এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই সোনার সন্ধানে মাটি খনন করে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মানুষ। উপজেলার কাতিহার এলাকার আরবিবি ইটভাটার মাটির স্তুপে দিনরাত মটি খুঁড়ছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা ঝুঁকি চিন্তা করে সেই ইট ভাটায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে। গতকাল ২৫ মে সন্ধ্যায় রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রকিবুল হাসান এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ ধারা জারি করে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য করা হয়, উপজেলার কাতিহার বাজারের উত্তর পাশে রাজোর গ্রামে মো. রুহুল আমিনের মালিকানাধীন আরবিবি ইট ভাটায় মাটির স্তূপ খুঁড়ে সোনা পাওয়া যাচ্ছে। এমন খবরে স্থানীয় লোকজন গেল এক মাস ধরে কোদাল, বাশিলা, খুন্তিসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাটি কাটছিল। প্রতিদিন সেই স্থানে সোনার সন্ধান করছে। এতে আগ্রাসী লোকজন স্বর্ণ পাওয়ার আশায় ঝগড়া বিবাদেও লিপ্ত হচ্ছে। এতে যে কোন সময় মারামারি, খুন, জখমসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেই স্থানে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাতিহার আরবিবি ইট ভাটা এলাকা ও এর আশেপাশে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের সহস্রাধিক মানুষ কোদাল, বাসিলা, খুন্তি নিয়ে স্বর্ণের খোঁজে মাটি খনন করছে। ওই ইট ভাটার মাটির স্তুপে ভাগ্য বদলের আশায় দিন-রাত চলছে যেন মাটি খনন প্রতিযোগিতা।
গত এপ্রিল মাসে হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠে রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার আরবিবি ইটভাটা। বলা হচ্ছে, ওই ভাটায় মাটির নিচে পাওয়া যাচ্ছে সোনা। এমন একটি সংবাদ ভাইরাল হওয়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন ভাটায়। সোনা পাওয়ার আশায় ইট তৈরির জন্য স্তূপ করে রাখা মাটির ঢিবিতে চালাচ্ছেন ইচ্ছামতো খনন কাজ।
মাটির স্তুপ খুঁড়ে স্বর্ণ পেলে ভাগ্য বদলাবে, তাই যোগ দিয়েছেন আশেপাশের জেলা উপজেলার বাসিন্দারাও। এখানকার মানুষের দাবি, এই ইটভাটার মাটির স্তুপ খুঁড়লেই পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণ। এরই মধ্যে ভাটার মাটি খুঁড়ে স্বর্ণ পেয়েছেন শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত সত্যতা মেলেনি। তাই দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারেও আলো জ্বেলে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।
রাতের বেলা ইট ভাটায় মাটির স্তূপগুলো স্বর্ণের মতোই জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। রাতের অন্ধকারে মানুষের হাতে থাকা টর্চ, হারিকেন, মোবাইল ফোনের আলোতে ইটভাটার মাটির স্তূপ স্বর্ণালী রূপ ধারণ করেছে। দূর থেকে যে কেউ দেখলেই গভীর অন্ধকারে টর্চের আলোয় আলোকিত স্বর্ণালী এক পাহাড়ের দৃশ্য দেখে চমকে উঠবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শরৎ চন্দ্র রায় বলেন, লোকজন দিন ও রাতের বেলায় আসতেছে। এজন্য আমরাও দেখতে এসেছি। কেবল ঠাকুরগাঁও নয়, দিনাজপুর, রংপুরসহ নানা জায়গা থেকে স্বর্ণের খুঁজে আসছেন মানুষ। কেউ কেউ স্বর্ণ পাচ্ছে বলছে, কিন্তু কাউকে দেখাচ্ছে না। আবার নিরাশ হয়েও ফিরছেন অনেকেই। ইট ভাটার আশপাশ জুড়ে গড়ে উঠে অস্থায়ী অনেক খাবার দোকান।
স্থানীয় বাসিন্দা হালিমা, সাদেকুলসহ আরও কয়েকজন বলেন, ভাটার মাটির স্তূপে সোনা পেয়েছেন কয়েকজন। কিন্তু কে পেয়েছেন এ কথা স্বীকার করছেন না কেউ। তাদের দাবি অনেকেই পেয়েছে, তাই আমারাও খুঁড়ে দেখছি।
রাণীশংকৈল উপজেলার বাঁচোর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য উমের আলী বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ স্বর্ণ পেয়েছে এরকম আমি দেখিনি। তবে শুনেছি।
ইটভাটার ব্যবস্থাপক লিটন আলী বলেন, ‘কাতিহার সামরাই মন্দিরের পাশ থেকে মাটি খনন করে ইটভাটায় স্তূপ করা হয়েছে। গুজব উঠেছে ওই মাটির স্তূপ থেকে নাকি স্বর্ণের জিনিস পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই সাধারণ মানুষ দিন রাত ওই মাটির স্তূপ খনন করে স্বর্ণের সন্ধান করছে।’ তবে কেউ স্বর্ণের কোন অংশ পেয়েছে এ মন খবর তারা পায়নি।