প্রচন্ড তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে মাদারীপুরের শিশুরা। প্রচন্ড গরমে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে শতাধিক শিশু। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা কম থাকায় এক বেডে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে চারজন শিশু। অনেকে আবার বেড না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা শিশু ও অভিভাবকরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
জানা গেছে, সদর হাসপাতালটি কাগজে-কলমে আছে ২৫০ শয্যা। বাস্তবে ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে হাসপাতালের নামে মাত্র ২৫০ শয্যার কার্যক্রম। গত দেড় মাসে ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করা সময়ও শিশুরোগী বৃদ্ধির হার দেখা গিয়েছি। মাঝে তাপমাত্রা একটু কম হলেও এখন সেই আগের মতো প্রচ- গরমের কারণে জেলার শিশুরা অসুস্থ হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে মাত্র ৪৭টি শয্যা। কিন্তু প্রতিদিন রোগী আসছে ১০০ জনের মতো। আবার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩০ জনের স্থানে অনেক বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের গুণগত মান না থাকলেও রোগী থাকে তিন শতাধিকের বেশি। তাই অনেক রোগী ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। আর পুরনো ১০০ শয্যার জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসাসেবা। যাতে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স।
গতকাল শনিবার সরেজমিন ওই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সব বেডে ২ থেকে চারজন রোগী দেখা গেছে। এক শিশু রোগীর মা বলেন, ‘হাসপাতালটির গায়ে লেখা আছে ২৫০ শয্যা। বাস্তবে কার্যক্রম নেই ১০০ শয্যার। আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসে দেখি এক বেডে চারজন করে শিশু ভর্তি আছে। একজনের বেডে চারজন অসুস্থ শিশু নিয়ে কীভাবে থাকব। খুবই কষ্ট করে ছেলেকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নিচ্ছি। চরম ভোগান্তিতে আছেন শিশু ও অভিভাবকরা।’
আরেক শিশুর নানু বলেন, ‘ছোট নাতনি নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছি। এখানে এসে দেখি হাসপাতালের খুবই খারাপ অবস্থা। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ। বেডে শিশু থাকার জায়গা নেই। বেড না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শিশুর চিকিৎসা নিচ্ছি। শিশু ওয়ার্ডের জন্য আরও বেশি বেড, ডাক্তার ও নার্স দরকার।’
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমেদ খান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বেডের চেয়ে রোগী বেশি থাকায় ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে। তবে বিল্ডিংয়ের বাইরে তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসা দেওয়া লাগছে না, হাসপাতালের ভেতরেই ফ্লোরে রাখতে পারছি। এখানে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা সব সময় বেশি থাকে।’
এ ছাড়া সেবার মান সম্পর্কে সিভিল সার্জন বলেন, ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ২৫০ শয্যার কার্যক্রম। জনবল নিয়োগ পেলে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। আশা করি, দ্রুত জনবল সংকটের সমস্যার সমাধান হবে।