
আশির দশকের বাংলাদেশ ও তার শিল্প যেন আটকে পড়ে যাচ্ছিল একনায়কের বেড়াজালে। তৎকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল থাকলেও তার ফুঁসতে থাকা আগুনের আভাস শিল্পাঙ্গনে সেভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না। চারদিকে ছিল শুধু ‘বিমূর্তরীতি’ কাজের জয়গান। ঘটমান সময়ের রাজনৈতিক অপশাসন, দুঃশাসন কিছুই যেন শিল্পীদের চোখে সেভাবে ধরা দিচ্ছিল না। কিন্তু এই চোখ বুজে থাকা আর বেশিদিন থাকল না।
স্বৈরাচারী শাসন ও সামাজিক-রাজনৈতিক সহিংসতার দায় থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি একদল তরুণ চিন্তার শিল্পী। তাই সমচিন্তার কয়েকজন মিলেই গড়ে তুললেন শিল্পের দল, যার নাম দিলেন ‘সময় দল’। নামের সামঞ্জস্য প্রকাশ পেতে শুরু করে তাদের কাজ, কাজের ধরন ও বিষয়ের মাধ্যমেই। চারপাশের ঘটে যাওয়া সময় ও পরিস্থিতি ক্রমাগত প্রকাশ পেতে থাকে ‘সময়’ এর শিল্পীদের কাজে। বিমূর্তধারার কাজকে একপাশে রেখে সরাসরি যেন চোখে আঙুল দিয়ে মানুষকে দেখাতে লাগলেন তার চারপাশের সময়ের গল্প। এ শিল্পীরা তাদের কাজে আবেগের চেয়েও বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন তাদের বুদ্ধিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির।
আশির দশকের এই শিল্পীরা তাদের কাজের ধরনে নিয়ে এলেন আমূল পরিবর্তন। তাদের কাজের ম্যাটেরিয়াল, ফর্ম ও সাবজেক্ট ম্যাটারও হয়ে উঠল অনেক বেশি সমসাময়িক। রাজনৈতিক সহিংসতা সরাসরি প্রকাশ পেতে থাকল তাদের কাজে।
ভিন্ন চিন্তার এই দলের অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন- শিল্পী ঢালী আল মামুন। ‘রাজনীতি ও সমাজ সচেতনতাবোধ’ শিল্পী ঢালী আল মামুনের কাজের প্রধান পরিচায়ক। শিল্পকর্মগুলোকে তিনি তার বক্তব্য উপস্থাপনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন সচেতনভাবেই। নিছক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যপট নির্মাণে তিনি তেমন আগ্রহী কখনই ছিলেন না। বরঞ্চ দর্শকের চিরায়ত আয়েশি চিন্তাকে বাস্তবতার ঘায়ে আঘাত করাই তার উদ্দেশ্য। বহুমাত্রিক এই শিল্পী তার বক্তব্যের গল্পকথা প্রকাশে চিত্রকলা থেকে শুরু করে আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, ভিডিও ও স্থাপনাধর্মী শিল্পমাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন। অর্থাৎ মাধ্যমের ব্যবহারেও শিল্পী ঢালী আল মামুন নিজেকে রেখেছন উন্মুক্ত ও স্বাধীন তার চিন্তার মতোই।
গতানুগতিক ধারা বদলের চেষ্টায় বদ্ধপরিকর আরেক শিল্পী দিলারা বেগম জলি। টানাপড়েনের এই উত্তপ্ত সময়ে বেশ চ্যালেঞ্জ নিয়েই শিল্পী জলি অপরাপর পুরুষ শিল্পীদের সমপর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারী, নারীর ওপর রাজনৈতিক সহিংসতার প্রভাব ও নারীর মনোজগতের নানাবিধ অনুভূতিই তার কাজে ফুটে উঠেছে বারবার। ছাপচিত্রী হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরে শিল্পী জলি মনোযোগী হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে চিত্র রচনা, ভাস্কর্য ও স্থাপনাধর্মী মাধ্যমে কাজ করার প্রতি।
সময় দলের আরেক ভিন্ন চিন্তার শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য। সামাজিক ও রাজনৈতিক অনাচারের বিরুদ্ধে প্রবল ভর্ৎসনা শিশির ভট্টাচার্যের প্রধান উপজীব্য। কৌতুক ও হাস্যরসের মাধ্যমে রাজনৈতিক কুৎসিত সত্যকে নিরাভরণ করে দেখিয়েছেন বারবার। মানবশরীর ও অভিব্যক্তির অতিরঞ্জনের মাধ্যমে শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়।
আশির দশকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল পাড়ির মাধ্যমেই আসলে গড়ে ওঠে ‘সময় দল’-এর মতো শিল্পী সংগঠন। যাদের অসামান্য মেধা ও সাহসিকতার হাত ধরে আজকের শিল্পাঙ্গন সমৃদ্ধ বহু গুণী ও প্রতিভাধর শিল্পীদের পদচারণায়। যারা শিখিয়েছে বর্তমানকে শেকল ভাঙার গান গাইবার দৃঢ় সাহস।
বরেণ্য চিত্রকর মনিরুল ইসলাম। এ শিল্পী পেয়েছেন স্পেনের সম্মানসূচক ‘রয়েল স্প্যানিশ অর্ডার অব মেরিট’। বাংলাদেশ ও স্পেনে তার দুই জীবন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন নিজের শিল্পযাত্রাসহ ইউরোপ-বাংলাদেশের চারুকলা সম্পর্কে। কথা বলেছেন শিল্পভাবনা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিলভিয়া নাজনীন
ছবি আঁকার জগতে আসার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
মনিরুল ইসলাম : আমার মনে আছে ম্যাট্রিক দিলাম ফিফটি এইটে, কিশোরগঞ্জ থেকে। তিনবার ম্যাট্রিক দিতে হয়েছে, তারপর পাস করেছি। আমার জীবনে একমাত্র ইচ্ছা ছিল ছবি আঁকতে হবে। যেহেতু এই ভাবনাটা আমি করছি কিশোরগঞ্জের মতো ছোট একটা শহর থেকে, সে হিসেবে ফ্যামিলির একটু আপত্তি ছিল। বিশেষ করে বাবার। অনেক কিছু চিন্তা করে বাবা বলল, এই ছেলের ফিউচার বলে কিছু নেই। আমাকে ইলেকট্রিক কাজে হেলপার হিসেবে কাজ করতে বলল। তবে আর্ট কলেজে আসার পেছনে মার সম্মতি ছিল। আমাদের শিল্পী হাশেম খানের বাবা আর আমার বাবা কলিগ ছিলেন, তারা পাবলিক হেলথে একসঙ্গে কাজ করতেন। সেই সূত্রে হাশেম খান আমাকে চারুকলায় ভর্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলেন।
চারুকলায় এসে তখন শিক্ষক হিসেবে কাদের পেলেন?
মনিরুল ইসলাম : ঢাকা আর্ট কলেজে যখন আসি আমাদের টিচার ছিলেন আব্দুল বাসেত। খুব কড়া এবং সত্যিই খুব ভালোমানের টিচার ছিলেন। যদিও তিনি খুব কম আঁকতেন। তার ছবিও অত্যন্ত ভালো ছিল। তো বাসেত স্যারের খুব নজর ছিল আমার ওপর। ছাত্রাবস্থায় আমি প্রচুর ছবি আঁকতাম। গাদায় গাদায় আঁকতাম। তখন অ্যানুয়াল এক্সিবিশনে কার কয়টা পেইন্টিং যাবে সেটার হিসাব হতো, কে কতগুলো ছবি আঁকছে তার ওপর। তাই প্রচুর আঁকতাম। তখন তো এত পেইন্টিং করার সুবিধা ছিল না। ওয়াটার কালার করতাম শুধু। বিক্রি করে দিতাম সেগুলো, পঁচিশ টাকা, তিরিশ টাকা করে। এইভাবে আরম্ভ করলাম আমার আর্ট কলেজের জার্নি। তারপর সেকেন্ড ইয়ারে পেলাম মোস্তফা মনোয়ার স্যারকে। তার কাছে আমি দুইটা জিনিস শিখেছি, একটা হলো কালার্স, আরেকটা হলো ফ্রিডম। মোস্তফা মনোয়ার স্যারের হাত ধরেই আমার শিল্পীজীবনের গভীরে অভিনিবেশ ঘটল।
চারুকলার তখন তো জয়নুল আবেদিনও ছিলেন, তার সঙ্গে কোনো স্মৃতি নেই?
মনিরুল ইসলাম : আবেদিন স্যারকে প্রথম দেখি হোয়াইট প্যান্ট আর একটা অলিভ গ্রিন হাওয়াই শার্টে, এলিগেন্ট ওয়েতে আয়রন করা। একটা বক্স-ওয়াগান গাড়ি ওটা বোধহয়, উনি জার্মানি থেকে গিফট পেয়েছিলেন, সেটা থেকে নেমে আসছিলেন। উনি একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন রাত ৯টায়। উনি এইভাবে বলতেন, ‘মনির সাবরে ডাইকা আনো।’ তো আমি গেলাম, স্যার বললেন, ‘মনির, চাঁদপুরে যাইতে হবে।’ আমি বললাম ‘চাঁদপুরে কেন যাবেন স্যার?’ বললেন, ‘আমাকে ছবি আঁকতে যাইতে হবে।’ জানতে পারলাম, বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট বা ইস্ট পাকিস্তান রিভার ট্রান্সপোর্ট বলে একটা কোম্পানি আছে ওটার ক্যালেন্ডার হবে। ঐ ক্যালেন্ডারের জন্য চাঁদপুরের সাবজেক্ট নিয়ে ছবি আঁকতে হবে। স্পেসিফিকলি স্টিমারে আগে যেই চুঙ্গাটা থাকত ব্ল্যাক অ্যান্ড ইয়েলো, এইটা থাকতে হবে ছবিতে। তারপর আমরা সকালে রওনা হলাম। আবেদিন স্যারকে নিয়ে চাঁদপুরে আমাদের বাসাতেও গেলাম। আমরা নৌকা ভাড়া করে রং, তুলি, কাগজ নিয়ে সাবজেক্ট দেখতে গেলাম। সারা দিন আবেদিন স্যার নৌকায় বসে থাকলেন কিছুই আঁকলেন না। সন্ধ্যার আগে বললেন বাসায় ফিরে যাবেন। আমি বেশ অবাক! সারা দিন সময়টা নষ্ট করলেন স্যার? কিছু আঁকলেন না? পরদিন সকালে আবার আমরা বের হলাম। সেদিন স্যার ছবি আঁকা শুরু করলেন। রং খুঁজলেন গ্যামবুজ, প্রুশিয়ান ব্লু, ইন্ডিগো। আমি ভাবলাম, ছবি আঁকার জন্য এই কঠিন রংগুলো স্যার নদীতে কোথায় দেখতে পেলেন? তারপর এই রং দিয়েই স্যার কী অপূর্ব দুইটা ছবি আঁকলেন। আমিও সাহস নিয়ে স্যারের মতো দুইটা ছবি আঁকলাম। বাসায় ফিরে যখন চারটা ছবি বিছিয়ে রাখলাম, স্যার বললেন, ‘এই মিয়া তোমার ছবি কোন দুইটা?’ (হাসি)
চারুকলায় থাকাকালীনই কি আপনি স্কলারশিপ পেয়ে স্পেন চলে যান?
মনিরুল ইসলাম : আমি আর রফিকুন নবী স্যার দুজনেই প্রায় একই সময়ে চারুকলায় শিক্ষকতা শুরু করি। ঊনসত্তরের ঐ সময়টায় আমরা বিভিন্ন পোস্টার করতাম। তো একদিন নবী বললেন, ‘ওই মিয়া, স্পেন যাবা নাকি?’ আমি বললাম, ‘না, আপনে যান না কেন?’ পরে উনি আঙুল দিয়া দেখায় বললেন, ‘এই যে খাজা সাহেব চৌদ্দ বছর ধইরা ফরমই ফিল-আপ কইরা যাইতাছে...’ হা হা। তখন স্কলারশিপের সার্কুলার পাবলিশ করত সাত দিন সময় দিয়ে। সাত দিনে তো সব জমা দেওয়া অসম্ভব। আমি হাফ কাগজ কোনোরকম করে পাঠায় দেই। কেমন করে জানি সিলেক্ট হয়ে যাই। আমার বেতন ছিল দুইশ টাকা আর যাওয়ার জন্য প্লেন ভাড়া লাগত চার হাজার টাকা। কেমনে যাই! আমার এক বন্ধু ছিল নূরুল ইসলাম নামে, যে মোনায়েম খানের সহকারী ছিল, পরে সে বঙ্গবন্ধুর পিএসও হয়েছিল সে আমাকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একটা টিকিটের ব্যবস্থা করে দেয়।
স্পেনে গিয়ে কি আবার লেখাপড়া শুরু করলেন?
মনিরুল ইসলাম : স্পেনে তো গেলাম আমি ৯ মাসের জন্য। তখন বাংলাদেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আমি এচিং করা শুরু করলাম। আমি চলে আসব ভাবছিলাম, কারণ পেইন্টিং করতে পারছিলাম না। ওখানে আমি ফ্রেস্কো করতে শুরু করছিলাম। জিনিসটা নতুন ছিল তাই করতে ভালোই লাগত। এরপরে প্রিন্ট শুরু করলাম প্রিন্টমেকার হিসেবে। তবে ওরা আমাকে আর্টিস্ট হিসেবে ট্রিট করত। ৯ মাসের জন্য গিয়ে ফিফটি টু ইয়ারস কাটিয়ে দিলাম।
স্পেনকে আপনার কেমন মনে হয়েছে বসবাসের জন্য?
মনিরুল ইসলাম : স্পেন একটা বিউটিফুল কান্ট্রি। লোকগুলা অত্যন্ত ভালো, ক্লাইমেট ভালো, কিন্তু পড়াশোনার জন্য বেশি ভালো না। স্পেনের অনেক হিস্ট্রি আছে, খাওয়া-দাওয়ার জন্য বিখ্যাত, ফুর্তিবাজ জাতি। রাতে ঘুমায় না। দে এনজয় দেয়ার লাইফ। আর্টের জন্য ওয়ান অফ দ্য ভেরি ইম্পর্টেন্ট প্লেস এখন। ইম্পেশেন্ট, এনার্কিস্ট, ইনডিভিজুয়ালিস্ট এই তিন ধরনের মানুষ ওখানে, তিনটাই কিন্তু খারাপ। স্পেনের এই এনার্কিস্ট গ্রুপটা বেশ সক্রিয়।
বিদেশ গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মনিরুল ইসলাম : বিদেশে গেলেই যে আর্টিস্ট অনেক কিছু শিখে ফেলবে, অনেক বড় হয়ে যাবে এমন না, ইট ডিপেন্ডস সে কতটুকু কন্সিভ করতে পারে। আমি স্পেনে দীর্ঘসময় কাজ করছি। সেখানে আমার একটা কঠিন জার্নি আছে।
স্পেন সরকার আমাকে অনেক সম্মান দিছে। এটা সত্য। ’৯৭-এ এচিং-এর জন্য জাতীয় পুরস্কার, এরপর আরও দুইটা পুরস্কার দিল। করোনার আগে মেরিট পুরস্কার মানে ওখানকার ‘স্যার’ হাইয়েস্ট সিভিলিয়ান অ্যাওয়ার্ড, ওইটাও দিল।
বাংলাদেশে আপনাকে একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক দিয়ে সম্মানিত করেছে...
মনিরুল ইসলাম : হ্যাঁ, ১৯৯৯ সালে আমি একুশে পদক পাইছি। আমাদের হাইয়েস্ট অ্যাওয়ার্ড, কিন্তু পিপল ফরগেট। মানে প্রাপ্য সম্মানটা আসলে পাওয়া হয় না। বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি কোনোটাই বোধহয় বাকি নাই।
শিল্প কি শুধুমাত্র আনন্দের জন্যই কাজ করে, নাকি মানুষের জন্যও?
মনিরুল ইসলাম : আর্ট আজ যা, পাঁচশো বছর আগেও এমনই ছিল। রাজার ছবি আঁকো, বাগান আঁকো, এখন করপোরেটদের জন্য আঁকো। যতই বলি না কেন আর্টকে জনগণের জীবনের ভেতরে নিয়ে যাও, লাভ নাই। তবে গ্রামের লোকেদের কাছে আর্ট ইজ আ ডেইলি লাইফ। একটা পিঠা বানাবে, পাকন পিঠা তারা ডিজাইন করে খায়। তারপরে ঘরে আলপনা করে। আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, আর্ট ইজ আ বুলশিট বাট এভরি ইঞ্চ অফ লাইফ ইউ নিড ইট।
বাংলাদেশের আর্ট কি বিদেশে আলাদাভাবে এপ্রেসিয়েটেড হয়?
মনিরুল ইসলাম : না, বাংলাদেশি আর্ট বলে ওখানে কোনো কিছু ছিল না। আর পৃথিবী-বিখ্যাত বলে যে ধারণা আছে সেটা আসলে ভুয়া, কেউই পৃথিবী-বিখ্যাত না। এটা একটা ডাম্ব ল্যাঙ্গুয়েজ, আমরা অলওয়েজ বিহাইন্ড ক্যানভাস থাকি। তবে লাস্ট ১০ বছরে কিছুটা শুরু হয়েছে। আজ যারা ভেনিস বিয়েনালে যাচ্ছে, এটা একটা বড় বিষয়। কারণ এটা মিরর অফ অ্যা কান্ট্রি, ওখানে নির্দিষ্ট কোনো আর্টিস্ট বা গ্যালারি যাচ্ছে না, যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে শিল্পীরা। তবে মনে রাখা লাগবে আর্টে এপ্রিশিয়েশন একটা স্লো প্রসেস। এটার জন্য কন্টিনিউটি দরকার।
আমরা যে আর্ট করছি, তার মধ্যে আমরা আসলে কী করছি?
মনিরুল ইসলাম : অ্যাকচুয়ালি আমরা কিন্তু ইউরোপিয়ান আর্ট কপি করতেছি। আসলে আমাদের সিলেবাসটাই তো ওরকম ‘রয়্যাল স্কুল অফ আর্ট’-এর। এখন তো আর্ট গ্লোবালাইজড হয়ে গেছে সবাই বলে। আমি এটার পক্ষপাতী না। সবাই যদি একই ভাষায় কথা বলে তাহলে আলাদা বলে কিছু তো থাকার কথা না। নতুন কিছুও তো পাওয়া যাবে না।
স্পেন আপনার একটা স্টাইলকে গুরুত্ব দিয়ে ‘স্কুল অফ মনির’ বলছে, অথচ সেই স্টাইলটা বাংলাদেশে ওভাবে বিকশিত হয়নি, কেন?
মনিরুল ইসলাম : আমি অনেক সময় ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছি এদেশে। এমন তো না, আমি শিখাইনি।
করোনার পর এই সময়টায় আপনি কী আঁকছেন? কিছু ভাবছেন?
মনিরুল ইসলাম : আমরা মানুষেরা কিন্তু সব ভুলে যাই। ছবিটা আমার কাছে মনে হয় ইউ আর হোল্ডিং দ্য টাইম। এখন সময় চলে গেছে মানুষের আবেদনও চলে গেছে। আমি আসলে গোলাপ আঁকি না, গোলাপের ঘ্রাণ আঁকি। একটা ছবি কখন ছেড়ে দিতে হয় এটা আমরা অনেকেই জানি না। উই আর কিলিং আওয়ার অওন আর্ট। আর লাস্টলি, ডাস্ট ইনটু ডাস্ট। আর আমি এত এত যে আঁকছি, এত করে দেখছি, যে মিরাকেলি কিছু ঘটে কি না! এটার জন্যই ওয়েট করছি। আমার বয়সও তো হয়ে গেল আটাশি।
শিল্পমাধ্যমের যতগুলো শাখা আছে তার সর্বশেষ সংযোজন আলোকচিত্র। ১৮৪০ সালে জাহাজে চেপে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় ক্যামেরা আসে। আর পূর্ববঙ্গে ক্যামেরা আসে গত শতকের ষাটের দশকে ঢাকার নবাব পরিবারে। নবাব আহসান উল্লাহ আর তার ছেলে নবাব সলিমুল্লাহ যে সৃষ্টিশীল আলোকচিত্রচর্চায় নিমগ্ন ছিলেন ইতিহাসে তার প্রমাণ মেলে। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গে স্বল্প পরিসরে আলোকচিত্রের নান্দনিকচর্চা শুরু হয়। ষাটের দশক থেকে শুরু হয় স্যালোন বা আর্ট ফটোগ্রাফির চর্চা। কিন্তু ছবি দিয়ে যে সমাজজীবনের গল্প বলা যায় এই ধারণা আসে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে।
বর্তমানে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব এখন এ দেশের আলোকচিত্রীদের কাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। এত কিছুর পরও ফটোগ্রাফিকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্রীয় শিথিলতা চোখে পড়ার মতো। ফলে অনেকটা ব্যক্তি-উদ্যোগেই এদেশে ফটোগ্রাফিচর্চা বিস্তৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের আলোকচিত্রবিদ্যায় অনন্য অবদান রেখেছেন গোলাম কাসেম ড্যাডি ও মনজুর আলম বেগ। আলোকচিত্রকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরিচিত করার জন্য যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি ড. শহিদুল আলম। আলোকচিত্র অঙ্গনে তিনি এদেশে একটা প্রজন্ম তৈরি করেছেন।
সাতচল্লিশ পরবর্তী সময়ে আমানুল হক, নাইবউদ্দীন আহমদ, ড. নওয়াজেশ আহমদ, আনোয়ার হোসেন, বিজন সরকার প্রমুখ সৃষ্টি করে গেছেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। বর্তমান প্রজন্মের আলোকচিত্রীদের মধ্যে নাসির আলী মামুন তৈরি করেছেন প্রতিকৃতি আলোকচিত্রের ধারা। প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানমের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করেছেন অনেক নারী আলোকচিত্রী। আরও অনেক পথিকৃৎ আলোকচিত্রী রয়েছেন যাদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে তার পুরোটা তুলে ধরা সম্ভব নয়।
শিল্পবিশ্বে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি কোন অবস্থানে রয়েছে তার একটি সামান্য ফিরিস্তি তুলে ধরছি। সত্যি বলতে পৃথিবীর এমন কোনো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা নেই, যেখানে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা জয়ী হয়নি। নেদারল্যান্ডসে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতা শুরুর কয়েক বছরের মাথায় ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেসের সার্টিফিকেট অব অনার লাভ করেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী মোজাম্মিল হোসেন। পরের বছর পান মোয়াজ্জেম হোসেন বুলু। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শফিকুল আলম কিরণ (দুইবার), শোয়েব ফারুকী, জিএমবি আকাশ, এন্ড্রু বিরাজ, তাসলিমা আখতার, রাহুল তালুকদার, সরকার প্রতীক, মো. মাসফিকুর আখতার সোহান, কে এম আসাদ ও ইসমাইল ফেরদৌস ওয়ার্ল্ড প্রেস জিতেছেন। ২০১৮ সালে পুলিৎজার জিতেন মোহাম্মদ পনির হোসেন। বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের মুকুটে আরও যুক্ত হয়েছে ইউজিন স্মিথ ফান্ড, মাদার জোনস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অল রোভস, পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার এওয়ার্ড, জুপ মাস্টারক্লাস, হিপা, টাইম ম্যাগাজিন পারসন অব দ্য ইয়ারের মতো সম্মানসূচক পালক। ২০২২ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের এশিয়া মহাদেশের আঞ্চলিক সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছে দৃক। এশিয়া মহাদেশের এত এত দেশ থাকতে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে নির্বাচন করা কম গৌরবের ব্যাপার নয়।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো আলোকচিত্রী স্বাধীনতা পদক পাননি। একুশে পদক পেয়েছেন মো. কামরুজ্জামান, আফতাব আহমেদ, মনজুর আলম বেগ, মোহাম্মদ আলম, আমানুল হক, গোলাম মুস্তফা, সাইদা খানম ও পাভেল রহমান। বাংলাদেশ শিল্পকলা পদক পেয়েছেন শহিদুল আলম, গোলাম মুস্তাফা, নাসির আলী মামুন, এমএ তাহের ও শফিকুল ইসলাম স্বপন। বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের কাজের যে পরিধি সেই তুলনায় এই সংখ্যাটা অতি নগণ্য।
সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন ২০১২ সালে ঢাকায় প্রথম আর্ট সামিটের আয়োজন করে। সেই বছর সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড পান খালেদ হাসান। ২০১৬ সালে পান রাসেল চৌধুরী। এ বছর পান ফজলে রাব্বী ফটিক। এছাড়া পৃথিবীর নানা শিল্পকলা উৎসব, বিয়েনাল, ট্রিয়েনাল ও বিশ্ববিখ্যাত মিউজিয়ামে বাংলাদেশি আলোকচিত্রশিল্পীদের কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে। ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট হিসেবে শহিদুল আলম, আবীর আবদুল্লাহ, মোনেম ওয়াসিফ, সরকার প্রতীক, সাইফুল হক অমি, শামসুল আলম হেলাল, হাবিবা নওরোজ, শাহরিয়া শারমীন, সালমা আবেদীন পৃথি, তাহিরা ফারহীন হক, রিয়াদ আবেদীন, ফারজানা আখতার, ফায়হাম ইবনে শরীফ, মাশুক আহমেদ, আহমেদ রাসেল, মৃদুল কান্তি গোস্বামী, যোবায়ের জ্যোতি, কাজী রিয়াসাত আলভী, শাহনেওয়াজ খান, তূর্য চৌধুরীসহ অসংখ্য আলোকচিত্রীর কাজ বিশ্বশিল্পমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
আজকের শিল্পবিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি তার নেপথ্য ভূমিকা দৃক ও পাঠশালার। ২০০০ সালে দৃক প্রথম আন্তর্জাতিক ছবিমেলার আয়োজন করে। ছবিমেলা এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব। পাঠশালার উত্তরণ দ্বিধাহীনভাবে বাংলাদেশের ‘আলোকচিত্রিক রেনেসাঁ’ বলা যায়। এত কিছুর পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও শিল্পকলা একাডেমিতে ফটোগ্রাফির জায়গা হয়নি। ঢাকা আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার সময়ে চিত্রকলার বিভিন্ন শাখার সঙ্গে ফটোগ্রাফি বিভাগও চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষক না পাওয়ায় সে সময়ে এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ষাটের দশকের শুরুতে আর্ট কলেজে ফটোগ্রাফির একটা পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ফটোগ্রাফি পড়ানোর জন্য শিল্পী মুস্তফা মনোয়ারকে আর্ট কলেজে নিয়ে আসেন। ওয়ান টুয়েন্টি রোলিকর্ড ক্যামেরা, লাইটিং, আধুনিক এনলার্জারসহ ডার্করুম সরঞ্জাম কেনা হলো। কিন্তু কোথায় যেন ছেদ পড়ল! অনেক দিন অপেক্ষা করে মুস্তফা মনোয়ার ১৯৬৪ সালে চলে গেলেন টেলিভিশনে। ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে আর্ট কলেজে এলে ফটোগ্রাফি বিভাগ প্রতিষ্ঠার আলোচনাটি আবারও জোরালো হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াবহ হত্যাকা-ের পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। ফলে চারুকলায় ফটোগ্রাফি আর জায়গা করে নিতে পারল না। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আলোকচিত্র বিভাগ খোলার বিল পাস হয়েছিল। এখন সেটিও কী অবস্থায় আছে কে জানে! আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়ে গেল, সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি নিয়ে এত এত ঘটনা ঘটে গেল কিন্তু দেশের মাটিতে তাদের কোনো মূল্যায়ন হলো না।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় এক দশক আগে থেকে এদেশে আধুনিকতাবাদী ভাস্কর্য চর্চার সূচনা ঘটে। উনিশশো ষাটের দশকের শুরুতে আধুনিক ভাস্কর্যের বিভিন্ন ধরনের সঙ্গে পূর্ববাংলাকে পরিচিত করেন ভাস্কর নভেরা আহমেদ। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্যবিদ্যা শিক্ষা ও চর্চা ষাট দশকের প্রথমার্ধে (১৯৬৩ সালে) শুরু হয়। অতএব বলা যেতে পারে স্বাধীনতা লাভের এক দশক আগেই এদেশের আধুনিক ও সমকালীন ভাস্কর্যচর্চার পটভূমি রচিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বাংলাদেশের ভাস্কর্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে। বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে উনিশশো একাত্তরের ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই স্বাধীনতার পরপরই এই যুদ্ধে জনমানুষের আত্মত্যাগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বকে স্মরণীয় করে রাখতে গণপ্রাঙ্গণ ভাস্কর্য নির্মাণের তাগিদ অনুভূত হয়। কেননা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বিশালায়তন ভাস্কর্যের উপস্থিতি বোধের ক্ষেত্রে যে ধরনের শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে তা অন্য কোনো শিল্পমাধ্যমে সম্ভব নয়।
একাত্তরে ঢাকার জয়দেবপুর (গাজীপুর) চৌরাস্তার যে স্থানে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ সংগঠিত হয় সেই স্থানটিকে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামকরণ করা হয়। ১৯৭২ সালে সেখানে নির্মিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মারক গণপ্রাঙ্গণ ভাস্কর্য ‘মুক্তিযোদ্ধা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তার বিভাগের শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। বেদিসহ ৪২ ফুট উচ্চতার সাদা সিমেন্ট-কংক্রিটে ঢালাই করে নির্মিত ভাস্কর্যটি একহাতে রাইফেল অন্যহাতে গ্রেনেড ধরা একজন মুক্তিযোদ্ধার বিমূর্ত অবয়ব। ভাস্কর্যটি নির্মাণ ও স্থাপনে উদ্যোগ, ব্যবস্থাপনা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় গাজীপুর অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। গাজীপুরে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ থেকে ৯ মাসের যুদ্ধে সমরাঙ্গনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মেজর জেনারেল আমিন আহম্মেদ চৌধূরী। ভাস্কর্যটি নির্মাণ ব্যবস্থাপনায় তিনি ও তার বাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এর কিছুদিন পর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) কলাভবনের সামনে অপর একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ভাস্কর অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ খালিদ তার সহযোগী তরুণ শিল্পীদের নিয়ে ‘অপরাজেয় বাংলা’ নামে সুপরিচিত এই ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ আরম্ভ করেন। তবে জাগ্রত চৌরঙ্গীর ভাস্কর্যটির মতো ‘অপরাজেয় বাংলার’ নির্মাণ সহজে বা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়নি। নির্মাণ ব্যয় সংকুলান, প্রশাসনিক অসহযোগিতা এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ক্রমশ সংগঠিত হতে থাকা ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বাধা মোকাবিলা করে ১৯৭৯ সালে ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। দুজন পুরুষ ও একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা যাদের একজন নাগরিক তরুণ একজন গ্রাম্য যুবক ও অপরজন সেবিকা হিসেবে সামনে অগ্রসরমানÑ এমন তিনটি প্রতিনিধিত্বমূলক অবয়বের সমন্বয়ে আঠারো ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়। বাংলাদেশে পাবলিক স্কাল্পচার বা গণপ্রাঙ্গণ ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে অপরাজেয় বাংলা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি নির্মিত হওয়ার পর একই ধারায় অনেকগুলো মুক্তিযুদ্ধ স্মারক ভাস্কর্য নির্মিত হয়। তবে প্রাথমিকভাবে যেসব গণপ্রাঙ্গণ ভাস্কর্য নির্মিত হয় তার বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয় ও সেনানিবাসমূহে স্থাপিত হতে দেখা যায়।
সারা বিশ্বেই গণপ্রাঙ্গণ ভাস্কর্যসমূহ ভাস্কর্যের জনপ্রিয় ধারা হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু প্রকৃত অর্থে ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রটি ভিন্ন। ভাস্কর্যবিদ্যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং ভাস্কররা তাদের নিজস্ব স্টুডিওতে যে নিরীক্ষামূলক অনুশীলন চালান তার মাধ্যমে মৌলিক ভাস্কর্যসমূহ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে তারা সেগুলো জনসম্মুখে উপস্থাপন করেন। এই ভাস্কর্যগুলোর মধ্য থেকে সংগ্রাহকরা নিজস্ব রুচি অনুযায়ী তাদের ব্যক্তিগত শিল্পসংগ্রহ সমৃদ্ধ করেন, রাষ্ট্রীয় অথবা বেসরকারি জাদুঘরসমূহও সংগ্রহ করে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তি ভাস্করদের কমিশন করেন পাবলিক ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য।
বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে এ-ধরনের মৌলিক ভাস্কর্যের চর্চার সংস্কৃতি শুরু হয় মুখ্যত স্বাধীনতার এক দশক আগে। তবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে তা’ নতুন করে প্রাণ পায়। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান ভারতের বরোদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্যে উচ্চতর পাঠ গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে ‘একাত্তর স্মরণে’ শিরোনামে বেশ কিছু ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা শেষে অলোক রায় সিরামিক মাধ্যমে রিলিফ ও মুক্ত ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করেন। পাশাপাশি দেশে শিক্ষিত ভাস্কররাও নানা ধরনের নিরীক্ষা শুরু করেন। চিত্রকলাসহ অন্যান্য মাধ্যমের বেশ কিছু শিল্পী ভাস্কর্যচর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে ১৯৭৬ সালে প্রথম জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী ও ১৯৮৩ সালে দ্বিতীয় জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভাস্কর্যের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ক্রমাগত নবীন শিল্পশিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। বিশ শতকের আশির দশকে ভাস্কর্য শিল্পীদের অনেকেই অন্যান্য দেশ থেকে ভাস্কর্যে উচ্চতর পাঠ গ্রহণ করতে শুরু করেন। জাতীয় ও এশীয় প্রদর্শনীগুলোতে প্রদর্শিত ভাস্কর্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। নব্বই দশকে এসে আমরা ভাস্করদের একক ও যৌথ প্রদর্শনীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখি।
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ভাস্কর্যকে সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণ করার সামাজিক প্রস্তুতি, ভাস্কর্যের আধুনিক নিরীক্ষাপ্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত হয়নি। ফলে একবিংশ শতাব্দীতে এসে যখন ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষা বিস্তৃতি পাচ্ছে এবং দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর প্রায় অর্ধশতাধিক ভাস্কর শিক্ষা সম্পন্ন করে বের হচ্ছেন তখনো ভাস্কর্যচর্চা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পেশায় পরিণত হয়নি। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে এদেশের প্রতিভাধর নবীন-প্রবীণ ভাস্করদের অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাস্কর্যের জন্য বহু সম্মান বয়ে আনলেও তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তেমনভাবে প্রচারিত হয়নি। বরং সৌন্দর্যবর্ধন ও বিভিন্ন স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণের নামে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, ঠিকাদারি পদ্ধতিতে মানহীন নির্মাণ ভাস্কর্য সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর প্রাক্কালে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে তখন অন্য সব ক্ষেত্রের মতো ভাস্কর্যের প্রকৃত মানসম্পন্ন বিকাশ ও বিস্তারও প্রত্যাশিত। সেজন্য শুধু উচ্চতর শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে ভাস্কর্যশিক্ষা অব্যাহত রাখলেই চলবে না বরং প্রতিভাবান নবীন-প্রবীণ ভাস্কররা যাতে দেশে-বিদেশে নিজেদের সৃজনকর্ম নির্বিঘেœ অব্যাহত রাখতে পারেন তার প্রকৃতি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। গত শতকের সত্তর দশকে শুরু হয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়া জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত কার্যক্রমে পরিণত করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় প্রদর্শনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই প্রদর্শনীর মানকে উন্নত করতে হবে। দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট গ্যালারিগুলোকে ভাস্কর্য প্রদর্শনী আয়োজনে আরও আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। জাতীয় জাদুঘর ও শিল্পকলা একাডেমিকে মানসম্পন্ন ভাস্কর্য সংগ্রহ করা ও নিয়মিত প্রদর্শনের কর্মসূচি নিতে হবে। গণপ্রাঙ্গণে ভাস্কর্য নির্মাণে ঠিকাদারি পদ্ধতি বিলোপ করতে হবে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যোগ্য ও প্রকৃত ভাস্করদের মানসম্পন্ন কাজ স্বয়ং ভাস্করের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করতে হবে। নগর কর্তৃপক্ষগুলো জাতীয়ভিত্তিক ‘ভাস্কর্য সিম্পোজিয়ামের’ মাধ্যমে মানসম্পন্ন ভাস্কর্য বাছাই ও নির্মাণের মাধ্যমে পার্ক, আইল্যান্ডগুলোকে উন্নত দেশগুলোর মতো নান্দনিকভাবে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন। নগরের বাইরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে ভাস্কর্য উদ্যান নির্মাণ একটি শক্তিশালী উদ্যোগ হতে পারে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্থানগুলোও ভাস্কর্য উদ্যান নির্মাণের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করে তোলা সম্ভব। এসব উদ্যোগ গৃহীত হলে দেশের প্রতিভাবান ভাস্কররা যেমন তাদের শিল্পচর্চায় উৎসাহিত হবেন তেমনি সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎকর্ষেও শিল্পমাধ্যম হিসেবে ভাস্কর্যের শক্তিশালী ভূমিকা নিশ্চিত হবে।
নব্বই দশকের শুরুতে কলকাতার বাংলাদেশের শিল্পকলার এক আলোচনায়, কবি ও শিল্পী পুর্ণেন্দু পত্রীর একটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন এদেশের শিল্পকলার খতিয়ান তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। শিল্পী হাশেম খানের বয়ান অনুযায়ী পত্রীর প্রশ্নটি ছিল মানব অবয়বের অনুপস্থিতি বিষয়ক। ‘কথোপকথন’ খ্যাত কবির খেদোক্তি যে, বাংলাদেশের শিল্পীরা বইয়ের নকশা ও অঙ্গসজ্জায় যেমনটা মানুষের দেহ আঁকেন তেমনটা চিত্রকলায় উঠে আসে না। উত্তরে হাসেম খান জানান যে, আমাদের দেশে নানান মাত্রার ছবির চর্চা আছে তার মধ্যে বিমূর্ত ছবির চর্চা একটি ধারা। এই উত্তর পত্রীকে খুশি না করলেও, প্রখ্যাত শিল্পী সুনিল দাসকে প্রাণিত করে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সুনিল দাস নিজে নানান উপায়ে চিত্রতলে মানব অবয়বকে হাজির করে ও অনুপস্থিত রেখে ছবি এঁকে গেছেন। এদেশের শিল্পকলার আদ্যোপান্ত বুঝতে ওপরের তর্কের প্রাসঙ্গিকতার দিকটি আরও খোলাসা করে বলা দরকার।
মূর্ত-বিমূর্ত দ্বৈততার মধ্য দিয়ে এদেশে শিল্পবিষয়ক আলোচনা বরাবরই শিল্পাঙ্গনে নানান মাত্রার চর্চার দিকটিকে অগ্রাহ্য করবার পথ তৈরি করে দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রগতিশীলতার যে লঘু অথচ মতাদর্শিক তাপে উদ্বুদ্ধ কিছু বুদ্ধির চর্চা আজও প্রচলিত আছে তার মধ্যে মানব মূর্তির প্রতি ইসলাম ধর্মের সন্দেহকে সাধারণ বৃত্তিবাদী মওলানার বয়ানের ভুল ব্যাখ্যার বিপরীতে দাঁড় করানোকে ভুল ব্যাখ্যার উদাহরণ বলে আখ্যা দেওয়া যায়। যেমন নবী ইব্রাহিমের প্রবর্তিত পথ, যে পথে আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা ও তার প্রেরিত পুরুষদের আকৃতি দানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে; তাকে কাঠমোল্লার বুদ্ধি দিয়েই মানুষ-প্রাণী আঁকা যাবে না এমন তর্ক বারবার উত্থাপন করা হয়। নবীকে পূজনীয় না করে তোলা, এমনকি অদৃশ্যকে দৃশ্যমান না করে তুলে যে তাকওয়াভিত্তিক জীবন তার অপব্যাখ্যার সূত্রে বাংলাদেশের শিল্পে মূর্ত-বিমূর্তের বিরোধ জিইয়ে রাখার শিল্পশিক্ষা যেমন পূর্ণাঙ্গ হয়নি, তেমন শিল্প বিষয়ে দার্শনিক আলোচনা তেমন এগোতে পারেনি।
বিমূর্ততা পন্থিদের পাশ্চাত্যমুখী শিল্পী হিসেবে চিহ্নিত করার যে সাধারণ প্রবণতা, তার মধ্যেও বিবেচনার দিকটি উহ্য থাকে। এর ফলে নানান মাত্রার অবয়বধর্মী শিল্পীদের এক কাতারে ফেলে দিয়ে বিচারের বাইরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটা আজও জারি আছে। এ কারণে জয়নুল আবেদিন কেন পাশ্চাত্যের বাস্তবানুগ রীতি শিক্ষা বারবার বাসনা পোষণ করলেন, এমনকি শিক্ষক মুকুল দে’র অনুরোধ অগ্রাহ্য করে কেন বিলাতি কলম শিক্ষা করে পরে নিজ পথ তৈরির করলেন, এর ওপর তেমন গুরুত্বপূর্ণ আলো পড়েনি। ময়মনসিংহের শিক্ষার্থী জয়নুল যখন তিরিশের দশকের শুরুতে শিল্পের পাঠ নিচ্ছেন, তখন প্রাচ্যকলা বলে একটি পদ্ধতি চালু হয়ে গেছে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন সেই ধারার মহীরুহের মতন। কিন্তু প্রাচ্যরীতির কোমলতার পাঠ না নিয়ে জয়নুল শিখে নিতে চাইলেন বাস্তবকে তার সব রুক্ষতাসহ আঁকবার পদ্ধতি। রেখার ঋজুতা তিনি অর্জন করলেন রেমব্রার মতো শিল্পী থেকে এবং রেখাকেই মুখ্য করে চিত্রতল থেকে রঙ ও আলোছায়া বিদায় করে দেওয়ার চাতুরীটি শিখলেন চৈনিক ধারার শিল্পী সু থে হং থেকে। এই সাধারণীকরণের পর জয়নুল বিষয়ে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের দুই মেরু একের আওতায় নিয়ে আসবার ক্ষমতা, পর সূত্রে তার আপন চিত্রভাষার যা আঙ্গিক তারই সাধনার নিমিত্তে ধরা দিল। প্রাচ্য-প্রতীচ্য বিষয়ক সাধারণীকৃত তর্কও বাংলাদেশের চিত্র, ভাস্কর্য ও বর্তমান সময়ের আন্তঃশৃঙ্খলার সূত্রে তৈরি স্থাপনা বা কনসেপচুয়াল উপস্থাপনার ক্ষেত্রে ডিসকোর্স তৈরিতে তেমন সাহায্য করে না। ‘দেশজ’ কথাটি এমন এক সামান্যতার জন্ম দিয়েছে যার মধ্যে যে কোনো প্রকার গ্রামীণ বিষয়ের রেফারেন্স বা উল্লেখ শিল্পের ভাষা তৈরিতে সাহায্য না করেও এতে তাৎপর্য দান করেছে ধরে নেওয়া হয়। এশীয় দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী, কিংবা চারুকলার জাতীয় প্রদর্শনীতে সরা চিত্রের বৃহৎ সংস্করণ কিংবা টেপা পুতুলের উপস্থাপনা এখন দর্শকের আনন্দ বাড়ায়, কিন্তু শিল্পের সৃষ্টিশীলতায় সাহায্য করছে না ধরে নেওয়া যায়। কামরুল হাসানের পর গ্রামীণ কলম ব্যবহার করে নতুনতর সৃষ্টির তেমন কোনো বিশেষ উদাহরণ চোখে পড়ে না। কামরুলই তার স্বভাবসুলভ সহজতায় আধুনিক শিল্পের আয়তনে গ্রামীণ শিল্পীর রেখা ও রঙ ব্যবহার করে নতুন চিত্রকল্প গড়ে তুলেতে পেরেছিলেন। এ অঞ্চলে কামরুল রাজনৈতিক চিত্রভাষারও প্রবর্তক। তার রাজনৈতিকতার সূচনা হয় ইয়াহিয়া খানের মুখাবয়ব আঁকার সূত্রে। যে মানব-জন্তু শিল্পী স্বাধীনতার বছরখানেক আগে আঁকা শুরু করেন, তার জৈবিক মাত্রা অবশেষে (সত্তর দশকের শুরুতে) এক প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিক রূপ পায়। এগুলো তার সমাজ বিশ্লেষণমূলক কাজ। স্বাধীনতার পর, নতুন বুর্জোয়া শ্রেণির নতুন মেকি সমাজকে শিল্পী প্রাণী অবয়বের পাশে মানব মূর্তি স্থাপন করে এক প্রকার বহুমাত্রিক ও বহুসংখ্যক মোটিভ-নির্ভর ভাসমান চিত্রকল্প তৈরি করেন। প্রথম দিককার এই ‘ক্রিটিক্যাল ইমেজ’ শিল্পী সাদা-কালো ছাপচিত্র মাধ্যমে করেন। একই প্রবণতার মধ্য দিয়ে কামরুল তার ১৯৭১ স্মরণে আঁকা ১৯৮৩ সালের ক্যানভাসগুলোতে মানবমূর্তির জঙ্গম এক ক্ষেত্র সৃষ্টি করেন। যদি বাংলাদেশে উচ্চরুচির সূত্রে দেখার সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে, যদি পদ বিমূর্ততার মধ্য দিয়ে শিল্প বিচারের কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটে থাকে, তা কামরুলের এই গোয়েরনিকাসুলভ কাজগুলোকে মূল্যায়ন না করার মধ্যে চিহ্নিত করা যায়।
বাংলাদেশে মানব অবয়বের নতুন মাত্রা যোগ করে যারা দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন তারা আশির দশকের কিছু তরুণ। এদের মধ্যে রুহুল আমিন কাজল, জিতেন্দ্র কুমার শর্মা, শিশির ভট্টাচার্য, নিসার হোসেন, ঢালী আল মামুন ও ওয়াকিলুর রহমান অন্যতম। গত দুই দশকে তাদের ভাষার বিবর্তন ঘটেছে। ওয়াকিলুর রহমান মানব অবয়ব ছেড়ে বিমূর্ত ধারার শিল্পী হয়ে উঠেছেন। কাজল ক্যানভাসের কাজের পাশাপাশি কাগজে এমনকি রাস্তায় তার শিল্পের বিস্তার ঘটিয়েছেন। শেষ চারজনের খ্যাতির সূচনা সময় শিল্পী দলের আবির্ভাব কালেই। এই শিল্পীদের অঙ্গীকার ছিল শিল্পে সমাজ বাস্তবতা, রাজনীতি ও বিশ্লেষণী চিন্তার প্রকাশ ঘটানো। পরবর্তী সময়ে তাদের নিজ নিজ চিত্রভাষায় ও নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নবতর মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তবে যে নারী শিল্পী ‘সময়ে’র সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নারী অবস্থান নিয়ে জোরালো বক্তব্য হাজির করেছিলেন, সেই দিলারা বেগম জলির কাজে ক্রমশই অবয়ব ও অবয়বহীন তার লীলা তার আন্তরমাধ্যম-নির্ভর শিল্পকে সমৃদ্ধতর করে তুলেছে। তার সাম্প্রতিকতম একক নারী ও জঠর এই দুয়ের সূত্রে যে স্থাপনা ও আলোকচিত্রে অসংখ্য ছিদ্র গড়ে তুলে আপন ওপরের অস্তিত্বর আকারায়ন ঘটিয়েছেন, এমন তুরীয় প্রকাশে মূর্তের সাথে বিমূর্ত একাত্মায় পরিণত।
নারী শিল্পীদের কাজে, এমনকি নারীভাব প্রকাশ করে এমন শিল্পীদের হাতে মূর্ত-বিমূর্তের সীমানা লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়। রোকেয়া সুলতানা এবং নাইমা হক, এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুজনই নারীর চোখে দুনিয়া দেখার দিকটি এমন নিজস্ব ভাষা ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে তুলেছেন যে, তাদের আপন ভাষারও নানান স্তর তৈরি হয়েছে তা পরখ করে দেখবার অবকাশ থাকে। বিশেষ করে রোকেয়ার মাতৃত্ব থেকে শুরু করে নারী প্রকৃতি ও বৃহত্তর প্রকৃতির ওপর মনোযোগ তাকে ক্রমশ মূর্ততা থেকে বিমূর্ততার দিকে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে নারী শিল্পীদের বিকাশ ও চিত্রভাষার প্রকৃতি বিষয়ক আলোচনায় আরও যারা জড়িত ছিলেন এবং এখনো আছেন তাদের কেউ কেউ জিজ্ঞাসু দৃষ্টির বদলে অপলক দৃষ্টিতে দেখবার জগৎ তৈরি করতে চেয়েছেন, ফরিদা জামান তাদেরই একজন।
দেখাকে দর্শনে পরিণত করতে পুরুষ শিল্পীরা সম্পূর্ণ বিমূর্ত চিত্রতল তৈরি করে আসছিলেন ষাটের দশক থেকেই। এরাই দ্বিতীয় প্রজন্মের আধুনিক শিল্পী যারা ‘পেইন্টার হিরো’ হিসেবে সমাজে যা চিত্রকলার জগতে আধুনিকতাকে একটি মাত্রায় সমাসীন রেখে দৃুিষ্ট এঁকে গেছেন। মোহাম্মদ কিবরিয়া, কাজী আব্দুল বাসেত এদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় ছিলেন যতদিন তারা বেঁচেছিলেন। উল্লেখ্য যে, কিবরিয়ার আজীবন সাধনার ফল যে প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত রঙ ও টেক্সচারের মধ্য দিয়ে গড়ে তোলা উচ্চ কোটির রুচি প্রকাশকারী বিমূর্ত চিত্রভাষাই এদেশের শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। ওর অন্য পক্ষ হিসেবেই অবয়ববাদীদের উত্থান ঘটে স্বাধীনতার ঠিক পর পর। নতুন সমাজ গড়ার বাসনালব্ধ যে রাজনৈতিক ভাবাদর্শ সমাজতন্ত্রকে আধেক ফ্যাশন ও আধেক বাস্তব হিসেবে গ্রহণ করে নিতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের অগ্রগামী অংশ দ্বিধাহীন ছিল তারই পরম্পরায় শাহাবুদ্দিনসহ নতুন প্রজন্মের মানবমূর্তি-নির্ভর চিত্রী ও ভাস্করদের চিহ্নিত করা যায়। আব্দুল্লাহ খালিদ ওই বৃত্তের না হয়েও এর কাছাকাছি অবস্থান থেকে গণপরিসরে তার ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ করেছিলেন।
সমাজ-সমালোচনাধর্মী চিত্রভাষা কামরুল হাসানের অবদান। অন্যদিকে শেখ মোহাম্মদ সুলতান বাংলাদেশের চিত্রকলায় ‘আদিম ও আদমকে একই সূত্রে গেঁথে’ ‘মৃত্তিকাপুষ্ট জীবনকে’ (ছফা ১৯৮৫) নতুন কল্পনার নিরিখে সমাজ গড়ার শিল্পী। সমাজ ও সমাজ মানসে সাম্যের খোদ ধারণাট জাগিয়ে তোলার মধ্যদিয়ে সুলতান মানব অবয়বে আদিম সমাজের সত্য ফিরিয়ে এনে নতুন সমাজ গড়ার বীজমন্ত্র গড়ে দিয়েছেন যেখানে কিষাণ-কিষাণীরা নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ। কামরুনের রাজনৈতিকতায় যদি শ্রেণির বিষয়টি মুখ্যতা পেয়ে থাকে, সুলতানের বৈপ্লবিকতায় ভূমির মালিকানার প্রশ্নটির সুরাহা করতে গ্রামীণ নায়কেরা হয়ে উঠলেন আদিশক্তির প্রতীক। স্বাধীন দেশে মানব অবয়বে ফিরে গিয়ে সমাজ ও চিত্রতলের মধ্যে নতুনতর যোগাযোগ গড়বার আয়োজনে এই দুই শিল্পী নতুন নিশানারও প্রতীক।
স্বাধীনতার আগের আধুনিক শিল্পের উত্থান পর্বের শিল্পী নভেরা আহমেদ আঙ্গিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সোপন গড়ে দিয়েছেন। তার প্রভাব কিছু কিছু নারীশিল্পীর ক্ষেত্রে ভাস্কর্যের জগতে প্রবেশের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। যে যৌথ অজ্ঞানের সূত্রে ষাটের দশকের পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশে বিমূর্তবাদীদের উত্থান লক্ষ করা গেছে, তার সূত্রে আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীরসহ অনেক প্রতিভা অবয়বহীন চিত্রতল গড়ার দিকে ঝুঁকলেন, তা থেকে তফাতে থেকে নভেরা অবয়বের ফর্মাল ভাঙাগড়ার মাধ্যমে তার চিত্রভাষার সুরাহা করলেন। স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে এই শিল্পীর দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে যে শূন্যতা তৈরি হলো তা পরবর্তী তিন দশকেও পূরণ হয়নি। নভেরার ভাষার প্রাথমিক ও পরবর্তী বিকাশ লক্ষ করলে হলফ করে বলা যায, তিনিও তার পরবর্তী নারীশিল্পীদের মতোই মূর্ত-বিমূর্তের বৈপরীত্য মেনে না নিয়ে দুই মেরুতেই সহজে গমন করবার সূত্রে আকারায়নের প্রশ্নের সুরাহা করেছেন।
শিল্পে কর্ম বা অর্থ উৎপাদন শিক্ষিত শ্রেণির আদর্শগত পক্ষপাতের ওপর নির্ভরশীল। আশির দশকের তরুণরা ধর্ম-সমাজ অপেক্ষা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের যে পথনির্দেশনা অনুসারে সামরিক শাসন ও ধর্মপন্থি রাজনৈতিক দলের অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন, তার মধ্যে দিয়েই বিমূর্ত বনাম মানব অবয়বপন্থি শিল্পের বয়ান পাকা ভিত পেল। নারী শিল্পীরাও অবয়বের এমনতর নতুন ব্যবহার সামনে নিয়ে এলেন যেন নারীর অবস্থানের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, যেন চিত্রকল্প প্রচলিত মত ও পথ থেকে সরে এসে নুতন দিকে মুখ ফেরাতে পারে। নাজলী লায়লা মনসুরের পর এই পথে আতিয়া ইসলাম এ্যানিসহ নিরুফার চামান এবং বর্তমান সময়ে বহুপ্রজ শিল্পী দিলারা বেগম জলি।
যে রাজনৈতিক ওজনের ভার শিল্পীরা বহন করবার সাহস দেখালেন, গড়ে তুললেন নতুনতর সমালোচনাধর্মী ইমেজ বা মূর্তি, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয়েছে। কিন্তু নব্বই দশকের প্রবণতায় যে মাধ্যমের মিশ্রতা একটা বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখল তা ভিন্ন এক শিল্পজ রাজনৈতিকতার সূত্রে জন্ম নিল। জিএস কবিরের ভূমিকা এখানে স্মরণযোগ্য।
এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের চারুকলার ইতিহাস হিসেবে যা আমাদের সামনে হাজির করা হয় তা মূলত প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। ইউরোপকেন্দ্রিক জ্ঞানের আলোকে আধুনিকতাবাদী ধারণার ওপর ভিত্তি করে এই ইতিহাস তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে ঔপনিবেশিক প্রভাব প্রবল। এর ফল হয়েছে এই যে, বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পধারাকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করা এবং উপযুক্ত স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সেসব শিল্পধারাকে বিকশিত করার অনুকূল পবিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
১৯৪৭ এর দেশভাগের পর বাংলাদেশের চারুকলার ইতিহাসে দুটি বিশিষ্ট/স্বতন্ত্র ধারার উদ্ভব ঘটেছিল। এর প্রথমটির কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক চারুকলার ধারা যেটি বিকশিত হয়েছে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত (১৯৪৮) আর্ট ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে (বর্তমানে যেটি চারুকলা অনুষদ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত)। কিন্তু প্রায় একই সময়ে, দেশভাগের পর পর ঢাকার এই শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে আরও কিছু শিল্পশৈলী/শিল্পধারার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল। এটাকে আমরা অপ্রাতিষ্ঠানিক ধারা বলতে পারি। এই অপ্রাতিষ্ঠানিক ধারার নেতৃত্ব দিয়েছেন পীতলরাম সুর, আর.কে. দাস, আলাউদ্দিন, আলী নুর, দাউদ উস্তাদ প্রমুখ শিল্পীরা। এইসব অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীদের মাধ্যমেই বিকশিত হয়েছে এদেশের সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং, রিকশা আর্ট, ট্রাক আর্ট ইত্যাদি। আর এগুলোর মধ্যে যেটি নিজস্ব শিল্পশৈলী, উপস্থাপন রীতি ও বিষয়বস্তুর স্বকীয়তায় ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে সুধীজনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সেটি হলো রিকশা আর্ট। এই লেখায় আমরা মূলত রিকশা আর্টের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কিছু আলোচনা করব।
২.
মূলত চাকা আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে তিন চাকার বাহন রিকশার সূত্রপাত হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ১৮৭০ সাল নাগাদ। অবিভক্ত বাংলায় রিকশার প্রচলন ঘটে কলকাতায় বিশ শতকের প্রথম ভাগে। কাছাকাছি সময়ে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডে রিকশার প্রচলন হয় প্রথমে ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে এবং পরে ঢাকায় (১৯৩৮)। তবে বাংলাদেশে প্রচলন ঘটে সাইকেল রিকশার, মানুষে টানা রিকশা নয়। বাহারি ও শৌখিন পরিবহন হিসেবে ঢাকায় রিকশার আগমন ঘটে এবং ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর ক্রমশ তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত রিকশা পেইন্টিংয়ের সূত্রপাত হয় এই সময় থেকেই। অর্থাৎ ঢাকাকেন্দ্রিক আধুনিক ধারার প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলার পাশাপাশি লোকয়াত শিল্পীদের মাধ্যমে রিকশাচিত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয় হতে থাকে। বাংলাদেশে রিকশা পেইন্টিংয়ের প্রবীণ ও বিখ্যাত শিল্পী যেমন আর. কে. দাশ, আলী নূর, দাউদ উস্তাদ, আলাউদ্দিনসহ অন্যরা পঞ্চাশ ও ষাটের দশক থেকেই রিকশা পেইন্টিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী রিকশা পেইন্টিংয়ের চাহিদা ছিল তখন অনেক বেশি। ছবি আঁকার আনন্দ, সেই সঙ্গে এই কাজের ক্রমবর্ধমান চাহিদা তাদের এই পেশায় যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেছে। এদের অনেকে আগের পেশা বা পৈতৃক পেশা ছেড়ে এই পেশায় যুক্ত হন। যেমন আর. কে. দাশের পৈতৃক পেশা ছিল চামড়ার কাজ। তিনি ও তার পুত্ররা এসেছেন রিকশা পেইন্টিংয়ের কাজে। লক্ষণীয়, চারুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিল্পীদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই এই বিশেষ শৈলীর উদ্ভব ও বিকাশে।
৩.
করণকৌশলের দিক থেকে রিকশার অঙ্গসজ্জাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এর একভাগে রয়েছে রেকসিন, প্লাস্টিক, আয়না, ঘণ্টা বা বাতিল সিডি ও অন্যান্য উপকরণে রিকশা অলংকরণ (টিন কেটে বিভিন্ন কারুকাজ করার উদাহরণও দেখা যায়) এবং অন্য দিকে রয়েছে রঙের সাহায্যে রিকশাকে চিত্রিত করার বিষয়টি। তবে একটি নতুন রিকশাকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে তোলায় রিকশা পেইন্টারদের বিশেষ কৃতিত্ব দিতেই হবে। রিকশা আর্টের মূল লক্ষ্য রিকশাকে সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয় করা। আর এজন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু নির্বাচন করা হয়, বিশেষত পেছনের প্যানেলে আঁকার জন্য। সাধারণত শিল্পীরা মহাজন এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ছবি এঁকে থাকেন।
গত সত্তর বছরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে রিকশা পেইন্টিং করা হয়েছে। যেমন, ষাটের দশকে রিকশা পেইন্টিং করা হতো মূলত শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র তারকাদের প্রতিকৃতিকে অবলম্বন করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে বিষয়বস্তু করে অনেক ছবি আঁকা হতো রিকশায়। আবার সত্তরের দশকে নতুন দেশের নতুন রাজধানী হিসেবে ঢাকা যখন বাড়তে শুরু করে তখন কাল্পনিক শহরের দৃশ্য আঁকা হতো রিকশায়। পাশাপাশি, সব সময়ই, গ্রামের জনজীবন, প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবিও আঁকা হতো, এখনো হয়। এছাড়াও বিভিন্ন স্টাইলের ফুল, পাখি ইত্যাদি তো আছেই।
বিভিন্ন মিথ বা ধর্মীয় কিংবদন্তিকে বিষয় করে রিকশায় ছবি আঁকতে দেখা যায়। যেমন, মুসলিম উপাখ্যানের দুলদুল, বোরাক কিংবা আরব্য রজনীর উপাখ্যানআলাদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ ও দৈত্য, রাজকন্যা, রাজপ্রাসাদ ইত্যাদি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কাদায় আটকে যাওয়া গরুর গাড়ির ছবিটি (‘সংগ্রাম’ নামে পরিচিত) রিকশাচিত্রীরা বিভিন্নভাবে এঁকেছেন। দূরবর্তী ভিনদেশি দৃশ্যও রিকশাচিত্রে দেখা যায়। যেমন, মরুভূমির ভেতর উট নিয়ে চলেছে দুই বেদুইন, কিংবা অচেনা কোনো সমুদ্র সৈকতে খেলা করছে কোনো বালক, জাপানের কোনো বাড়ি, লন্ডন ব্রিজ, আইফেল টাওয়ার, টাইটানিক জাহাজ ইত্যাদি। স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, শহীদ মিনার ইত্যাদি স্থাপত্য রিকশাচিত্রের বিষয় হয়েছে বহুবার। মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন তাজমহল রিকশা পেইন্টিংয়ের আরেকটি জনপ্রিয় বিষয়। তাজমহল এঁকেছেন বিভিন্ন শিল্পী নিজের নিজের মতো করে বহুবার। ইদানীং রিকশাচিত্রীদের আরেকটি প্রিয় বিষয় যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু)। এছাড়া ডাইনোসরের সঙ্গে যুদ্ধরত লুঙ্গিপড়া খালি গায়ের বাঙালি রিকশাচিত্রীদের অপূর্ব কল্পনাশক্তির নিদর্শন।
তবে এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো, সত্তরের দশকের মাঝামাঝি, রিকশায় মানুষ আঁকার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে রিকশা পেইন্টাররা মানুষের পরিবর্তে পশুপাখির ছবি আঁকতে শুরু করেন। যেমন, ট্রাফিক কন্ট্রোল করছে একটা শেয়াল, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একটা বাঘ, পাশে স্কুল বালকের মতো ব্যাগ কাঁধে খরগোশ ছানা চলেছে স্কুলে। শহরের অতি পরিচিত দৃশ্যশুধু কোনো মানুষ নেই, মানুষের স্থান দখল করেছে বিভিন্ন পশুপাখি। অনেকটা প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে আঁঁকা হলেও এই ধারার কাজগুলো বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। এই ধারার কাজগুলোর ভেতর দিয়ে তৎকালীন সমাজ বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়েছে বলেও মনে করেছেন কেউ কেউ।
রিকশা পেইন্টিংয়ের কাজের ধরনের মধ্যে কখনো কখনো বাংলার লোকায়ত ধারার প্রভাব লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে রেখার ব্যবহারে এই প্রভাব অধিক চোখে পড়ে। আবার বিভিন্ন ক্যালেন্ডার বা ছাপা ছবিকে মূল হিসেবে ব্যবহার করে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়েও রিকশা পেইন্টাররা ছবি এঁকে থাকেন। তবে রিকশা পেইন্টংয়ে, বিশেষ করে রঙ নির্বাচনে, সিনেমার ব্যানার চিত্রীদের কাজে প্রভাব পড়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়।
৪.
তবে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, শিল্পধারা হিসেবে রিকশা আর্ট ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু। ঢাকায় বর্তমানে (২০২৩) আনুমানিক ১০-১২ জন সক্রিয় রিকশাচিত্রী আছেন। ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, খুলনা, পাবনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ইত্যাদি শহরে আরও কিছু রিকশাচিত্রী কমবেশি কাজ করেন। হাতে আঁকা প্লেটের বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল প্রিন্টের ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বিশেষ রীতির চিত্রকলা আজ হুমকির সম্মুখীন। পেশাগত দিক দিয়ে হুমকির সম্মুখীন রিকশা পেইন্টাররা। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ রিকশাচিত্রী পেশা পরিবর্তন করেছেন বা বিকল্প কাজ খুঁজে নিয়েছেন। ঢাকায় যারা এখনো সক্রিয়, তারা মূলত বিদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। বিদেশিদের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামীণ দৃশ্য যেমন ধান ভানা, উঠোনে বিশ্রাম নেওয়া, নদীতীরে সূর্যাস্ত ইত্যাদির পাশাপাশি সিনেমার পোস্টারের অনুকরণে আঁকা ছবিতে ক্রেতাদের চেহারার আদল ফুটিয়ে তোলা হয় এসব ছবিতে। এগুলো বিদেশিরা বাংলাদেশের স্মারক হিসেবে কিনে নিয়ে যান। আবার অনেক ক্রেতা পারিবারিক ছবি, বিয়ের ছবি, সন্তানদের বা বন্ধুদের ছবি রিকশা পেইন্টিংয়ের ঢঙে আঁকিয়ে নিতে পছন্দ করেন। তারপরও অনেক শিল্পী চেষ্টা করেন তাদের কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে পছন্দসই বিষয়বস্তুর ছবি আঁকতে। বিদেশিদের শখ মেটানো গেলেও, তাতে রিকশাচিত্রীদের জীবনে, দু’য়েকটি বিরল ব্যতিক্রম বাদে, বিশেষ কোনো হেরফের হয়েছেএমনটা মনে হয় না।
৫.
অন্যদিকে, রিকশাচিত্র নিয়ে নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। দেশের বাইরে রিকশা আর্টের সমাদর লক্ষণীয়। যেমন, ১৯৮৮ সালে লন্ডনে মিউজিয়াম অব ম্যানকাইন্ডে (বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের অন্তর্ভুক্ত) শিরিন আকবরের কিউরেটিংয়ে ঢাকার রিকশা পেইন্টিং নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল ‘Traffic Art: rickshaw paintings from Bangladesh’। ব্রিটিশ মিউজিয়ামেও বাংলাদেশের সুসজ্জিত ও চিত্রিত রিকশা সংগৃহীত আছে। জাপানের ফুকুয়াকা এশিয়ান আর্ট মিউজিয়ামেও বাংলাদেশের রিকশা পেইন্টিং নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে এবং এই মিউজিয়ামে রিকশা পেইন্টিংয়ের একটা বড় সংগ্রহ আছে। সম্প্রতি (২০১৩) জাপানের তাকামাৎসু শহরে একটি আর্ট ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের রিকশাচিত্র বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছে। নেপালেও হয়েছে বাংলাদেশের রিকশাচিত্রের প্রদর্শনী। তবে বাংলাদেশে রিকশা পেইন্টিংয়ের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনীটি হয়েছে ১৯৯৯ সালে ঢাকায় অলিয়ঁস ফ্রঁসেজে। এই প্রদর্শনীতে পাঁচশ জন রিকশা পেইন্টার এবং তিরাশি জন বেবিট্যাক্সি (দুই স্ট্রোক বিশিষ্ট অটো রিকশা) পেইন্টারের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল। সম্প্রতি জার্মানির ক্যাসল শহরে অনুষ্ঠিত ‘ডকুমেন্টা ১৫’-এ বাংলাদেশের আরও অনেক শিল্পীর সঙ্গে অংশ নিয়েছেন রিকশাচিত্রী তপন দাস ও সিনেমা ব্যানার শিল্পী আবদুর রব খান। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার মিউজয়ামে রিকশাচিত্রের কর্মশালা করেছেন আহমেদ হোসেন। এমনকি, কিছুদিন আগে, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্পী ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রিকশা আর্ট কর্মশালা যেখানে নতুন শিল্প-শিক্ষার্থীরা সরাসরি রিকশাচিত্রীদের কাছে হাতেকলমে শিখতে পেরেছেন বিভিন্ন কলাকৌশল এবং এই শিল্পের নিজস্ব নান্দনিকতা। এছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট, যথাশিল্প রিকশাচিত্র নিয়ে নানা ধরনের কাজ করে থাকে।
রিকশা আর্ট বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পশৈলী। আমরা যদি এখনই সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো এর স্থান হবে শুধু জাদুঘরে। আমরা কি সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব? আমার ধারণা, এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে রিকশাচিত্র বহমানতা বজায় রেখে স্বতন্ত্র শিল্পশৈলী হিসেবে টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।