মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

লিখতে হবে হামজাকেই

আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪, ০১:৫৯ এএম

একদিকে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বলছেন যে তিনি হামজা চৌধুরীর পাসপোর্ট নিয়ে কাজ করছেন, অন্যদিকে বাফুফে সভাপতি বলছেন, হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের হয়ে খেলার বিষয়টি মিথ, মিডিয়ার তৈরি একটি গল্প। হামজা নিজে নিশ্চিত করেননি যে সে খেলতে চায় বাংলাদেশ জাতীয় দলে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দুই শীর্ষ কর্তার হামজাকে নিয়ে বক্তব্যে একটি সুস্পষ্ট সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে, যা পুরো জাতির আশা ও স্বপ্নকে দোলাচলে ঠেলে দিয়েছে।

হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা একটি দীর্ঘ গল্প, যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। প্রথম কয়েক বছর কেটে গেছে তাকে বোঝাতেই। এখন মিডিয়া রিপোর্ট, বাফুফে সহসভাপতি কাজি নাবিল এমপি এবং সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য থেকে যেটা বোঝা গেছে, বাফুফে হামজার বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করছে। এই পাসপোর্টপ্রাপ্তি আদতে তার বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্তির প্রথম পদক্ষেপ। তবে সেটা মিলে গেলেও এখনো অনেক শর্ত আছে, যেগুলো পূরণ করা প্রয়োজন।

শুরুতেই ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) থেকে অবশ্যই একটি অনাপত্তিপত্র (এনওসি) আনতে হবে, যাতে বিশদভাবে বলা থাকবে যে হামজার বাংলাদেশের হয়ে খেলাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই এবং তিনি ভবিষ্যতে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে কোনো খেলায় অংশ নিতে পারবেন না। সেই এনওসিসহ হামজার পাসপোর্ট এবং তার পিতা বা মাতার বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংযুক্ত করে বাফুফেকে ফিফার প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটিকে একটি ‘সুনির্দিষ্ট’ চিঠি লিখতে হবে যে তারা হামজাকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সর্বশেষ লাইনে ‘সুনির্দিষ্ট’ শব্দের অর্থ বাফুফেকে অবশ্যই ফিফার আর্টিকেল অনুসারে ধারাগুলো নির্দেশ করতে হবে, যা ফিফাকে সন্তুষ্ট করবে যে হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য যোগ্য। যদি চিঠিটি স্পষ্ট হয় এবং সহজেই ফিফা আর্টিকেল অনুসারে ধারাগুলো লেখা থাকে, তখন ফিফা বাফুফেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বলবে যে তাদের হামজাকে নিয়ে কোনো আপত্তি নেই এবং চিঠিতে ফিফা এই লাইনগুলো ব্যবহার করবে:

‘Given all of the above, particularly considering that, on the basis of the information provided, the Player appears to comply with all aforementioned requirements, the latter would be eligible to play for your association’s representative team(s).’

চিঠিতে যদি ওপরের লাইনগুলো থাকে, তাহলেই হামজা বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবেন। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তবে বাফুফে সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী, ফিফার অনুমোদনের চিঠি ৭ দিনের মধ্যেই আনা সম্ভব। তারিক কাজীর ক্ষেত্রে যখন কাগজ এবং বাফুফের চিঠি ঠিক ছিল, তখন ফিফা ৩ দিনের মধ্যে উত্তর দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন বাফুফে সভাপতি বলেছেন যে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অংশগ্রহণের বিষয়ে হামজা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, যেখানে সাধারণ সম্পাদক বলছেন তারা হামজার পাসপোর্ট প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। কারণটি সভাপতির দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত যৌক্তিক এবং পরিষ্কার।

আপনি যখন একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে থাকেন, তখন আপনাকে অবশ্যই একটি সমস্যা/ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত সব সম্ভাবনার কথা ভাবতে হবে। হামজার পাসপোর্টের কাজ চলছে মানে এই নয় যে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে ইচ্ছুক। ইংল্যান্ডে বসবাস করা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক সুবিধের, তবে বৈধ উপায়ে সেখানে থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পাওয়া অনেক কঠিন। আপনাকে অনেক প্রক্রিয়া এবং কাগজপত্রের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যা অনেক সময়সাপেক্ষ। কিন্তু একটি সহজ উপায় হলো যখন আপনি ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন, তখন একটি সরকারি অধিভুক্ত সংস্থা আপনাকে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করছে। এতে আপনার প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত হবে।

এখন পর্যন্ত হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করে বাফুফেতে কোনো লিখিত আবেদন করেননি। তাকে নিয়ে আলোচনা যা হচ্ছে, তা হয় মৌখিক বক্তব্য কিংবা মিডিয়া থেকে আসছে। হামজা যদি একটি লিখিত বিবৃতি দেয়, তাহলে তার পাসপোর্ট প্রক্রিয়া করাটা সহজ হবে বাফুফের জন্য। ফিফার কাছে আবেদনের সময়ও এই চিঠিটি প্রয়োজন হবে। যদি কোনো খেলোয়াড় বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ইচ্ছুক হন, তাহলে লিখিত বিবৃতি খেলোয়াড়ের পক্ষ থেকে দেওয়া কোনো কঠিন কাজ নয়। তারিক কাজী, ওবায়দুর নবাব, মাহাদী এবং এলিটা কিংসলেসহ সবাই এই লিখিত চিঠি বাফুফেকে জমা দিয়েছিলেন।

হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে খেললে তাকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাফুফেকে অনেক পরিকল্পনাই নিতে হবে। হামজার প্রতিদিনের অনুশীলন সেশনের মান বজায় রাখার জন্য দল কী কী সুবিধা পাবে, প্রশিক্ষণ কবে কখন শুরু হবে, কীভাবে এবং কোথায় প্রশিক্ষণ হবে, সেসব তাকে অবহিত করতে হবে। বাফুফে কি সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে সেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত?

পুরো পরিস্থিতি যদি সংক্ষেপে বলি, প্রথম হামজা চৌধুরীকে একটি লিখিত বিবৃতি পাঠাতে হবে বাফুফেকে, যেখানে লেখা থাকবে, যদি পাসপোর্ট প্রক্রিয়া করা হয় তাহলে তিনি তার পিতা বা মাতার পাসপোর্ট পাঠাতে এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলতে ইচ্ছুক। এর সঙ্গে তাকে এটাও বলতে হবে যে তিনি ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এনওসি পাওয়ার ব্যাপারে বাফুফেকে সাহায্য করবেন। এনওসি এবং উভয় পাসপোর্ট পাওয়া গেলে, কাজটি তখন বাফুফের কোর্টে যাবে এবং তখন তাদের ফিফার কাছে আবেদন করতে হবে অনুমোদন পেতে। এর আগে যেকোনো ব্যাপারে বাফুফেকে দোষারোপ করাটা ঠিক হবে না।

হামজা যদি আসলেই খেলতে চান, এক পাতার লিখিত বিবৃতি দেওয়া কি এতই কঠিন?

            লেখক : ফুটবল বিশ্লেষক

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত