বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

অবহেলায় পড়ে আছে শতকোটির সম্পদ

আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ০৪:০৬ এএম

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন টাঙ্গাইল কটন মিলস লিমিটেডের শত কোটি টাকার সম্পত্তি অবহেলায় পড়ে আছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। মিলের জমিও এলাকার প্রভাবশালীরা ইতিমধ্যে দখল করতে শুরু করেছে। তবে জমি দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গোড়াই এলাকায় ১৯৬২ সালে ২৭ একর জায়গার ওপর রাষ্ট্রায়ত্ত টাঙ্গাইল কটন মিলের এক নম্বর ইউনিট চালু। এটিই ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের প্রথম শিল্প প্রতিষ্ঠান। মিলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় ১৯৭৮ সালে দুই নম্বর ইউনিট চালু হয়। এই মিলে উচ্চমানসম্পন্ন ৮০, ৬০, ৭০ ও ৪০ কাউন্টের সুতা উৎপাদন হতো। মিলের উন্নত মানের সুতা উৎপাদন হওয়ায় বিদেশে রপ্তানি করে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। দুই ইউনিটি মিলে এলাকার সহস্রাধিক মানুষেরও কর্মসংসস্থান হয়। মিলটিকে ঘিরে এখানে গড়ে ওঠে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ডাকঘর ও পল্লীবিদ্যুতের সাব-স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মিলটি বন্ধ হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের গতি মন্থর হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী।

লোকসানের মুখে পড়ে ১৯৯৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় মিলের দুই নম্বর ইউনিটটি। বেকার হয়ে পড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচরী। এক নম্বর ইউনিটটি চালু থাকলেও লোকসানের কারণে সেটিও ২০০৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরই গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারীকে বিদায় দেয় মিল কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে মিলটিতে রয়েছে একজন ইনচার্জ, একজন শ্রমিক ও স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ২৯ জন কর্মচারী। এর মধ্যে একজন অবসরকালীন ছুটিতে আছেন। ১০ জন বিভিন্ন মিলে প্রেষণে কাজ করছেন।

টাঙ্গাইল কটন মিলের বর্তমান ইনচার্জ মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন মিলের ১ নম্বর ইউনিটে টাকুর সংখ্যা ১২ হাজার ৪৩২টি এবং ২ নম্বর ইউনিটে ১২ হাজার ৫০০টি। দীর্ঘদিন অযতœ অবহেলায় পড়ে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনো ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করা হলে অন্তত ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা হতে পারে বলে তিনি জানান।

এছাড়া মিলের ২৮ শতাংশ জমি আব্দুল হক সিকদার নামের এক প্রভাবশালী দখলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ ব্যাপারে মিজানুর রহমান জানান, যে ২৮ শতাংশ জমি দখল হয়েছে সে ব্যাপারে দখলদার অনেক আগেই উচ্চ আদালত থেকে রায় পেয়েছেন। বর্তমানে জমি বেহাতের ব্যাপারে কোথাও কোনো অভিযোগ দেওয়া নেই।

মিলের সাবেক শ্রমিক কুব্বত আলী মৃধা, তারা মিয়া, বাবুল সিকদার, আব্দুর রশিদ প্রমুখ জানান, বেকার হওয়ার পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও মিল চালু হওয়ার কোনো খবর নেই। এখন তাদের যে বয়স তাতে অন্য কোথাও চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়।

তারা বলছেন, যদি এই বিশাল জায়গা কাজে লাগিয়ে সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করা হয় তাহলে এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কটন মিলের বর্তমান ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, চালু করার জন্য যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ দরকার হবে তা এখন আর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের প্রথম সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল টাঙ্গাইল কটন মিলস। বর্তমান সরকার নতুন করে দেশের বন্ধ মিলগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। টাঙ্গাইল কটন মিলটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অথবা দীর্ঘমেয়াদি লিজের মাধ্যমে পুনরায় মিলটি চালু করার উপায় রয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত