পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতেকাফ। এই মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যেকোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজনও ইতেকাফ না করলে সবার সুন্নত পরিত্যাগের গুনাহ হবে। -(দুররুল মুখতার) ইতেকাফের মাধ্যমে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে নিয়ম-কানুন যথার্থ অনুসরণ না করার কারণে অনেকেই ইতেকাফের পুরোপুরি ফায়দা অর্জন করতে পারেন না। এজন্য যারা দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য তার ঘর মসজিদে এসে অবস্থান নিয়েছেন তাদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে মসজিদে অবস্থান করা থেকে নিয়ে শাওয়ালের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত পুরোটা সময়ই ইতেকাফের অন্তর্ভুক্ত। ইতেকাফকারী বা মুতাকিফ এই সময়টুকুতে ইচ্ছে করলেই নিজের মতো চলতে পারবেন না। ইতেকাফের যে বিধান ও নীতিমালা আছে সে অনুযায়ীই তাকে চলতে হবে। ইতেকাফের পুরো সময়টা ইবাদতের মধ্যে গণ্য। কেউ যদি কোনো ইবাদত না করে চুপ হয়ে বসেও থাকেন তবু তিনি সওয়াব পেতে থাকবেন। তবে প্রত্যেকের উচিত এ সময়টুকু সুবর্ণ সুযোগ মনে করে ইবাদতে মশগুল থাকা। মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা ইতেকাফকারীর প্রধান দায়িত্ব। প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ছাড়া সাথীদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠা যাবে না। অধিক ঘুম যদিও ইতেকাফের জন্য ক্ষতিকারক নয় তবু ইবাদতে বিঘœ ঘটার কারণে ঘুমিয়ে বেশি সময় নষ্ট করা উচিত নয়। জাগতিক কোনো বিষয়ে ভাবনায় ডুবে থাকাও সমীচীন নয়। সব সময় আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকার চেষ্টা করতে হবে।
মুতাকিফের করণীয় হলো ইতেকাফ অবস্থায় বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। যেমন : নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, বিভিন্ন ধরনের তাসবিহ, তাওবা, ইস্তেগফার, নবীর প্রতি দরুদ পাঠ ও দোয়া প্রভৃতি। ধর্মীয় পুস্তকাদি পাঠ ও এর তালিমও ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতেকাফের পুরো সময়টা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাটাতেন। নবীজি ইতেকাফের সময় মসজিদে তাঁবু দিয়ে আড়াল তৈরি করতেন। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রাসুল (সা.) তাঁবু স্থাপনের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তা মসজিদে স্থাপন করা হলো। তিনি তাতে অবস্থান নিলেন এবং মানুষ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে আল্লাহতে নিমজ্জিত হলেন এবং আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভে নিবিষ্ট হলেন। একবার তিনি তুর্কি তাঁবুতে ইতেকাফ করেন এবং তার দরজায় মাদুর টানিয়ে দেন। -(সহিহ মুসলিম)
ইতেকাফের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি। কেননা হাদিসের ভাষ্য মতে, শবেকদর রমজানের শেষ দশকেই হয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) রমজান মাসের প্রথম দশকে ইতেকাফ করেন। অতঃপর দ্বিতীয় দশকেও ইতেকাফ করেন। এরপর তুর্কি তাঁবু থেকে মাথা মোবারক বের করে নবীজি বললেন, আমি কেবল কদরের তালাশেই প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে ইতেকাফ করেছিলাম। অতঃপর আমাকে বলা হলো, সেটা রমজানের শেষ দশকে। সুতরাং যে কেউ আমার সঙ্গে ইতেকাফ করে, সে যেন শেষ দশকে করে। ওই রাত (শবেকদর) আমাকে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু আমি তা ভুলে গিয়েছি। তবে তার আলামত এই যে, আমি আমাকে ওই রাতের সকালে পানি ও কাদামাটির মধ্যে সেজদা করতে দেখেছি। কাজেই তোমরা শবেকদরকে রমজানের শেষ দশকে তালাশ করো। -(সহিহ বুখারি)
লেখক : আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদ