
এ শহরে প্রকাশ্যে গান গাওয়ার জায়গাগুলো যেন বেশ কমে গেছে। আকাশছোঁয়া দালানের প্রকোপে খেলার মাঠের মতোই গানের মঞ্চগুলো যেন উধাও হয়ে যাচ্ছে! ঢাকাতে গাড়ির তীব্র হর্নের মধ্যে গান শোনা তো আসলে অসম্ভবই বটে। শব্দদূষণ বাদেও ওপেন এয়ার কনসার্ট এখন খুব অপ্রতুল। নাগরিক শ্রোতা ও গায়কদের ভেতরে সুষম সংমিশ্রণের জায়গা খুবই অল্প। তবুও তরুণরা বসে নেই, নতুন অনেক গান তারা তৈরি করছে, প্রকাশ করছে এবং বিভিন্ন মঞ্চে পরিবেশনা করে চলেছে। আপনার কাছে বিকল্প সেইসব মঞ্চের খোঁজ আছে তো? সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন প্লাটফর্মে গান প্রকাশ করার সংস্কৃতি তৈরি হওয়ার ফলে শ্রোতা এবং শিল্পীর সাধারণ মিলন খুব কম ঘটে। এই লেখাতে ঢাকার অন্যরকম কিছু মঞ্চ নিয়ে আমি কথা বলব যেখানে গায়ক এবং শ্রোতার বাস্তব ও ভার্চুয়াল এই উভয় যোগাযোগই হয়ে থাকে।
ঝিড়ঝিড় ক্যাম্পফায়ার সেশন
২০২২ সালের শেষে শীতকাতুরে সন্ধ্যায় যখন ধলেশ্বরী কায়াকিং রিসোর্টে ঢুকে ঝিড়ঝিড় ক্যাম্পফায়ার সেশনের সেটে যাই তখন বেশ নাটকীয় লাগে পরিবেশটা। দুটি তাঁবু টাঙানো এবং দুপাশে দুটি মশাল জ্বলছে! দুই তাঁবুর ঠিক মাঝ বরাবর ফাঁকা জায়গাটিতে একটি গাছের গুঁড়িতে বসে গায়ক গান গাইবে! পাশেই স্রোতস্বিনী ধলেশ্বরী নদী, আকাশ ভর্তি ঝিকিমিকি অজস্র তারা! নদীর ওপর পেতে রাখা মাচাতে অনেকক্ষণ শুয়ে শুয়ে তারা দেখলাম। অনেকক্ষণ গুনগুন করে গান গাইলাম! দু-একটা জোনাক পোকা ঢুকে গেল যেন ঠিক আমার মাথার ভেতরে! মশালের দপদপে আগুনের পাশে নড়ছে আমার ছায়া! ঠিক সে সময়ে আমার ডাক এলো! কিবোর্ডে ছিল জাফরি, হারমোনিতে রুদ্র, আর ভারতীয় মুদ্রায় ঘাসের গালিচায় বসে ভায়োলিন বাজাল প্রাঞ্জল! অ্যাকশন শব্দ শুনে চোখ বন্ধ করে গেয়ে উঠলাম ‘চোখ মেলেছি যেই’! ঝিড়ঝিড় ক্যাম্প ফায়ার সেশনে ঠিক এমনটাই ছিল আমার গানের দৃশ্যপট!
প্রতি বছর শীতে ঝিড়ঝিড় আয়োজন করে ক্যাম্পফায়ার সেশন। ঝিড়ঝিড় একটি অডিও ভিজ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম। ঝিড়ঝিড়ের প্রোডিউসার জাফরি আবেদীন নিজেও একজন মিউজিশিয়ান। সহজিয়া ব্যান্ডের বেস গিটারিস্ট হিসেবে সে কাজ করছে অনেকদিন হলো। পাহাড়ি ম্রো শিশুদের শিক্ষার সহায়তায় পাওমুম থারক্লা স্কুলের তহবিল সংগ্রহের জন্য তারা আয়োজন করেছিল ‘পাওমুমের জন্য গান’। সেই কনসার্টেও আমি গান গেয়েছিলাম।
ঝিড়ঝিড়ের প্লাটফর্ম থেকে অচিরেই বের হচ্ছে আমার সালো অ্যালবাম ‘বাতিঘরে রাত জাগা প্যাঁচা’। এই অ্যালবামের প্রথম গান “প্লাস্টিকে ডুবে আছি”। ঝিড়ঝিড় ইউটিউব চ্যানেল : https://www.youtube.com/@ZhirZhir
হাতিরপুল সেশনস
২০১৯ সালের একটি শীতের সকালে আমি তুহিন এবং নাঈম মাহমুদ দেখা করলাম হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সামনে। তারপর ছয় তালা সিঁড়ি ঠেঙিয়ে উঠে পড়লাম হাতিরপুল সেশনসের আঁতুড় ঘরে। এর ঠিক তিন দিন আগে আমাকে কল দিয়েছিল হাতিরপুল সেশনস-এর কিউরেটর অনিরুদ্ধ অনু। সে জানাল তারা একটি এভি প্লাটফর্ম করেছে যারা মূলত নিজেদের গান নিয়ে কাজ করছে তাদের জন্য, এছাড়াও ভিন্নধর্মী কভারেও তারা আগ্রহী। সবিনয়ে জানতে চাইল আমি গান করব কি না। আমি সানন্দে জানালাম অবশ্যই করব। তখন হাতিরপুল সেশনস-এর প্রথম সিজনের শ্যুট চলছে, ছাদের উন্মুক্ত সেটে টাঙানো তারে ক্লিপ দিয়ে আটকানো, শার্ট, জামা-কাপড়, প্যান্ট, ওড়না, বাচ্চার ছোট ছোট পাজামা, মোজা ইত্যাদি শুকাচ্ছে। ঢাকার যেকোনো ছাদের রঙিন বাস্তবতার সাধারণ চিত্র এটি। পরিবেশন আর ঢংটি খুবই ভালো লেগে গেল, কেননা নাটক সিনেমা কিংবা হাল আমলের সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্টে যেরকম অতি নাটকীয় জিনিসপত্র দেখি সেরকম কোনো কিছুই এরা রাখেনি। বরং বাস্তবতাকে রঙিন করেছে হাতির পুলের সচেতন নির্দেশনা। একটি জুম রেকর্ডারের সামনে গেয়ে ফেললাম গান, পেছনে অনেক বিল্ডিং-এর ব্যাক ড্রপ নিয়ে এবং একটা বিশাল আকাশ মাথার ওপর রেখে হাতিরপুল সেশনসের প্রথম সিজনে গেয়েছিলাম চিত্রকর গানটি।
২০২২ এর দ্বিতীয় সিজনের পরিবেশনায় একটু ভিন্নতা এনেছে হাতিরপুল সেশরস। এবার একটা ঘরের ভেতরে সেট। রঙতুলির ব্যবহার করে ছাদের হলুদ-কমলা রোদটাকে ওরা ঘরে নিয়ে এলো। এবার তারা হাউজব্যান্ড স্টাইলে কাজ করছে। আর লাইভ রেকর্ডিং সিস্টেমেও এসেছে অভিনবত্ব এবং পেশাদারিত্ব। জুমের বদলে এবার সাউন্ড কার্ড, ল্যাপটপে উঅড এবং সিনেমাটোগ্রাফিতে দুটি ক্যামেরা। এই কাজে ওদের কোনো স্পন্সর ছিল না। নিজস্ব অর্থায়নে সম্পূর্ণ অলাভজনকভাবেই হাতিরপুল সেশন্স এখনো কাজ করে যাচ্ছে।
যাইহোক। হাতিরপুল সেশনসে এবার হোমব্যান্ড পাওয়ার ফলে আমার সঙ্গে যুক্ত হলো বেস গিটারে অমিত হাসান রুদ্র, লিড গিটারে অনিরুদ্ধ অনু, ড্রামসে হাসিন আরিয়ান ও স্যাক্সোফোনে রাহিন হায়দার। তিন চার দিন প্র্যাকটিস করে শুভ একটা ক্ষণ বেছে আমার গান ‘ বিষাদের পরমাণু’ শ্যুট হয়ে গেল। আর সেটি প্রকাশ পেল ডিসেম্বর ২০২২-এর মাঝামাঝি।
হাতিরপুল সেশনসের গানগুলো রিলিজ হয় তাদের ইউটিউব চ্যানেলে। হাতিরপুল সেশনস হাউজব্যান্ড তাদের প্রকাশিত গানগুলো লাইভেও পারফর্ম করে থাকে।
হাতিরপুল সেশনস ইউটিউব : https://www.youtube.com/@HatirpoolSessions
যাত্রা বিরতি
মানুষ যাত্রাপথে একটু জিরোয়, একসঙ্গে এক কাপ চা খেতে খেতে জেনে নেয় সহযাত্রীর যাত্রাহেতু। যদি আড্ডা জমে যায় তাহলে আরও এক কাপ চা কিংবা কফির সঙ্গে যুক্ত হয় আরও বেশ কিছু খাবারের পদ। সহযাত্রীদের নানান ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং দার্শনিক আলোচনায় প্রশমিত হয়ে যাত্রীদের ভ্রমণ অবসাদ, ক্লান্তিতে আনে আবেগের রঙিন ছোঁয়া। আর সেই যাত্রা বিরতিতে যদি গায়ক গেয়ে ওঠে গান তাহলে তো কথাই নেই!! তাই না? ঢাকার প্রচ- ব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে আমাদের যেন যাত্রা বিরতির সুযোগ নেই কোনো! আর সেই যাত্রা বিরতির একটি সাংগীতিক সুযোগ পাবেন যাত্রা বিরতির মিউজিক লাউঞ্জে।
বহু বছর আগে বনানীর দেশীয় ফ্যাশন হাউজ যাত্রার ছাদে মিউজিক লাউঞ্জ যাত্রা বিরতির যাত্রা শুরু হয়। প্রথমদিকে যাত্রার ছাদেই গানের আয়োজন ছিল। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর হলো চার তলাতে এখন গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। বহুদিন ধরেই ঢাকাতে অন্যরকম গান শোনার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সবার কাছে জনপ্রিয় এই যাত্রা বিরতির মিউজিক লাউঞ্জটি। মঞ্চে নকশিকাঁথার ব্যাকড্রপে ও আধো আলোর রহস্যময় পরিবেশে গায়কের প্রাণবন্ত গানে গানে নাগরিকদের অত্যন্ত প্রিয় একটি জায়গা এই যাত্রা বিরতি। ছাদে তাদের আছে নিরামিষ প্রধান নানান পদের খাবারের একটি রেস্টুরেন্ট।
গত ৩০ দিনের ভেতরেই যাত্রা বিরতিতে আমি তিনবার গান করলাম তিনটা ভিন্ন অনুষ্ঠানে। ‘মাঘের গান’ ‘স্বায়ত্ত অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ এবং ‘বসন্তের গান’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে আমি ছাড়াও ছিলেন আরও অনেকে। মাঘের গানে ছিল ব্যান্ড কাকতাল, সানি অ্যান্ড দ্য রেভলিউশনস, শুভ সুলতান, নাঈম মাহমুদ এবং আকাশ গায়েন। আর স্বায়ত্ত অ্যান্ড ফ্রেন্ডস কলকাতার একটি স্বনামধন্য ব্যান্ড। বেমানান ব্যান্ডের গুণী শিল্পী ও গায়ক স্বায়ত্ত মল্লিকের আরেকটি ব্যান্ড প্রজেক্ট এটি। গিটারে জুবিন ও ইলেকট্রিক গিটারে উৎসব গুহ ঠাকুরতা ও ভোকালে স্বায়ত্ত এই লাইন আপে স্বায়ত্ত অ্যান্ড ফ্রেন্ডস পারফর্ম করেছিল যাত্রা বিরতিতে। সেদিন যৌথভাবে আরও গান করেন চেতনা রহমান ভাষা, আসির আরমান ও আমি।
আর বসন্তের গানে গান করেছিল কাকতা সানি অ্যান্ড দ্য রেভলিউশনস, আসির আরমান এবং আমি মুয়ীয মাহফুজ। ‘বসন্তের গান’ ছিল আবেশী গানের আসরের দ্বিতীয় পর্ব। বাংলাদেশের বর্তমান সময়কার নিজের গান নিয়ে এগিয়ে চলা কিছু গায়কদের একটি পরিবেশনার সিরিজ হলো এই আবেশী গানের আসর। আবেশী গান হলো সেই গান যা আপনাকে ভাবাবে, আপনি গায়কের আবেগের সঙ্গে একাত্ম হবেন এবং তার আবেশ রয়ে যাবে আরও অনেক দিন। আবেশী গানের আসরের প্রথম আয়োজন হয়েছিল বারবিকিউ স্কাইলাইন-এর রুফটপে। প্রথমবারে গান করেছিল দ্যা রেহমান ডুও, ব্যান্ড কাকতাল, সানি অ্যান্ড দ্য রেভলিউশনস এবং আমি।
আমার কৈশোর ছিল সাইকাডেলিক রক আর হেভি মেটাল মিউজিকের আবহে নিমজ্জিত। আশির দশকে সামরিক জান্তা আর স্বৈরশাসকের নিপীড়ন আর নিষ্পেষণকালের দোহাই দেব না। কিন্তু রাষ্ট্রকে যদি একটা এস্টাবলিশমেন্ট ধরি তাহলে তার সব রুচিগত ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজের পছন্দ-অপছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আকাক্সক্ষা তো ছিলই। সেই সময়টা পুরোপুরি প্রতিবাদী মানসিকতার কাছে সমর্পিত ছিল। যার প্রভাব আমরা দেখতে পাই আশির দশকজুড়ে। তবে গ্লোবাল স্পেকট্রামে যেসব সাংস্কৃতিক উপাদান বা এক্সপ্রেশন জনপ্রিয় হয় তার ঢেউ বাংলাদেশ অথবা আরও বিস্তৃত করে বললে ভারতীয় উপমহাদেশের তটে আছড়ে পড়ে এক দশক পরে। পশ্চিমে তখন সাইকাডেলিক রক, অলটারনেটিভ রক কিংবা হেভি মেটাল সংগীতের ধারা জনপ্রিয়তার অংশীদার হয়ে গেছে। মূলধারাকে প্রশ্ন করতে অন্য একটা সাংগীতিক এক্সপ্রেশন তখন প্রতিবাদের স্রোত তৈরির রসদ জোগাচ্ছে। মার্কিন মুলুকে থাকা আফ্রো আমেরিকান জনগোষ্ঠীর তরুণরা এক অন্যরকম জীবনধারণের কথা বলতে শুরু করেছে বর্ণবাদ আর সাদার সুপ্রিমেসিকে নাকচের মধ্য দিয়ে। তাকে বেশির ভাগ ক্রিটিকরা হিপহপ সংস্কৃতি বলে উল্লেখ করতে শুরু করে। এই সংস্কৃতির একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল সংস্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জীবনকে উপভোগ।
বাংলাদেশের মানুষ তখন হিপহপ শুনত না এমন নয়। তখনো হিপ হপ সংস্কৃতি সেই অর্থে দ্যোতনা তৈরি করেনি। এমসি হ্যামার কিংবা ডিজে কুলদের বিটনির্ভর উপস্থাপন শুনতাম। কিন্তু ওইভাবে আকৃষ্ট হয়ে শোনা শুরু হয়নি। আর সংস্কৃতিগত ধারণা থেকেই ওই ঘরানার হিপহপকে ঠিক নিজের মনে হতো না।
হিপহপ সংস্কৃতির বেড়ে ওঠা ডায়াসপোরা আর তার ডিস্টোপিয়ান আগ্রহ থেকে। অভিবাসনের মধ্য দিয়ে যে নিঃসঙ্গ তৈরি হয় তার প্রকাশ ঘটে বিমূর্তকরণে; সামাজিক রুচিবোধকে মেনে না নেওয়ার সে এক তীব্র বহিঃপ্রকাশ। বিংশ শতকের প্রায় শেষভাগে পশ্চিমে আফ্রো আমেরিকান বা আফ্রো ব্রিটিশদের মতো, ইন্দো আমেরিকান অথবা ইন্দো ইউরোপিয়ান তরুণরাও হিপহপ করতে শুরু করে আর জনপ্রিয়তার হাতছানি দেখতে পায়। তাদের একজনের নাম না বললেই নয় সেই অ্যাপাচে ইন্ডিয়ান পশ্চিমা ঘরানার র্যাপ কিংবা হিপহপের সঙ্গে পাঞ্জাবি ইন্ডিয়ান মিউজিকের ফিউশন করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর প্রভাবে কয়েক বছর পর আশরাফ বাবু, পার্থ বড়ুয়া আর আজম বাবু এই তিনজন একটা অ্যালবাম রেকর্ড করে। ত্রিরত্নের খ্যাপা নামের সেই অ্যালবাম শহুরে তরুণদের একটা সুনির্দিষ্ট অংশের মধ্যে ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাদের গানের মূল বিষয় ছিল পুরনোকে অস্বীকার আর ব্যবচ্ছেদ করে তার অপ্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই হিপহপ অ্যালবাম কোনো আন্দোলনের অংশ ছিল না। তিন তরুণ সংগ্রামী ব্যান্ড মিউজিশিয়ান ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইংলিশ অ্যাপাচি ইন্ডিয়ানকে অনুসরণ করে দেখতে চেয়েছিলেন হয়তো। যদি ক্যাসেটের বিক্রিবাট্টা ভালো হতো তাহলে আবার কিছু করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশার গুড়ে বালি দিয়ে প্রজেক্ট সেখানেই সমাপ্ত হয়।
নব্বইয়ের দশকে মার্কিনি সামাজিক সাংস্কৃতিক কারণেই হিপহপ কিংবা জঅচ সব বর্ণের তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে শুরু করে। শুধু আফ্রো আমেরিকান নয় নেটিভ আমেরিকানরাও রাইমিং শুরু করে ভালোভাবেই। এখানে বলে নেওয়া ভালো, জঅচ কোনো শব্দ নয়, এর মূল অর্থ জযুসব ধহফ চড়বঃৎু। ছন্দোবদ্ধ করে কবিতা আবৃত্তির মতো করে গান গাওয়া। এই সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত বিনোদনদাতারা। শুরুর সময়টায় হিপহপাররা দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে বিট তৈরি করে যোগাযোগ করত। তারা মূলত অনুষ্ঠান পরিচালকের ভূমিকা নিত। এ কারণে অনেক জঅচচঊজ। তাদের নামের আগে ইংরেজি বর্ণ এমসি ব্যবহার করত। বাংলাদেশেও শহুরে তরুণদের একটা গ্রুপ নিজেদের ভেতর জঅচ চর্চা করত, আর তারা নিজেদের নাম পাল্টে এমসি অমুক, এমসি তমুক নামে পরিচিত হতে শুরু করল।
পশ্চিমা যেকোনো বিষয়ের চর্চা যেভাবে বাংলাদেশে শুরু হয় এই ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। রাষ্ট্রের উচ্চবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত শহুরে শিক্ষিত তরুণরাই পুরোধা হলো। তাদের অনুপ্রেরণায় কিছু শহুরে মধ্যবিত্তরাও যুক্ত হলো। পশ্চিমে যেমন বিকল্পধারা হিসেবে যেকোনো সাংস্কৃতিক এক্সপ্রেশন শুরু হয়েছে প্রতিবাদী বা পাল্টানোর মানসিকতা নিয়ে; অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতে বসা মানুষ অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য চিৎকার করেছে অথবা ছন্দ তৈরি করেছে। বাংলাদেশে অস্তিত্বওয়ালারাই বরং তাদের ঘোষণা আরও পোক্ত করে এসব নতুন ঘরানাকে অভিযোজন করে। বাংলাদেশি এমসিরা মূলত ঘরে বসে ছন্দ তৈরি করা তরুণ হলেও শুরুতে তারা পাশ্চাত্যের মতো এলাকার দখলের ঘোষণা দিয়ে গালাগাল-সমৃদ্ধ কিছু একটা করত। বেশির ভাগ ইংরেজি মাধ্যমে পড়া আরাম-আয়েশে জীবন কাটানো তরুণদের কণ্ঠে এসব গালাগাল খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি প্রথম দশকের শেষ আর দ্বিতীয় দশকের শুরুতে। কিন্তু সরকারি কলোনিতে বড় হওয়া একদল ছেলে নিজেদের আপটাউন লোকালজ বলে যখন জঅচ করতে শুরু করল, তারা সীমিত পরিসরে হিপহপ চর্চারত ধনিক শ্রেণির জন্য হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হলো।
বাংলাদেশে হিপহপের পুরোধারা নিজেদের পরিচয় দিত দেশি এমসি হিসেবে। আপটাউন লোকালজদের নাম ছিল বর্ণময় আবার খানিকটা ডার্ক। তবে এর মধ্য দিয়েই হিপহপ সংস্কৃতির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার পূর্ণতা পেল। যদিও উপস্থাপন কিংবা সুরে পশ্চিমের অনুবাদ করত উভয় পক্ষই। নিজস্বতা বলে কিছু ছিল না হিপহপারদের। অন্য রক কিংবা মেটাল মিউজিকের মতোই, অনুকরণপ্রিয় হিসেবেই বাংলাদেশি হিপহপারদের উত্থান।
কিন্তু কেউ কেউ যেন অন্যরকম ভাবে। তাউরা সাফা নাম নিয়ে পরিচিত হওয়া এক জঅচচঊজ তেমনি একজন। পুরান ঢাকায় একেবারে স্ট্রিট কালচারে বড় হওয়া সাফা তার অস্তিত্ব জানান দিল দ্বিতীয় দশকের মাঝামাঝিতে। হিপহপাররা জেগে উঠল। দেশের বিভিন্ন কোণে জঅচ করতে শুরু করল তরুণরা। এ সময়টায় সিলেট, ফরিদপুর, কুমিল্লা এমনকি কক্সবাজারেও নতুন হিপহপাররা তাদের জঅচ ইউটিউবে প্রকাশ করতে শুরু করল। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে তারা যেন নিজেদের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে ব্যস্ত হলো।
আমি আগে জঅচ বা হিপহপকে মিউজিকের ঘরানা হিসেবে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু জালালি সেট বলে একটা প্রজেক্টের গান শুনে থমকে গিয়েছিলাম ২০১৬-এর গোড়ার দিকে। এই প্রজেক্টের নেতৃত্ব অথবা মূল প্রণেতা ছিল সেই শুরুর জমানার একজন, যে নিজেকে এমসি মাগজ বলে পরিচয় দিত। উচ্চবিত্ত পরিবারের ইংরেজি মাধ্যমে পড়া এই এমসি সমাজের নানা স্তরের আরও চারজন হিপহপারের সঙ্গে মিলে বেশ কিছু ট্র্যাক তৈরি করল। এবার যেহেতু জঅচ-এর একটা ভূমি তৈরি ছিল তাই গালাগাল নিয়ে সমস্যা হলো না। কিন্তু তারা নাড়া দিল সমাজের প্রচলিত নানা সংস্কার নিয়ে। দলবাজি না করেও কেমন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করা যায় এস্টাবলিশমেন্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তার নমুনা হিসেবে একেকটা ট্র্যাক যেন নিজের সঙ্গে পাল্লা দিল।
পরে যারা হিপহপ সংস্কৃতি অথবা জঅচ তৈরির চেষ্টা করছে তাদের অনেকে এই সংস্কৃতিকে জড়িয়ে নিয়েছে নিজেদের জীবনবোধে। আবার অনেকে এটাকে শুধু একটা এক্সপ্রেশন হিসেবে দেখেছে। তবে একটা কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশের জঅচচঊজরা এখন শুধু প্রতিবাদ কিংবা পরিবর্তনের কথাই বলে না, তাদের ছন্দোবদ্ধতায় কবিতা তৈরি হয়। তাদের শরীরী ভঙ্গিতেও দেশি ভাব দেখা যায়। দেশি পুঁথিপাঠ কিংবা কবির লড়াইয়ের ধরনে তারা ব্যাটল রাইম করে। সম্ভবত দেশের অনেক হিপহপারই নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে নিজস্ব ধরন তৈরি করেছে। পশ্চিমের অনুকরণ না করে, অনুগত না থেকে কীভাবে একটা সাংস্কৃতিক এক্সপ্রেশনকে নিজেদের করে নেওয়া যায় তার নিদর্শন হিসেবে আপনারা বাংলাদেশি হিপহপার কিংবা জঅচচঊজদের কথা বলতে পারেন নিঃসংশয়ে।
একুশ শতকের প্রথম দশকেই নতুন স্বাদের যে গান বাংলাভাষীদের চাঙ্গা করেছে তা হলো বাংলা র্যাপ। নিউ ইয়র্ক বেজড স্টোয়িক ব্লিসের ‘আবার জিগায়’ নামের হিপহপ ঘরানার গানটি রিলিজের সঙ্গে সঙ্গেই শ্রোতাদের প্লে-লিস্টে উঠে আসে; তবে প্রচুর ইংরেজি শব্দের ব্যবহারের কারণে একে পুরোপুরি বাংলা র্যাপ বলা যাবে না। একই ধারাবাহিকতায় ‘দেশি এমসি’জ’ ‘ব্যানড’ নামের অ্যালবাম রিলিজ করে তাতেও বাংলা র্যাপের ভিত্তি পাকাপোক্ত করার মতো ট্র্যাক ছিল না। তবে এরা বাংলা হিপহপে তাদের জায়গা তৈরি করে নেয়।
ডেডলাইন এন্টারটেইনমেন্ট লেভেল ‘টিওআর’-এর ‘বাংলা হিপহপ জাতি’ এবং ‘আপটাউন লোকলজ’ এর ‘কাহিনি সিনপাট’ নামের দুটি এলবাম রিলিজ করে পরপর। টিওআর-এর অ্যালবামে বাংলা র্যাপের শক্তির জায়গাগুলো পরিষ্কার হয় আর আপটাউন লোকলজ বলা যায় বাংলা র্যাপের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। কাহিনি সিনপাট বাংলা হিপহপে বাংলা র্যাপের একটা পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম। জেসপার আল রাশিদের জাদুকরী মিক্সিং আর মাস্টারিং-এ দুটি অ্যালবাম শ্রোতাদের কানের রুচির স্বাদ মিটিয়েছে।
যদিও মেইনস্ট্রিমে আসার আগে আপটাউন লোকলজ’র সদস্য ব্ল্যাক জ্যাং, তাউড়া সাফাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্র্যাক ছিল কিছু। যার মধ্যে ‘ঠোলার পোলা’ নামের একটা গানের জন্য তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেডকোয়ার্টারেও জবাবদিহি করতে হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। গানগুলো মেমোরি কার্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল, আর ২০০৯-এ অ্যালবাম রিলিজ হলে গান বাজত এফএমে।
কাহিনি সিনপাট অনন্য এর বাংলা ভাষা ব্যবহার আর লোকাল লোকজনের মুখের ভাষা তুলে আনায়। পুরান ঢাকার টোন আর একই সঙ্গে খেটে খাওয়া মানুষের কোড ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার আলাদা উত্তেজনা তৈরি করে। এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানিদের নিজেদের মধ্যকার কোড ল্যাঙ্গুয়েজ আছে কিছু; ওখানে বেশ দামাদামি করে জুতা কিনতে হয়, এখানে কখনো ক্রেতা জিতে কখনো বিক্রেতা। হুট করে ‘উস্সাই’ বলে উঠে কোনো কোনো বিক্রেতা, এতে তার সহকর্মী বুঝতে পারে, লাভ হয়েছে বিক্রিতে। এমন আরও কিছু শব্দ কাহিনি সিনপাটে লক্ষ করার মতো। এছাড়াও অ্যালবামের প্রথম থেকে শেষ বেশ একটা হিপহপ জার্নির মতো। গানগুলোর বিষয়বস্তুতে যেমন পার্টি মুড আছে একই সঙ্গে দেশপ্রেম, সমাজ ও প্রতিবাদী চিন্তার প্রতিফলনও ঘটেছে। হিসাবের কথা, সিভিল সমাজ ও পিস্তলের জীবন গানগুলোতে তৎকালীন সময়ের একটা রূপও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তবে এই অ্যালবামের সবচেয়ে জনপ্রিয় হয় ‘এই মামা এই’ গানটি। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এই গানগুলোর প্রভাব থেকে এখনো বের হতে পারেনি বাংলা র্যাপাররা, এতটাই সমৃদ্ধ এই অ্যালবামটি।
আপটাউন লোকলজ ভেঙে যাওয়ার পর সাফা দেশি এমসিজ’র মাগজ’র সঙ্গে নতুন করে দল গোছায়। জালালি নামে দলটির আত্মপ্রকাশের আগেই ‘এলাকা’ নামের একটি ট্র্যাকও প্রকাশ করে ইউটিউবে। পরে সাফার অংশ বাদ দিয়ে আবার একই ট্র্যাক রেকর্ড করে জালালি সেট নামের হিপহপ দলটি। বেশ কিছু গান আনে তারা ইউটিউবে। এর মধ্যেই জালালি সেট সদস্য শাফায়েত মমতাজের সঙ্গে ‘লোকাল বাসের’ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায় তবে দল হিসেবে শ্রোতাদের নতুন কিছু দিতে ব্যর্থ হয় তারা। অন্যদিকে ‘ভব’ নামে হিপহপ ক্ল্যান তৈরি করে বেশ কিছু ট্র্যাক রিলিজ করে তাউড়া সাফা। হিপহপ তৎপরতা লক্ষ করা যায় বিভিন্ন অঞ্চলেও; নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু অঞ্চলে সেখানকার আঞ্চলিক ভাষাতেও র্যাপ করা শুরু করে র্যাপাররা। উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছে আপটাউন লোকোলজের ব্ল্যাক জ্যাং, সে বেশ কিছুদিন পরপরই নিজের ট্র্যাক রিলিজ করছে একই সঙ্গে হিপহপের নানা রকম মুভমেন্টের সঙ্গেও জড়িত।
ইংরেজি র্যাপ থেকে সরে এসে হালে বাংলা র্যাপের স্বকীয়তার জায়গা হলো ফোক গানের সঙ্গে ফিউশন ও বাংলার নিজেদের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে বাংলার ভাব ও আঞ্চলিকতা।
বিজ্ঞাপনগুলোতে হিপহপ ড্যান্স ও বাংলা র্যাপের ব্যবহার হচ্ছে প্রচুর। বিটের তালে র্যাপ গানে পণ্যের গুণগান করাটা অভিনব এবং আকর্ষণীয় বটে। তবে পূর্ণাঙ্গ বাংলা র্যাপের যাত্রাটা যেভাবে ধানম-ির ফুটপাত থেকে শুরু হয়েছিল, ভাইরাল ভাইরাস বা বিজ্ঞাপনী সংস্থার হাতে এ গান বেশিদিন থাকবে না। বাংলা র্যাপ হতে যাচ্ছে মুখবন্ধ রাখতে বাধ্য মানুষদের মুখোশ পরে ‘কথা বলার’ মাধ্যম। কথা নিষিদ্ধ জগতে সিধাসাদা কথা বলার জন্য বিটের তাল হলে রাস্তাপ্রিয় লোকদের আর কী চাই!
The culture of all oppressed is the culture of resistance... Thus all artists coming from an oppressed people must represent resistance in their art form.
-Kwame Ture
ঊনসত্তর-একাত্তর হয়ে বাহাত্তরেও যে জঙ্গম বাস্তবতার আঘাত ও ক্ষত দেশের শরীরে দপদপ করছিল, তাকে কোনো সুকুমার ভাষায় প্রকাশ করা কি যেত? সে সময়ের তরুণের মন চিৎকার করছে হাহাকারে, ফেটে পড়ছে বিদ্রোহে, তাদের দরকার ছিল খোলা গলার চিৎকারের ভাষা। ‘হায় আমার বাংলাদেশ’ বলে আজম খান সেটাই দিলেন। আর তাতেই বদলে গেল বাংলা গানের ইতিহাস। তার গান অসন্তোষের তারে বাঁধা হলেও তার তলায় ঠিকই শোনা যায় ভালোবাসার অফুরান কুলকুল জলধারা।
তারপর এক দিন বুকের ভেতর একটা ধস। আজম খান আর নেই। এই ‘নেই’ কি নতুন? অনেক দিনই তিনি তো ছিলেন না বললেই চলে। রোগশয্যায় কোমায় চলে যাওয়ারও আগে, বহুদিন ধরে গানের বাজারের বাজারিরা তো তাকে একরকম ‘কোমা’র মধ্যেই রেখেছিল। তিনি গান বাঁধতেন, কিন্তু কেউ সেধে প্রকাশের গরজ দেখাত না। তিনি সেই বুক তোলপাড় করা আজম খানই ছিলেন, তবু টিভি বা কনসার্টে গাওয়ার ডাক কমে গিয়েছিল। রক্তমাংসের মানুষটি মরে যাওয়ার আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল তার সাংস্কৃতিক মৃত্যুর পরিবেশ। তার দিন সত্যিই ফুরিয়ে আসছিল।
সময় বদলে যাচ্ছিল, মন বদলে যাচ্ছিল, রাজধানী-শহর-মফস্বল সব বদলে যাচ্ছিল। বদলে যাচ্ছিল পপগানের জনপ্রিয়তার ব্যাকরণ। এ যুগ ডিজিটাল, এ মন লিকুইড, এর চাওয়া পিচ্ছিল, এর প্রেম অস্থির। সত্তর বা আশির দশকের সেই রোখা মন, চোখা গায়কি, বুনো আবেগের ভাষায় আর সাড়া দেয় না আজকের তরুণ। তাদের মনের পর্দায় এখন অন্য ছায়া, অন্য ছবি, অন্য সুর। কানে আইপড লাগানো রঙ করা চুলের বাহারি তরুণী কিংবা কোমরঢিলা জিন্স আর ব্র্যান্ডে ব্র্যান্ডে ব্র্যান্ডেড তরুণ মনে আজম খান কতটা সাড়া তুলবেন আর? তিনি তো আর লিকুইড মডার্নিটির তারুণ্যের ভাবভঙ্গি বোঝেন না। তার দিন ছিল সত্তর দশকের অশান্ত ও প্রতিবাদী চৈতন্যে গড়া। দেশায়ত আধুনিকতার সেই যুগে শহুরে তারুণ্য একধরনের প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাবকালচার গড়ে নিয়েছিল। তখনো নাগরিকতার ঠাটবাট থেকে তারা দূরে ছিল, দূরে ছিল পণ্যাসক্ত ভোগবাদিতা থেকেও। সেই দিন, সেই মন যত ফুরাচ্ছিল, ততই তার দিনও বুঝিবা ফুরিয়ে যাচ্ছিল।
স্বাধীনতা-পরবর্তী উত্তাল সময়ে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া তারুণ্য অশান্ত ও হতাশ হয়ে উঠেছিল। আজম খানের গান তখন তাদের ভাষা দিচ্ছিল, জাগিয়ে রাখছিল। তিনিই ঢাকার তরুণদের চিৎকার করে মনের কথা বলার ভাষা ও ভঙ্গি দিয়েছিলেন। তার পুরুষালি গলা ও ঢং তাকে পুরুষ-তারুণ্যের জননায়ক করে তুলেছিল। সনাতন বাংলা গানের পুতুপুতু সুরেলা আমেজ ভেঙেচুরে শিরায় শিরায় রাগী ছন্দের নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বাবা তাকে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধে যাচ্ছিস যা, দেশ স্বাধীন না করে ফিরবি না।’ তিনি কথা রেখেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধার বেশ আর ছাড়েননি, কেবল রাইফেল-গ্রেনেড ফেলে গিটার তুলে নিয়েছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন আহত কিন্তু প্রতিবাদী বাংলাদেশের তরুণদের প্রতীক। সত্যিই সেই দিন কি আর নেই, সেই তরুণেরাও কি হারিয়ে গেছে? তারা আছে নিশ্চয়, কিন্তু তাদের মনের পিপাসা মেটাবার দায়িত্ব গানের বাজারিরা আর নিচ্ছেন না। কালচার ইন্ডাস্ট্রি এখন ফাঁকা আবেগ আর মোহরতিবাসনার প্রজননক্ষেত্র হয়ে তারুণ্যের দাহিকাশক্তি নিঃশেষ করে ফেলছে। এসব দেখেই দেখেই আজম খানের মনে সংশয় জেগেছিল, ‘আমার গান একসময় মানুষকে জাগাইছে হয়তো, তখন ছিল যুদ্ধের পরবর্তী সময়, মানুষের মধ্যে দরকার ছিল যুদ্ধের চেতনা। এখনকার তরুণদের কাছে আমার গান কী সেটা বুঝলে বুঝবেন আমি আসলে কী করছি। ...আমার গান এখনকার অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের অন্তরকে জাগায় কি না।’
তার স্মরণে অনেক অনুষ্ঠান হলো টিভি চ্যানেলগুলোতে। একটিতে তিনি শিল্পী আসিফের উপস্থাপনায় দুর্বল শরীরে আসিফের কাঁধে ভর দিয়ে গান গাইছিলেন। শেষ গান হিসেবে গাইলেনÑ ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে!’ গাইতে গাইতে এক্কেবারে হৃদয়ের তন্ত্রীতে বাড়ি মেরে যতবার হায় বলছিলেন, মনে হচ্ছিল সেটা তার কলিজাচেরা হাহাকার।
আধুনিক বাংলা গানের রয়েছে অমৃত ভান্ডার। বিশেষ করে, বাংলাদেশে যেসব সুরবোদ্ধা আধুনিক বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করে গেছেন, সেইসব সংগীত ব্যক্তিত্ব জ্বলজ্বল করছেন সুরের আকাশে। বর্তমানেও সেই গানের, জনপ্রিয়তা কমেনি। সেইসব গান শোনামাত্র, আমরা স্মৃতিকাতর হই। খুঁজে বেড়াই, হারানো ভালোবাসা। অথবা উদ্বুদ্ধ হই, গভীর দেশপ্রেমে। সেইসব গান আমাদের ভেতর জাগিয়ে তোলে দ্রোহ, যন্ত্রণা, ভালোবাসার কাতরতা। কখনো আবার স্বপ্ন দেখায়, নতুন জীবনের।
একটি গীতিকবিতা প্রাণ পায়, সুরে। সুরকারের জাদুস্পর্শে তা ধ্বনিত হয়, শিল্পীর কণ্ঠে। হারানো দিনের সেই সব গানের উল্লেখযোগ্য সুরকার নিয়েই এই লেখা। সেইসব গানের অধিকাংশই, স্থান পেয়েছে চলচ্চিত্রে।
সুরকার আলতাফ মাহমুদ একুশের প্রভাত ফেরির গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো/একুশে ফেব্রুয়ারি গানে সুরারোপ করে অমর হয়ে থাকবেন।
সুরকার সুবল দাস। ১৯৫৯ সালে ফতেহ লোহানী পরিচালিত আকাশ আর মাটি’ চলচ্চিত্রে প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন। এরপর অসংখ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, সংগীত পরিচালক হিসেবে। জন্ম নিয়েছে, শত শত জনপ্রিয় গান। ঢাকাই চলচ্চিত্র দর্পচূর্ণ ছবিতে তুমি যে আমার কবিতা/ আমারও বাঁশীর রাগিণী/ আমারও স্বপন আধো জাগরণ/ চিরদিন তোমারে চিনি, ‘আলো তুমি আলেয়া’ চলচ্চিত্রে আমি সাতসাগর পাড়ি দিয়ে, যোগ-বিয়োগ চলচ্চিত্রে এই পৃথিবীর পান্থশালায় গানগুলো মনের গভীরে স্থায়ী আসন করে নেয়।
এরপরই আমরা পেয়ে যাই, সুরকার সত্য সাহাকে। যিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে সুতরাং, নীল আকাশের নীচে, অশিক্ষিত, আবির্ভাব, ছুটির ঘণ্টা, অমর প্রেম, আগুনের পরশমণি, দীপু নাম্বার টু ছবি উল্লেখযোগ্য। এসব চলচ্চিত্রের অনেক গান সমাদৃত হয়েছে মানুষের কাছে।
১৯৬০-এর দশকে দেবু ভট্টাচার্য পাকিস্তানের কণ্ঠশিল্পী গজল সম্রাট মেহেদী হাসান, সুরাইয়া মুলতানীকর ও আহমদ রুশদী এবং বাঙালি সংগীতশিল্পীদের মধ্যে বশির আহমেদ, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, ফেরদৌসী রহমান, রুনা লায়লা প্রমুখের মাধ্যমে উপমহাদেশে বাংলা সংগীত ও সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
খন্দকার নুরুল আলম স্বনামধন্য সংগীত পরিচালক ও সুরকার। তার সুর করা চোখ যে মনের কথা বলে, আমি চাঁদকে বলেছি আজ রাতে, এতো সুখ সইবো কেমন করে, তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে ইত্যাদি জনপ্রিয় গানের কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও সমাদৃত। তার চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা শুরু হয় উর্দু চলচ্চিত্র দিয়ে। প্রথম সুরকৃত চলচ্চিত্র ইস ধরতি পার। বাংলা চলচ্চিত্রে সুর ও সংগীত পরিচালনা শুরু করেন ১৯৬৮ সালে, অন্তরঙ্গ ও যে আগুনে পুড়ি দিয়ে।
১৯৭০ সালে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানে সুরারোপ করে, আনোয়ার পারভেজ বাঙালির হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেড়ে নেন। ১৯৭০ সালেই খান আতাউর রহমান (খান আতা) ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির বিভিন্ন গানে সুরারোপ করে, সংগীত বোদ্ধাদের নজর কাড়েন। এই ছবির ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’ গানটির কণ্ঠশিল্পীও তিনিই ছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সমর দাস, মুজিবনগর থেকে পরিচালিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও প্রধান পরিচালক ছিলেন। এ সময় বহু গানে তিনি সুর দেন। তার সুর করা গান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও দেশবাসীকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযুদ্ধে তার সুর করা ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’ প্রভৃতি গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে।
এরপর আমরা পাই, সুরকার প্রণব ঘোষ ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে। তারা চলচ্চিত্রে তেমন সক্রিয়ভাবে যুক্ত না থাকলেও, বাংলাদেশের অডিও শিল্পে স্থায়ী আসন করে নেন। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরারোপিত ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না/ আমি গাইবো’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ টেলিভিশনে ৮টা ও ১০টার সংবাদের আগে এই গানের মিউজিক মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি করে অন্যরকম দ্যোতনা।
নবীন সুরকার: শওকত আলী ইমন, বাপ্পা মজুমদার, প্রিন্স মাহমুদ, রাজেশের সুরে বেশকিছু গান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। হারিয়ে যাওয়া সুরকার-সংগীত পরিচালকের উত্তরসূরি হিসেবে, একদিন এইসব গুণী সুরকারও ঠাঁই নেবেন ইতিহাসের পাতায়।
‘ভাই, একটা গান লিখে কত টাকা আসে?’
প্রায়ই এমন প্রশ্নের মুখে পড়েন গীতিকাররা। খুব সাদামাটা একটা প্রশ্ন হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতিকারের তথাকথিত ‘স্ট্যাটাস’ ও প্রশ্নকর্তার তাচ্ছিল্য। গীতিকার সমাজ কী সেই ‘স্ট্যাটাস’ বজায় রাখতে পারছেন!
আমার মতে, না। তারা এসবের ধার ধারেন না। সত্যি কি তাই?
‘টাকার জন্য গান লিখি না’ বা ‘মনের আনন্দের জন্য লিখি’ এমন যুক্তির পক্ষে অনেক গীতিকারই থাকবেন। থাকুন। কিন্তু যারা পেশাদারভাবে (ক্লায়েন্ট ডিমান্ড আছে এমন) এ কাজটি সফলতার সঙ্গে করছেন, তারা কত টাকা পাচ্ছেন গানপ্রতি? এটা কি যথেষ্ট? এতে তারা কি সন্তুষ্ট?
তারা পান খুবই সামান্য, ভদ্রসমাজে তা উল্লেখযোগ্য নয়।
এ নিয়ে তাদের কোনো আক্ষেপ কি কাজ করে? মনে হয় না। সংবাদমাধ্যম গীতিকারের আক্ষেপ তুলে ধরবে সেই সুযোগই নেই। সংবাদমাধ্যমে ‘গীতিকারের মুখ দেখানো’ এক ধরনের অপরাধই বটে! কালেভদ্রে কারও কারও খবর দেখে আমরা আবেগাপ্লুত হই, নিজের বা অন্যদের বঞ্চনার কথা ভুলে যাই। কোনো কোনো প্রজেক্টে নিজের নাম দেখেই খুশিতে আত্মহারা হন গীতিকার, তাদের চাওয়া এতটাই সীমিত।
এসবের মধ্য দিয়েও অনেক ভালো মানের লিরিক উপহার দিচ্ছেন একেকজন, ভাবা যায় না। একটি গানের বাজেট (মিউজিক ভিডিও) যদি ৩ লাখ টাকা হয়, সেখানে গীতিকার পান সবচেয়ে ছোট অ্যামাউন্ট, এ নিয়ে তাদের রীতিমতো গোস্বা করা উচিত, হতাশায় নিমজ্জিত থাকার কথা। কিন্তু তেমন ঘটে কই? এ কারণেই এই ‘সামান্য সম্মানী’ অসামান্য মহিমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত। উদাহরণস্বরূপ বলি যে, কয়েক বছর আগে সিনেমায় একটি গানের ভিডিও নির্মাণে প্রযোজক ব্যয় করেছিলেন ২৫ লাখ টাকা, সেই গানের সম্মানী হিসেবে গীতিকার হিসেবে আমি পেয়েছিলাম স্রেফ ৫ হাজার টাকা।
তার পরও কেন গান লিখি! অনেক ভেবেছি। সদুত্তর নেই। লিখতে লিখতে একটা মোহ কাজ করে বা বলা যায় যে, এই ভগ্নপ্রায় শিল্পমাধ্যমটির উন্নতির পেছনে আমিও কিছু অবদান রাখতে চাই। সেই চেষ্টা জারি রাখি অল্প-বিস্তর কাজ করে। হয়তো একটি কাজের ইতিবাচক সাড়া বা সফলতা (এবং ভিউ) পরের ১০টি গানের রসদ। কে জানে!
আমি কীভাবে অবদান রাখতে পারি? এর একটাই জবাব, ভালো ভালো কাজ করে। একটি গান তৈরিতে কয়েকজনের শ্রম, মেধা, অর্থ লাগে। আমি লিখে আমার দায়িত্ব শেষ করি। গানের অন্য অনেক অংশেই আমার ‘হাত’ থাকে না। ফলে গানটি যখন বাজারে আসে, দেখা যায় সেখানে অন্যদের ‘দায়িত্বে অবহেলা’ স্পষ্ট। গান ভালো হয়নি।
আবার ভালো হলেও শ্রোতা-দর্শক সেভাবে গানটি হয়তো গ্রহণই করেন না। সেটার পেছনে ১০টা কারণ থাকতে পারে। আমার (অন্য গীতিকারও) লেখা গানের একটা সাধারণ সমালোচনা হয় এমন যে, সুর ভালো হয়নি বা মিউজিক সময়োপযোগী নয় বা গাওয়া ভালো হয়নি কিংবা ভিডিও নির্মাণে যতœ নেওয়া হয়নি। এসব অসংগতি কারও ইচ্ছাকৃত না হলেও এতে গাফিলতির ব্যাপারটি স্পষ্ট, প্রমাণিত। কেউ কেউ নিজের কাজটি কোনোভাবে শেষ করতে পারলেই বাঁচে, পরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে নিজের বা ইন্ডাস্ট্রির মানোন্নয়ন সবই ব্যাহত হতে বাধ্য।
এসবের মধ্য দিয়েই একজন গীতিকার তার গান লেখার যুদ্ধ জারি রাখেন, বছরের পর বছর। আবার এটিও সত্য যে, গান লেখার প্রাথমিক শর্ত তথা ছন্দ, মাত্রা না বুঝেই কেউ কেউ লিখতে এসে নিজের ও অন্যদের ক্ষতি করছেন। এই ক্ষতি তাৎক্ষণিক চোখে না পড়লেই একটা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে।
আসা যাক রয়্যালটির প্রসঙ্গে। এই সিস্টেম এখানে দাঁড়ায়নি। এককালীন অর্থপ্রাপ্তিই এখানে একমাত্র ভরসা। রয়্যালটি সিস্টেম কেন প্রতিষ্ঠিত হয়নি এ নিয়ে কিছু গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার, মানববন্ধন হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো এ নিয়ে প্রায়ই কথা বলে, নিজেদের সভায়। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ কবে দৃশ্যমান হবে তেমন কোনো আভাস নেই। ফলে দিনের পর দিন এভাবেই চলছে। রয়্যালটির কথা বাদ, একটি গানের জন্য (এককালীন সম্মানী বাবদ) গীতিকার ন্যূনতম কত টাকা পারিশ্রমিক দাবি করতে পারবেন, এ নিয়েও কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যা দিতে চায়, সেটিই মানদণ্ড হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে কোনো গীতিকার যদি তার সফলতার বিচারেও একটু বেশি পারিশ্রমিক আশা করেন, তাকে কোণঠাসা হয়ে পড়তে হয়। তাকে ধীরে ধীরে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হয়। কারণ এখানে বিকল্পের অভাব নেই।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় ব্যবসায়ীদের। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ট্রান্সপোর্ট খরচ, ট্যাক্স পরিশোধ ও লেবার খরচসহ আমদানিকরদের হাতে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। যা ভারতের বাজারে ১৪-১৫ রুপি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখানেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজি রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের মতো কয়েক হাত ঘুরে অস্বাভাবিক দামে ২৭ টাকার পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকায়। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো খুচরা বাজারে পৌঁছায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। প্রথম দিনে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল দ্বিতীয় দিন শেষে আইপি বা আমদানি অনুমোদনের পরিমাণ ৪ লাখ ৩৩ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজের নিট উৎপাদন ধরা হচ্ছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টন। ফলে বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থলবন্দর হয়ে ১ হাজার ২৮৮ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
চলতি বছর পেঁয়াজের দর রোজার ঈদের পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল। এক মাসের ব্যবধানে তা ৩০ থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়। গত কয়েক দিন ধরে ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছিল।
কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এতদিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে রবিবার সায় দেয়। পরদিনই পাইকারি বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হলে পাইকারিতে দাম কমে যায় এক ধাক্কায় ৩০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য এখন ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে সরকার মনে করে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে যে পেঁয়াজ দেশে এসেছে, সেগুলো কেনা প্রতি কেজি ২১ থেকে ২২ টাকার মধ্যে ছিল বলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব খরচ মিলিয়ে বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২৭ টাকায়। আমদানিকারকরা কেজিপ্রতি ২ টাকা লাভে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয়রা আরও ৫ টাকা লাভে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ঢাকার পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ৩৪ টাকায়। ঢাকার পাইকাররা শ্যামবাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৫০-৫৬ টাকায়। শ্যামবাজার ব্যবসায়ীর হাতবদল হয়ে কারওয়ান বাজার পাইকারি মার্কেটে এসে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে।
ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক আমির হামজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতীয় বাজার থেকে ১৪-১৫ রুপিতে কিনে সব খরচসহ বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। কেজিতে ২ টাকা লাভে ভোমরা স্থলবন্দরের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হিলির বন্দর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী আহমেদ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত আমদানিকারকদের থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনে থাকি। আমাদের কাছ থেকে ঢাকার ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন। কেজিপ্রতি ৩১-৩২ টাকা আমাদের কেনা পড়ে। ঘরভাড়া, লেবার খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজে সামান্য লাভ করে ৩৪-৩৫ টাকা বিক্রি করতে হয়। এর নিচে বিক্রি করলে আমাদের ৭০-৮০ পয়সার মতো লোকসান হয়।’
গতকাল রাজধানীর শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বাছাই করে দুই ভাগে বিক্রি করছেন শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা। আকারে কিছুটা ছোট পেঁয়াজের কেজি ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকায়।
শ্যামবাজারের মেসার্স নিউ সেবা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শেখর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আজই (গতকাল) আমদানি করা পেঁয়াজের চালান শ্যামবাজারে এসেছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজ পেলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী আমদানি করা এসব পেঁয়াজ পাননি। বেশ কিছু পেঁয়াজ ট্রাকে পচে যাওয়ায় দুই ভাগে তা বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক ভালো প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকা করে।’
জানতে চাইলে শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ মাজেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ রুপিতে। সেই হিসাবে সব খরচ মিলিয়ে আমাদের দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে ৩৫-৩৬ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পারবেন। তবে এ পেঁয়াজ কেন ৫০ টাকার ওপর বিক্রি হচ্ছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এদিকে ভারত থেকে আসা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ময়না মিঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসায় আমাদের অনেক লস হয়েছে। আগের কেনা দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা করে লস দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমদানি করা যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা শ্যামবাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। মার্কেটে ক্রেতা না থাকায় সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে ২ টাকা লাভ করতেও এখন কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে খুচরা বাজারগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, এখনো ভারত থেকে আসা আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে প্রবেশ করেনি। আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে না এলেও দেশি পেঁয়াজের দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। যা গত তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০০-১০৫ টাকায়।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে বলে জানান দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাদের তথ্যমতে, সোমবার বিকেলে ভোমরা বন্দর দিয়ে ২৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে হাকিমপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে গত দুদিনে ১৬ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। আর দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।