মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

রিকশা না রাস্তা আস্তে চলে কে

আপডেট : ২২ মে ২০২৪, ১২:৪৯ এএম

ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে কি চলবে না এই নিয়ে দেশব্যাপী বেশ উত্তেজক বিতর্ক চলছে। একদিকে সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তাদের মতামত জানাচ্ছেন, অন্যদিকে রাজপথে নেমে এসেছেন রিকশা শ্রমিকরা। রাজনীতির মাঠে এবং সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। ব্যাটারি রিকশাচালকের জন্য পায়ে টানা রিকশার চেয়ে অনেক বেশি আরামদায়ক আবার যাত্রীর জন্য অর্থ এবং সময় সাশ্রয়ী। অন্যদিকে, এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, বাহনটি যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত, দুর্ঘটনাপ্রবণ, প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয় এবং ঢাকার যানজট আরও বৃদ্ধি করবে।

এ পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের ঘোষণা দেয়। কিন্তু, শ্রমিকদের প্রবল আন্দোলন ও বিক্ষোভের মুখে আবার সেই নিষেধাজ্ঞা দুদিন পরই তুলে নেওয়া হয়। দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদনে জানা যায়, জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা না করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিধিমালা করে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের (রেগুলেট) জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে বলেছেন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গত রবিবার রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকরা। সোমবারও রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন তারা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তাদের জীবিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এলাকাভিত্তিক হবে তাদের চলাচল। কোনো অবস্থাতেই মহাসড়ক বা বড় সড়কে যেন ব্যাটারিচালিত রিকশা না চলে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।’ ব্যাটারিচালিত রিকশার যন্ত্রের সঙ্গে উপযুক্ত কাঠামো বা মডেল করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আপাতত হয়তো ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বিতর্ক কিছুটা কমবে। তবে, এই বিতর্ক যে আবার মাথাচাড়া দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলো কতটা মানা হবে এবং তার কতটা বাস্তবতা আছে সেটাও সামনের দিনে দেখার বিষয়।

কোনো সন্দেহ নেই যে, পায়ে চলা রিকশার মতো অমানবিক এবং আধুনিক শহরের সঙ্গে বেমানান বাহনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই রকম পেশায় যুক্ত থাকা নাগরিকরা অল্প দিনেই জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলেন যা দেশের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। কিন্তু, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকেও অতি অবশ্যই আধুনিক করতে হবে, করতে হবে আরও বেশি কার্যকরী ও নিরাপদ।

এসব ছাপিয়ে দরকার রাস্তার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা। ঢাকার রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। তীব্র ডলার সংকটে থাকা দেশে বিদেশি গাড়ি আমদানি সীমিত করার ব্যাপারটা চিন্তায় রাখা জরুরি। রাস্তায় নিয়োজিত ট্রাফিক এবং নানা তরফের ঘুষ ও অবৈধ লাইসেন্সের ব্যবসা একেবারে বন্ধ করতে হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে কি চলবে না তা বড় সমস্যার সামান্য একটা অংশ মাত্র। সব দোষ তিন চাকার গরিবের বাহনের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ‘রিকশা কেন আস্তে চলে না’ গাইতে থাকলে হবে না। কারণ, নানাবিধ অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকার রাস্তাই আসলে আস্তে চলে আর আপনার গতিরোধ করে। একদিকে যেমন প্রচুর গণপরিবহন দরকার তেমনি দরকার কঠোর শৃঙ্খলা। আমরা মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর দেখেছি সুশৃঙ্খল ও গণবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা ঢাকার অসহনীয় ট্রাফিক জ্যামকেও অনেকটা কমাতে পারে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত