
একটি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সূচনা। ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে যখন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা জেগে ওঠে, তখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্রের রয়েছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার।
স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পার করে আমাদের সাংস্কৃতিক রূপরেখাটিও সময়ের সাথে সাথে নানা রূপ পরিগ্রহ করেছে। দেশ রূপান্তরের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির এই পরিক্রমাটিকে আমরা ধরতে চেয়েছি। চার পর্বের এই বিশেষ আয়োজনটি সাজানো হয়েছে– ‘পর্দান্তর’, ‘সুরান্তর’, ‘চিত্রান্তর’ ও ‘প্রান্তর’ শিরোনামে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জন ও রূপান্তর নিয়ে আলোচনা শুরুর একটি সূত্র হতে পারে এই আয়োজনটি।
পর্দান্তর শিরোনামে প্রথম পর্বের আয়োজনে খোঁজ করেছি মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা, ওটিটি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ৫২ বছরের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জন ও হালহকিকত।
আমাদের আন্দোলনকাল, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়টা স্মরণ করি। সে সময় রাজনীতি করা মানুষ ছাড়াও সাধারণের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ, সমীহ ছিল। এটাকে মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ধরে নেওয়া যায়। সচেতনতা ছিল বলেই নেতা প্রবল আত্মবিশ্বাসে উন্মুখ জনসমুদ্রের সামনে করেছিলেন সেই প্রাণপণ উচ্চারণএবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। আমরা দেখি, গর্জে ওঠে বাংলাদেশ। দেখতে পাই, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল জাতি। আমরা অর্জন করলাম স্বাধীনতা।
মানুষের স্বপ্ন, সাধের মধ্যে কোনো বীজ রোপিত হলে ফলবান বৃক্ষের আশা অপূর্ণ থাকে না। আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের এটাও জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিশ্বাসী হওয়া, নিবেদিত নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপালনে দৃঢ়চিত্ত হওয়া মানুষের জন্য খুবই জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মানুষ একসময় নিজেকে ছাপিয়ে নিজ নিজ আশা, স্বপ্নকে বড় ভেবেছে। সে সামর্থ্য ছিল, তার প্রচুর উদাহরণ হাজির করা যায়। স্বপ্ন সাধ পূরণের জন্য তখন অঙ্ক কষাকষি হয়নিস্রেফ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই যে সাত পাঁচ না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঝোঁক, তা আমাদের গৌরব করার মতো বহু কিছু দিয়েছে।
আমরা যদি পেছন ফিরে তাকাই, দেখতে পাব অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে মানুষ পাশাপাশি ছবি এঁকে, গান লিখে সুর করে গেয়ে, খেলে যুদ্ধ চালিয়েছে সগৌরবে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নানা প্রত্যয় জাগানিয়া অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো, তার মধ্যে চরমপত্র ছিল কথা বলার অনুষ্ঠান। কথাও আগ্রহ নিয়ে শোনার বিষয় ছিল। কথাও ছিল যুদ্ধাস্ত্র।
সময় মানুষকে শেখায়, নির্মাণ করে। কোনো কোনো মানুষের কাছে উপযুক্ত হওয়া বড় কথা আবার বহু মানুষ সময়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠাকেই জরুরি বলে বিবেচনা করে। একটা সময় মানুষের মধ্যে এই ভেদ থাকলেও তেমন দৃশ্যমান হতো না। দৃশ্যমান ছিল, নানা ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণের তুমুল চেষ্টা, তাগিদ।
স্বাধীনতার পরের বাংলাদেশে বিবিধ ক্ষেত্রে যা যা ঘটেছে সবই বিস্ময় জাগানোর মতোএমনটা বলাবলি হয়। সাহিত্য, সিনেমা, সংগীত, ক্রীড়া, টেলিভিশন বা মঞ্চনাটকসবকিছু মাতামাতি করার বিষয় হয়ে ওঠে।
যখন মানুষ দলে-বলে স্বপ্নের হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাইবেযেমনটা হওয়ার কথা, তেমনই প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। সিনেমা ঘর, থিয়েটারের মিলনায়তন, খেলার মাঠ, সাহিত্য সভা, সংগীত নৃত্যকলার উৎসব, সার্কাস যাত্রার প্যান্ডেলসর্বত্রই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এই ভিড় প্রেমের কারণে, আগ্রহ কৌতূহল ও আনন্দসন্ধানের অশেষ উৎসাহে।
চিত্র বদলে গেছে, অস্বীকার করা যাবে না। নানা কারণের কথা হয়তো বলা যাবে কিন্তু সত্য এইযা যা কিছু মানুষের ভেতর বদলে দিতে পারত, সবকিছুতেই এসেছে বদল। প্রায়ই শুনতে হয়, সিনেমা আগের মতো নেই। টেলিভিশন বা মঞ্চনাটকও আগের মতো নেই। এমন অভিযোগের তীর লক্ষ্য বেছে বেছে ছুড়ে কী লাভ! আমরা তো সবাই জানি, নিজেসহ কেউ, কোনো কিছুই আগের মতো নেই। থাকবার কথাও নয়। বরং ভেবে সন্তুষ্ট হওয়া যাক, নানা প্রতিকূলতা, অস্বস্তির মধ্যেও সুন্দরের জন্য, ভালোর জন্য চেষ্টা করে চলেছেন মানুষ।
মানুষের এখন সবচেয়ে বড় সংকট, কীভাবে ভালো ও মন্দ বুঝবে! একসময়ে যোগাযোগ মাধ্যমের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জানা-বোঝা দুষ্কর ছিল না। সব ক্ষেত্রে আলাদা, নতুন কিছু ঘটা মাত্র বিশেষ হয়ে উঠতে পেরেছে, পারত। প্রশংসা পাওয়ার বিষয় দ্বিধাহীন প্রশংসিত হয়েছে, হওয়ার নিয়ম ছিল। বদল এসেছে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে। কর্মের আগে হিসাব-নিকাশ, স্বার্থপরতা গোটা মানুষের নিত্যদিনের জীবন কীভাবে পর্যুদস্ত করে চলেছেভেবে দেখার সময় হাতে নেই।
সময় এখন স্বার্থরক্ষার। কোন স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হচ্ছে তার বিচার-বিশ্লেষণেও হওয়া জরুরি। একটু গভীরে নেমে তলিয়ে দেখলে মনে খানিকটা সংকোচ জন্মাততাতে ক্ষতির গতি সামান্য হলেও হয়তো কমতে পারত।
ধদিকহারা হলে যে অবস্থা হওয়ার কথা তেমনই দশাচারদিকে দৃশ্যমান অস্থিরতা। দেখতে বসে দেখছি না, শুনতে বসে শোনা হচ্ছে কি খেয়াল করছি না কেউই। আমাদের মন আছে, সে মনের কথা শোনা বাদ দিয়ে অন্যের বলা কথায় কান পাতছি। হুজুগে বললে মানতে নারাজ আমরা কিন্তু অজান্তে সে ফাঁদেই পা দিয়ে ফেলছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একালের অসাধারণ একটা প্রাপ্তি। পারস্পরিক যোগাযোগ মানুষের সমৃদ্ধি ঘটায়, মানুষকে সম্পন্ন করে। এর অন্যদিকও রয়েছে। পৃথিবীর নিয়ম যেমনআলোর অপর পিঠেই থাকে অন্ধকার। সবার জন্য যখন একটা মাঠ উন্মুক্তসেখানে নিয়মশৃঙ্খলা কিছুই টিকে থাকার কথা নয়। রাজা আর রাজত্বের মানে না বুঝে, সুরের ধারণা থাকা ও না থাকা মানুষরা একত্রে আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে গাইলে যেমনটা হওয়ার, তেমনই প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে। তবুও হাল ছাড়েননি সব ক্ষেত্রের সৃজনশীল মানুষ। বিপন্নবোধ করার মতো বহু কিছু ঘটলেও অটুট রেখেছে মনোবল। একটা কথা জরুরি মনে করে বলা দরকার, সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে মেতে থাকা মানুষরা অন্য সবার মতো নয়হয় একটু ভিন্ন রকমের। কর্মের চেয়ে আর কোনো কিছুই এসব মানুষের কাছে বড়, বিশেষ হয়ে ওঠে না। প্রতিকূলতা এসব মানুষকে তেমন বিপর্যস্ত করতে পারে না কিন্তু উপেক্ষা, মানুষের হীনমন্যতা ও স্বার্থপর কাণ্ডকীর্তি পীড়িত করে।
যা ভালো তা প্রেরণা জোগায়। চিত্রকলা সম্পর্কে বিশেষ ধারণা না থাকা সত্ত্বেও চিত্র প্রদর্শনীতে গেলে ভালো ছবির সামনেই সাধারণ দর্শককে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সংগীত বিষয়ে খুব জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও যেসব গান, শিল্পী আমাদের মুগ্ধ করেছে, যুগের পর যুগ ভালো লাগার তালিকায় স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেকী তার পেছনের কারণ, কারও অজানা নয়। সিনেমা ঘর উঠে যাচ্ছে, গড়ে উঠছে শপিং মলএটা বিনিয়োগকারীর ভালো থাকা, টিকে থাকার কৌশল। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভালো টিকিয়ে রাখা কৌশল কী?
ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ উদ্যম প্রচেষ্টা থেমে নেই। নতুন মাধ্যমের আগমন ঘটেছে। দায়িত্বশীলতা নিয়ে নতুন মাধ্যমের দর্শকের চমকে দেওয়ার মতো প্রযোজনা ছোটপর্দায় বড় আশা জাগিয়ে হাজির হয়ে চলেছে একের পর এক। এই ভালো, এই আলো ও আশা টিকিয়ে রাখা সমষ্টির জন্য খুবই জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি বলি, এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
আমাদের দেশকে আমরা চিনি। পৃথিবীকে যদি চিনিয়ে দেওয়ার আকাক্সক্ষা থাকেযেসব মাধ্যম, মানুষ ও কর্মের সাধ্য রয়েছে বিশেষ করে চিনিয়ে দেওয়ার সবার পাশে আপন হয়ে দাঁড়াতে হবে। আমরা দাঁড়াইও, দাঁড়াতে হবে সব আন্তরিক চেষ্টার পেছনে, পাশেশুধু সাফল্য পাওয়া মানুষ ও কর্মের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দিয়ে যে আনন্দলাভতা সংগ্রামের অংশ হওয়া নয়, উপভোগের জোয়ারের অংশ হওয়া।
আলমগীর কবির (১৯৩৮-৮৯) এই এক নামে তিনি পরিচিত হলেও প্রতিভার বিচ্ছুরণে তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক। তিনি ছিলেন সাংবাদিক, সমালোচক, রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রপরিচালক, প্রযোজক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার, সংগীতকার, পরিবেশক, চলচ্চিত্র প্রশিক্ষক, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী, চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ, সংগঠক, বিশ্লেষক, প্রকাশক, সম্পাদক, গ্রন্থকার, টিভি ও বেতার সমালোচক, মুক্তিযোদ্ধা। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে তিনি ‘চলচ্চিত্রচার্য’।
আলমগীরের প্রতিভা ও কর্মের সৌরভে প্রাণায়িত হয়েছে আমাদের দেশ-সমাজ ও সংস্কৃতি। ১৯৫৮ সালে তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন অঙ্ক ও পদার্থবিজ্ঞানে পড়তে। কিন্তু ওখানে জড়িয়ে পড়েন বিশ্বরাজনীতি ও হতাশাবাদের সঙ্গে। বার্গম্যানের ‘সেভেনথ সিল’ চলচ্চিত্র দেখে তিনি চরম অস্থিরতায় ভোগেন। তিনি অতীত জীবনের সব শিক্ষাগত সার্টিফিকেট লন্ডনের টেমস নদীতে ছিঁড়ে ফেলে দেন। তিনি আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে জড়িত হন। ভর্তি হন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা ফ্রন্টে যোগ দেন। ফিলিস্তিন ও আলজেরীয় আন্দোলনেও জড়িত হন। নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রও। ব্রিটেনের ‘সাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার সমালোচনা।
এদিকে দেশে তিনি সামরিক সরকারের চোখে তখন অবাঞ্ছিত ঘোষিত। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে ‘চিত্রালী’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’ ও সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তুমুল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকেন শব্দে, বাক্যে, চিন্তায়, মননে, উপস্থাপনায়। সরকারের নিষেধাজ্ঞায় তার গতিবিধি হয় নিয়ন্ত্রিত। তবে বেনামে গোপনে চলতে থাকে তার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সাংবাদিক কর্ম। তিনি জড়িত হন পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদে। ১৯৬৯ সালে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কাজ করেন। তিনি রচনা করেন পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্রের ইতিহাস ‘সিনেমা ইন পাকিস্তান’, গঠন করেন ‘ঢাকা সিনে ক্লাব’ এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউট’।
১৯৭০ সালে আলমগীর কবির, জহির রায়হান ও অন্যান্য মিলে বের করেন ‘এক্সপ্রেস’ নামে ইংরেজি সাপ্তাহিক এবং নিজে প্রকাশ করেন সিনে ম্যাগাজিন ‘সিকোয়েন্স’। আর ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি গেরিলা হয়ে কাজ করেন সরকারের প্রধান প্রতিবেদক, স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক-পাঠক হিসেবে এবং জহির রায়হানের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র : ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’, ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নর্স’-এর ধারাভাষ্যকার এবং ‘লিবারেশন ফাইটার্স’-এর পরিচালক হিসেবে। এসবই ছিল আজীবন মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কবিরের আত্মিক ও সাত্মিক আদর্শের নান্দনিক বিচ্ছুরণ।
১৯৭২ সালের পর মুক্ত স্বাধীন দেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির নব উদ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন নতুন কলম্বাস। চলচ্চিত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু, নতুন নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ (ধীরে বহে মেঘনা, রুপালি সৈকতে, পরিণীতা) এবং গ্রন্থ রচনা, ফিল্ম আর্কাইভ ও ইনস্টিটিউট গঠনে সহায়তা এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে তার বহুমাত্রিক কর্মের বিচ্ছুরণ ঘটতেই থাকে।
অতঃপর মহাশোকের বিস্ফোরণ ঘটে ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি। লন্ডনের টেমস নদীতে যে প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল বাংলাদেশের যমুনা নদীর গর্ভে সেই প্রতিভা তলিয়ে গেল চিরতরে। আলমগীর কবির এক অম্লান নক্ষত্র। বিচ্ছুরণের নান্দনিকতায় আছেন তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অনুভবে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে নাট্যসাহিত্য ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী নিরীক্ষা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালে যারা নাট্যসাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মমতাজউদ্দীন আহমদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আল দীন, মান্নান হীরা, আবদুল্লাহ হেল মাহমুদ, মাসুম রেজা প্রমুখ। একই সঙ্গে নির্দেশনার ক্ষেত্রে আমাদের আলোচনায় থাকেন আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সৈয়দ জামিল আহমেদ, তারিক আনাম খান প্রমুখ। তারা আমাদের পথপ্রদর্শক, সেই পথ অনুসন্ধানের নিমিত্ত লেখা।
রাজনীতির ভাষ্য : সৈয়দ শামসুল হকের নাটক
সৈয়দ শামসুল হক একাধারে কাব্যের জমিন, উপন্যাসের আকাশ, গল্পের নদী আর নাটকের ভূমিতে কর্ষণ করেছেন। সমকালীন রাজনীতি ও গণসংগ্রামকে কেন্দ্র করে রচিত তার কাব্যনাটক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের শিল্পভাষ্য। তার রচিত প্রথম নাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (১৯৭৫)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে রচিত এ নাটকে তিনি একটি গ্রামের মানুষের যুদ্ধকালীন ভূমিকাকে উপস্থাপন করেছেন।
সৈয়দ শামসুল হক রচিত গণনায়ক যেন তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের ক্ষমতার লড়াইয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর অংশগ্রহণকে চিত্রিত করে। ইতিহাসের চরিত্রকে শিল্পের ঘরে স্থাপন করে রচিত হয়েছে কাব্যনাটক নূরলদীনের সারাজীবন। ইংরেজ শাসনামলে কৃষক বিদ্রোহকে অবলম্বন করে রচিত হয় এ নাটক।
ঈর্ষা (১৯৯০) নাটকেও ব্যক্তির মানসজগৎ ও রাজনীতিকে একীভূত করে উপস্থাপন করেছেন। নাটকটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে স্বাধীনতা-উত্তর দেশের সামাজিক ও নৈতিক পতনের চিত্র পাওয়া যায়।
পলাশী যুদ্ধের ক্ষত নিয়ে রচিত হয় নারীগণ (২০০৭)। সিরাজের মর্মান্তিক পরাজয়ের পর তার প্রাসাদের নারীদের জীবন ও ভাবনার রূপায়ণ এই নাটকে লভ্য। তার রাজনৈতিক ধারার আরেকটি নাটক উত্তরবংশ। দেশ স্বাধীনের পর পরাজিত শক্তির পক্ষাবলম্বনকারীর উত্থানকে তিনি নাটকের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
তার নাটকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতি একীভূত হয়। তার নাটক রচনার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে সৈয়দ শামসুল হক রচনা করেন নাটক লেখা হয় সত্যের শুদ্ধতম তাগিদে।
নাটকে জীবন্ত মানুষের সঙ্গে জীবন্ত মানুষের সংযোগ।
সেলিম আল দীন বহমান বাংলায়
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাঙালির নাট্যভাবনায় সেলিম আল দীন প্রবল শক্তিতে প্রবহমান। তার নাট্যচর্চায় অনেকগুলো পর্ব চিহ্নায়ন করা যায়। প্রাথমিকপর্বে সদ্যস্বাধীন দেশের মানুষের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, রাজনীতির ক্ষয় ইত্যাকার বিক্রিয়া তার নাট্যসাহিত্যে দৃষ্ট। পাশ্চাত্য বাস্তববাদ, প্রকৃতিবাদ, অভিব্যক্তিবাদ, কিমিতিবাদ ভাবনায় জারিত হয়ে রচনা করেছেন সর্প বিষয়ক গল্প, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, সংবাদ কার্টুন, মুনতাসির প্রভৃতি নাটক। একজন অনুসন্ধানী নাট্যকার হিসেবে পথ সন্ধানের ফলস্বরূপ রচিত হয়েছে আতর আলীদের নীলাভ পাট, চর কাঁকড়ার ডকুমেন্টারি ইত্যাদি। তারপরশকুন্তলা নাটকে পুরাণের বিষয় ভেঙে তাকে প্রতিস্থাপিত করেন পাশ্চাত্য আঙ্গিকে। শকুন্তলার পথ বেয়ে কেরামতমঙ্গল ও কিত্তনখোলায় আসেন। শুরু হয় আঙ্গিকের নিরীক্ষা। হাত হদাই নাটকে সমুদ্রভ্রমণের পুরাণ তৈরি করে পাঠক-দর্শকসহ সেই পুরাণে ডুব দেন। চাকা নাটকে বিষয় ও আঙ্গিক সব ক্ষেত্রেই দেশজ ধারার দিকেই পক্ষপাত। চাকা রচনাকালীন বাংলাদেশে সামরিক বুটের দাপট। নাট্যকার পাঠক-দর্শককে স্মরণ করিয়ে দেন, রাষ্ট্র যখন বিশেষ বাহিনীর হাতে পরিচালিত সেই সময়ে সাধারণ মৃত্যুর উৎসবেই জীবনের মানে খোঁজে।
আঙ্গিক নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করেছেন সেলিম আল দীন। একই সঙ্গে আঙ্গিক বিলোপের মধ্য দিয়ে বাঙালির শিল্পরীতি নির্মাণের পথে অবিরত চলেছেন। এমনি করেই রচিত হয়েছে হরগজ, প্রাচ্য, বনপাংশুল, ধাবমান হয়ে নিমজ্জন। হাজার বছরের বাংলা নাট্যরীতি সন্ধানে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন সমকালীন শিল্পরীতি, ইতিহাস থেকে তুলে এনেছেন বাঙালির নাট্যরীতির নন্দনভাবনা। বাঙলা পরিবেশনা শিল্পকলার গবেষণা-অন্তে একটি নতুন বিশ্বাসে এই বলে উপনীত হয়েছেন যে বাঙালির নাট্যরীতি নৃত্য-গীত-সংলাপের আশ্রয়ে নির্মিত।
একটা ছোট গল্প বলি, বাস্তব অভিজ্ঞতা। ঘটনাটা এ রকমকয়েক মাস আগে শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম গোয়ালন্দ, রাজবাড়ীতে। রাতে শ্যুটিং চলাকালীন একটা দৃশ্য শেষ করে পরবর্তী দৃশ্যের সেট এবং লাইটিংয়ের কাজ চলছিল। আমি এই বিরতিতে সাধারণত একটু নির্জন জায়গায় একাকী গিয়ে পরবর্তী দৃশ্যের শট, ব্লকিং, অভিনয়-কৌশল নিয়ে চিন্তা করতে থাকি। তা-ই করছিলাম, অন্ধকার রাতে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই পাশের একটা রেললাইনে। হাঁটছি আর চিন্তা করছি, এমন সময় পাশের টিনের ঘর থেকে ভেসে আসা টেলিভিশনের শব্দ আমার মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন করল। একটু এগিয়ে ঘরের ভেতরের পরিবেশটা দেখতে থাকি। একটা কমদামি কালার টেলিভিশনে কোনো চ্যানেলের নাটক চলছে। দর্শক দুজন বুড়ো-বুড়ি। তাদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখার জন্য আরও কাছে গেলাম। দেখলাম আনন্দিত মুখ। ভালো লাগল দেখে। নাটকের মাঝখানে বিজ্ঞাপন বিরতি এলো, তবুও তারা চ্যানেল পরিবর্তন করলেন না। অনেকটা সময় ধরে আমি বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুজন প্রতিনিধিকে দেখলাম। তারা আনন্দ নিয়ে টেলিভিশন দেখছেন। টেলিভিশনে কাজ করা একজন মানুষ হিসেবে এই দৃশ্য আমাকে নিঃসন্দেহে ভীষণ আনন্দিত করবেএটাই স্বাভাবিক। মাঝেমধ্যেই আমরা আমাদের কলিগ এবং শহুরে মানুষের মুখে শুনি‘এখন আর কেউ টেলিভিশনে নাটক দেখে না।’ কথাটার সবটুকু সত্যি না। অনেকেই দেখে অথবা অনেকের না দেখে কোনো উপায় থাকে না। কারণ দরিদ্র মানুষজন একশ-দেড়শ টাকা দিয়ে মাসব্যাপী ডিশের কানেকশন পায়, সুতরাং সেই কানেকশনের বদৌলতে যা দেখা যায় তাই দেখে। এখন কথা আসে, তারা ভোক্তা হিসেবে দেখে, কিন্তু আমরা তাদের কাছে কী সার্ভ করছি?
আমার মনে হয় না আমরা খুব গবেষণা করে দেশের সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারছি। আমাদের বর্তমান টিভি নাটকের ধরন-ধারণ দেখে মনে হয় যেন আমরা ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার লঞ্চযাত্রী। কোনো মতে রাতটা পার করে দিতে পারলেই হয়। কোনো মতে সময়টা পার করাই যেন বর্তমান টিভি নাটকের মূল উদ্দেশ্য। না আছে কোনো নতুনত্ব, না আছে কোনো উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া।
বিশ বছর আগের রঙের মানুষ আর হুমায়ূন আহমেদের কমেডি নাটকের ফর্মূলায় দুর্বল ভার্সন অথবা প্রেমের নামে আজগুবি প্রহসন। এই চক্র ভেদ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে আমাদের জন্য। কারণটা খুবই স্পষ্ট। এই সেক্টরে কাজ করা মেধাবী মানুষদের খুবই সুকৌশলে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় নেওয়া হয়েছে চাকর-শ্রেণির একদল নির্মাতা আর লেখকদের। যাদের না আছে কোনো মেধার জোর, না আছে শক্ত মেরুদন্ড।
ইয়েস স্যার, আই অ্যাম, অলওয়েজ অ্যাট ইউর সার্ভিসযাদের মূলমন্ত্র। হরে-দরে সবাই যে এমন তা অবশ্য আমি বলছি না, কেউ কেউ হয়তো নিভৃতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম।
একটু মেধাবীরা হয় ওটিটি মাধ্যমে কাজ করছেন, নয়তো টেলিভিশনের ভূত কাঁধ থেকে নামিয়ে অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। ওমুক স্টারের শ্যুটিং দেখতে এসে তমুকের মনে সাধ জাগে আমিও একজন লেখক অথবা পরিচালক হতে চাই। তখন সে অমুক স্টার ভাইকে হাতে-পায়ে ধরে যদি দুইটা দিন সময় বের করতে পারেন তাহলে কেল্লাফতে। বছর না ঘুরতেই তিনি হয়ে ওঠেন সময়ের সেরা হিট পরিচালক। মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ তাকে মানব থেকে দানব বানিয়ে তোলে। তখন তিনি ভুলে যান তার নিকট অতীত। হয়তো এক বছর আগে তিনি কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা ছিলেন, সময়ের হাওয়া বদলে এখন তিনি কারওয়ান বাজারে নাটক বিক্রি করেন। ব্যাপারটা হলো বিক্রি করা। মাছের তুলনায় নাটকে ভালোই লাভ হয়। লাভ-ক্ষতির চক্করে আমরা অনেক সম্ভাবনার অপমৃত্যু দেখতে পাই। কিন্তু ঘটনাটা আরও অন্য রকম হতে পারত।
একজন ডাক্তার হতে গেলে যেমন আপনাকে দীর্ঘ বছর ধরে একটা লেখাপড়া, বাস্তব অভিজ্ঞতা শেষ করে নিজের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে হবে, ঠিক তেমনি অডিও ভিজ্যুয়াল সেক্টরে কাজ করতে গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট বৈতরণি পাড়ি দিয়ে তবেই একজন চিত্রনাট্যকার কিংবা পরিচালক পদে আসীন হতে হবে। বিষয়টা আমরা যেমন বানিয়ে ফেলেছি, ততটা সহজ কিন্তু না এই পথচলা। ফলাফল হিসেবে আমরা শুধু ভয়াবহ ভবিষ্যৎকেই কল্পনা করতে পারি। অন্তত এই সেক্টরে কিন্তু সিনেমা এবং ওটিটি মাধ্যমে অসংখ্য নতুন চিন্তার প্রকাশ দেখতে পাই, যা আমাদের আশায় বুক বাঁধতে সাহায্য করে। টেলিভিশন নাটকের শেষ পরিণতি কী? আমি নাদান তা বলতে অপারগ। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট যে, এত বিশাল একটা গণমাধ্যম। সেটা নিয়ে সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কী হবে টেলিভিশনের চেহারা, কেন হবে, এর পরিণতি কীএসব বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং গাইডলাইন ঠিক করে না দিলে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে। যত দিন পর্যন্ত আমরা নাটক-ফাটক প্রবণতা ত্যাগ করতে না পারব, তত দিন বারো ভূতে লুটেপুটে খাবে আমার সাধের টেলিভিশনকে। অতি অনিচ্ছায় লেখাটা লিখেছি। তার পরও জানি অনেকের মনে আঘাত লাগবে। আঘাত লেগে ধ্বংসের পরও যদি নতুন কিছু ঘটে সেটাই হবে আনন্দের প্রহর।
সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল আর প্রাসঙ্গিক নাট্যকার সৈয়দ জামিল আহমেদের নতুন নির্দেশনা ‘মন্ত্রাস ৪.৪৮’ দ্বিতীয়বারের মতো প্রদর্শিত হলো। ২০০০ সালে ব্রিটিশ নাট্যকার সারাহ কেইন রচিত এই নাটক বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বেশি মঞ্চায়িত। নাটকটি অনুবাদ করেছেন শাহমান মৈশান ও শরীফ সিরাজ। নাটকের বিষয়বস্তু মূলত মনোরোগ, ব্যক্তির গভীরতর মনস্তাত্ত্বিক সংকট যা কখনো কখনো অস্তিত্বের সংকটের শামিল। সারাহ কেইনের ‘সাইকোসিস’কে পরিকল্পক ও নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ সমকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক হত্যাকান্ডগুলোর সঙ্গে কনটেক্সচুয়ালাইজড করেছেন। আত্মজৈবনিক এই লেখা সারাহ কেইনের লেখা শেষ নাটক। এই নাটক লিখিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তিনি আত্মহত্যা করেন। ফলে এটি একটি সুইসাইডাল নোটও। চিকিৎসাশাস্ত্র যে নিক্তি দিয়ে ব্যক্তিকে পাগল, উন্মাদ, অপ্রকৃতিস্থ প্রমাণ করে থাকে তার সঙ্গে রাষ্ট্র, শাসকের সরাসরি যোগ থাকে।
জামিল আহমেদই মনে হয় প্রথম তার কাজে সরাসরি ব্লগার হত্যাকান্ডের ইস্যুটি হাজির করলেন। মানে এখানকার কোনো শিল্প সাহিত্যে এই নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনাবলির কোনো উল্লেখ দেখি না। তার মানে সবাই গা বাঁচিয়ে চলতে চায়। ফলে কায়দা করে বাঁচতে চাওয়া সেই ব্যক্তির কাছেই তিনি সরাসরি জানতে চান ‘জবাব দে’। নাকি রাষ্ট্রের কাছে? ব্যক্তি আর রাষ্ট্র তাহলে একাকার হয়ে গেছে? তাহলে কে করবে বিচার? বা কাকেই বা বলা যাবে ‘জবাব দে?’ জামিল আহমেদ এসব দোলাচলকে তার উপস্থাপন, সংলাপ ও সাইলেন্সের ভেতর হাজির করেন হলের অল্প কিছু দর্শকের কাছে। সারাহ কেইনের স্বগতোক্তিময় সংলাপে শাহমান মৈশান আর শরীফ সিরাজ যেন কিছুটা আরোপিতভাবে কাব্যিকতা জুড়ে দিয়েছেন যা না হলে আরও ভালো লাগত বলেই মনে করি। আবার এটাও মনে হয়েছে, যে যন্ত্রণার ব্যালাড নাটকটি তুলে ধরছে সেখানে এই ‘কাব্যিকতাটুকুই’ যেন মানুষের স্বস্তির জানালা। কেউ তো সেধে সেধে যন্ত্রণা খুঁড়তে চায় না। তার দরকার নির্মল বিনোদন। একটা সুস্থতার সার্টিফিকেটের পাশাপাশি একটা নিরুপদ্রব জীবন। ফলে নির্দেশক সেই আরামপ্রিয় দর্শকের চোখে গাঢ় অন্ধকারের মধ্যেই হুট করেই বিদ্যুতের মতো আলো ফেলেন। যাতে অল্প সময়ের জন্য হলেও তার চোখের আরামে ব্যাঘাত ঘটে। ব্রেখটীয় এই কায়দা জামিল আহমেদ ভীষণ প্রাসঙ্গিকভাবেই ব্যবহার করেন মন্ত্রাসে। তার সমস্ত কাজেই যে ফিজিকালিটি দেখা যায় এ নাটকেও তার ব্যতিক্রম দেখি না। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা মহসিনা আক্তারকে আমরা জামিল আহমেদের সর্বশেষ দুটো প্রযোজনায় দেখেছি। রিজওয়ান, জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায়। গত তিনটি কাজের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বিচার করলে এটি তার সেরা পারফরমেন্স।
সৈয়দ জামিল আহমেদের সাম্প্রতিক তিনটি নাটকে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, তিনি নাটকে স্টক মিউজিক ব্যবহার করছেন। মঞ্চে এত অসাধারণ পরিবেশনার পাশে যখন স্টক মিউজিক বা বিভিন্ন জায়গার মিউজিক দিয়ে একটা আবহ তৈরি করা হয় তখন তা দর্শকের মগ্নতা ভাঙায়। রিজওয়ান নাটকের ক্ষেত্রে তিনি বলেছিলেন যে সংগীতকে তিনি সাংগীতিক জায়গার বাইরে গিয়েও ব্যবহার করেছেন। কোনো কোনো জায়গায় লাউড মিউজিক এবং নয়েজ এফেক্ট ব্যবহার করেছেন ইচ্ছে করেই। কাউন্টার টেক্সট ফর্মে তিনি মিউজিককে দেখতে চেয়েছেন। ভাবনাটা সুন্দর কিন্তু সেটা মৌলিক সংগীতায়োজনের মাধ্যমে করা গেলে সবচেয়ে ভালো হতো বলে আমার ব্যক্তিগত মত। জামিল আহমেদ বরাবরের মতো এই নাটকে অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ডিজাইন করেছেন। তার ফিজিকাল থিয়েটারের যে ফর্ম তিনি প্রায় সিগনেচার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তারই আর এক পরিশীলিত রূপ মন্ত্রাসে দেখতে পাই যা ঢাকার মঞ্চ দর্শকদের অনেকদিন চোখে লেগে থাকবে। বিশেষ করে আয়নার ব্যবহার। মঞ্চ থেকে যখন আয়নাটি দর্শকদের দিকে ধরা হয় তখন সেখানে দর্শকের মুখ বিম্বিত হয় ফলে অন্ধকার হল রুমের নিউট্রাল থাকা দর্শকরাও যেন তখন মঞ্চের পারফরমার হয়ে ওঠেন।
‘রিজওয়ান’ নাটকেও তিনি একটি ফর্ম ব্যবহার করেছিলেন সেটি হচ্ছে শূন্যে আরোহণ ও অবরোহণ। যেন তার চরিত্ররা ইচ্ছে হলেই ওফাত নিতে পারেন, পারেন অনন্তের মতো ঝুলে থাকতে কোনো অমীমাংসিত প্রশ্নের মতো। রিজওয়ান নাটকে তিনি মৃত্যুকে রূপায়িত করেছেন এই ফর্মটি দিয়ে। এবং চমৎকারভাবে তার সমস্ত ডিজাইনের ভেতর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। ওপর থেকে দড়িতে ঝুলে থাকা চরিত্রদের তখন অপার্থিব কোনো চরিত্র বলেই মনে হয়।
ডিজিটাল প্রজেকশন এখন প্রায় সব নাটকেই কম আর বেশি ব্যবহার হতে দেখি। কিন্তু সৈয়দ জামিল আহমেদ ডিজিটাল মাধ্যমকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক আর নতুন ভঙ্গিতে মঞ্চে হাজির করেন। আমাদের প্রাত্যহিক ডিজিটাল জীবনকে মঞ্চের সুসজ্জিত পরিসরে পর্দায় দেখে খানিকটা চমকে ওঠেন দর্শক। কখনো বিশ্বজিতের রক্তাক্ত শার্ট আমাদের আসাদের কথা মনে করিয়ে দেয়, কখনো ২১ আগস্টের ন্যক্কারজনক হামলা, অভিজিতের মর্মান্তিক ফটোগ্রাফ দর্শককে নতুনভাবে ভাবিয়ে তোলে। কখনো অভিনেতারা যখন মঞ্চের প্রসেনিয়াম টপকে দর্শক সারি থেকে একজন লুকিয়ে থাকা অভিনেতাকে টেনেহিঁচড়ে আবার মঞ্চে নিয়ে যায় তখন সেই দর্শকের ‘নির্লিপ্তির রাজনীতি’কে সৈয়দ জামিল আহমেদ পুনর্বার প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
২০১৭ সালে আগা শহীদ আলীর ‘দ্য কান্ট্রি উইদাউট পোস্ট অফিস’ কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ মঞ্চে আনেন ‘রিজওয়ান’। যেটি সে সময় একটা ব্রেক থ্রু। ফিজিকাল থিয়েটারের এই অনন্য প্রেজেন্টেশন ঢাকার দর্শকরা দেখতে পেয়েছিলেন। এরপর তারই ধারাবাহিকতায় শহীদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’কে মঞ্চায়িত করেন ঢাকার মঞ্চে। শহীদুল জহিরের ম্যাজিক রিয়ালিস্ট সাহিত্যের ফর্মকে সৈয়দ জামিল অসামান্যভাবে হাজির করেন তার নিজস্বতায়। আর পরিশেষে সারাহ কেইনের ‘সাইকোসিস’ ওরফে ‘মন্ত্রাস ৪.৪৮’ যেন হয়ে উঠেছে আমাদের সময়ের একটা সামষ্টিক চিৎকার। একটা রাগী সময়ের দলিল।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।