গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজ দেশে চাপে পড়েছেন। তার দলের সমর্থকরাই বলেছেন, জো বাইডেনকে ফের তারা ভোট দেবেন কিনা তা সংশয় আছে। কেউ কেউ বলেছেন, তারা এবার ভোটই দেবেন না। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে একশরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের জোয়ারে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জো বাইডেন আগের চেয়ে আরও বেশি চাপের মুখে পড়ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তার সুর কিছুটা বদলালেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি না হলে, ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধ না হলে আসন্ন নির্বাচনে জো বাইডেনের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
বিবিসি বলছে, যুদ্ধের প্রথম মাসগুলোয়, বাইডেন যখন ইসরায়েল সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেওয়ার কথা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আরব-মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং বাম-গণতান্ত্রিক ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন এটি স্পষ্ট ছিল না যে, গাজায় যুদ্ধ এত দীর্ঘ মাস ধরে চলবে এবং অনেক মানুষ হতাহত হবে। গাজার স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষের মতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছে। যা তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষের ঝড় বইয়ে দিয়েছে, যারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে। অথচ এই তরুণরা এবং তাদের কাছাকাছি দৃষ্টিভঙ্গির অন্যান্য সংখ্যালঘু যেমন : ল্যাটিনো, এশিয়ান, আফ্রিকান-আমেরিকান, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মূলত ডেমোক্র্যাট পার্টির ভোটার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। এদের সমর্থন বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করতে সক্ষম, যা পেলে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বাইডেন। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনপন্থি গোষ্ঠীগুলো একটি সুনির্দিষ্ট যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, বাইডেন সরকার সাময়িক বিরতির সমর্থন করেন, যা ২০২৩ সালের নভেম্বরে হয়েছিল। ওই যুদ্ধবিরতির কারণে গাজায় বড় আকারে সহায়তা প্রবেশ করতে শুরু করে। সে সঙ্গে একশ ইসরায়েলি জিম্মি এবং সেখানে বন্দি প্রায় ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়।
একই সময়ে, গাজায় আরও মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের কাছে বাইডেন প্রশাসন বারবার অনুরোধ জানায়। কিন্তু ইসরায়েলের কাছ থেকে কোনো অনুকূল বা বাস্তবসম্মত সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে একই সময়েও, হোয়াইট হাউজ ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান বজায় রেখেছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, যাতে ইসরায়েলকে তাদের বিরুদ্ধে আসা প্রস্তাবগুলো থেকে রক্ষা করা যায়। এই পদক্ষেপগুলো ফিলিস্তিনপন্থি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তীব্র আপত্তির মুখে পড়ে। রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি জেরেমি কোনিন্ডিক মনে করেন, তার ধারণা বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধকে নিজের করে তুলেছেন। বাইডেন এবং বারাক ওবামা সরকারের হয়ে এক সময় কাজ করা জেরেমি কোনিন্ডিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, তারা এমন সব সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, যাতে যুদ্ধ টিকে আছে। এই যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে তারা রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে। তারা জাতিসংঘে কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলের পাশে থেকেছে, যা যুদ্ধকে টিকিয়ে রেখেছে। যার প্রভাব তাকে আগামী ভোটে ভোগ করতে হবে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে, মিশিগান ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তালাইব এক ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন, যাতে তিনি প্রকাশ্যে বাইডেনকে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। মার্কিন কংগ্রেসে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত একমাত্র প্রতিনিধি তালাইব ভিডিওটিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট, আমেরিকার জনগণ এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে নেই। আমরা ২০২৪ সালে সেটা মনে রাখব।
তার বার্তার পরে, স্ক্রিনটি কালো হয়ে যায় এবং একটি বার্তা সামনে আসে যাতে বলা হয় : জো বাইডেন ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যাকে সমর্থন করেছিলেন। আমেরিকার মানুষ ভুলবে না। বাইডেন, এখন একটি যুদ্ধবিরতি সমর্থন করুন। অথবা ২০২৪ সালে আমাদের ওপর নির্ভর করবেন না।