মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ঈদের যত প্রস্তুতি

আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ০২:২৯ এএম

বছর ঘুরে আবারও চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি এবং অন্যান্য ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন করবেন এই উৎসব। কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি জানালেন জান্নাতুল কাওসার

ঈদের আয়োজন মানেই হাজারো রকমের কাজ। কোরবানির ঈদে সেই কাজের পরিধি প্রায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে ঈদের দিন পশু জবাই করা, মাংস বণ্টন করা, সংরক্ষণ করাসহ অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা, রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কার রাখা সব মিলিয়ে ঈদের দিন যেন আর দম ফেলার ফুরসতই খুঁজে পাওয়া যায় না। তবুও ঈদের আগেই যদি কিছু কিছু কাজ গুছিয়ে ফেলে ঈদের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তাহলে সময় বেঁচে যাবে অনেকটাই। 

ঈদের পোশাক প্রস্তুতি

পোশাক কেনার ক্ষেত্রে বাড়ির শিশুদের জন্য বাজেট রাখুন সবার আগে। ঈদের দিন নতুন পোশাকে শিশুদের আনন্দই এনে দেয় ঈদের খুশিতে পূর্ণতা। শিশুদের জন্য ফ্রক, লেহেঙ্গা, শারারা সেটসহ ছেলেশিশুদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া সবকিছুরই রয়েছে নতুন ডিজাইন। হালকা ধরনের আরামদায়ক পোশাক বেছে নিন। এবারের ঈদে ফ্যাশন হাউজগুলো ব্যবহার করেছে সুতি, লিলেন, মকমল কটনসহ আরামদায়ক কাপড়। তরুণীদের জন্য রয়েছে ফ্যাশনেবল কো-অর্ড সেট। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি সব ধরনের সংগ্রহেই রয়েছে নতুনত্ব।  চাইলে পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে ম্যাচিং পোশাকও নিতে পারেন ঈদে। সারা দিন কাজের জন্য সুতির পোশাক পরলেও কোনো দাওয়াতে যেতে হলে একটু জমকালো পোশাক পরতে পারেন। দিনের সাজগোজ রাখুন একদম হালকা।

ঘরবাড়ি পরিপাটি

বাড়িতে মেহমানের আনাগোনা তো থাকবেই। তাই ঈদের আগেই গুছিয়ে ফেলুন পুরো বাড়ি।

 ঘরের দেয়াল, কর্নার এবং আসবাবপত্রের ধুলা ঝাড়া মোছা করে নিন। অপরিষ্কার ঘর যত যত্ন করেই সাজানো হোক ভালো দেখাবে না। বিছানায় পরিষ্কার চাদর বিছিয়ে দিন। কুশন কভার বদলে নিতে পারেন। হালকা রঙের চাদরে ঘর বড় দেখাবে।ঘরে সহজে স্নিগ্ধতার ছোঁয়া দিতে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন।ফুলদানিতে কিছু তাজা ফুল সাজিয়ে নিন। দেখলেই মনটা সতেজ লাগবে।ঘরে সুগন্ধির ব্যবহার করতে পারেন। সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি অথবা ডিফিউজার ব্যবহার করতে পারেন। এতে  ঘরের পরিবেশ প্রশান্তিদায়ক মনে হবে।

হেঁশেলের প্রস্তুতি 

কোরবানি ঈদে হেঁশেলের ওপর থাকে ভীষণ চাপ। পশু জবাইয়ের পর বণ্টন ও সংরক্ষণের জন্য মাংস কাটা, প্যাকেট করাসহ রান্নার আয়োজন সব কাজ প্রায় পুরোটাই হয় রান্নাঘরে। এ কারণে রান্নাঘর আগে থেকেই গুছিয়ে রাখতে হবে যেন ঈদের দিন কাজ করার সময় কোনো ঝক্কি পোহাতে না হয়। সবকিছু এমনভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে, যেন কাজের সময় প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।  মাংস কাটার জন্য যেসব সরঞ্জাম ব্যবহৃত হবে যেমন দা, বঁটি, ছুরি এসব পরিষ্কার করে রাখুন আগেই। এগুলোর ধার পরীক্ষা করে প্রয়োজনে নতুন করে ধার দিয়ে নিতে পারেন। মাংস সংরক্ষণের জন্য পলিব্যাগ, জিপলক ব্যাগ আগে থেকেই সংগ্রহ করে হাতের কাছে রাখুন। রাইস কুকার, প্রেশার কুকারসহ রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় হাঁড়িপাতিলগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখুন। ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করা হবে, তাই আগের জমানো খাবারগুলো রান্না করে ফেলুন, যেন ফ্রিজ যতটা সম্ভব খালি করে ফেলা যায়। ফ্রিজ পরিষ্কারের কাজটাও সেরে নিন।

তৈরি থাকুক মসলাপাতি

কোরবানির ঈদে মাংসের বিভিন্ন পদ রান্না হয়ে থাকে। আগে থেকেই মাংসে ব্যবহার করার জন্য মসলাগুলো তৈরি রাখলে ঈদের দিন রান্নার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। ঈদের আগের দিন একসঙ্গে বেশি করে পেঁয়াজ কেটে বক্সে করে ফ্রিজে রেখে দিন। রান্নায় বাটা পেঁয়াজ ব্যবহার করলে পেঁয়াজ খুব অল্প পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। আদা-রসুন আগের দিনই বেশি করে বেটে বা ব্লেন্ড করে ফ্রিজে রেখে দিন।বিভিন্ন ধরনের মসলা মিক্স যেমন বিরিয়ানির জন্য মসলা বা চটপটির মসলা আগেই গুঁড়া করে নিয়ে আলাদা আলাদা বয়ামে রেখে দিন।গোটা গরম মসলা যেমন- এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা প্রভৃতি এগুলো সংগ্রহ করেআলাদা কৌটাতে রেখে দিন।

আপ্যায়নের বাসনকোসন

ঈদের আগের দিনই খাবার পরিবেশনের জন্য বিভিন্ন পাত্র এবং প্লেট, বাতি, চামচ, গ্লাস ইত্যাদি শোকেস থেকে নামিয়ে ধুয়ে মুছে রেডি করে রাখুন। খাবার টেবিল সাজাতে রানার ব্যবহার করতে পারেন। এখন চেয়ারে কভার দেওয়ার চলও ফিরে এসেছে। খাবার ঘরের দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা পরিবেশনের তৈজসপত্রের রঙের থেকে বিপরীত রঙের টেবিল রানার ও ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। খাবার টেবিলের সজ্জায় কিছু শোপিস রাখতে পারেন। অথবা একটি বাহারি মোমদানি।

আগাম রান্নাবান্না

কোরবানির আগেই নিজেরা খাওয়ার জন্য বা অতিথি আপ্যায়নের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা আগেই করে ফেলতে পারেন।

বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন যেমন পায়েস, সেমাই, শাহী টুকরা ইত্যাদি আগের দিন রাতেই বানিয়ে ফেলে নরমাল ফ্রিজে রাখতে পারেন। অন্যান্য খাবার আয়োজন যেমন চটপটি বা পাস্তা তৈরি করতে হলে আগের দিন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। যেমন- চটপটির ডাল সিদ্ধ করে রেখে দিতে পারেন বা পাস্তার জন্য সবজি-মাংস এগুলো প্রস্তুত করে রেখে দিতে পারেন। ঈদের দিন কাবাব পরিবেশন করতে চাইলে পারলে আগেই মাংসের কিমা কিনে এনে কাবাব তৈরি করে রাখতে পারেন। ঈদে যেহেতু বেশির ভাগ খাবার মাংস জাতীয় থাকে, তাই সঙ্গে খাওয়ার জন্য রুটি, পরোটা আগে বানিয়ে চুলায় হালকা করে ছেঁকে নিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। খাবার সময় বের করে ভেজে নিলেই দ্রুত পরিবেশন করতে পারবেন। বাঙালি বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের জন্য চা পরিবেশন করার রীতি রয়েছে। বারবার চা তৈরি করতে গেলে অন্য কাজে দেরি হতে পারে, সে জন্য চাইলে আগেই বেশি করে চায়ের লিকার তৈরি করে ফ্লাস্কে রেখে দিতে পারেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত