মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ড. ইউনূস বললেন

আমার ওপর বালা মুসিবত দেশের ওপরেও

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৩ এএম

দেশ বালা-মুসিবতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এমন মন্তব্য করে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এখন রমজানের দিন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, বালা-মুসিবত থেকে আমরা বাঁচি। আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত। আমার ওপর ব্যক্তিগত বালা-মুসিবত, সহকর্মীদের ওপর এবং দেশের ওপরেও। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা দোয়া করি।’

গতকাল মঙ্গলবার গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।

এ মামলায় ইউনূসসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেন অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এই মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৪-এ বদলি করা হয়েছে। বিশেষ আদালতে অভিযোগ গঠনসংক্রান্ত শুনানির জন্য আগামী ২ মে দিন ধার্য করেছে আদালত।

ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

এ মামলায় গত ৩ মার্চ আত্মসমর্পণ করে জামিন পান ড. ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ৭ জন। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৩০ মে ড. ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানটির ১২ জনের নামে মামলা করে দুদক। এ মামলার অভিযোগপত্রে অনুমোদন দেওয়ার পর গত ২৯ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

মামলার অপর আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এসএম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।

আদালত থেকে বেরিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামনে ঈদ আসছে, খুশির দিন। আমরা যেন সত্যি সত্যি খুশির ঈদ উদযাপন করতে পারি। তার সঙ্গে পহেলা বৈশাখ। আরও খুশি, সবকিছু একসঙ্গে। এর মধ্যে বালা-মুসিবত থেকে কীভাবে উদ্ধার পাব সবাই মিলে চিন্তা-ভাবনা করি। এককভাবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি বালা-মুসিবতে সমষ্টিগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত। কাজেই এগুলো অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই, রেহাই নেই। মানুষের রেহাই পাওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে।’

বালা-মুসিবতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বালা-মুসিবত হচ্ছে মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, থাকতে চায়, সেভাবে থাকতে পারছে না। আইনের শাসন বলে যে জিনিস, সেটা আমরা পাচ্ছি না কোথাও।’

সবাই মিলে এ দেশ, এ দেশের অংশীদার এমন মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমার অনুরোধ, মাহে রমজান মাসে নিজেদের দিকে তাকাই, নিজ নিজ ভূমিকা পালন করি। আমরা যেটা করতে চাচ্ছিলাম, সেটা করতে পারছি কি না। না করতে পারলে কীভাবে আমরা প্রতিবাদ জানাব, কীভাবে কথাগুলো শোনাতে পারব, শোনানোর পথ আমরা বের করব। পথ আমাদের বের করতেই হবে। তা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা নিজের মনে কাজ করে যাই, করে যাচ্ছিলাম। কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে কাজ করি না। কতগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করি, সত্য নিয়ে কাজ করি। দেশ-বিদেশের মানুষ বিশ্বাস করছে, যে কারণে তারা উৎসাহিত। মনে হয়েছে এটা মানুষের মঙ্গলের জন্য। সে জন্য দেশ-বিদেশের নেতারা এটা জানতে চান, বুঝতে চান। নিজ দেশে প্রয়োগ করতে চান। এ জন্য নানা দেশে যাই, যেতে হয়। নিজের ফুর্তির জন্য যাওয়া তো না, এটা তাদের নেহাত আগ্রহে।’

ড. ইউনূস বলেন, আমার মাঝে মাঝে দুঃখ হয়, সারা দুনিয়া বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে চায়। আমাদের গৌরববোধ করতে হয়। তা না করে আমরা এমন কাজ করছি আমরা যেন পাপের কাজ করে ফেলেছি। এমন অনুভূতি হওয়ার তো কোনো কারণ ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছি, সারা দুনিয়া অগ্রসর হচ্ছে, তাতে দুনিয়া সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে, বিনষ্ট হয়ে যাবে। সেটা থেকে উদ্ধারের একটা রাস্তা সৃষ্টি করেছি। সেটা নিয়ে মানুষের আগ্রহ। তারা বিশ্বাস করছে, এ রাস্তায় করলে সারা দুনিয়া উদ্ধার পাবে। তবে আমরা পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি।’

এর আগে গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাস করে কারাদন্ড ও অর্থদন্ডাদেশ দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। পরে ২৮ জানুয়ারি এ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে ওই দিন জামিন নেন তিনি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত