ইমানের প্রকৃত স্বরূপ হলো আল্লাহমুখী গতিশীলতা এবং তদনুযায়ী কর্মতৎপরতা। মন-মগজ ও বিবেকে লুকানো নেতিবাচক জিনিসের নাম ইমান নয়। মানবজাতিকে ইমানের সঙ্গে পরিচয় করানো এবং সেই পথে পরিচালিত করাই ইসলামের লক্ষ্য। ইমান আনার অর্থ সত্যিকার নিষ্ঠাবান মুমিন ব্যক্তির ন্যায় আচরণ গ্রহণ করা। ইমান মানুষকে সাহসী করে গড়ে তোলে।
ইমানদার হওয়ার অর্থ হলো, কোরআনে কারিমের বিধান মতো চলা এবং শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত বিষয়গুলোকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। ইসলামের কথা হলো, মুমিনরা নম্র, বিনয়ী ও ক্ষমাশীল। কিš ‘তা তাদের দুর্বলতার কারণে নয় বরং এসব নৈতিক চেতনা হচ্ছে ইমানের স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত ও অনিবার্য ফল। কিন্তু যখন কোনো শক্তি ধর নিজের ক্ষমতার গর্বে ও অহমিকতায় তাদের ওপর হস্ত প্রসারিত করে তখন মুমিন বুক ফুলিয়ে তার মোকাবিলায় দাঁড়ায় এবং তার বিষ দাঁত ভেঙে দেয়। মুমিন কখনো কোনো অত্যাচারীর ভয়ে ভীত হয় না, দমে না এবং অহংকারীর কাছে মাথানত করে না। যাবতীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজকে আল্লাহতায়ালা সাহসিকতাপূর্ণ কাজ বলে অভিহিত করেছেন। কোরআনে কারিমের অনেক জায়গায় ব্যবহৃত ‘সবর’ বা ধৈর্য শব্দ দ্বারা শুধু প্রচলিত সহিষ্ণুতার গুণকেই বোঝায়নি; বরং কোরআনে ব্যবহৃত ‘সবর’ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। যা সব ধরনের কষ্ট, ভয়, লোভ-লালসা, শয়তানের প্রলোভন, দুনিয়ার আকর্ষণ, সাময়িক উত্তেজনা ও মনের অবাঞ্ছিত বাসনার বিপরীতে অটল-অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়। ফরজ আদায় করা, হারাম কাজ পরিহার করায় ব্রতী করে। আর এসব কাজ করতে গিয়ে যত ক্ষতি ও বঞ্চনাই হোক না কেন তা সহ্য করে নেওয়ার ক্ষমতাই মূলত ধৈর্য। এই একটি ছোট্ট শব্দের মধ্যে ইসলামের এক বিশাল জগৎ নিহিত।
বিশ্ববাসীর জন্য ধৈর্যধারণের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং তার সাহাবিরা। ইসলাম মানুষের জীবনবোধকে মার্জিত ও উন্নত করে। রাসুল (সা.) ও তার সাহাবিরা সর্বদা এই সাহসিকতাপূর্ণ কাজ করেছেন। তাই আমাদের জীবনে রাসুল (সা.) ও সাহাবাদের জীবনাদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমাদের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে। তাহলেই আল্লাহতায়ালার সাহায্য আমাদের সঙ্গে থাকবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সৎ কর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনকাবুত ৬৯)