সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

শূন্যতায় গবেষণা

আপডেট : ৩০ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম

সেই আদিকাল থেকে একটি জনগোষ্ঠীর চেয়ে আরেকটি জনগোষ্ঠীর এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম উপায় ছিল উন্নততর প্রযুক্তি। সমরবিদ্যা হোক কিংবা শিল্প বা শিক্ষা, প্রযুক্তি আর জ্ঞান জাতিকে সামনে নিয়ে যায়। আর এসবের জন্য দরকার নিরন্তর গবেষণা। গত শতকে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য উদাহরণ দেখা যায় যে, অনেকগুলো দেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এই উন্নতির পেছনে অন্যতম প্রধান প্রভাবক ছিল মৌলিক গবেষণা। এশিয়ার জায়ান্ট অর্থনীতি চীন, কোরিয়া কিংবা জাপান এদের সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। গবেষণায় বিপুল বিনিয়োগ করে এরা দেশের অর্থনীতি ও সম্ভাবনাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পেলেও, মধ্য আয়ের দেশ এবং এসডিজি পূরণের স্বপ্নের কথা বলা হলেও, দেশের মৌলিক গবেষণার অবস্থা শোচনীয়। এমনটাই উঠে এসেছে দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু তাদের বিনিয়োগের লক্ষ্য থাকে উৎপাদন ও নগদ লাভের বিবেচনায়। শিক্ষা খাতে তাদের ব্যয় তলানিতে। এটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করেছে জরিপকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

বিবিএস গত রবিবার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভে ২০২২ প্রকাশ করেছে। এতে দেখানো হয়েছে, দেশে গবেষণা ও গবেষকের সংখ্যা বেড়েছে। তবে যেখানে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি- সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে; সেখানে গবেষণা সবচেয়ে কম। আবার যেখানে ব্যয় করার কথা সবচেয়ে বেশি, সেই মৌলিক গবেষণায় ব্যয় সবচেয়ে কম। বছর বছর যেখানে গবেষণা খাতে ব্যয়বৃদ্ধি হওয়ার কথা, বাংলাদেশে উল্টো এই পরিমাণ কমছে। জরিপ বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মৌলিক গবেষণায় ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৯৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের মাত্র ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। প্রতি বছর গবেষণায় ব্যয় বাড়লেও মৌলিক গবেষণায় ব্যয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ব্যয়ের ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যয় ছিল এ ধরনের গবেষণায়, ২০১৮-১৯-এ ছিল ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মৌলিক গবেষণায় বিনিয়োগের দায় কার? ব্যবসা ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলো তাৎক্ষণিক লাভের জন্য মৌলিক গবেষণা না করে পণ্য ও প্রক্রিয়া বিকাশের দিকে মনোযোগ দেবেএটাই স্বাভাবিক। এছাড়া বড়সড় খাতে বেসরকারিভাবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করাটাও দুরূহ। এই দায়িত্ব প্রায় পুরোটাই সরকারি। নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে যে, মৌলিক গবেষণা খাতে খরচ আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক না হলেও দীর্ঘ সময়ে তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। শিশুর বিকাশে শিক্ষায় বিনিয়োগের যেমন কোনো বিকল্প নেই, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কোনো জাতিকে টিকে থাকার জন্যও মৌলিক গবেষণার বিকল্প নেই। এলডিসি উত্তরণ, এসডিজি অর্জন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার এ মুহূর্তে দেশের গবেষণা খাতে বিনিয়োগ কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন দুনিয়া চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে। এ সময় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যুগ, প্রোডাক্টিভিটি অ্যানাউন্সমেন্টের যুগ, উদ্ভাবনের যুগ। এ রকম একটি সময়ে অবশ্যই আমাদের গবেষণা ও উন্নয়নে অনেক বেশি বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। এখানে যৌথভাবে সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়েরই বিনিয়োগ প্রয়োজন।

আরেকটা বড় বিপদের কথা হচ্ছে, মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হলে বাংলাদেশ অনেক সুবিধা হারাবে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে অন্য দেশের প্রযুক্তি বিনামূল্যে বা সস্তায় ব্যবহার করা। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের আগে তাই নিজস্ব প্রযুক্তি ও গবেষণা অবশ্যম্ভাবী। ডিজিটাল, উন্নত, মধ্য আয়ের দেশ হতে হলে গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেই হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত