ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ড নিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তদন্তে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তার লাশ উদ্ধার হয়নি। তদন্তকারীদের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোনা চোরাচালান ও হুন্ডির দেড়শ কোটি টাকার বিরোধের জের ধরে সংসদ সদস্য (এমপি) আনারকে খুন করা হয়েছে। ছয় মাস আগে রাজধানীতে খুন ও লাশ গুমের বিস্তারিত পরিকল্পনা হয়। নজিরবিহীন এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী, হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারীদের বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে।
তদন্তকারী বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনার সোনা ও হুন্ডির দেড়শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যশোর ও দুজন ঝিনাইদহের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে একজন মাস-তিনেক আগে দেশের বাইরে চলে গেছেন। আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করার জন্য ঢাকার গুলশান ও ভাটারা এলাকায় দুটি বাসায় কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে তিনজন পরিকল্পনাকারী ও কয়েকজন চরমপন্থি অংশ নিয়েছিল।
আনার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতার সিআইডির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তা অন্ত কুমার। তারা তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা আলামতসহ বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করেন। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকেও তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে ডিবির একটি টিম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে কলকাতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
ডিবি জানিয়েছে, এমপি আনার খুনে সরাসরি জড়িত সন্দেহে তারা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তারা হলেন আমানুল্লাহ সাঈদ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সেলি নিস্কি ওরফে সেলিস্থিয়া ও ফয়সাল। আজ শুক্রবার তাদের শেরেবাংলা থানায় করা আনার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানোর তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, সংসদ সদস্য ১২ মে কলকাতায় যাওয়ার পরের দিনই পরিকল্পনাকারীরা ব্যবসার কথা বলে নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। ওই পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন। আনার কলকাতায় যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই শাহীন কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। ফ্ল্যাটে প্রবেশের ৩০ মিনিটের মাথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের আগে মিনিট-দশেক চোরাচালানসহ নানা বিষয় নিয়ে শাহীন ও আনারের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। ওই সময় শাহীন অশ্লীল ভাষায় আনারকে গালাগাল করেন। তখন খুলনা অঞ্চলের চরমপন্থি ক্যাডার আমানুল্লাহ তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে আরও চারজন আনারের হাত-পা বেঁধে ফেলে বালিশচাপা দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি মারা যান।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা সরাসরি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় তথ্য পেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, বাঁচার জন্য আনার আকুতি-মিনতি করলেও খুনিদের মন গলেনি। হত্যাকান্ডের পরপরই শাহীন ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান। বাকি সবাই মিলে আনারের লাশ কয়েক টুকরো করে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ফেলেন। ট্রলি ব্যাগে ঢুকিয়ে লাশ গুম করেন। হত্যাকান্ডের সময় কলকাতার কয়েকজন খুনি ঘটনাস্থলে অবস্থান করেছিলেন। হত্যাকান্ডের পর তাদের নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দেওয়া হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শাহীনের হুন্ডি ব্যবসার ৫০ কোটি টাকা ও যশোর এলাকার এক প্রভাবশালীর সোনা পাচারের ১০০ কোটি টাকা আনার ফেরত না দেওয়ায় তাদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়।
এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আনারের কয়েক দফা বৈঠক হলেও সুরাহা হয়নি। তারপরই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহীনসহ অন্যরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি ক্যাডার ও পেশাদার খুনি শিমুল ভূঁইয়াকে আনারকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়। শিমুলের ছদ্মনাম আমানুল্লাহ। তিনি চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা। শিমুল ভূঁইয়া সৈয়দ আমানুল্লাহ সাঈদ নামে পাসপোর্ট করে কলকাতায় যান এবং কলকাতা থেকে দেশে ফেরেন। আনারকে হত্যা করার পর শিমুল তার সহযোগী জাহিদ, মোস্তাফিজ ও জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করেন। হাড়গুলো ট্রলিতে ভরে নিউটাউনের পাবলিক টয়লেটের কাছে নিয়ে সিয়ামকে দেওয়া হয়। সিয়াম সেগুলো অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেন।
তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সূত্র আরও জানায়, যশেরের শার্শা, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, কালীগঞ্জ, শৈলকুপার সীমান্ত এলাকার চোরাচালানসহ সব কারবারের একক নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিলেন যশোরের আলোচিত ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার এই আধিপত্য বিস্তারের বাধা হয়ে দাঁড়ান আনার। ফলে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকার একজন হীরা ব্যবসায়ী ও একজন আবাসন ব্যবসায়ীও এই হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তার ও অর্থনৈতিক নানা কারণে তিনি খুন হতে পারেন। তাকে হানিট্র্যাপও করা হয়ে থাকতে পারে। আমাদের তদন্তে পর্যায়ক্রমে সব বিষয়ই আসবে। যারা সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল, আমরা তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।’
হাড়-মাংসে হলুদ মিশিয়ে গুম : আনারকে কলকাতায় হত্যার পর লাশ গুমের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ডিবিপ্রধান বলেন, তাকে হত্যার পর শরীর খণ্ড খণ্ড করা হয়। হাড় ও মাংস আলাদা করে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়। কোথায় খণ্ড খণ্ড মরদেহ ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। খুনিরা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছেন কখন আনারকে কলকাতায় আনা যাবে। গত ১২ মে আনার বন্ধু গোপালের বাসায় যান। সেখানে আরও দুজনকে ভাড়া করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা-যাওয়া করবে। তারা হলেন জিহাদ ওরফে জাহিদ ও সিয়াম। গাড়ি ঠিক করেন পরিকল্পনাকারী। কাকে কত টাকা দিতে হবে, কারা কারা হত্যায় থাকবেন, কার দায়িত্ব কী হবে। তবে কাজ আছে বলে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন এক ঘাতক।
তিনি বলেন, পরিকল্পনাকারীরা গুলশান-২ ও ভাটারার এলাকার দুটি বাসায় দফায় দফায় বৈঠক করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। তারা জানতেন বাংলাদেশে খুন করলে ধরা পড়তে হবে, তাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধীরা কলকাতাকে বেছে নেন। তিনি আরও বলেন, মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। ভারতীয় পুলিশ গাড়ির চালক রাজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মরদেহ পুরোপুরি না পেলেও অংশবিশেষ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন ডিবিপ্রধান।
কলকাতায় দিনভর অভিযান : আনার হত্যাকান্ড তদন্ত করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। তারা গতকাল বৃহস্পতিবার নিউটাউন ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন জঙ্গলে হাড়গোড়ের সন্ধানে তল্লাশি করেছে। এ ছাড়া ঝাড়খন্ডসহ যেসব এলাকায় আনারের মোবাইল ফোনে অবস্থান পাওয়া গেছে, ওইসব এলাকায়ও তল্লাশি চালানো হয়। পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের হাতে আটক হওয়া সিয়ামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হাড়গোড় ও মাংসের সন্ধানে তল্লাশি চলানো হয়। কিন্তু কিছু উদ্ধার করতে পারেনি।
খুনিদের গ্লাভস ব্যবহার : অবশ্য পূর্ব কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত এলাকার আখতারুজ্জামান শাহীনের যে ভাড়া ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে তল্লাশি চালিয়েছে কলকাতা পুলিশ। সেখান থেকে গ্লাভসের একটি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। তবে প্যাকেটে কোনো গ্লাভস ছিল না। পুলিশের ধারণা আলামত না রাখতে খুনিরা গ্লাভস ব্যবহার করেন। কলকাতা পুলিশ সেখানকার সাংবাদিকদের জানিয়েছে, ফ্ল্যাটের দরজার পাশে, খাটের কোণে রক্তের দাগ আছে এখনো।
নজরদারিতে ট্যাক্সিচালক : ভারতীয় সিআইডির নজরদারিতে রয়েছেন অ্যাপ ক্যাবচালক। তাকে জেরা করছে সিআইডি। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করতে এই জিজ্ঞাসাবাদ। আনার কীভাবে ওই ফ্ল্যাটে গেলেন, তার তদন্ত করতে এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করেন গোয়েন্দারা। তদন্তে তারা জানতে পারেন, বরাহনগর থেকে একটি লাল গাড়িতে চেপে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে যান আনার। আবাসনের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা একটি অ্যাপ ক্যাবের খোঁজ পান। আনারকে খুনের পর ট্রলি নিয়ে সাদা রঙের একটি ক্যাবে করে ঘাতকরা চলে যান। কলকাতার পুলিশ ক্যাব দুটি জব্দ করেছে। ওই ক্যাবে কারা ছিলেন, কখন ভাড়া করা হয়, কোথায় তাদের নামানো হয়, ক্যাবে থাকাকালে যাত্রীরা কী বলছিলেন, তাদের সঙ্গে কী কী ছিল, এসব বিষয়ে জেরা করা হচ্ছে ক্যাবচালককে। গতকাল সকালে কলকাতায় জব্দ করা হয় লাশের খ-িত বহনে ব্যবহৃত সাদা রঙের মারুতি গাড়িটি। জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাবচালক জানিয়েছেন, গত ১৪ মে এক নারী ও দুই পুরুষকে ট্রলি ব্যাগসহ অ্যাক্সিস শপিং মলের সামনে নামিয়ে দেন তিনি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিআইডি জানতে পেরেছে, অ্যাক্সিস শপিং মলে নামানোর আগে নিউটাউনে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাকেন্দ্র নজরুল তীর্থের কাছে গাড়িটি প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল।
কলকাতায় আটক সিয়াম : লাশ গুমে সহযোগিতা করা সিয়াম নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া কলকাতায় এক নারীকেও আটকের খবর পাওয়া গেছে। তবে তার নাম জানা যায়নি। এ ছাড়া জুবের নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেপ্তারকৃত তরুণী শাহীনের গার্লফ্রেন্ড : আনার হত্যাকান্ডে সেলেস্থিয়া রহমান নামের এক তরুণীর নাম এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, সেলেস্থিয়া এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনের গার্লফ্রেন্ড। শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রেই থাকে। তবে তিনি মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশে এলে সেলেস্থিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় প্রমোদভ্রমণে যেতেন। সেখানে কিছুদিন থেকে ফের দেশে চলে আসতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০ বছরের তরুণী সেলেস্থিয়া রহমানের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। তার পরিবার সেখানেই থাকে। ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। উত্তরাতেই একটি মেস বাসায় তিনি থাকেন। তার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে চাচ্ছে না গোয়েন্দা পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেই তার বিষয়ে জানানো হবে।
যা বলেছে শিমুল : জিজ্ঞাসাবাদে মূল ঘাতক শিমুল ওরফে আমানুল্লাহ জানিয়েছেন, তারা গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যান। পেশাদার অপরাধী সিয়াম, জাহিদ ওরফে জিহাদ ও ফয়সালকে সঙ্গে নেন। আনারকে হত্যার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়ার কথা। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর। হত্যার পর ঢাকায় এসে শাহীনের সঙ্গে দেখা করেন আমান। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরে বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
যা বলেছেন অভিযুক্ত শাহীন : আনার খুনের ঘটনায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান শাহীন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিফোনে একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আনার হত্যার সময় বাংলাদেশে ছিলেন তিনি। পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে হত্যাকান্ড ঘটানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। শাহীন বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনার সময় আমি ভারতে ছিলাম না। আমার আইনজীবী বলেছেন, এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলতে। মানুষ দেশে অনেক কথাই বলে। যদি কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে দেখাক।’ ফ্ল্যাটের ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি ফ্ল্যাট ভাড়া নিই। আমি কি আমার ফ্ল্যাটে এ ধরনের কাজ করব? আমার পাসপোর্ট রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখন বলা হচ্ছে আমি পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছি। কীভাবে আমি পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছি, কোথা থেকে পেলাম আমি এত টাকা? এখন এগুলো মানুষ বললে আমার কী করার আছে। ঘটনা কবে ঘটেছে সেগুলো আমি পত্রিকায় দেখেছি।’
শাহীন বলেন, ‘আমার ড্রাইভার তো কিছু করেনি। আমার গাড়ি, আমার সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। এটা কোন ধরনের বিচার। আমি যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমাকে ধরুক। আমি তো এ দেশে বিচার পাব না। আমি আমেরিকার নাগরিক, এখানে চলে এসেছি। কী করব।’
মামলার তদন্ত ডিবিতে : আনার খুনের ঘটনায় বুধবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলাটির তদন্তভার গতকাল ডিবি পুলিশে ন্যস্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমানকে।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৯ মে তার বাবা ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ন্যাম ভবন থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য বের হন। দুদিন পর ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তার বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। কিন্তু তার সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন, তার বাবা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। এরপর তিনি তার বাবার ফোনে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পান। পরে ১৩ মে তার বাবার ভারতীয় সিম নম্বর থেকে উজির মামা নামে একজনের মোবাইলে একটি খুদে বার্তা আসে। তাতে জানানো হয়, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত সাহার কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দেব।’ এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। সেই মেসেজগুলো তার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারেন। এরপর তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করতে থাকেন। কিন্তু খোঁজ না পেয়ে তার বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গোপাল গত ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।