মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ভোটের আগে ভারতে দ্বীপ রাজনীতি

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৫ এএম

ভারতের সর্বদক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু হঠাৎই আলোচনায়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যটিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রায় ৭৫ বছরের পুরনো এক বিতর্ককে সামনে এনেছে। বিতর্কের কেন্দ্রে ‘কচ্চথিবু’ নামের ১.৯ বর্গকিলোমিটারের এক দ্বীপ যা ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অবস্থিত। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূল থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপটি শ্রীলঙ্কাকে হস্তান্তর করেন জওহরলাল নেহরু যা পরবর্তী সময়ে নেহরুকন্যা ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি মাধ্যমে চূড়ান্ত বিধিবদ্ধ করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করছেন, কংগ্রেস দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছে। তবে ভোটের আগে কংগ্রেসের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর শাসক দল দ্রাবিড় মুনেত্র কাজাম (ডিএমকে) বিজেপি নেতাদের এই অবস্থানকে রাজনৈতিক অভিসন্ধি হিসেবে দেখছে।

সম্প্রতি তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে অন্নামালাই ভারত সরকারের তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে কচ্চথিবু দ্বীপ সম্পর্কে প্রতিবেদন জোগাড় করেন। এর ভিত্তিতে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন, ‘কচ্চথিবু দ্বীপ নিয়ে আরটিআই প্রতিবেদন খুবই চমকপ্রদ। এটি আমাদের চোখ খুলে দিচ্ছে। এখান থেকে পরিষ্কার, কংগ্রেস কেমন নিষ্ঠুরভাবে ওই দ্বীপ শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিয়েছিল।’

জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতিতে এমকে স্ট্যালিনের ডিএমকে এবং কংগ্রেস পরস্পরের মিত্র। তামিল রাজনীতিতে স্ট্যালিনের বাবা এম করুনানিধির অবস্থান ছিল শক্ত। কচ্চথিবু দ্বীপ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের পাশাপাশি ডিএমকে-কেও পরিবারতন্ত্রের অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘কংগ্রেস এবং ডিএমকে শুধু নিজেদের পরিবারের কথা ভাবে। অন্য কিছু নিয়ে পরোয়ো করে না। কচ্চথিবু দ্বীপ নিয়ে তাদের উদাসীনতা ভারতের দরিদ্র মৎস্যজীবীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীদের কথা তুলে মোদি কার্যত রাজনৈতিক ‘ফায়দা’ হাসিলের কৌশল প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে রাজ্যটিতে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চাইছে বিজেপি। কারণ দেশব্যাপী যখন মোদি আর বিজেপির জোয়ার; তখনো তামিলনাড়ুতে জায়গা করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের ভাষ্য এ রকম এই ঘটনা ‘মৎস্যজীবীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ জেগে ওঠা প্রেম। তামিলনাড়ু দুর্যোগে ভুগলেও এক কানাকাড়ি দেয়নি বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার।’   

গত কয়েক দশক শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের মধ্যে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল কচ্চথিবু দ্বীপের অধিকার। প্রায়ই দুই দেশের মৎস্যজীবীদের মধ্যে এই দ্বীপের অধিকার নিয়ে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। অনেক ভারতীয় মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন সময় লঙ্কান সরকার গ্রেপ্তারও করেছে।  মোদি মূলত সেই ক্ষোভকে পুঁজি করতে চেয়েছেন। কচ্চথিবু দ্বীপটি একটি ছোট এবং নির্জন দ্বীপ। এখানে কোনো স্থায়ী ঘরবাড়ি নেই। এর আশপাশের মাছ ধরার অধিকার নিয়ে দুই দেশের মৎস্যজীবীদের মধ্যে মতবিরোধ অনেক দিনের। ব্রিটিশ শাসনকালে কচ্চথিবু ছিল তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধীনে। ১৯২০ সাল থেকেই এই দ্বীপ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এই দ্বীপ তামিলনাড়ুর অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ভারতের কাছে এই দ্বীপের দাবি জানায়। বন্ধুত্ব বজায় রাখতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মৌখিকভাবে শ্রীলঙ্কাকে কচ্চথিবু হস্তান্তর করেন। তবে ভারতের জেলেরা যাতে মাছ ধরতে পারে সেই শর্ত বেঁধে দেন।

১৯৭৪ সালে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক কচ্চথিবুর অধিকার চান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার কাছে। বন্দরনায়েকের কথা মেনে নিয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সারেন নেহরুকন্যা। কিন্তু বন্দরনায়েক-পরবর্তী লঙ্কান সরকার কচ্চথিবু দ্বীপে এবং এর আশপাশে ভারতীয়দের প্রবেশ আটকে দেয়।

এ নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের বাগবিত-া শুরু হয়েছে। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-কংগ্রেসের মৈত্রীকে একসুতোয় রেখে আক্রমণে নেমেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত