সংযম, ধৈর্য ও সহনশীলতার মাস রমজান। এ মাসে মুমিন বান্দারা সংযম ও ধৈর্যের উত্তম অনুশীলন করে থাকে। মহান আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য মুমিন পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকে। তাই মহান আল্লাহও এ মাসে অজস্র ধারায় রহমত ও বরকত বর্ষণ করেন মুমিনদের প্রতি। এটি এমন মাস, যে মাসে মহান আল্লাহ মানব জাতির হেদায়াত এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং হক-বাতিলের পার্থক্যকারী।’ -সুরা বাকারা ১৮৫
রমজান মাসেই হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফা অবতীর্ণ হয়েছে। হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাজিল হয়েছে। হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর জাবুর নাজিল হয়েছে এবং হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল নাজিল হয়েছে। -(তাফসিরে তবারি ২৪/৩৭৭) হাদিসে এ মাসকে বরকতময় মাস বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে রমজান এসেছে, যা বরকতময় মাস। এ মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ -নাসায়ি ২০৮৯
আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের বরকতে জান্নাতের দরজা খুলে দেন। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন। দুষ্টু জিনদের আটকে রাখেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাহান্নামের কোনো দরজা খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জান্নাতের কোনো দরজা বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণকামী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণ প্রত্যাশী (গুনাহের ইচ্ছাকারী)! ক্ষান্ত হও। আর প্রতি রাতে আল্লাহতায়ালা অনেক জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করেন।’ -তিরমিজি ৬৮২
রমজান মাসে এমন একটি বরকতময় রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে রাতে জিবরাইল (আ.) ও অন্য ফেরেশতারা শান্তি ও রহমত নিয়ে আগমন করেন। যে শান্তি ও রহমত সুবহে সাদিক পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়। -(সহিহ বুখারি ২০২০)
রমজানের পুরো মাসেই রয়েছে বরকতের নানা দিক। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজানের প্রথম দশ দিন রহমতের। মাঝের দশদিন মাগফিরাতের। শেষের দশদিন নাজাতের। রমজানের প্রথম দিনে আল্লাহতায়ালা ইবাদতকে নিরবচ্ছিন্ন রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেন। অর্থাৎ রমজানের প্রতিটি ইবাদতের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা বিশেষ রহমত ও বরকত দান করেন। -সহিহ ইবনে খুজায়মা ১৮৮৭
বিশিষ্ট সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ -(সহিহ বুখারি ৩৮) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাসে কোনো নফল আদায় করলে ফরজ আদায় করার সমান সওয়াব হয়। আর কোনো একটি ফরজ আদায় করলে ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব হয়।’ -উমদাতুল কারি ১০/৩৮৩
রমজান মাসের বিশেষ একটি বরকত রয়েছে সাহরিতে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে।’ -(সহিহ বুখারি ১৯২৩)
রোজার বরকতে আল্লাহতায়ালা রোজাদারের দোয়া ফেরত দেন না। হাদিসে এসেছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। এক. রোজাদার যখন ইফতার করে। দুই. ন্যায়বিচারক বাদশা। তিন. মজলুমের দোয়া। -(তিরমিজি ২৫২৫) রমজানের অন্যতম বরকতময় ইবাদত হলো, ওমরাহ আদায় করা। এ মাসে ওমরাহ আদায় করলে হজের সমান সওয়াব হয়। -(সহিহ বুখারি ১৭৮২) রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ রোজাদারকে মাফ করে দেন। রমজান মাসে আমলের প্রতিদান আল্লাহ বেহিসাব বৃদ্ধি করে দেন, আল্লাহ নিজে রমজানের রোজার প্রতিদান দেবেন। হাদিসে এসেছে, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক আমলের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত দেওয়া হয়। তবে রোজা ছাড়া। কারণ রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। সে আমার জন্য পানাহার ও স্ত্রী সহবাস পরিহার করেছে।’ -সহিহ বুখারি ৭৪৯২
এভাবেই রমজান জুড়ে রহমত ও বরকতের বারিধারা বর্ষিত হতে থাকে। তবে এ মাসের বরকত পেতে চাইলে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজান মাসের তাৎপর্য অনুধাবন করে আমল করার তওফিক দান করুন। যেন আমরা রমজানের অফুরান বরকত দ্বারা পরকালের জীবন সাজাতে পারি।