‘পূর্বাচলের খুব নিকটেই সহজ কিস্তিতে জমি কিনুন। আমরাই দিয়ে থাকি কমমূল্যে নির্ভেজাল জমি’Ñ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে ওয়েলকেয়ার গ্রীন সিটির এমন চটকদার বিজ্ঞাপন চোখে পড়বে সবারই। বিজ্ঞাপন দেখে যে কারোই ইচ্ছে হতে পারে এক টুকরো জমি কেনার। অনেকে ইতিমধ্যে জমি কেনার জন্য কষ্টার্জিত সঞ্চয় তুলে দিয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলার ইছাখালী এলাকায় গড়ে ওঠা ওয়েলকেয়ার গ্রুপের ওয়েলকেয়ার গ্রীন সিটি কর্র্তৃপক্ষের হাতে। কিন্তু পরে তারা জানতে পারেন জমির মালিক ওয়েলকেয়ার গ্রীন সিটি নয়। তারা কোনো জমি না কিনেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লাগিয়েছে নিজেদের সাইনবোর্ড। বালুও ভরাট করেছে শতবিঘার বেশি জমিতে। জমির মালিকদের অভিযোগ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ওয়েলকেয়ার গ্রীন সিটি তাদের জমি নিয়ে অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
রাজধানীর অদূরে আধুনিক শহরখ্যাত পূর্বাচল উপশহরের পাশে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ওয়েলকেয়ার গ্রীন সিটি নামে একটি আবাসন প্রকল্প। এ আবাসন প্রকল্পটির চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মিঠু নামে একজন। প্রকল্পটি দেখাশোনা করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক নামে এক প্রভাবশালী। তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ওয়েলকেয়ার গ্রীন সিটি আবাসন প্রকল্পের হয়ে ইছাখালী কৃষিজমিতে বালু ভরাট করেন। এ সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে জমি না কিনেই বালু ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। যাতে করে কৃষকরা বাধ্য হয়ে কমমূল্যে তাদের জমি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। ওয়েলকেয়ারের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে স্থানীয় কৃষকরা অসহায়। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পান না। যদি কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা চালান তাহলে তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার পাশাপাশি মারধরও করা হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শতাধিক কৃষকের প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে বালু ভরাট করে ওয়েলকেয়ার আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে কৃষকরা ওইসব জমিতে চাষাবাদ করতেন।
ইছাখালী এলাকার মাঝিনা মৌজায় শাহীনের এসএ ৯৩৬ দাগে ৩৯ শতাংশ জমি, শাহআলমের আরএস ১০৩৬ দাগে ২০ শতাংশ, শফিকুল ইসলামের আরএস ১০৪৮ দাগে ৯ শতাংশ, আমির হোসেনের ২৩ শতাংশ, লুৎফর গংদের ৩ বিঘা, আসাদুলের ১০ শতাংশ, বাদশা মিয়ার ৪৫ শতাংশ, বরুনা এলাকার নুরু মিয়ার ১০ শতাংশ, কুদ্দুস মিয়ার ১৮ শতাংশ, মনির হোসেনের ৪৮ শতাংশ জমি, সিরাজের ১২ শতাংশ, আমিনুল ব্যাপারীর ১৫ শতাংশ, সাত্তার, গুলজার, আলাল মিয়া, মোহাম্মদ, আলামিন, শাহীন, মাহামুদুল্লাহর কয়েক বিঘা জমিতে ওয়েলকেয়ার আবাসন প্রকল্প জোরপূর্বক বালু ভরাট করে কৃষকদের কমমূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। যারা জমি রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে প্রতিবাদ করে তাদেরই হতে হয় হামলা-মামলার শিকার।
শাহীন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার ৩৯ শতাংশ জমি ওয়েলকেয়ার না কিনেই বালু ভরাট করে ফেলেছে। আমরা গত ২২ মার্চ প্রতিবাদ করতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হলে ওয়েলকেয়ার নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা ফারুক মেম্বারের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
জানা গেছে, গত ২২ মার্চ দুপুরে জুমার নামাজের পর স্থানীয় ভুক্তভোগীরা ইছাখালী এলাকায় ওয়েলকেয়ার আবাসন প্রকল্পের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন। বিষয়টি ওয়েলকেয়ার কর্র্তৃপক্ষ জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ওমর ফারুকের নেতৃত্বে মানববন্ধনে অতর্কিত হামলা চালায়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা বাঁচার জন্য মসজিদে অবস্থান নিলেও সন্ত্রাসী হামলা থেকে রেহাই পাননি। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় ফারুক মেম্বারসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ হামলার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শফিকুল নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার ৯ শতাংশ জমি ওয়েলকেয়ার বালুর নিচে পড়ে আছে। বর্তমানে এখানে জমির কাঠা বেশি হলেও তুলনামূলক কম দাম বলায় আমি তাদের কাছে বিক্রি করছি না। এসব কারণে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে।’
কৃষক কেরামত আলী বলেন, ‘এই বিলে আগে ধান লাগাইতাম। এই ধান দিয়া সারা বছর সংসার চালাইয়াও বাড়তি ধান বেইচা দিতে পারতাম। অহন এই বিলে ওয়েলকেয়ার সিটির আহনের পর থেইকা আমরা আমাগো জমি সব বালু দিয়া ভরাট কইরা ফালাইতাছে। আমাগো ফারুক মেম্বাররেও তারা লইয়া লইসে হেগো লগে। আমরা কিছু কইতে গেলে ফারুক মেম্বার তার দলবল লইয়া আমাগো মারতে আহে।’
এ ব্যাপারে ওয়েলকেয়ার আবাসন প্রকল্পের সহকারী ম্যানেজার মিজান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা কারও জমিতে বালু ভরাট করিনি। হামলার ঘটনায় আমাদের কোনো লোক গ্রেপ্তার হয়নি।’
আবাসন প্রকল্পটির চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কারও জমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাট করিনি।’