মানবিক গুণাবলির মধ্যে সদাচরণ একটি অন্যতম গুণ। সদাচারী মানুষকে সবাই ভালোবাসে। সবাই সদাচারী মানুষের সংস্পর্শ পেতে চায়। কেননা তাদের কাছে থাকলে কোনো রকমের হেনস্তার শিকার হতে হয় না। তারা ছোট-বড় সব মানুষকে স্নেহ-শ্রদ্ধা করেন। সদাচারী মানুষের আচরণে সমাজে সুখ-শান্তি নেমে আসে। তাই সবার উচিত সদাচরণের গুণে নিজেদের গুণান্বিত করা। আর আমাদের মধ্যে সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত হলেন বয়স্ক ও মুরব্বি শ্রেণির লোকজন। ইসলামে মুরব্বিদের প্রতি সদাচরণ প্রদর্শনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
পরিবারের সদস্য হিসেবে আদব রক্ষা করা যেমন সবার উচিত, তেমনি আচরণের মাধ্যমেই মুরব্বিদের মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করা সবার কর্তব্য। মানুষের উত্তম স্বভাব এবং নিষ্ঠাচার পার্থিব বা পারলৌকিক জীবনকে করে সৌন্দর্যমণ্ডিত। পারস্পরিক সম্পর্ক এবং নিষ্ঠতা নির্ভর করে মানুষের আচরণের ওপর। সৎ আচরণ মানুষকে মহান ও মহীয়ান করে তোলে। পরিবারের আমরা ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে একত্রে বসবাস করি এবং সমাজ-সংসারে মুরব্বিরাই নেতৃস্থানীয়। মা-বাবা, বয়োজ্যেষ্ঠ ভাইবোন, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকরাই মুরব্বি শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে মুরব্বিদের আদেশ-নিষেধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া কিংবা তাদের নির্দেশ মোতাবেক চলার পথকে অনুসরণ করাই হচ্ছে সদাচরণ। মুরব্বিদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের বিধান। প্রত্যেক মানুষেরই উচিত শিশুকাল থেকে মুরব্বিদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের শিক্ষা দেওয়া। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান প্রদর্শনের কারণেই পরিবার, সমাজ ও জীবনের সব ক্ষেত্র হয় কল্যাণময়।
তাই সমাজ-সংসারের আদব রক্ষার জন্য মুরব্বিদের প্রতি ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্টতা এবং নমনীয়তা দেখাতে হবে। এ সম্পর্কে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘মানুষের সঙ্গে ভদ্রোচিত আলাপ করো। অন্য শ্রেণির লোকের প্রতি অবজ্ঞাভরে বিদ্রুপ করো না।’ হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুরব্বিদের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত নয়।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যে যুবক কোনো বৃদ্ধের প্রতি তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান প্রদর্শন করবে, মহান আল্লাহ সেই যুবকের শেষ বয়সে তার প্রতি সম্মানকারী লোক পয়দা করবেন।’
সম্মানবোধ এবং আচরণের ক্ষেত্রে এই মহান বাণী আমরা সামনে রেখে বলতে পারি, মুরব্বিদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া, বয়োবৃদ্ধকে পিতার মতো সম্মান দেখানো মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় বহন করে। এ সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘তিনটি বিষয় বা আচরণের দ্বারা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত ও মজবুত হয়। তা হলো, কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেই সালাম দেবে, মজলিশে এলে বসার স্থান দেবে এবং তিনি যে নামে সম্বোধন করলে খুশি হন, সেই নামে তাকে সম্বোধন করবে।’