র্যাব হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব র্যাব-১৪ সিপিসি-২-এর র্যাবের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. ফাহিম ফয়সালসহ চারজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত রবিবার র্যাবের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের প্রত্যাহারের আদেশ আসে। একই সঙ্গে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার রাতে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাকে নান্দাইল থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে ভৈরব ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন (সহকারী পুলিশ সুপার) মো. আ. হাই চৌধুরী। প্রত্যাহার হওয়া অন্য তিনজন হলেন র্যাবের উপসহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন, করপোরাল মহিবুল ইসলাম ও কনস্টেবল মনির হোসেন। ভৈরব ক্যাম্প থেকে চারজনের প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি গতকাল বিকেলে এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেন।
এদিকে প্রত্যাহারের তথ্য স্বীকার করে ফাহিম ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বিষয়টি সত্য। আমি আজ (গতকাল) থেকে ভৈরব ক্যাম্পের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’
গত ১৬ মে রাতে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলায় রেখা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নিহত নারীর (রেখা আক্তার), স্বামী তাইজুল ইসলাম মিলন ও তার মা সুরাইয়া খাতুনকে আটক করে নিয়ে আসেন ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা। শুক্রবার সকালে মৃত অবস্থায় সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সুরাইয়া নান্দাইল উপজেলার চ-িপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দা গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী।
স্থানীয় ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার একটি বিস্কুট কারখানায় চাকরি করতেন সুরাইয়ার ছেলে তাইজুল ইসলাম (২৩)। একই কারখানায় কাজ করতেন একই উপজেলার ভেলামারী গ্রামের হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তার। কর্মস্থলে তাদের প্রেম থেকে বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর না যেতেই গত ২৬ এপ্রিল স্বামী বাড়িতে মৃত্যু হয় রেখার।
রেখার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, যৌতুক হিসেবে দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতনে রেখার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রেখার মা রামিছা খাতুন বাদী হয়ে গত সোমবার (১৩ মে) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে বুধবার মামলাটি নান্দাইল থানায় রেকর্ড করা হয়। মামলায় রেখার স্বামী তাইজুল ইসলাম, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শাশুড়ি সুমাইয়া খাতুনকে আসামি করা হয়। এসআই নাজমুল হাসান ছিলেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা।
নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মামলা মীমাংসার কথা বলে এসআই নাজমুল হাসান বৃহস্পতিবার সুরাইয়া ও তার স্বামী তাজুল ইসলামকে থানায় ডেকে এনে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। থানা থেকে বের হওয়ার পরপরই সুরাইয়াকে আটক করে র্যাব। তা জানতে পেরে সুরাইয়ার স্বামী আজিজুল ইসলাম পালিয়ে যান।
সুরাইয়ার দুই মেয়ে লিজা আক্তার ও আফরোজা আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার পুলিশ তার মাকে মামলা আপসের কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। পুলিশের সহযোগিতায় মাকে র্যাব আটক করে নিয়ে যায়। মায়ের মৃত্যুর জন্য র্যাব-পুলিশ সমানভাবে দায়ী।
এ বিষয়ে কথা বলতে এসআই নাজমুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, সুরাইয়া খাতুনকে থানায় ডেকে আনার বিষয়ে পরিবারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলেই এসআই নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শামীম হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে নাজমুল হাসানকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গত বছর মার্চে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগের পর আবারও র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।