বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

শেখা যেতে পারে ‘ছোট’দের কাছ থেকেও

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ০২:১৬ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের এই হার নিঃসন্দেহে স্বস্তি জুগিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। এখন অন্তত বলা যাবে, এই দল হারিয়েছে পাকিস্তানকেও, সেখানে বাংলাদেশ তো সিরিজ হারতেই পারে! রসিকতা থাক, সত্যি কথাটা হচ্ছে টি-টোয়েন্টিতে ব্যবধানের দেয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। বড় দল আর ছোট দল বলে আলাদা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ওমানের বিপক্ষেও ব্যাটিংয়ে ভুগেছে অস্ট্রেলিয়া, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি না হলে হারতেও পারত ইংল্যান্ড। আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলো উঠে আসা হতে পারে বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা, যদিও সেটা আতঙ্কে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

আইসিসির টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ৯ম স্থানে, ঠিক ওপরে শ্রীলঙ্কা আর নিচে আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে খেলছে টেস্ট খেলুড়ে ১০ দলসহ মোট ২০ দল। বাংলাদেশের পেছনে যে ১১টি দল, তাদের ভেতর যুক্তরাষ্ট্রের পারফরম্যান্স এখন পর্যন্ত সেরা, জয় পেয়েছে ২ ম্যাচেই। ২২তম র‌্যাংকিংয়ে থাকা উগান্ডাও জিতেছে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। নামিবিয়া হারিয়েছে স্কটল্যান্ডকে। নেদারল্যান্ডস হারিয়েছে নেপালকে। আফগানিস্তানও হারিয়েছে উগান্ডাকে; অর্থাৎ বাংলাদেশের র‌্যাংকিংয়ের ঠিক আশপাশে থাকা দলগুলো বিশ্বকাপে এসে জয়ের দেখা পাচ্ছে। এখানে অনুপ্রেরণা যেমন আছে, তেমনি আছে আশঙ্কাও। যুক্তরাষ্ট্র বা আফগানিস্তান যে মানের দল হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশ যে ঠিক সেখানটায় নেই, সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্তাবকও মানবেন।

নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে যে দলটা বিশ্বকাপ খেলছে, দেশ ছাড়ার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজ এবং ডালাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে স্পষ্ট হয়ে গেছে এই দলের ব্যাটিং সামর্থ্য প্রায় শূন্যের কোঠায়। প্রায়ই শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত অবদান দুই অঙ্কের রানে যায় না, পাওয়ার প্লেতে অন্য দলগুলো যখন এগিয়ে যায় বাংলাদেশ সেখানে পেছায়। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলার ক্ষমতা নেই ব্যাটসম্যানদের, ডট বল দেওয়ার প্রবণতাও বেশি। জোরে উড়িয়ে মারার মতো শারীরিক শক্তিরও অভাব। এই মরচেধরা ব্যাটিং নিয়ে বিশ্বকাপে কতদূর যাওয়া সম্ভব, সেটা নিয়ে তাই সন্দিহান বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও। ইয়ান বিশপ মনে করেন নেদারল্যান্ডস হারাবে বাংলাদেশকে, যেটা তারা করে দেখিয়েছে সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তো মনে করেন, নেপালও বিপদে ফেলবে বাংলাদেশকে।

এই বৈপরীত্যের কারণ আসলে টি-টোয়েন্টির চর্চা। যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, উগান্ডা বা ওমান; এই দেশগুলো টেস্ট বা ওয়ানডে খেলে না। শুধুই টি-টোয়েন্টি খেলে বলে তাদের ক্রিকেটাররা এই একধরনের খেলারই চর্চা করেন, যেখানে বাংলাদেশের হাতেগোনা দুই একজন বাদ দিলে সবাই লাল বল এবং সাদা বল দুই সংস্করণেই নিয়মিত খেলেন। লাল বলে চাই ধৈর্যের সঙ্গে দক্ষতা আর টি-টোয়েন্টিতে দরকার আগ্রাসী মানসিকতার সঙ্গে শারীরিক শক্তি। দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কোনোটিই নেই, তাই সাফল্য আসে না কোনো সংস্করণেই।

একটা পরিসংখ্যান জানানো যাক। আইসিসির ইউরোপ অঞ্চলের বাছাই পর্ব জয়ী হয়ে বিশ্বকাপে এসেছে স্কটল্যান্ড। বাছাই পর্বে ছিল আয়ারল্যান্ডও। দুই দলই খেলেছে ৬টি করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। বিশ্বকাপে খেলতে আসার আগে নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা ১ বছরে খেলেছেন ১০টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলো নিজেদের ভেতর বেশ ব্যস্ত সূচি কাটায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। সেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আজ টি-টোয়েন্টি, কাল ওয়ানডে, পরশু টেস্ট এভাবেই খেলছেন। সংস্করণভেদে ভিন্ন খেলোয়াড় এমনকি ভিন্ন কোচিং স্টাফের পথেও হেঁটেছে অনেক দল। কিন্তু আমাদের তো একই অঙ্গে রাম-রহিম-জন এর ত্রিমূর্তি চাই!

বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স প্রভাব ফেলবে র‌্যাংকিংয়ে। যুক্তরাষ্ট্র নিঃসন্দেহে পাকিস্তানকে হারিয়ে বড় পয়েন্ট কামাবে। অন্য দলগুলোরও উন্নতি বা অবনতি কিছু একটা হবে ফলভেদে। হয় না শুধু বাংলাদেশের। ২০১৪ সালে দুই স্তর চালুর পর স্রেফ গত আসরেই সরাসরি মূল পর্ব বা সুপার ১০ পর্বে খেলার সুযোগ হয়েছিল দেশে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে কর্দমাক্ত উইকেটে সিরিজ হারিয়ে। বিশ্বকাপ এবং পরবর্তী সময়ের ব্যর্থতা ফের বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে শীর্ষ আটের বাইরে। আগে চাপটা ছিল ওপর থেকে, র‌্যাংকিংয়ে ওপরে উঠলেও বড় দলগুলোর চাপে নিচে নেমে যেতে হতো। এবার নিচের দিক থেকেও ঊর্ধ্বমুখী চাপ আসছে। মার্কিনি, ডাচরাও এখন অভিবাসন আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বদৌলতে দ্রুত শক্তি হয়ে উঠছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। তাই ডেভিডের গলিয়াথ বধ বাংলাদেশের কাছে যেমন অনুপ্রেরণার, তেমনি আশঙ্কারও। কারণ কারও কারও কাছে, বাংলাদেশও তো বড় দল!

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত