চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদ আতিথেয়তা দেবে ম্যানচেস্টার সিটিকে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় মৌসুম মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রিয়াল ও ম্যানসিটি। গেল মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সিটি সেমিফাইনালে হারিয়েছিল রিয়ালকে। তার আগের মৌসুমেও সেমিতে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুটি ক্লাব। সেবার রিয়াল হারিয়েছিল সিটিকে।
গেল দুই মৌসুমের দেখায় রিয়ালের মাঠ বার্নাব্যুতে জয় পায়নি ম্যানচেস্টার সিটি। গেল মৌসুমে বার্নাব্যুতে ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। এর আগের মৌসুমে রিয়াল ৩-১ গোলে হারিয়েছিল সিটিকে। রিয়ালের মাঠে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচবার খেলে মাত্র একবার জয় পেয়েছে ম্যানসিটি। তাই বলাই যায় আজ বার্নাব্যুতে সিটির কঠিন পরীক্ষা।
চলতি মৌসুমে স্প্যানিশ লিগ জয়ের পথে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। ৩০ ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছে তারা। সিটির লিগ জয়ের সম্ভাবনাও আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে এই ম্যাচের আগে প্রস্তুতিতে বেশি পেয়েছে রিয়াল। তারা সবশেষ ম্যাচ খেলে ৩১ মার্চ লা লিগায়। সেই ম্যাচে রিয়াল ২-০ গোলে হারিয়েছিল বিলবাওকে। আর সিটি সবশেষ ম্যাচ খেলেছে গেল শনিবার। ক্রিস্টাল প্যালেসের মাঠে গোল হজম করেও শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে ম্যাচ জিতেছে সিটি।
প্রস্তুতিতে বেশি সময় পাওয়ার বিষয়টি সামনে এনে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতির জন্য ভালো সময় পেয়েছি। আমি আত্মবিশ্বাসী আমরা কাল (মঙ্গলবার) ভালো কিছু করব।’ রিয়ালে চারজন খেলোয়াড় আছেন, যারা টুর্নামেন্টে আরেকটি হলুদ কার্ড দেখলে নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন। তবে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভাবছেন না আনচেলত্তি। তিনি বলেন, ‘চারজন খেলোয়াড় নিষেধাজ্ঞার শঙ্কায় আছেন। আমরা তা নিয়ে চিন্তা করছি না। যদি তারা হলুদ কার্ড দেখে কোনো সমস্যা নেই। তাদের জায়গায় দ্বিতীয় লেগে অন্য কেউ খেলবে। এই নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা একাদশ সাজাতে আমাকে প্রভাবিত করবে না। কালকের ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ।’
গেল মৌসুমে এই দুই দলের ম্যাচে প্রথম লেগ হয়েছিল রিয়ালের মাঠে। দ্বিতীয় লেগে সিটির মাঠে রিয়াল হজম করেছিল ৪ গোল। সেই ম্যাচ নিয়ে আনচেলত্তি বলেন, ‘দ্বিতীয় লেগে আমরা মোটেও ভালো খেলিনি। গেল মৌসুমের চেয়ে এবারের দল ভিন্ন। গত মৌসুমে বেনজেমা ছিল, এবার আক্রমণে আরও খেলোয়াড় আছে।’
চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় জুড বেলিংহ্যাম ৩২ ম্যাচে ২০ গোল করেছেন। বেলিংহ্যামকে নিয়ে ম্যানসিটি কোচ গার্দিওলা বলেন, ‘গেল মৌসুমের চেয়ে এবার দল ভিন্ন (রিয়ালের)। বেলিংহ্যাম দলে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। রিয়ালের বিপক্ষে খেলাটা সব সময়ই কঠিন চ্যালেঞ্জ। তারা দুর্দান্ত একটি দল। এই টুর্নামেন্টে তারা অনেক অভিজ্ঞ।’
বায়ার্নের সামনে বদলে যাওয়া আর্সেনাল : চ্যাম্পিয়নস লিগে আর্সেনাল ও বায়ার্ন মিউনিখ সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৬-১৭ মৌসুমের শেষ ষোলোয়। সেবার দুই লেগে বায়ার্নের সঙ্গে ১০ গোল হজম করে আর্সেনাল। এবার এই দুই দলের দেখাটা কোয়ার্টার ফাইনালে। এবারও কি আর্সেনাল নাস্তানাবুদ হবে বায়ার্নের কাছে। দুই দলের বর্তমান ফর্ম অবশ্য এমন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না; বরং বদলে যাওয়া এক আর্সেনাল এবার মুখোমুখি হচ্ছে বায়ার্নের।
আজ প্রথম লেগ আর্সেনালের মাঠ এমরেটসে। আর্সেনাল নিজেদের সবশেষ ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগে জয় পেয়েছে। লিভারপুল নিজেদের ম্যাচ হারায় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকেই বাভারিয়ানদের আতিথেয়তা দেবে গানার্সরা। অপর দিকে বায়ার্ন জার্মান লিগে নিজেদের সবশেষ ম্যাচ হেরেছে। তারা আছে দ্বিতীয় স্থানে। বায়ার্ন এবার জার্মান কাপ থেকেও ছিটকে গেছে। মৌসুমে তাদের সামনে চ্যাম্পিয়নস লিগ ছাড়া আর কোনো শিরোপা জেতার সুযোগ নেই।
মিকেল আর্তেতার অধীনে আর্সেনাল গেল মৌসুমে ইপিএলে অনেকটা সময় শীর্ষে ছিল। পরে অবশ্য দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে তারা। এবারও ৩১ রাউন্ড শেষে শীর্ষে আছে গানার্সরা। আর্সেনাল লিগে ৩১ রাউন্ড শেষে গোল করেছে ৭৫টি; যা ইংলিশ লিগে এবার যেকোনো দলের চেয়ে বেশি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে আর্সেনালের আক্রমণ ভাগ দারুণ সময় পার করছে।
বায়ার্নের ভরসার নাম হ্যারি কেইন। এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৭ ম্যাচে ৩৮ গোল করেছেন কেইন। কেইন গত মৌসুম পর্যন্ত ছিলেন টটেনহ্যামে। ফলে আর্সেনালের বিপক্ষে খেলার অভ্যাসটা ভালোই আছে কেইনের। গানার্সদের বিপক্ষে ১৯ ম্যাচ খেলে ১৪ গোল করেছেন কেইন।
কেইনকে নিয়ে আর্সেনাল মিডফিল্ডার ও অধিনায়ক মার্টিন ওডেগার্ড বলেন, ‘অবশ্যই সে দারুণ একজন খেলোয়াড়। তার বিপক্ষে কিছু ম্যাচ খেলেছি আমি। তাই তার সম্পর্কে ধারণা আছে আমার। শুধু গোল করা নয়, গোলে সহায়তা করানোতেও পারদর্শী সে। আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি, তবে কাউকে ভয় পাই না।’
বর্তমানে বায়ার্নে খেলা সার্জ নাব্রির পেশাদার ফুটবলে শুরুটা আর্সেনালে। ২০১২-১৬ পর্যন্ত ছিলেন ইংলিশ ক্লাবটিতে (মাঝে ধারে খেলেন অন্য ক্লাবে)। আর্সেনালের হয়ে মাত্র ১৮টি ম্যাচ খেলেন তিনি। বর্তমানে আর্সেনালের কোচ মিকেল আর্তেতার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা আছে ফরোয়ার্ড নাব্রির।
জার্মান খেলোয়াড় নাব্রি বলেন, ‘এটা জীবন-মরণ লড়াই। তাই আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। সেমিফাইনালে যেতে পারলে সেটি আমাদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে সামনে আরও ভালো করতে। আর্সেনাল (লিগে) শীর্ষে আছে। ম্যাচটি ৫০-৫০।’
নাব্রি মনে করেন, আর্সেনাল ক্রিসমাসের পর থেকে দারুণ ফর্মে আছে। ‘আর্সেনাল ক্রিসমাসের পর থেকে দারুণ ফর্মে আছে। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার জন্য যারা লড়াই করছে, আপনি কোনোভাবেই তাদের খারাপ দল বলতে পারবেন না। তারা শক্তিশালী। দলে ভালো ফিনিশার আছে। দুই শক্তিশালী দলের খেলা।’
আর্তেতাকে নিয়ে নাব্রি বলেন, ‘আমি যখন আর্সেনালে শুরু করি, তখন আর্তেতা অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড়। তিনি অধিনায়কও ছিলেন। তিনি এমন একজন ছিলেন, যিনি সবার সঙ্গে কথা বলতেন। তরুণ খেলোয়াড়দের অনেক সহায়তা করতেন।’
চ্যাম্পিয়নস লিগে আর্সেনাল ও বায়ার্ন মিউনিখ এর আগে মোট ১২ বার মুখোমুখি হয়েছে। ৭টি ম্যাচ জিতেছে জার্মান ক্লাবটি। আর্সেনালের জয় ৩ ম্যাচে। বাকি দুই ম্যাচ ড্র হয়। সবশেষ ২০১৯ সালে প্রীতি ম্যাচে আর্সেনাল হারিয়েছিল বায়ার্নকে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্নের বিপক্ষে আর্সেনালের সবশেষ জয় ২০১৫ সালে, ঘরের মাঠেই ২-০ গোলে।