভেই জীবিকার তাগিদ তাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। সত্তর দশকের মেধাবী তারুণ্য থিয়েটারকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তা পঁচিশ বছরের ব্যবধানে অগ্রগতি সূচকে খেই হারিয়ে ফেলল।
১৬ কোটি মানুষের দেশে যথার্থ নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতার তালিকা তৈরি করতে গেলে আসল হতাশার চিত্রটি ভেসে উঠবে। প্রক্রিয়াটিই যেন থেমে গেছে। এর পেছনের অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক। একটি শিল্পমাধ্যমে শুধু অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করে যাওয়ার বোকা প্রতিশ্রুতিতে পেট ভরে না। দু-একজন রেপাটরির মতো কিছু করে সামান্য অর্থ কলাকুশলীদের হাতে দিয়েছেন, যা প্রায় প্রতীকী ব্যঞ্জনা পেয়েছে।
একেবারে নতুন যারা থিয়েটারে যুক্ত হচ্ছে, তাদের একটা অংশ এখানে শেখার জন্য আসেন। তারা মনে করেন, থিয়েটারের শিক্ষা সিনেমা, টেলিভিশন, ওটিটি ইত্যাদিতে সাহায্য করবে। একদল আসেন ‘দেখি তো কী হয় এখানে’ এই টাইপের। কেউ আসেন আড্ডার জায়গা ভেবে, কেউ সদ্য নেশা ছেড়ে রিহ্যাব শেষে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার জন্য ভিড় করেন, কেউ আসেন ‘হুদাই’। এরা বেশিরভাগই ছাত্র-ছাত্রী, এদের কেউ কেউ মজা পেয়ে যান। মজা বেশিদিন স্থায়ী হয় না নানান চাপে। কেউ সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন, কখন অন্যত্র জায়গা পাবেন সেই ক্ষণটির জন্য। আর আছে, দেখতে এসে থেকে যাওয়া লক্ষহীন স্বপ্নহীন কিছু কর্মী। তাদের যেন আর কোথাও যাওয়ার নেই। মেধাবীরা অনেকদিন থিয়েটার করেন না। কেন সে দিনের পর দিন সময় দেবেন শুধু থিয়েটারের লোক হওয়ার জন্য? কী তার দায়? দায় একটা এক সময় ছিলরাজনৈতিক, সামাজিক।
একটি মোটামুটি থিয়েটার দাঁড় করাতে যেখানে পঁচিশ থেকে ত্রিশজন কলাকুশলী প্রয়োজন তার মূল্য কোটি টাকা ছাড়ানোর কথা। এই কোটি টাকার থিয়েটারের জন্য অপেক্ষা কবে ফুরাবে বোঝা মুশকিল। আমরা জানি, অভিনেতাদের দক্ষতাবৃদ্ধি, অনুশীলন ইত্যাদি জরুরি বিষয়। অনুশীলনের প্রথম ধাপ মহড়া এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন দর্শকের সামনে প্রতিবার পরীক্ষা দেওয়া। মহড়া কোথায় হবে? নিজস্ব মহড়ার জায়গা খুঁজে পাওয়াও তো দুরূহ। আর দর্শকের সামনে যে পরীক্ষাটা হবে সেটা কীভাবে? মাসে একবার দুবার মঞ্চে দাঁড়ালে কি দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে? নাট্যমঞ্চ বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে রেশনিং ব্যবস্থা, তাতে বছরে একটি নাটকের বড়জোর চব্বিশটি প্রদর্শনী হতে পাবে।
আর নাট্যমঞ্চগুলোর কারিগরি সুবিধা প্রতিদিনই অপ্রতুল হতে থাকে। খোদ শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চগুলোর লাইট, সাউন্ডসহ কারিগরি যে সহযোগিতা দরকার হয়, তা পাওয়া যায় না। তবে সবই পাওয়া যায় বা ব্যবস্থা করতে হয় ভিন্নভাবে, মানে ভাড়া করা বাইরের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। এমনও শোনা যায়, এই ভাড়া করার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিজস্ব ব্যবসার যোগাযোগ আছে। মানে, সরকারি চাকরিও করছেন, আবার এই প্রতিষ্ঠানে নিজের ব্যবসাও করছেন। এই চোর বা ডাকাতদের বিচার কারা করবে? সর্বত্র অরাজকতা, পরিকল্পনাহীন, সুদূরপ্রসারী চিন্তা-রহিত একটি সার্বিক অব্যবস্থা।
এতসব দুরবস্থার মধ্যেও অনেক ভালো ভালো নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তত পঁচিশটি দল নাট্যচর্চা করছে। ৫০ বছর পূর্তি করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সারির নাট্যদলগুলো। নতুন নতুন নাট্যদল সম্ভাবনার স্বাক্ষর রাখছে। নাট্যাঙ্গন মুখরিত করছে নবীন নাট্যকর্মীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নবীন বা মাত্রই-ভুক্ত হওয়া শিক্ষানবিশদের চিন্তার স্বচ্ছতা, সৃজনভাবনা এবং প্রচেষ্টা অবাক করেছে! চিন্তায় অগ্রগামী এই নতুনরাই থিয়েটারকে যথার্থ পথে নিয়ে যাবেন।
একটি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সূচনা। ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে যখন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা জেগে ওঠে, তখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্রের রয়েছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার।
স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পার করে আমাদের সাংস্কৃতিক রূপরেখাটিও সময়ের সাথে সাথে নানা রূপ পরিগ্রহ করেছে। দেশ রূপান্তরের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির এই পরিক্রমাটিকে আমরা ধরতে চেয়েছি। চার পর্বের এই বিশেষ আয়োজনটি সাজানো হয়েছে– ‘পর্দান্তর’, ‘সুরান্তর’, ‘চিত্রান্তর’ ও ‘প্রান্তর’ শিরোনামে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জন ও রূপান্তর নিয়ে আলোচনা শুরুর একটি সূত্র হতে পারে এই আয়োজনটি।
পর্দান্তর শিরোনামে প্রথম পর্বের আয়োজনে খোঁজ করেছি মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা, ওটিটি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ৫২ বছরের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জন ও হালহকিকত।
আমাদের আন্দোলনকাল, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়টা স্মরণ করি। সে সময় রাজনীতি করা মানুষ ছাড়াও সাধারণের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ, সমীহ ছিল। এটাকে মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ধরে নেওয়া যায়। সচেতনতা ছিল বলেই নেতা প্রবল আত্মবিশ্বাসে উন্মুখ জনসমুদ্রের সামনে করেছিলেন সেই প্রাণপণ উচ্চারণএবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। আমরা দেখি, গর্জে ওঠে বাংলাদেশ। দেখতে পাই, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল জাতি। আমরা অর্জন করলাম স্বাধীনতা।
মানুষের স্বপ্ন, সাধের মধ্যে কোনো বীজ রোপিত হলে ফলবান বৃক্ষের আশা অপূর্ণ থাকে না। আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের এটাও জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিশ্বাসী হওয়া, নিবেদিত নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপালনে দৃঢ়চিত্ত হওয়া মানুষের জন্য খুবই জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মানুষ একসময় নিজেকে ছাপিয়ে নিজ নিজ আশা, স্বপ্নকে বড় ভেবেছে। সে সামর্থ্য ছিল, তার প্রচুর উদাহরণ হাজির করা যায়। স্বপ্ন সাধ পূরণের জন্য তখন অঙ্ক কষাকষি হয়নিস্রেফ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই যে সাত পাঁচ না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঝোঁক, তা আমাদের গৌরব করার মতো বহু কিছু দিয়েছে।
আমরা যদি পেছন ফিরে তাকাই, দেখতে পাব অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে মানুষ পাশাপাশি ছবি এঁকে, গান লিখে সুর করে গেয়ে, খেলে যুদ্ধ চালিয়েছে সগৌরবে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নানা প্রত্যয় জাগানিয়া অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো, তার মধ্যে চরমপত্র ছিল কথা বলার অনুষ্ঠান। কথাও আগ্রহ নিয়ে শোনার বিষয় ছিল। কথাও ছিল যুদ্ধাস্ত্র।
সময় মানুষকে শেখায়, নির্মাণ করে। কোনো কোনো মানুষের কাছে উপযুক্ত হওয়া বড় কথা আবার বহু মানুষ সময়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠাকেই জরুরি বলে বিবেচনা করে। একটা সময় মানুষের মধ্যে এই ভেদ থাকলেও তেমন দৃশ্যমান হতো না। দৃশ্যমান ছিল, নানা ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণের তুমুল চেষ্টা, তাগিদ।
স্বাধীনতার পরের বাংলাদেশে বিবিধ ক্ষেত্রে যা যা ঘটেছে সবই বিস্ময় জাগানোর মতোএমনটা বলাবলি হয়। সাহিত্য, সিনেমা, সংগীত, ক্রীড়া, টেলিভিশন বা মঞ্চনাটকসবকিছু মাতামাতি করার বিষয় হয়ে ওঠে।
যখন মানুষ দলে-বলে স্বপ্নের হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাইবেযেমনটা হওয়ার কথা, তেমনই প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। সিনেমা ঘর, থিয়েটারের মিলনায়তন, খেলার মাঠ, সাহিত্য সভা, সংগীত নৃত্যকলার উৎসব, সার্কাস যাত্রার প্যান্ডেলসর্বত্রই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এই ভিড় প্রেমের কারণে, আগ্রহ কৌতূহল ও আনন্দসন্ধানের অশেষ উৎসাহে।
চিত্র বদলে গেছে, অস্বীকার করা যাবে না। নানা কারণের কথা হয়তো বলা যাবে কিন্তু সত্য এইযা যা কিছু মানুষের ভেতর বদলে দিতে পারত, সবকিছুতেই এসেছে বদল। প্রায়ই শুনতে হয়, সিনেমা আগের মতো নেই। টেলিভিশন বা মঞ্চনাটকও আগের মতো নেই। এমন অভিযোগের তীর লক্ষ্য বেছে বেছে ছুড়ে কী লাভ! আমরা তো সবাই জানি, নিজেসহ কেউ, কোনো কিছুই আগের মতো নেই। থাকবার কথাও নয়। বরং ভেবে সন্তুষ্ট হওয়া যাক, নানা প্রতিকূলতা, অস্বস্তির মধ্যেও সুন্দরের জন্য, ভালোর জন্য চেষ্টা করে চলেছেন মানুষ।
মানুষের এখন সবচেয়ে বড় সংকট, কীভাবে ভালো ও মন্দ বুঝবে! একসময়ে যোগাযোগ মাধ্যমের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জানা-বোঝা দুষ্কর ছিল না। সব ক্ষেত্রে আলাদা, নতুন কিছু ঘটা মাত্র বিশেষ হয়ে উঠতে পেরেছে, পারত। প্রশংসা পাওয়ার বিষয় দ্বিধাহীন প্রশংসিত হয়েছে, হওয়ার নিয়ম ছিল। বদল এসেছে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে। কর্মের আগে হিসাব-নিকাশ, স্বার্থপরতা গোটা মানুষের নিত্যদিনের জীবন কীভাবে পর্যুদস্ত করে চলেছেভেবে দেখার সময় হাতে নেই।
সময় এখন স্বার্থরক্ষার। কোন স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হচ্ছে তার বিচার-বিশ্লেষণেও হওয়া জরুরি। একটু গভীরে নেমে তলিয়ে দেখলে মনে খানিকটা সংকোচ জন্মাততাতে ক্ষতির গতি সামান্য হলেও হয়তো কমতে পারত।
ধদিকহারা হলে যে অবস্থা হওয়ার কথা তেমনই দশাচারদিকে দৃশ্যমান অস্থিরতা। দেখতে বসে দেখছি না, শুনতে বসে শোনা হচ্ছে কি খেয়াল করছি না কেউই। আমাদের মন আছে, সে মনের কথা শোনা বাদ দিয়ে অন্যের বলা কথায় কান পাতছি। হুজুগে বললে মানতে নারাজ আমরা কিন্তু অজান্তে সে ফাঁদেই পা দিয়ে ফেলছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একালের অসাধারণ একটা প্রাপ্তি। পারস্পরিক যোগাযোগ মানুষের সমৃদ্ধি ঘটায়, মানুষকে সম্পন্ন করে। এর অন্যদিকও রয়েছে। পৃথিবীর নিয়ম যেমনআলোর অপর পিঠেই থাকে অন্ধকার। সবার জন্য যখন একটা মাঠ উন্মুক্তসেখানে নিয়মশৃঙ্খলা কিছুই টিকে থাকার কথা নয়। রাজা আর রাজত্বের মানে না বুঝে, সুরের ধারণা থাকা ও না থাকা মানুষরা একত্রে আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে গাইলে যেমনটা হওয়ার, তেমনই প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে। তবুও হাল ছাড়েননি সব ক্ষেত্রের সৃজনশীল মানুষ। বিপন্নবোধ করার মতো বহু কিছু ঘটলেও অটুট রেখেছে মনোবল। একটা কথা জরুরি মনে করে বলা দরকার, সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে মেতে থাকা মানুষরা অন্য সবার মতো নয়হয় একটু ভিন্ন রকমের। কর্মের চেয়ে আর কোনো কিছুই এসব মানুষের কাছে বড়, বিশেষ হয়ে ওঠে না। প্রতিকূলতা এসব মানুষকে তেমন বিপর্যস্ত করতে পারে না কিন্তু উপেক্ষা, মানুষের হীনমন্যতা ও স্বার্থপর কাণ্ডকীর্তি পীড়িত করে।
যা ভালো তা প্রেরণা জোগায়। চিত্রকলা সম্পর্কে বিশেষ ধারণা না থাকা সত্ত্বেও চিত্র প্রদর্শনীতে গেলে ভালো ছবির সামনেই সাধারণ দর্শককে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সংগীত বিষয়ে খুব জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও যেসব গান, শিল্পী আমাদের মুগ্ধ করেছে, যুগের পর যুগ ভালো লাগার তালিকায় স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেকী তার পেছনের কারণ, কারও অজানা নয়। সিনেমা ঘর উঠে যাচ্ছে, গড়ে উঠছে শপিং মলএটা বিনিয়োগকারীর ভালো থাকা, টিকে থাকার কৌশল। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভালো টিকিয়ে রাখা কৌশল কী?
ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ উদ্যম প্রচেষ্টা থেমে নেই। নতুন মাধ্যমের আগমন ঘটেছে। দায়িত্বশীলতা নিয়ে নতুন মাধ্যমের দর্শকের চমকে দেওয়ার মতো প্রযোজনা ছোটপর্দায় বড় আশা জাগিয়ে হাজির হয়ে চলেছে একের পর এক। এই ভালো, এই আলো ও আশা টিকিয়ে রাখা সমষ্টির জন্য খুবই জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি বলি, এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
আমাদের দেশকে আমরা চিনি। পৃথিবীকে যদি চিনিয়ে দেওয়ার আকাক্সক্ষা থাকেযেসব মাধ্যম, মানুষ ও কর্মের সাধ্য রয়েছে বিশেষ করে চিনিয়ে দেওয়ার সবার পাশে আপন হয়ে দাঁড়াতে হবে। আমরা দাঁড়াইও, দাঁড়াতে হবে সব আন্তরিক চেষ্টার পেছনে, পাশেশুধু সাফল্য পাওয়া মানুষ ও কর্মের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দিয়ে যে আনন্দলাভতা সংগ্রামের অংশ হওয়া নয়, উপভোগের জোয়ারের অংশ হওয়া।
আলমগীর কবির (১৯৩৮-৮৯) এই এক নামে তিনি পরিচিত হলেও প্রতিভার বিচ্ছুরণে তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক। তিনি ছিলেন সাংবাদিক, সমালোচক, রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রপরিচালক, প্রযোজক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার, সংগীতকার, পরিবেশক, চলচ্চিত্র প্রশিক্ষক, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী, চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ, সংগঠক, বিশ্লেষক, প্রকাশক, সম্পাদক, গ্রন্থকার, টিভি ও বেতার সমালোচক, মুক্তিযোদ্ধা। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে তিনি ‘চলচ্চিত্রচার্য’।
আলমগীরের প্রতিভা ও কর্মের সৌরভে প্রাণায়িত হয়েছে আমাদের দেশ-সমাজ ও সংস্কৃতি। ১৯৫৮ সালে তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন অঙ্ক ও পদার্থবিজ্ঞানে পড়তে। কিন্তু ওখানে জড়িয়ে পড়েন বিশ্বরাজনীতি ও হতাশাবাদের সঙ্গে। বার্গম্যানের ‘সেভেনথ সিল’ চলচ্চিত্র দেখে তিনি চরম অস্থিরতায় ভোগেন। তিনি অতীত জীবনের সব শিক্ষাগত সার্টিফিকেট লন্ডনের টেমস নদীতে ছিঁড়ে ফেলে দেন। তিনি আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে জড়িত হন। ভর্তি হন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা ফ্রন্টে যোগ দেন। ফিলিস্তিন ও আলজেরীয় আন্দোলনেও জড়িত হন। নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রও। ব্রিটেনের ‘সাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার সমালোচনা।
এদিকে দেশে তিনি সামরিক সরকারের চোখে তখন অবাঞ্ছিত ঘোষিত। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে ‘চিত্রালী’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’ ও সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তুমুল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকেন শব্দে, বাক্যে, চিন্তায়, মননে, উপস্থাপনায়। সরকারের নিষেধাজ্ঞায় তার গতিবিধি হয় নিয়ন্ত্রিত। তবে বেনামে গোপনে চলতে থাকে তার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সাংবাদিক কর্ম। তিনি জড়িত হন পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদে। ১৯৬৯ সালে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কাজ করেন। তিনি রচনা করেন পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্রের ইতিহাস ‘সিনেমা ইন পাকিস্তান’, গঠন করেন ‘ঢাকা সিনে ক্লাব’ এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউট’।
১৯৭০ সালে আলমগীর কবির, জহির রায়হান ও অন্যান্য মিলে বের করেন ‘এক্সপ্রেস’ নামে ইংরেজি সাপ্তাহিক এবং নিজে প্রকাশ করেন সিনে ম্যাগাজিন ‘সিকোয়েন্স’। আর ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি গেরিলা হয়ে কাজ করেন সরকারের প্রধান প্রতিবেদক, স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক-পাঠক হিসেবে এবং জহির রায়হানের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র : ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’, ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নর্স’-এর ধারাভাষ্যকার এবং ‘লিবারেশন ফাইটার্স’-এর পরিচালক হিসেবে। এসবই ছিল আজীবন মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কবিরের আত্মিক ও সাত্মিক আদর্শের নান্দনিক বিচ্ছুরণ।
১৯৭২ সালের পর মুক্ত স্বাধীন দেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির নব উদ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন নতুন কলম্বাস। চলচ্চিত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু, নতুন নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ (ধীরে বহে মেঘনা, রুপালি সৈকতে, পরিণীতা) এবং গ্রন্থ রচনা, ফিল্ম আর্কাইভ ও ইনস্টিটিউট গঠনে সহায়তা এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে তার বহুমাত্রিক কর্মের বিচ্ছুরণ ঘটতেই থাকে।
অতঃপর মহাশোকের বিস্ফোরণ ঘটে ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি। লন্ডনের টেমস নদীতে যে প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল বাংলাদেশের যমুনা নদীর গর্ভে সেই প্রতিভা তলিয়ে গেল চিরতরে। আলমগীর কবির এক অম্লান নক্ষত্র। বিচ্ছুরণের নান্দনিকতায় আছেন তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অনুভবে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে নাট্যসাহিত্য ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী নিরীক্ষা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালে যারা নাট্যসাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মমতাজউদ্দীন আহমদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আল দীন, মান্নান হীরা, আবদুল্লাহ হেল মাহমুদ, মাসুম রেজা প্রমুখ। একই সঙ্গে নির্দেশনার ক্ষেত্রে আমাদের আলোচনায় থাকেন আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সৈয়দ জামিল আহমেদ, তারিক আনাম খান প্রমুখ। তারা আমাদের পথপ্রদর্শক, সেই পথ অনুসন্ধানের নিমিত্ত লেখা।
রাজনীতির ভাষ্য : সৈয়দ শামসুল হকের নাটক
সৈয়দ শামসুল হক একাধারে কাব্যের জমিন, উপন্যাসের আকাশ, গল্পের নদী আর নাটকের ভূমিতে কর্ষণ করেছেন। সমকালীন রাজনীতি ও গণসংগ্রামকে কেন্দ্র করে রচিত তার কাব্যনাটক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের শিল্পভাষ্য। তার রচিত প্রথম নাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (১৯৭৫)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে রচিত এ নাটকে তিনি একটি গ্রামের মানুষের যুদ্ধকালীন ভূমিকাকে উপস্থাপন করেছেন।
সৈয়দ শামসুল হক রচিত গণনায়ক যেন তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের ক্ষমতার লড়াইয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর অংশগ্রহণকে চিত্রিত করে। ইতিহাসের চরিত্রকে শিল্পের ঘরে স্থাপন করে রচিত হয়েছে কাব্যনাটক নূরলদীনের সারাজীবন। ইংরেজ শাসনামলে কৃষক বিদ্রোহকে অবলম্বন করে রচিত হয় এ নাটক।
ঈর্ষা (১৯৯০) নাটকেও ব্যক্তির মানসজগৎ ও রাজনীতিকে একীভূত করে উপস্থাপন করেছেন। নাটকটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে স্বাধীনতা-উত্তর দেশের সামাজিক ও নৈতিক পতনের চিত্র পাওয়া যায়।
পলাশী যুদ্ধের ক্ষত নিয়ে রচিত হয় নারীগণ (২০০৭)। সিরাজের মর্মান্তিক পরাজয়ের পর তার প্রাসাদের নারীদের জীবন ও ভাবনার রূপায়ণ এই নাটকে লভ্য। তার রাজনৈতিক ধারার আরেকটি নাটক উত্তরবংশ। দেশ স্বাধীনের পর পরাজিত শক্তির পক্ষাবলম্বনকারীর উত্থানকে তিনি নাটকের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
তার নাটকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতি একীভূত হয়। তার নাটক রচনার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে সৈয়দ শামসুল হক রচনা করেন নাটক লেখা হয় সত্যের শুদ্ধতম তাগিদে।
নাটকে জীবন্ত মানুষের সঙ্গে জীবন্ত মানুষের সংযোগ।
সেলিম আল দীন বহমান বাংলায়
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাঙালির নাট্যভাবনায় সেলিম আল দীন প্রবল শক্তিতে প্রবহমান। তার নাট্যচর্চায় অনেকগুলো পর্ব চিহ্নায়ন করা যায়। প্রাথমিকপর্বে সদ্যস্বাধীন দেশের মানুষের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, রাজনীতির ক্ষয় ইত্যাকার বিক্রিয়া তার নাট্যসাহিত্যে দৃষ্ট। পাশ্চাত্য বাস্তববাদ, প্রকৃতিবাদ, অভিব্যক্তিবাদ, কিমিতিবাদ ভাবনায় জারিত হয়ে রচনা করেছেন সর্প বিষয়ক গল্প, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, সংবাদ কার্টুন, মুনতাসির প্রভৃতি নাটক। একজন অনুসন্ধানী নাট্যকার হিসেবে পথ সন্ধানের ফলস্বরূপ রচিত হয়েছে আতর আলীদের নীলাভ পাট, চর কাঁকড়ার ডকুমেন্টারি ইত্যাদি। তারপরশকুন্তলা নাটকে পুরাণের বিষয় ভেঙে তাকে প্রতিস্থাপিত করেন পাশ্চাত্য আঙ্গিকে। শকুন্তলার পথ বেয়ে কেরামতমঙ্গল ও কিত্তনখোলায় আসেন। শুরু হয় আঙ্গিকের নিরীক্ষা। হাত হদাই নাটকে সমুদ্রভ্রমণের পুরাণ তৈরি করে পাঠক-দর্শকসহ সেই পুরাণে ডুব দেন। চাকা নাটকে বিষয় ও আঙ্গিক সব ক্ষেত্রেই দেশজ ধারার দিকেই পক্ষপাত। চাকা রচনাকালীন বাংলাদেশে সামরিক বুটের দাপট। নাট্যকার পাঠক-দর্শককে স্মরণ করিয়ে দেন, রাষ্ট্র যখন বিশেষ বাহিনীর হাতে পরিচালিত সেই সময়ে সাধারণ মৃত্যুর উৎসবেই জীবনের মানে খোঁজে।
আঙ্গিক নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করেছেন সেলিম আল দীন। একই সঙ্গে আঙ্গিক বিলোপের মধ্য দিয়ে বাঙালির শিল্পরীতি নির্মাণের পথে অবিরত চলেছেন। এমনি করেই রচিত হয়েছে হরগজ, প্রাচ্য, বনপাংশুল, ধাবমান হয়ে নিমজ্জন। হাজার বছরের বাংলা নাট্যরীতি সন্ধানে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন সমকালীন শিল্পরীতি, ইতিহাস থেকে তুলে এনেছেন বাঙালির নাট্যরীতির নন্দনভাবনা। বাঙলা পরিবেশনা শিল্পকলার গবেষণা-অন্তে একটি নতুন বিশ্বাসে এই বলে উপনীত হয়েছেন যে বাঙালির নাট্যরীতি নৃত্য-গীত-সংলাপের আশ্রয়ে নির্মিত।
একটা ছোট গল্প বলি, বাস্তব অভিজ্ঞতা। ঘটনাটা এ রকমকয়েক মাস আগে শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম গোয়ালন্দ, রাজবাড়ীতে। রাতে শ্যুটিং চলাকালীন একটা দৃশ্য শেষ করে পরবর্তী দৃশ্যের সেট এবং লাইটিংয়ের কাজ চলছিল। আমি এই বিরতিতে সাধারণত একটু নির্জন জায়গায় একাকী গিয়ে পরবর্তী দৃশ্যের শট, ব্লকিং, অভিনয়-কৌশল নিয়ে চিন্তা করতে থাকি। তা-ই করছিলাম, অন্ধকার রাতে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই পাশের একটা রেললাইনে। হাঁটছি আর চিন্তা করছি, এমন সময় পাশের টিনের ঘর থেকে ভেসে আসা টেলিভিশনের শব্দ আমার মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন করল। একটু এগিয়ে ঘরের ভেতরের পরিবেশটা দেখতে থাকি। একটা কমদামি কালার টেলিভিশনে কোনো চ্যানেলের নাটক চলছে। দর্শক দুজন বুড়ো-বুড়ি। তাদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখার জন্য আরও কাছে গেলাম। দেখলাম আনন্দিত মুখ। ভালো লাগল দেখে। নাটকের মাঝখানে বিজ্ঞাপন বিরতি এলো, তবুও তারা চ্যানেল পরিবর্তন করলেন না। অনেকটা সময় ধরে আমি বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুজন প্রতিনিধিকে দেখলাম। তারা আনন্দ নিয়ে টেলিভিশন দেখছেন। টেলিভিশনে কাজ করা একজন মানুষ হিসেবে এই দৃশ্য আমাকে নিঃসন্দেহে ভীষণ আনন্দিত করবেএটাই স্বাভাবিক। মাঝেমধ্যেই আমরা আমাদের কলিগ এবং শহুরে মানুষের মুখে শুনি‘এখন আর কেউ টেলিভিশনে নাটক দেখে না।’ কথাটার সবটুকু সত্যি না। অনেকেই দেখে অথবা অনেকের না দেখে কোনো উপায় থাকে না। কারণ দরিদ্র মানুষজন একশ-দেড়শ টাকা দিয়ে মাসব্যাপী ডিশের কানেকশন পায়, সুতরাং সেই কানেকশনের বদৌলতে যা দেখা যায় তাই দেখে। এখন কথা আসে, তারা ভোক্তা হিসেবে দেখে, কিন্তু আমরা তাদের কাছে কী সার্ভ করছি?
আমার মনে হয় না আমরা খুব গবেষণা করে দেশের সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারছি। আমাদের বর্তমান টিভি নাটকের ধরন-ধারণ দেখে মনে হয় যেন আমরা ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার লঞ্চযাত্রী। কোনো মতে রাতটা পার করে দিতে পারলেই হয়। কোনো মতে সময়টা পার করাই যেন বর্তমান টিভি নাটকের মূল উদ্দেশ্য। না আছে কোনো নতুনত্ব, না আছে কোনো উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া।
বিশ বছর আগের রঙের মানুষ আর হুমায়ূন আহমেদের কমেডি নাটকের ফর্মূলায় দুর্বল ভার্সন অথবা প্রেমের নামে আজগুবি প্রহসন। এই চক্র ভেদ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে আমাদের জন্য। কারণটা খুবই স্পষ্ট। এই সেক্টরে কাজ করা মেধাবী মানুষদের খুবই সুকৌশলে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় নেওয়া হয়েছে চাকর-শ্রেণির একদল নির্মাতা আর লেখকদের। যাদের না আছে কোনো মেধার জোর, না আছে শক্ত মেরুদন্ড।
ইয়েস স্যার, আই অ্যাম, অলওয়েজ অ্যাট ইউর সার্ভিসযাদের মূলমন্ত্র। হরে-দরে সবাই যে এমন তা অবশ্য আমি বলছি না, কেউ কেউ হয়তো নিভৃতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম।
একটু মেধাবীরা হয় ওটিটি মাধ্যমে কাজ করছেন, নয়তো টেলিভিশনের ভূত কাঁধ থেকে নামিয়ে অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। ওমুক স্টারের শ্যুটিং দেখতে এসে তমুকের মনে সাধ জাগে আমিও একজন লেখক অথবা পরিচালক হতে চাই। তখন সে অমুক স্টার ভাইকে হাতে-পায়ে ধরে যদি দুইটা দিন সময় বের করতে পারেন তাহলে কেল্লাফতে। বছর না ঘুরতেই তিনি হয়ে ওঠেন সময়ের সেরা হিট পরিচালক। মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ তাকে মানব থেকে দানব বানিয়ে তোলে। তখন তিনি ভুলে যান তার নিকট অতীত। হয়তো এক বছর আগে তিনি কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা ছিলেন, সময়ের হাওয়া বদলে এখন তিনি কারওয়ান বাজারে নাটক বিক্রি করেন। ব্যাপারটা হলো বিক্রি করা। মাছের তুলনায় নাটকে ভালোই লাভ হয়। লাভ-ক্ষতির চক্করে আমরা অনেক সম্ভাবনার অপমৃত্যু দেখতে পাই। কিন্তু ঘটনাটা আরও অন্য রকম হতে পারত।
একজন ডাক্তার হতে গেলে যেমন আপনাকে দীর্ঘ বছর ধরে একটা লেখাপড়া, বাস্তব অভিজ্ঞতা শেষ করে নিজের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে হবে, ঠিক তেমনি অডিও ভিজ্যুয়াল সেক্টরে কাজ করতে গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট বৈতরণি পাড়ি দিয়ে তবেই একজন চিত্রনাট্যকার কিংবা পরিচালক পদে আসীন হতে হবে। বিষয়টা আমরা যেমন বানিয়ে ফেলেছি, ততটা সহজ কিন্তু না এই পথচলা। ফলাফল হিসেবে আমরা শুধু ভয়াবহ ভবিষ্যৎকেই কল্পনা করতে পারি। অন্তত এই সেক্টরে কিন্তু সিনেমা এবং ওটিটি মাধ্যমে অসংখ্য নতুন চিন্তার প্রকাশ দেখতে পাই, যা আমাদের আশায় বুক বাঁধতে সাহায্য করে। টেলিভিশন নাটকের শেষ পরিণতি কী? আমি নাদান তা বলতে অপারগ। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট যে, এত বিশাল একটা গণমাধ্যম। সেটা নিয়ে সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কী হবে টেলিভিশনের চেহারা, কেন হবে, এর পরিণতি কীএসব বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং গাইডলাইন ঠিক করে না দিলে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে। যত দিন পর্যন্ত আমরা নাটক-ফাটক প্রবণতা ত্যাগ করতে না পারব, তত দিন বারো ভূতে লুটেপুটে খাবে আমার সাধের টেলিভিশনকে। অতি অনিচ্ছায় লেখাটা লিখেছি। তার পরও জানি অনেকের মনে আঘাত লাগবে। আঘাত লেগে ধ্বংসের পরও যদি নতুন কিছু ঘটে সেটাই হবে আনন্দের প্রহর।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।